পরিত্যক্ত মহাকাশ বন্দর

মমতাজ আহাম্মদ

0
81

রুডান, ওদিকে কোথায় যাচ্ছো? অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো কাইপা।
– আমাদের পরিত্যক্ত মহাকাশ বন্দরের দিকে যাচ্ছি।
– ওদিকে গিয়ে কী হবে? তুমি জানো না ওটা এখন আর যাওয়ার মতো জায়গা নেই? ওখানে কারজারা আর মোকারদের স্বর্গরাজ্য। ওই জঙ্গলে পদে পদে বিপদ। এতো কিছু জেনেও তুমি ওদিকে যাবে? বিস্ময় কাইপার কণ্ঠে।
– হ্যাঁ যাবো। তুমি কি খবর শুনেছো?
– কী খবর?
– আমাদের সম্রাট রুকাডিয়ান ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। তিনি এখন কোথায় আছেন তা কেউ জানে না।
– না তো, আমি তো সে খবর জানি না। এটা সত্যি নাকি?
– হ্যাঁ, সত্যি।
– এটা নিশ্চয়ই কোকারনদের কাজ?
– তাছাড়া আর কাদের হবে।
– কিন্তু তুমি ওই পরিত্যক্ত বন্দরে গিয়ে কী করবে?
– আসলে আমার মনে দীর্ঘ দিনের এক কৌত‚হল ধামাচাপা দেয়া আছে। আমি জানতে চাই ওই পরিত্যক্ত মহাকাশ বন্দরে কী আছে। কেন ওটাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষ কেন ওটাকে এড়িয়ে চলে। সবার কিসের এত ভয়?
– কিন্তু ওখানে যে বিপদ আছে সেটা তুমি সামাল দেবে কিভাবে?
– ভয় পেয়ো না। আমার কাছে অস্ত্র আছে। বলে পকেট থেকে অত্যাধুনিক অ্যাটমিক ব্লাস্টারটা বের করে কাইপাকে দেখালো রুডান।
– এটা তুমি কোথায় পেয়েছো? চোখ কপালে উঠল কাইপার।
– ওই বিধ্বস্ত মহাকাশযানটাতে পেয়েছি। এই ব্লাস্টার দিয়ে এক সাথে দশ থেকে কুড়িটা কারজারা বা মোকার মারা যাবে।
– তা ঠিক আছে কিন্তু তুমি ওখানে গিয়ে কী পাবে বলে আশা করছো?
– ওখানে নাকি রোবট আছে।
– তোমাকে এ কথা কে বলেছে?
– একটা রোবট বলেছে। সে ওই বিধ্বস্ত মহাকাশযানটাতে ছিল। ধ্বংস হয়ে যাবার আগে সে আমাকে এ কথা বলে গেছে। সে তার সেন্ট্রাল মেমোরি ইউনিটটা আমাকে দিয়ে গেছে। আমি তাকে বলেছিলাম এই মেমোরিটা দিয়ে আমি কী করবো? জবাবে সে বলেছে অন্য কোনো রোবটের কপোট্রনে এটা লাগালেই আবার সে বেঁচে উঠবে। তখন আমি জানতে চাইলাম, অন্য রোবট আমি কোথায় পাবো? সে বলল এই মহাকাশ বন্দরের কথা।
– ভারি আজব কথা। সে কী করে জানে যে এখানে রোবট আছে?
– সে বলেছে তার অনেক জ্ঞান। বিশ্ব-ভ্রম্মাÐের সমস্ত জ্ঞান নাকি তার কপোট্রনে জমা আছে। কাইপা, তুমি কখনো সামনাসামনি রোবট দেখেছো?
– নাহ, সিনেমায় দেখেছি।
– ও।
দুজনে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছে। তারা জঙ্গলের কাছাকাছি চলে এসেছে। এখানে চারদিকে ঘিরে একটা বেড়া দেয়া আছে। আর সেখানে লেখা আছে, এর ভেতরে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ, আদেশ ক্রমে- কর্তৃপক্ষ। রুডান তৈরি হয়েই এসেছে। তার হাতে একটি প্ল­ায়ার্স। সে সেটা দিয়ে বেড়ার কিছু অংশ কেটে ফেললো। একজন মানুষ যাওয়ার মতো ফাঁক হতেই সেটা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো রুডান। তার পিছু পিছু ঢুকল কাইপা।
এখানকার জঙ্গল একেবারেই আদিম এবং ঘন। এখানে মানুষের চলাচল নেই। তাই চলাচলের পথও নেই। বড় ছুরি দিয়ে গাছপালা ও লম্বা লম্বা ঘাস কেটে পথ বানিয়ে নিয়ে ভেতরে ঢুকতে হচ্ছে ওদের। ছোটখাটো জন্তু-জানোয়ার ওদের পায়ের আওয়াজ পেয়ে ছুটে পালিয়ে যাচ্ছে। কাইপা ভয়ে ভয়ে আছে। তার মনে হচ্ছে এই বুঝি ছুটে আসে মোকার বা কারজারারা। সে বার বার এদিকওদিক তাকাচ্ছে।
– কাইপা, ভয় পাচ্ছো নাকি?
