লিটিল বিটিল

সজল আশফাক

0
24

সকাল থেকেই বিটিলের মেজাজটা খিঁচড়ে আছে। সে হলো এ গ্রামের মাতবরের ছেলে। আর তাকে কি না হারিয়ে দেয় ওই হা-ঘরের লিটিলটা। তিনবেলা যার খাবার জোটে না সে কী করে অমন অসুরের শক্তি পায় ভেবে পায় না বিটিল। বয়সেও লিটিল বিটিলের চেয়ে কম করে হলেও তিন-চার বছরের ছোট হবে। তার উপর শরীর স্বাস্থ্যে লিটিলের তিনটির সমান বিটিল। আর হবে না- ই বা কেন? খাঁটি ঘি, ছানা, দুধ, পনির, মাছ, মাংস, পোলাও প্রতিদিনই পরম যত্নে তার মা তাকে খাওয়াচ্ছে। মাতবর সাহেবেরও কড়া নির্দেশ ছেলের খাওয়াতে যেন কোনো কমতি না থাকে। মনে ক্ষীণ আশা ভালো কিছু খেয়ে যদি ছেলেটার মেধাটা একটু খোলে।
ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়তে তো আর মেধার দরকার ছিলো না। গ্রামের মাতবরের ছেলে হিসেবে অতি সহজেই প্রতিবছর পরীক্ষায় উৎরে গেছে বিটিল। বাধ সাধলো এই এস.এস.সি টা। গত তিন বছর ধরে এই যে গিঁট লেগে আছে তা আর খুলছে না। অবশ্য এ নিয়ে বিটিলের কোনো মাথা ব্যথা নেই। সে মনের সুখে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। মনে হয় জগতের হেন খারাপ কাজ নেই যা বিটিল করেনি।
বাপের অঢেল টাকা থাকার পরও মানুষের ক্ষেতের ফলমূল, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি চুরি করা, ছোট-বড় সবাইকে গালি গালাজ করা, মাঝে মধ্যে ছোরা দেখিয়ে ভয় দেখানো এসব তো আছেই। সঙ্গে আছে তার দুষ্ট বন্ধু জেসান।
এ পর্যন্ত কোনো খেলায় বিটিল হেরেছে এমন কোনো ইতিহাস নেই। তবে প্রকৃতপক্ষে প্রতিবারই জয়ী হয়েছে বিপরীত পক্ষ। কিন্তু বাপের জোরে পোষা চ্যালাদের দিয়ে মারধর করে, এমনকি অস্ত্রের ভয় দেখিয়েও জয় কেড়ে নিয়েছে বিটিল। গ্রামের অসহায় ছেলেপুলেরা কেউই বিটিলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করে না। তবে এদের মধ্যে ব্যতিক্রম হচ্ছে লিটিল। ভয় কাকে বলে লিটিল জানে না এমন একটা ভাব। বাবা মা কেউই বেঁচে নেই লিটিলের। সে মায়ের গর্ভে থাকতেই যক্ষায় বাবা মারা গেছেন। আর দুই বছর বয়সে অভাব অনটনে অসুখে ভুগে মাও দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন।
ঐটুকু বয়স থেকেই এরটা ওরটা খেয়ে বড় হয়েছে লিটিল। গ্রামের স্কুলের পণ্ডিত মশাই ধরতে গেলে তার বর্তমান অভিভাবক। তার স্বল্প আয়ে যেভাবে পারেন লিটিলকে নিয়ে থাকেন। লিটিলের পড়াশুনার ব্যবস্থাও তিনি করেছেন। তারও কোনো পরিবার পরিজন নেই। তাই তেমন একটা অসুবিধা হয় না। আর পণ্ডিত মশাইয়ের মতো একজন ভালো মানুষের সংস্পর্শে থাকার ফলে লিটিলের স্বভাব চরিত্রও হয়েছে চমৎকার। চরিত্রের দিক দিয়ে লিটিল আর বিটিল পুরো বিপরীত। গ্রামের ভদ্র বিনয়ী, নির্ভীক ছেলে বলতে এক কথায় সবাই লিটিলের কথাই ভাবে। আর নামের সাথে সামঞ্জস্য রাখা বিটিল গ্রামে বিটলা আর হিংসুটে ছেলে হিসেবেই পরিচিত।
