সূত্র চুরি

সালাম হাসেমী

0
195

‘কিউব্রিড ইন্টারন্যাশনাল ঔষধ কোম্পানি’। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ কোম্পানির শাখা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ কোম্পানির প্রধান কার্যালয়। এ কোম্পানির প্রধান পরিচালক কেমিস্ট বিশেষজ্ঞ, গবেষক, চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী
ড. বিøডেকোন হার্ট, তিনি যখন প্রথম খবর পেলেন যে, চীনের উহান প্রদেশে নভেল করোনা নামে একটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনেক লোক মারা যাচ্ছে, তখন তিনি এ ভাইরাস নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত হলেন। প্রথমে তিনি এ ভাইরাসের ধরণ, বৈশিষ্ট্য, লক্ষণ, আবহাওয়া ও তাপের তারতম্যের পরিবর্তন হয় কিনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গবেষণা করে তথ্য সংগ্রহ করলেন। উহান প্রদেশের সাথে যোগাযোগ করে, বিভিন্ন পত্র পত্রিকা পাঠ করে, তিনি তথ্য নিলেন। এর পরে এ ভাইরাস ক্রমে ক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ল। সূর্যগ্রহণ চলাকালীন সময়ে সূর্যকে গ্রাস করতে করতে এক সময় পূর্ণভাবে সমস্ত সূর্যকে গিলে ফেলে। তখন সারা পৃথিরী অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ঠিক তেমনিভাবে নভেল করোনা ভাইরাস সারা পৃথিবীকে গ্রাস করে, মানুষকে করোনা রোগাক্রান্ত করে অর্থনৈতিকভাবে ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাÐকে পঙ্গু করে ফেলল। সারা পৃথিবীকে নানা ভারে অচল করে ফেলেন। ঠিক তখন এ রোগ হতে মুক্তির জন্য ঔষধ ও টিকা আবিস্কারের জন্য ড. বিøডেকোন হার্ট ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তিনি দেখলেন বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন সময়ে রোগ তার ধরণ পরিবর্তন করছে। তিনি প্রাথমিক ভাবে করোনার টিকা আবিষ্কার করে বানরের ওপর পরীক্ষা চালালেন। তাতে সফল হলেন। এর পরে তা বিজ্ঞান সম্মেলন করে তার গবেষণার বিষয় প্রকাশ করলেন। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলো। সারা বিশে^র মানুষ নভেল করোনা হতে মুক্তি পাওয়ার আশায় ড. বিøডেকোন হার্টের আবিস্কৃত টিকার দিকে চেয়ে আছে। রাত ১২টা। ড. বিøডেকোন হার্ট বিল্ডিংয়ের দশতলায় তাঁর গবেষণাগারে বসে গবেষণা করছেন নভেল করোনাভাইরাসের সফল টিকা আবিষ্কারের জন্য। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করার জন্য পাঁচটি বানরকে টিকা দেবেন। দুটি বানরকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। তৃতীয়টিকে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঠিক সেই মুহূর্তে তার কক্ষের উত্তর পাশের জানালার গøাস ভেঙে গ্রিল কেটে মুখোশধারী একজন লোক অবৈধভাবে প্রবেশ করল। তার হাতে কাটা রাইফেল। সে দ্রæত কক্ষের দরজা খুললে আরো চার জন অস্ত্রসহ মুখোশধারী লোক প্রবেশ করল। প্রথমে জানালা দিয়ে প্রবেশকারী লোকটি পিস্তল ড. বিøডেকোন হার্টের মাথায় ঠেকিয়ে ধরল। অন্য একজন কালো কাপড় দিয়ে তাঁর মুখ বেঁধে ফেললো। তার পরে মুখোশধারী বাকি চারজন ড. বিøডেকোন হার্টের নভেল করোনাভাইরাসের টিকার সূত্র খুঁজতে লাগল। খুঁজতে খুঁজতে এক সময় পেয়ে গেলো। নভেল করোনার টিকার সূত্রের সমস্ত গবেষণার কাগজপত্র হাতে নিয়ে ড. বিøডেকোন হার্টকে পিস্তল দিয়ে তার মাথায় পরপর তিনটি গুলি করে তাকে গবেষণাগারের ভিতরে ফেলে দিয়ে তারা লিফট দিয়ে নিচে নেমে এসে দশতলা বিল্ডিংয়ের পিছনের দিকে দেয়ালের কাছে গেল। দেয়ালের ওপর লাইট পোস্টের সাথে প্রথমে প্রবেশ করার সময় যে দড়ি বাঁধা ছিল সেই দড়ি বেয়ে তারা দেয়ালের অপর পাশে নেমে গেল। এরপর মহাসড়কের অপরপাশে যে গাড়ি পার্কিং করা ছিল, সেই গাড়িতে উঠে দ্রæত তারা গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল। পরের দিন সকালে ড. বিøডেকোন হার্টের স্ত্রী ইডেন কিউট ড. বিøডেকোন হার্টের গবেষণাগারের সামনে এসে দেখল গবেষনাগারের দরজা খোলা। ড. বিøডেকোন হার্ট গবেষণাগারের ফ্লোরে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তাঁর মাথাটি কয়েক টুকরা হয়ে ছিন্নবিছিন্ন হয়ে গেছে। ড. বিøডেকোন হার্টের এ মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে ইডেন কিউট কাঁন্নায় ভেঙে পড়লেন। সেই সময় তিনি পুলিশকে ফোন করলেন। পুলিশ এলেন। মৃতদেহের ছুরাতহাল করলেন। মৃতদেহটি চিৎহয়ে পড়ে আছে। মাথায় তিনটি গুলি করা হয়েছে। সমস্ত কক্ষটির ফ্লোর রক্তে লাল। রক্ত জমাট বেঁধে চাপ চাপ হয়ে আছে। মৃতদেহের সুরতহাল লিপিবদ্ধ করে মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করলেন। পুলিশ সমস্ত গবেষণাগার তল্লাশি করে দেখলেন যে, ঘরে কিছু কিছু গবেষণার জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। বাকি জিনিসপত্রগুলো ঠিক আছে।
দুষ্কৃতকারীরা ড. বিøডেকোন হার্টের গবেষণার কাগজপত্র ও নভেল করোনাভাইরাস রোগ নিরাময়ের টিকার গবেষণা পত্রের পাÐুলিপি চুরি করে নিয়ে গেছে। পুলিশ গবেষণাগারের বিভিন্ন স্থানে দুষ্কৃতকারীদের কাদা মাখা পায়ের জুতার ছাপ দেখলেন। যেহেতু সময়টা এখন ডিসেম্বর মাস। কুয়াশার সময়। দুষ্কৃতকারীরা হালকা কাদার মধ্য দিয়ে হেঁটে এসেছে বলে তাদের পায়ের জুতায় কাদা লেগেছে। সেই কাদার ছাপ ঘরের মেঝেতে দেখা যাচ্ছে। পুলিশ আরো দেখলেন দুষ্কৃতকারীরা ঘরের দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করেনি। তারা প্রবেশ করেছে, ড. বিøডেকোন হার্টের গবেষণাগারের পিছন দিক দিয়ে। উত্তর দিক হলো এ গবেষণাগারের পিছন। তারা এ দশতলা বিল্ডিংয়ের পিছনে যে দেওয়াল আছে তার বাইরের দিক হতে দেয়ালের লাইটপোস্টের সাথে দড়ি বেঁধে দেয়াল অতিক্রম করে দশতলা বিল্ডিংয়ের বাথ রুমের পাইপ বেয়ে ওপরে উঠে