আব্বু যখন ঘোড়া হলো

শাকিব হুসাইন

0
37

মন ভালো নেই। এইটুকুও নেই। গাল ফুলিয়ে আছে।
‘কে?’
‘কে আবার!’
‘তুতুন।’
রাজ্যের যত্ত খুশি, সব উবে গেছে ওর কাছ থেকে।

থাকবেই বা কেমন করে? তুতুনকে কি কেউ সময় দেয়! কেউই তো দেয় না।
আব্বুও না, আম্মুও না। দুজনের সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ। ছোটাছুটি আর ছোটাছুটি।
সন্ধ্যো করে বাসায় ফেরে। কোনো কোনোদিন আব্বুটা তো রাত করেই বাসায় আসে। আব্বুর আবার খুবই কাজের চাপ।
কাজের বুয়াটাই ওর আপন। শুধু কি আপন? একবারে আপন। গলায় গলায় আপন।
আচ্ছা, তোমার আব্বু-আম্মু যদি এমন করে, ভাল্লাগবে বলো? লাগবেই না তো। তুতুনেরও তো লাগে না। ওর আব্বু-আম্মুটা বোঝে না কেন!

এখন আবার শীতকালীন ছুটি। ইশকুলের বার্ষিক পরীক্ষাও শেষ। ও-মা, শীত বুড়িটাও যে এসেছে। নাচতে নাচতে। ধেই ধেই করে।
শুধু কি সে এসেছে?
না বাপু না। এসেছে তো এসেছে, সঙ্গে আবার কুয়াশা বুড়িকেও তড়তড় করে নিয়ে এসেছে! দেখেছ, দেখেছ শীত বুড়িটার কাÐখানা!
এমন ছুটির দিনেও যদি আব্বু-আম্মু পাশে না থাকে তাহলে কারই বা ভাল্লাগে?
এই তো আর কদিন গেলেই তুতুনটা ক্লাস থ্রিতে উঠবে। তারপর আবারও সেই একই রুটিন। সকালে ওঠো, নাশতা করো, আর ওই যে পেটমোটা একটা ঢোলদত্যি আছে! ওটাকে রোজ রোজ বহন করে যাও। বাবারে বাবা, সে কী পেটমোটা! বইপত্তর, খাতা-কলম খেয়ে খেয়ে ইয়া বড় পেটমোটা হয়ে যায় ঢোলদত্যিটা।
পেটমোটা ঢোলদত্যিটা কি?
জানো না বুঝি!
ওই যে তোমাদের ইশকুলের পেটমোটা ব্যাগটা! ওটাই ঢোলদত্যির চেয়ে কম কীসে!

২.
রাতে খেয়েদেয়ে তুতুন আব্বুর কাছে গেল। আব্বুটা তখনও ল্যাপটপে ব্যস্ত। কী যে এতো কাজ আর কাজ!
তুতুন আব্বুর গলা ধরে বলল, ‘আব্বু, তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না।’
‘কে বলেছে আম্মু? আমি তো তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’
‘বাসো না বাসো না। একটুও বাসো না।’
‘তুমি আমার একমাত্র রাজকন্যা। তোমাকে কত্ত ভালোবাসি। তোমার জন্য চকলেট, আইসক্রিম, টেডি, খেলনা কত্ত কিছু নিয়ে আসি। আমার আম্মুটাকে কত্ত ভালোবাসি।’
‘আব্বু আমি চকলেট, টেডি চাই না। তুমি আমার সাথে গল্প করো। আমার সাথে খেলা করো। তুমি ঘোড়া সাজবে আর আমি তোমার পিঠে চড়ে মজা করব। আমি চকলেট, টেডি চাই না আব্বু। আমি তোমার সাথে গল্প করতে চাই। খেলতে চাই।’
কথাগুলো বলতে বলতে তুতুন কাঁদোকাঁদো চোখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আব্বুকে।

৩.
মেয়ের অমন কথা শুনে আব্বুটার বুকটা নড়েচড়ে উঠল। আব্বুটা না আজকে বুঝতে পেরেছে। সন্তানকে চকলেট, খেলনা দিলেই ভালোবাসা জাহির করা যায় না। সন্তানকে সময় দিতে হয়। খেলতে হয়। গল্প করতে হয়।

তুতুনের চোখ মুছে দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে আব্বু বলল, ‘আম্মু চলো আজকে আমরা ঘোড়াডুম ঘোড়াডুম খেলব।’
ওরে, তুতুনের সে কী খুশি রে বাবা! আব্বু ওর সাথে খেলবে। তাও আবার ঘোড়াডুম ঘোড়াডুম।
তারপর কী! আব্বু সাজল ঘোড়া। তুতুনও পিঠে চড়ে ঘোড়া ছোটাতে লাগল। ঘোড়াব্বুও থপথপ করে কার্পেটে হাঁটতে লাগল।
এই দেখ দেখিনি বাপু, ঘোড়াব্বুটা আবার কোত্থেকে এলো?
ভাবছ বুঝি!
ও বন্ধুরা, তুতুনের আব্বুটাই যে ঘোড়াব্বু হয়ে গেছে। আর তুতুন। ও তো এখন ঘোড়াব্বুকে চারদিকে ছোটাচ্ছে আর ছোটাচ্ছে। ওর যে কী খুশি! ০