গতকাল ছিল বিটিল আর লিটিল এর দলের মধ্যে হা-ডু-ডু খেলার প্রতিযোগিতা। খেলার দর্শকও হয়েছিল মেলা। বিটিল নিশ্চিত যেভাবেই হোক সে-ই জয়ী হবে। কারণ তাকে হারাবার সাহস এ গ্রামে কারোর নেই। তাই খেলার আগেই অনেক বড় বড় কথা তো বললোই। এমনকি লিটিলকে একটু শায়েস্তা করার জন্য বলল- ‘যারা হারবে তারা নাকে খত দেবে’। অকুতোভয় লিটিল এই শর্তে সাথে সাথেই রাজি হলো।
কপাল মন্দ বিটিলের। মোটা শরীর নিয়ে ঠিক মতো নড়তে চড়তে না পারায় প্রথমেই আউট হয়ে গেল সে। বলাবাহুল্য লিটিলই তাকে আউট করল। আর দল নেতার আউট হয়ে যাওয়াতে চ্যালারাও তেমন ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখাতে পারল না। ফলে যা হবার তাই হলো। নিজের কথা রাখতে গিয়ে সবার সামনে নাকে খত দিতে হলো।
রাগে অপমানে বিটিল প্রতিজ্ঞা করল- এর উপযুক্ত শাস্তি সে লিটিলকে দেবেই। রাতেই শুয়ে শুয়ে প্ল্যান করছিল বিটিল। কী করে লিটিলকে শাস্তি দেয়া যায়। তখনই ঘরে কেমন একটা শব্দ হতেই তড়াক করে লাফিয়ে উঠল বিটিল। কী আশ্চর্য! এই অন্ধকার ঘরেও সে স্পষ্ট দেখতে পেল একটা কাচের মানুষ, যার শরীর থেকে একটি সবুজ আভা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। স্বপ্ন দেখছে ভেবে নিজের গায়ে চিমটি কাটল বিটিল। সঙ্গে সঙ্গে ব্যথায় উহ্ করে উঠল। তার মানে স্বপ্ন নয়, বাস্তবেই আছে কাচের মানুষ।
তাহলে এটা কি ভূত? ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল বিটিলের।
কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করল- তুমি কে?
কাচের মানুষটির মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। কিন্তু কাচভাঙা শব্দের মতো ঝনঝনে গলায় কে যেন বলে উঠল- আমি প্লী।
– প্লী আবার কী? প্রশ্ন করলো বিটিল।
– আমি প্লুটোর একটি চাঁদ থেকে এসেছি, তোমার ভ‚গোল বইয়ে প্লুটো সম্বন্ধে নিশ্চয়ই পড়েছো?
কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারল না বিটিল। সে বলল- মাথা খারাপ হয়েছে নাকি তোমার? আমাকে গ্রামের ওই হাবলা ছেলেটির মতো বোকা পেয়েছো যে, যা বলবে তাই বিশ্বাস করবো?’
বিটিল মনে মনে ভাবল- এ নিশ্চয়ই লিটিল বদমায়েশটার কাজ, কোত্থেকে এক কাচের পুতুল তৈরি করে লাইট-ফাইট ফিট করে আমাকে ভয় দেখাতে পাঠিয়েছে। ছোটলোকটাতো আবার বিজ্ঞান পড়ে পড়ে পণ্ডিতের সাথে থেকে পণ্ডিত হয়েছে।
– দাঁড়া পিচ্চি শয়তান, এক্ষুণি তোর ভয় দেখানো বের করছি, বলেই খাট থেকে নেমে কাচের পুতুলটিকে ঘুষি দিতে গেল। কিন্তু এ কী! হাত কাচের মানুষের শরীর ভেদ করে চলে গেল কিন্তু তাকে স্পর্শ করল না। আর ঠিক সেই মুহূর্তে তার শরীর থেকে সবুজের পরিবর্তে নীল আলো বিচ্ছুরিত হতে শুরু করল।
এবার বিটিল সত্যিই ঘাবড়ে গেল। ভয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলল, ঠিক করে বলো তুমি কে? আর এমন আলোর খেলাই বা তুমি দেখাচ্ছ কেন?