জানালার গøাস ভেঙ্গে গ্রিল কেটে গবেষণাগারে প্রবেশ করেছে। পুলিশ অধিকতর পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারলেন যে, গবেষণাগার হতে দুষ্কৃতকারীদের পায়ের কাদাময় জুতার চিহ্ন লিফট এর দরজা পর্যন্ত গিয়েছে। সুতরাং পুলিশ বুঝতে পারলেন যে, দুষ্কৃতকারীরা ড. বিøডেকোন হার্টকে হত্যা করে ও তাঁর করোনাভাইরাস রোগের টিকা আবিষ্কারের সূত্র চুরি করে নিয়ে গেছে। পুলিশ লিফট বেয়ে নিচে নেমে এলেন। তারা পায়ের চিহ্ন দেখে বুঝলেন যে, দুষ্কৃতকারীরা হেঁটে দেয়ালের কাছে গিয়েছে এবং পায়ের চিহ্ন ধরে হাঁটতে হাঁটতে তারা দেয়ালের নিকট গেলেন। সেখানে গিয়ে তারা দেখলেন যে, দেয়ালের সাথে দড়ি বাঁধা। পুলিশ বুঝতে পারলেন দুষ্কৃতকারীরা এই স্থান দিয়ে দড়ি বেয়ে দেয়াল অতিক্রম করে দেয়ালের অপর পাশে লাফ দিয়ে পড়ে পালিয়েছে। পুলিশ দেয়ালের অপর পাশে গিয়ে দেখলেন যে, দেয়ালের অদূরে যে রাস্তা রয়েছে সেই রাস্তার উত্তর পাশে গাড়ি পার্কিং করা ছিল। সেই গাড়িতে করে তারা চলে গেছে। গাড়ির চাকায় যে কাদা ছিল তার চিহ্ন রাস্তায় বসে আছে। চাকার চিহ্ন ধরে অনেক দূর পর্যন্ত গেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে যে, গাড়িটি ডালাস শহরের দিকে চলে গেছে।
গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গাড়ি ডালাস শহরের দিকে চালালেন। তারা গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন আর দুষ্কৃতকারীদের গাড়ির চাকার চিহ্ন অনুসরণ করছেন। এই চাকার চিহ্ন অনুসরণ করে তারা ডালাস শহরে এলেন। এখানে এসে তারা আর দুষ্কৃতকারীদের গাড়ির চাকার চিহ্ন দেখতে পেলেন না। এখানে তারা তাদের গাড়ি থামালেন। এ শহরে তারা গাড়ি থেকে নেমে এ শহরের গোয়েন্দা সংস্থাকে তৎপর হতে বললেন। তাদের মনে যেসব ব্যক্তি, স্থান ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সন্দেহের উদয় হলো তা অনুসন্ধান করলেন। এ শহরে তারা দুষ্কৃতকারীদের সন্ধান পেলেন না। তখন তারা ভাবলেন দুষ্কৃতকারীরা সম্ভবত এ শহরে নেই। তখন তারা তাদের গাড়ি ওই শহরের দক্ষিণ দিকে চালালেন। কিছু দূর আসার পরে তাদের গাড়ি চৌরাস্তার মোড়ে এসে থামল। এখানে এসে তারা ভাবল এই দুষ্কৃতকারীরা আপাতত কোনো নির্জন স্থানে লুকিয়ে আছে। সম্ভবত তারা সাগরের কোনো দ্বীপে গিয়ে লুকাতে পারে। সেই হিসেবে তারা চৌরাস্তার মোড়ের দক্ষিণ দিকে যে, রাস্তা হসটম শহরের দিকে চলে গিয়েছে তাদের গাড়ি সেই দিকে চালালেন। তারা গাড়ি চালাচ্ছেন আর চার দিকে খেয়াল করে সামনের দিকে যাচ্ছেন। মধ্যরাতে তাদের গাড়ি হসটম শহরে এসে থামল। সেই মধ্যরাতে তারা তাদের সন্দেহজনক স্থানে ওই শহরের গোয়েন্দাবাহিনীর সহায়তায় অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। অনুসন্ধান চালাতে চালাতে তারা শহরের উত্তর দিকে একটি বিশতলা বিল্ডিংয়ে অনুসন্ধান করার