– ভয় তো পাবারই কথা। যে কাজ বড়রা করতে সাহস পায় না, সে কাজ আমরা করতে এসেছি, এটা ভয়েরই কথা।
– কোনো-না-কোনো দিন, কেউ-না-কেউ তো এই কাজটা করতই। সেটা না হয় আমিই করলাম।
– তোমার অনেক সাহস রুডান। এত সাহস ভালো না। বেশি সাহসে বিপদ হতে পারে।
– এটা কার কথা?
– আমার বাবা বলেছে।
– ঠিক আছে, তোমার বাবার কথা তার কাছে থাক। চলো আমরা সামনে এগিয়ে যাই।
আরো প্রায় এক ঘণ্টা সেভাবেই পথ চলল ওরা দুজন। অনেকক্ষণ পর গাছপালার আড়াল থেকে মহাকাশ বন্দরের চ‚ড়াটা দেখা গেল।
– ওই যে সেটা। অপদেবতার মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফিসফিস করে বলল কাইপা।
– স-স-স….। মুখে আঙুল দিয়ে কাইপাকে চুপ করতে বলল রুডান।
– কী হয়েছে? তেমনই ফিসফিস করে জানতে চাইল কাইপা।
– মোকাররা আসছে। ওদের পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি। ওরা আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি কাইপা, এই গাছটাতে উঠে পড়।
রুডানের কথা শেষ হতেই এক লাফে বানরের মতো পাশের গাছটাতে উঠে পড়ল কাইপা। ওরা আবার বানরের মতো লাফাতে ওস্তাদ। রুডানও উঠে বসল গাছের একটি ডালে।
দুটি মোকার গুঁড়ি মেরে এদিকেই এগিয়ে আসছে। অনেকটা হিংস্র নেকড়ের মতো দেখতে মোকাররা। তবে নেকড়ের চেয়েও অনেক বড় তাদের শরীর। আর তাদের গায়ের রং বাদামী।
– আরেকটু হলেই গেছিলাম। মোকাররা প্রায় পৌঁছে গিয়েছিলো আমাদের কাছে। হাঁফ ছেড়ে বলল কাইপা।
ঠিক বলেছো। বলে হাতের অ্যাটমিক ব্লাস্টারটা তুলে লক্ষ্য স্থির করল রুডান।
ততক্ষণে মোকার দুটি গাছের নিচে চলে এসেছে। তারা গাছে ওঠার পাঁয়তারা করছে। মোকাররা চিতা বাঘের মতো। তারা যেকোনো সময় যেকোনো গাছে চড়তে পারে।
অ্যাটমিক ব্লাস্টারের ট্রিগারে চাপ পড়তেই এক চিলতে নীল রশ্মি ছুটে গেল মোকার দুটোর দিকে। সাথে সাথে চার টুকরা হয়ে গেল মোকার দুটি।
গাছ থেকে নেমে এলো ওরা। তারপর আবার শুরু হলো তাদের পথ চলা। এক সময় তারা পরিত্যক্ত মহাকাশ বন্দরের বিশাল ফটকের সামনে চলে এলো। মহাকাশ বন্দরের লোহার গেটে মরিচা পড়ে গেছে। এর ভেতরে বাইরে ঘন ঘাসের জঙ্গল বেড়ে উঠেছে। কোনো কোনো ঘাস এক মানুষ সমান উঁচু।
রুডান মরিচা পড়া লোহার গেটটা ধাক্কা দিলো। ওদের অবাক করে দিয়ে গেটটা খুলে গেল। তবে সেটা খুব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিতে হলো। ভিতরে ঢুকে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো ওরা। ওদের মনে হলো ওরা যেন আর সিরাট্রনে নেই। অন্য কোনো গ্রহে চলে এসেছে।
পকেট থেকে একটি ম্যাপ বের করলো রুডান। এটা সে পেয়েছে তার শিক্ষক ওরি কেরিনের কাছ থেকে। তার পুরনো বই-পত্রের মধ্যে এই কাগজটা ছিল।