এবার প্লী উত্তর দিলো- তোমাকে তো বলেছি আমি কে। তুমি আমার কথা বিশ্বাস করোনি, আমাকে মারতে চেয়েছো, তাই নীল আলো বেরিয়েছে, আমরা দুঃখ পেলে এমনটি হয়। তোমাদের মানুষের চরিত্র একেকজনের একেক রকম। আর আমরা প্লীরা সবাই একরকম। তোমরা যে সব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে খারাপ বলো তার কোনোটিই আমাদের নেই। আমরা সকল প্লী’রাই ভালো চরিত্রের। যেহেতু আমাদের মধ্যে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ নেই তাই সবদিক দিয়েই আমরা বাধাহীনভাবে দ্রুত এগিয়ে গেছি, তাছাড়া আমাদের সবার বুদ্ধি এক সঙ্গে কাজ করে, কারো সাথে কোনো মতবিরোধ নেই। আর তোমাদের অর্থাৎ মানুষদের বুদ্ধি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি হলেও যেহেতু সবার বুদ্ধি সম্মিলিতভাবে কাজ করে না, তাই এখনও তোমরা আমাদের চেয়ে অনেক অজ্ঞ। তাই আমরা চাই তোমাদের মধ্য থেকে সব খারাপ গুণ বের করে সবাইকে একই রকম ভালো চরিত্রের করে দিতে।
– এতে লাভ কী? একটু বিষ্ময়ভরা চোখে প্রশ্ন করলো বিটিল।
– তোমাদের সবার ভালো বুদ্ধি একত্রে কাজ করলে পুরো বিশ্বের বিপুল রহস্য যেমন ভেদ করা যাবে, আর এটাতো সৌরজগতের সকলের জন্যই কল্যাণকর হবে।
এ কথা শুনে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় বিটিলের। চোখে বড়বড় করে প্রশ্ন করলো- আচ্ছা তোমরা এ কাজ কীভাবে করতে চাও ?
– মানুষের চরিত্রের জন্য দায়ী তার ‘জিন’। আর এই ‘জিন’গুলোকে বহন করে বেড়ায় প্রতিটি কোষের তেইশ জোড়া ক্রোমোজম। এরমধ্যে খারাপ এবং ভালো গুণের মিশ্রণ থাকে। আমরা চাচ্ছি চরিত্রের সেই খারাপ দিকটাকে নষ্ট করতে। আর সকলকে ভালো করার এই কাজটি সময়সাপেক্ষ বলে অপেক্ষাকৃত কমবয়সীদের মধ্যে এই কাজটি শুরু করতে চাই। যেন আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এই পৃথিবীটা শুধু ভালো মানুষ দিয়ে সাজানো যায়।
– এই কাজটি শুধু ছোটদের নিয়ে শুরু করবে কেন? প্রশ্ন করলো বিটিল।
– বয়স্কদের দিয়ে এটা শুরু করলে শুধু সময়ই নষ্ট করা হবে, কেননা পঞ্চাশ বছর ধরে তাদের না বাঁচার সম্ভাবনাই বেশি। বলল প্লী।
তারপর আবার বিটিলকে প্রশ্ন করলো- তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো?
পড়াশুনা না করলেও গল্পের বই পড়া আবার বিটিলের শখ। তাই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে ভিনগ্রহের মানুষ সর্ম্পকেও সে পড়েছে। ফলে প্লী’র কথা তো তার বিশ্বাস হয়েছেই সেইসাথে কিছুটা রোমাঞ্চও অনুভব করেছে বিটিল। আর এই সময় তড়িৎ একটি দুষ্টুবুদ্ধি খেলে গেল বিটিলের মাথায়।
অতি ভালোমানুষ সেজে প্লী’কে সম্মান দেখিয়ে তাই সে বলল- দেখুন জনাব প্লী, আমাদের এই গ্রামে সবচেয়ে খারাপ মানুষ লিটিল, বয়সেও কম, তাই আমার মনে হয় আজ রাতের মধ্যেই ওকে মেরে ফেলা উচিত। এতে করে পৃথিবীর একটি অতি খারাপ মানুষ মরবে এবং আপনার কাজেরও শুভ সূচনা হবে।
সাথে সাথে প্লী’র দেহ থেকে তীব্র নীল আলো বিচ্ছুরিত হতে থাকল। অর্থাৎ বিটিলের কথায় কষ্ট পেয়েছে প্লী।
প্লী বলল- তোমরা কীভাবে এত হিংসাত্মক কথা বল? আমরা খারাপ মানুষ মারতে আসিনি, মানুষের খারাপ চরিত্রকে মারতে এসেছি।
কথা শুনে বিটিল একটু দমে গেলেও ভীষণ কৌত‚হল বোধ করল। তাই সে বলল- এ ব্যাপারটা ঠিক কীরকমভাবে করবেন?
