বকরীদ

কাজী নজরুল ইসলাম

0
11

ইব্রাহিমের কাহিনি শুনেছ? ইসমাঈলের ত্যাগ?
আল্লারে পাবে মনে কর কোরবানি দিয়ে গরু ছাগ?
আল্লার নামে, ধর্মের নামে, মানব জাতির লাগি
পুত্রেরে কোরবানি দিতে পারে, আছে কেউ হেন ত্যাগী?
সেই মুসলিম থাকে যদি কেউ, তসলিম করি তারে,
ঈদগাহে গিয়া তারই সার্থক হয় ডাকা আল্লারে।
অন্তরে ভোগী, বাইরে যে রোগী, মুসলমান সে নয়,
চোগা চাপকানে ঢাকা পড়িবে না সত্য যে পরিচয়!
লাখো ‘বকরা’র বদলে সে পার হবে না পুলসেরাত
সোনার বলদ ধনসম্পদ দিতে পার খুলে হাত?
কোরান মজিদে আল্লার এই ফরমান দেখো পড়ে,
আল্লার রাহে কোরবানি দাও সোনার বলদ ধরে।
ইব্রাহিমের মতো পুত্রেরে আল্লার রাহে দাও,
নইলে কখনও মুসলিম নও, মিছে শাফায়ৎ চাও!
নির্যাতিতের লাগি পুত্রেরে দাও না শহিদ হতে,
চাকরিতে দিয়া মিছে কথা কও- ‘যাও আল্লার পথে’!
বকরীদি চাঁদ করে ফরয়‍্যাদ, দাও দাও কোরবানি,
আল্লারে পাওয়া যায় না করিয়া তাঁহার না-ফরমানি!
পিছন হইতে বুকে ছুরি মেরে, গলায় গলায় মেলো,
কোরো না আত্ম-প্রতারণা আর, খেলকা খুলিয়া ফেলো!
উমরে, খালেদে, মুসা ও তারেকে বকরীদে মনে কর,
শুধুু সালওয়ার পরিয়ো না, ধরো হাতে তলোয়ার ধরো!
কোথায় আমার প্রিয় শহিদল মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাণ?
এসো ঈদের নামাজ পড়িব, আলাদা আমাদের ময়দান!
(সংক্ষেপিত)

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিশুদের জন্য তিনি লিখে গিয়েছেন দু’হাত খুলে। ছোটদের জন্য তাঁর উল্লেখযোগ্য লেখার মধ্যে রয়েছে- ঝিঙেফুল, লিচু চোর, খুকী ও কাঠবিড়ালী, খাঁদু দাদু, খোকার গল্প বলা, প্রভাতী, হোঁদল-কুঁৎকুতের বিজ্ঞাপন ইত্যাদি। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাঁর কবর রয়েছে।