– এই যে এটা হলো মহাকাশ বন্দরের অফিস। তার একটু দূরেই এই্ যে এখানে এসে নামত মহাকাশযানগুলো। এখানে ওদের একটি অবজারভেশন টাওয়ারও ছিল। বলে কাইপাকে ম্যাপে আঙুল দিয়ে সব কিছু দেখালো রুডান। তারপর সে তার দিনচশমাটা পরে নিলো। কারণ এদিকটা বেশ অন্ধকার। সাথে সাথে সব কিছু কেমন আলোয় ভরে গেল। রুডান সব কিছু পরিষ্কার দেখতে পেলো।
আরে এটা তো একটা দিনচশমা! এটা তুমি কোথায় পেয়েছো। চিৎকার করে উঠল কাইপা।
– ওই যে ঐ মহাকাশযান থেকে।
রুডান সব কিছু দেখছে কিন্তু কাইপা কিছুই দেখছে না। সে তার পিছু পিছু অন্ধের মতো চলছে। ওরা প্রথম যে ঘরে ঢুকলো সেই ঘরটা ভরা কম্পিউটার। দেয়ালে বিশাল একটা মনিটর। কিন্তু সব কিছুর ওপর পুরো ধুলোর আস্তরণ পড়েছে। অথচ এক সময় এই মহাকাশ বন্দরটা খুবই প্রাণবন্ত ছিল। প্রতিদিন এখানে মহাকাশযান ওঠা-নামা করত। কল্পনায় সেই দৃশ্যটা দেখতে পেল রুডান। সেই ঘরের ভেতর দুটো রোবট দেখতে পেল রুডান। ওরা কত বছর ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছে কে জানে। তাদের জয়েন্টে জয়েন্টে মরিচা পড়ে গেছে।
– রুডান, এখানে কোনো ইলেকট্রিসিটির ব্যবস্থা নেই?
– নিশ্চয়ই আছে। কেনো বাইরে ইলেকট্রিসিটি পোল দেখতে পাওনি?
– তাহলে আলো জ্বলছে না কেন?
– নিশ্চয়ই মেইন সুইচটা বন্ধ আছে বা অন্য কোনো কারণে এখানে পাওয়ার নেই। চলো তো দেখি মেইন সুইচটা কোথায় আছে।
ম্যাপের নির্দেশমতো চলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ওরা পাওয়ার কন্ট্রোল রুমে চলে এলো। সেখানে মেইন সুইচটা বন্ধ ছিল। রুডান সুইচটা অন করল। সাথে সাথে মৃদু গুঞ্জন তুলে কয়েকটা মেশিন চালু হলো। বাতিগুলোও জ্বলে উঠল।
– এ তো দারুণ কাজ হলো! বলে উঠল কাইপা।
ঠিক বলেছো। বলে দিনচশমা খুলে পকেটে ঢোকালো রুডান। তারপর সে দেয়ালে দাঁড় করানো সারি সারি আলমারির ডালা খুলে সেগুলো খুঁজতে লাগলো।
তুমি কি খুঁজছো? প্রশ্ন করল কাইপা।
– দেখি কিছু পাওয়া যায় কি না, যা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় হতে পারে।
বেশির ভাগ ড্রয়ারেই কাগজপত্র ঠাসা। কোনো কোনো ড্রয়ারে কিছু যন্ত্রপাতিও দেখতে পেল সে। খুঁজতে খুঁজতে একটা তালাবদ্ধ ড্রয়ার দেখতে পেল সে। আর দেরি না করে তালাটা ভাঙলো সে। ভেতরে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল রুডান। তার চোখ জোড়া ছানাবড়া হয়ে গেল। তাই দেখে কাইপা এগিয়ে এলো।
– কী হয়েছে? খারাপ কিছু আছে এখানে? বলে সে উঁকি দিলো খোলা ড্রয়ারে।
ড্রয়ার ভর্তি চকচকে অ্যাটমিক ব্লাস্টার। বিশেষ এক ধরনের ট্রান্সপারেন্ট পলিথিনে মোড়ানো সেগুলো।
ওয়াও, দারুণ তো। বলে চিৎকার করে উঠল কাইপা।
হুম দারুণ জিনিস। বলে পলিথিন খুলে একটা অ্যাটমিক ব্লাস্টার হাতে নিলো রুডান। তারপর লক্ষ্য স্থির করে ট্রিগার টিপলো। সাথে সাথে সেটা থেকে এক ঝলক মারণরশ্নি ছুটল। তাই দেখে হাসি ফুটে উঠল রুডানের মুখে। মোক্ষম জিনিস। এখনো ভালো আছে। একেবারে নতুনের মতো। রুডানের মুখ থেকে প্রশংসাধ্বনী বেরিয়ে এলো। তারপর সে আবার সেটা পলিথিনের ভেতরে রেখে দিলো। এটা এখানেই থাক। পরে প্রয়োজনের সময় এখান থেকে নেয়া যাবে।