জন্য বিল্ডিংয়ের সামনে এসে দাঁড়ালেন। তারা দেখলেন এ বিল্ডিং হতে যে কয়েকজন লোক সিঁড়ি দিয়ে নেমে দক্ষিণ দিকে চলে গেছে তাদের পায়ের চিহ্ন বিল্ডিংয়ের সামনে স্বল্প কাদায় রয়ে গেছে। কাদার ভেতরে চিহ্নগুলো পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখলেন পায়ের চিহ্নগুলো একেবারে সদ্য। সবেমাত্র হেঁটে গেলে যেমন পায়ের চিহ্ন হয় ঠিক তেমন লোকের পায়ের চিহ্ন। এ পায়ের চিহ্ন অনুসরণ করে তারা চলে গেলেন সাগরের পাড়ে। এই সাগরের সৈকতে রয়েছে মিসিসিপি ব-দ্বীপ অঞ্চল। এ মিসিসিপি ব-দ্বীপ অঞ্চলে রয়েছে ছোট বড় অগণিত দ্বীপ। এদ্বীপগুলোর সাগর সৈকতের নিকটবর্তী দ্বীপগুলোর কয়েকটি বড় বড় দ্বীপে জনবসতি আছে। দূরবর্তী ছোট ছোট দ্বীপগুলোতে কোনো জনবসতি নেই এ দ্বীপগুলোতে ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। এ দ্বীপগুলোতে জল দস্যু, ডাকাত ও বিভিন্ন ধরণের মাদক ব্যবসায়ী এবং দুষ্কৃত প্রকৃতির লোক তাদের আস্তানা গড়ে তুলেছে। প্রশাসনের লোক এ দ্বীপগুলোর কোনো খোঁজখবর রাখতে পারেন না। গোয়েন্দা পুলিশের দল সমুদ্র সৈকতে পৌঁছে তারা স্থানীয় গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তা নিলেন। তারা অনেকগুলো স্পিডবোট যোগাড় করে বিভিন্ন দ্বীপে জলদস্যুর ছদ্মবেশে প্রবেশ করলেন। সারা রাত বিভিন্ন দ্বীপে অনুসন্ধান করে ভোর রাতে সাগরের মাঝামাঝি একটি দ্বীপের পাহাড়ের কাছাকাছি গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল পৌঁছালেন। তাদের লক্ষ করে দুষ্কৃতকারী লোকেরা হাত বোমা নিক্ষেপ করলে একজন গোয়েন্দা পুলিশ আহত হন। হাত বোমা নিক্ষেপ করে গোয়েন্দা পুলিশদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দুষ্কৃতকারীরা গুহা থেকে বেরিয়ে দ্বীপের পশ্চিম দিকে দৌড়িয়ে সাগরের তীরে গিয়ে একটি স্পিডবোটে উঠে পালানোর চেষ্টা করলে গোয়েন্দা বাহিনীর সকল স্পিডবোট এসে দুষ্কৃতকারীদের স্পিডবোট ঘেরাও করে ফেলে। ততক্ষণে তাদের পালাবার আর কোনো পথ না থাকায় দুষ্কৃতকারীরা গোয়েন্দা পুলিশের বোটে হাত বোমা নিক্ষেপ করল এবং পিস্তল দিয়ে গুলি করল। প্রায় আধাঘন্টা লড়াই চলল। এক সময় দুষ্কৃতকারীদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে তারা আত্মসমর্পণ করল।
গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে আদালতে চালান দিল। আদালত হতে তাদের পুলিশ রিমান্ডে দেয়া হলো। রিমান্ডে তাদের বিজ্ঞানী বিøডেকোন হার্ট এর নভেল করোনাভাইরাস রোগের সূত্র চুরি করার কারণ জিজ্ঞেসা করলে তারা বলে যে, ‘ডোডেক’ কোম্পানি করোনাভাইরাস রোগের টিকা আবিষ্কার করছে। এই ডোডেক কোম্পাানীর আগে যাতে বিজ্ঞানী বিøডেকোন হার্ট তার আবিষ্কার ঘোষণা ও প্রচার করতে না পারে সেই জন্য আমরা বিজ্ঞানী বিøডেকোন হার্টের সূত্র চুরি করেছি। ডোডেক কোম্পানি আমাদের এজন্য অনেক ডলার দিয়েছে।