উত্তরে প্লী বলল- তোমাকে মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বহনকারী ‘জিন’ এর কথা তো আগেই বলেছি। কোনো কোনো মানুষের ক্ষেত্রে একটি ক্রোমোজম বেশি থাকতে পারে, ক্রোমোজমের এই ধারণাকে বলা হয় ট্রাইজমী। যদি এই বাড়তি ক্রোমোজম ৯ নম্বর ক্রোমোজমের সঙ্গে অবস্থান করে সেক্ষেত্রে মানুষটি প্রচণ্ড শক্তিধর ও দুর্বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই তারা তাদের বুদ্ধিকে ধংসাত্মক ও হিংসাত্মক কাজে ব্যবহার করে। আমাদের কাজ শুরু করবো এই মানুষদের দিয়ে। তাদের চরিত্রের খারাপ দিকটি যদি নষ্ট করে দেয়া যায়, তাহলে তাদের বুদ্ধিগুলো ভালো কাজে লাগাবে।
– কিন্ত এটা কী করে করবেন?
– সমস্যাটা সেখানেই, তুমি নিশ্চয়ই জানো, জগতে কোনো শক্তিরই ক্ষয় নেই। তা শুধু এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থায় রূপ নিতে পারে। চরিত্রের ব্যাপারটাও অনেকটা সেরকম। তবে মুশকিল হলো, চরিত্রকে খারাপ থেকে ভালোতে রূপান্তরিত করার পদ্ধতিটি আমাদের জানা নেই। তবে চরিত্রকে আমরা প্রতিস্থাপন করতে পারি। তাই ঠিক করেছি এই পৃথিবীতে যারা মৃত্যুপথযাত্রী, তাদের মধ্যে আমরা অন্য মানুষের খারাপ চরিত্রের জন্য দায়ী ‘জিন’ কে প্রতিস্থাপন করবো। পরিবর্তে মৃত্যুপথযাত্রীর ভালো গুণসম্পন্ন ‘জিন’কে নিয়ে এসে অন্য মানুষের মধ্যে প্রতিস্থাপন করবো। এতে করে মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষটির খারাপ চরিত্রটিও পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে। তেমনি একটি খারাপ মানুষও ভালো হয়ে যাবে।
বিটিল অত্যন্ত বিজ্ঞের মতো বলল- হুঁ, বুঝলাম; তবে লিটিলের কী ব্যবস্থা করতে চান, জনাব প্লী?
প্লী এবার বললো- দেখ বিটিল, লিটিল একটি ভালো ছেলে। তার কোনো ব্যবস্থার দরকার নেই, আমাদের সেন্ট্রাল ইনফরমেশন ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী তুমি একজন ট্রাইজোমী-১২। ট্রাইজমী- ৯ এর মতো শক্তিধর না হলেও দুর্বুদ্ধিতে তুমি প্রায় তাদের সমান। অতএব আমরা তোমার বদগুণগুলো স্থানান্তর করবো একজন মৃত্যুপথ যাত্রীর মধ্যে। আশা করি এতে তুমি আমাদের আন্তরিকভাবে সাহায্য করবে। কেননা এর ফলে তুমি হবে একজন সৎ ও বুদ্ধিমান ছেলে। এই প্রস্তাবে উপরে উপরে খুশির ভাব দেখালেও মনে মনে দমে গেল বিটিল। লিটিলকে শায়েস্তা তাকে করতেই হবে। মনে মনে আফসোস করলো, ইশ! কোনোভাবে তার দুর্নামের ভাগটা যদি লিটিলকে দেয়া যেত। ভাবতে ভাবতে আবার বিটিল প্রশ্ন করলো- আমাকে এখন কী করতে হবে?
প্লী বললো- আপাতত তোমার কিছু করণীয় নেই, আগামীকাল আমরা তোমাদের এলাকায় একজন মৃত্যু পথযাত্রী খুঁজে বের করবো। তারপর তোমার খারাপ জিন-এর সঙ্গে তার ভালো জিন-এর অদল বদল করবো। এর মধ্যে তুমি একটু সাবধানে থাকবে। কারণ আমরা তোমার মতো বুদ্ধিমান লোক হারাতে চাই না। এই বলে প্লী বিদায় নিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই গভীরঘুমে ডুবে গেল বিটিল।
পরদিন সকাল থেকেই অস্থির বোধ করছে বিটিল। যে করেই হোক আজকের মধ্যে লিটিলের ব্যবস্থা করতে হবে। চিন্তায় ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে পারলো না। অবস্থা দেখে তার মা চিন্তিত হয়ে বল্লেন- কী রে, আজ তোর কী হলো?
মা’র কথায় বিরক্ত হয়ে উল্টো মাকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো বিটিল।
ছেলের এই রূঢ় ব্যবহার মা’র কাছে আগে থেকেই পরিচিত। তাই ছেলেকে আর না ঘাটিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সংসারের কাজে মন দিলেন। দুপুরের দিকে বাসার ছাদে বসে, লিটিলের কী শায়েস্তা করা যায়, তাই নিয়ে চুপচাপ ভাবছিলো বিটিল। এমন সময় ছাদ থেকে লিটিলকে যেতে দেখলো বিটিল। অমনি মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপলো। অবাক হয়ে চিন্তা করলো। তাইতো এই কথাটা এতোক্ষণ মনে হয়নি কেন? কোনোমতে যদি লিটিলকে আজকের মধ্যে মৃত্যুপথ যাত্রী করে দেয়া যায় তাহলে আর কী চাই! লিটিল তো মরবেই, সেই সঙ্গে তার খারাপ গুণগুলোও ওর মধ্যে চলে যাবে। হাতের কাছে আস্ত একটি ইট পেয়ে সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিল বিটিল এবং চিৎকার করে ডাকলো লিটিলকে।
এই লিটিল, একটা মজার কথা শুনে যা।
লিটিলের মনে খটকা লাগলো। খেলার ওই ঘটনার পর এতো ভালো মানুষের মতো তাকে ডাকার কথা নয় বিটিলের। তাই সন্দেহ নিয়ে বিটিলের বাড়ির দিকে সে এক পা এগোয় তো দু’পা পিছায়।
লিটিল আসতে ইতস্তত করছে দেখে বিটিলের মধ্যে রাগ ও উত্তেজনা দু’টোই বেড়ে গেলো।
– আরে তাড়াতাড়ি আয় না। ভেতরে উত্তেজনা চেপে রেখে আন্তরিক সুরে লিটিলকে ডাকলো বিটিল।
ক্ষোভ আর উত্তেজনা আর চেপে রাখতে পারলো না বিটিল। তাই লিটিল কাছাকাছি আসার আগেই ইট হাতে রেলিংবিহীন তিন তলা ছাদের কিনারে যেই গিয়েছে, অমনি ভারসাম্য হারিয়ে ইটসহ ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল বিটিল।
মাথা ফেটে প্রচুর রক্ত ঝরছে বিটিলের। অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে সে। অবস্থা দেখে লিটিল হতভম্ব, চিৎকার করে উঠলো। বিটিলের কাছে ছুটে গিয়ে সবাইকে ডাকতে লাগলো। যেহেতু নিজের বাড়ির ছাদ থেকেই পড়ে গেছে বিটিল, তাই লিটিলের ডাকে সাড়া দিয়ে বাড়ির লোকজন দ্রুতই চলে এলো।
বাজার থেকে মাতবর সাহেব খবর পেয়ে ছুটে আসেন। বিটিলকে শহরের বড় হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে বিটিলের জ্ঞান ফিরল না।
এম.আর.আই রিপোর্ট দেখে গম্ভীরমুখে ডাক্তার জানালেন- মেলিগন্যান্ট ইডিমা অফ ব্রেইন, মস্তিকে পানি জমে ফুলে উঠেছে আঘাতের কারণে, এ অবস্থায় কিছুই করার নেই।
বিটিল খারাপ ছেলে হলেও এই দুঃসংবাদে গ্রামের সবার মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এলো। এমনকি বিটিলের চির প্রতিদ্ব›দ্বী লিটিলও দুঃখে চুপ মেরে গেল। বেচারা ঘুণাক্ষরেও টের পেল না তাকে মারতে গিয়েই বিটিলের এই অবস্থা।

রাত সাড়ে এগারটা। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে অচেতন অবস্থায় বিটিল। এ অবস্থাতেই বিটিল দেখতে পেল- তীব্র নীল আলো ছড়িয়ে প্লী তার সামনে দাঁড়িয়ে। বিটিল ঠিক বুঝতে পারল না এটা কি বাস্তব না স্বপ্ন ? পুরো ঘটনাকেই তার কাছে অন্য জগতের বলে মনে হলো।
অত্যন্ত দুঃখিত গলায় প্লী বলল- কেন এমন করলে? মাত্র একটা দিন নিজেকে দুষ্কর্ম থেকে বিরত রাখতে পারলে না!
বিটিল দিশেহারার মতো বললো- তোমরা তো এখনই আমার চরিত্র বদলে দেবে, তার পর তো ভালো মানুষই হয়ে যাব আমি, আর খারাপ কাজ করবো না।
ঘরের নীল আলো তীব্র থেকে তীব্রতর হলো।
প্লী বলল- তোমার সবচেয়ে প্রিয় সহচর জেসানের খারাপ জিনগুলো এখন তোমার মধ্যে স্থানান্তর করবো। কেননা তুমি এখন মৃত্যুপথ যাত্রী। ০