পুরো মহাকাশ বন্দরে ওরা দশটা রোবট দেখতে পেল। তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ ছিল যেটা সেটা হলো একটা বাক্স বন্ধ রোবট পেল ওরা। তার গায়ের রঙ ছাই। রুডান ঠিক করল এই রোবটটার কপোট্রনেই সে মেমোরিটা ঢোকাবে। কিন্তু তার আগে রোবটটার ব্যাটারি চার্জ দিতে হবে। ওটা কত দিন আগে চার্জ দেয়া ছিল কে জানে। তারপর ওর প্রতিটি জয়েন্টে লুব্রিকেন্ট দিতে হবে। এত দিনে সেখানে মরচে পড়ে গেছে কি না কে জানে।
পরবর্তী চারটি ঘণ্টা ওরা দুজন অনেকগুলো কাজ করলো। রোবটটাকে মেঝেতে শুইয়ে তার প্রতিটি জয়েন্টে লুব্রিকেন্ট দিলো। তবে সেটা প্যাকেটেরে ভেতরে ছিল বলে তাতে মরচে পড়েনি। আর ব্যাটারি চার্জে দেয়ার ব্যবস্থা করল। এরপর সে কম্পিউটারগুলো অন করার চেষ্টা করল কিন্তু একটা কম্পিউটারও অন করা গেল না। রুডান চেষ্টা করল, তবে তাকে নিরাশ হতে হলো। অন হলো না একটা কম্পিউটারও।
পাঁচ ঘণ্টা পর ব্যাটারিটা রোবটের বুকে স্থাপন করল রুডান। তারপর তার কপোট্রনে মেমোরিটা লাগিয়ে সেটার সুইচ টিপে অন করল সে। সাথে সাথে তার ফটোসেলের চোখ জোড়া জ্বলে উঠল। সবুজ চোখে আলো দেখা গেল। তার বুকের ভেতরে ঘড় ঘড় শব্দ হতে লাগল। হাত-পা, মাথা নড়ে উঠল। সে ঘাড় ঘুরিয়ে রুডানের দিকে তাকালো।
– এই যে ছেলে, তোমাকে বলেছিলাম না আমার মেমোরিটা যে কোনো রোবটের ভেতরে লাগালেই আমি জীবন ফিরে পাবো? কী আমার কথা বিশ্বাস হলো তো?
তোমাকে কথা বলতে দেখে আমার খুব খুশি লাগছে। বলল রুডান।
কিন্তু আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে। বলল রোবটটা।
– কেন, কেন? অবাক হলো রুডান।
– এই রকম একটি মান্ধাতার আমলের রোবটের শরীরে আমার মেমোরিটা ঢুকিয়েছো তুমি, এই জন্য।
– আমি দুঃখিত। এখানে এর চেয়ে ভালো রোবট আর আমাদের চোখে পড়েনি।
– দেখেছো, আমি ঠিকমতো আমার হাত-পাও নাড়তে পারছি না। এটা কত বছর আগের রোবট জানো তুমি? আজ থেকে পাঁচ বছর আগে এই ধরনের রোবটের খুব কদর ছিল। এগুলো তখন উঁচু মাত্রার রোবটের মর্যাদা পেয়েছিল কিন্তু এখন এই রোবটগুলো আছে জাদুঘরে।
– এ্যাঁ, তাই নাকি?
– হ্যাঁ। বর্তমানে আমাদের বহিরাবরণ মানুষের ত্বকের আদলে করা হয়েছে। তাই আমাদের কাটলে আমরা ব্যথা পাই। আমাদের মানবীয় আবেগ, অনভ‚তি সবই আছে। আমরা দুঃখিত হই, খুশি হই। আমার শরীরটার জন্য আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
– কষ্ট হলেও কিছুই করার নেই। ওই রকম আরেকটি শরীর না পাওয়া পর্যন্ত তোমাকে এটার ভেতরেই থাকতে হবে।
– তা অবশ্যি ঠিক। তাতে আমার সুবিধাই হবে। কেউ আমাকে মারলেও আমার কষ্ট হবে না। বাহ তাহলে তো ভারি মজা! এখন আমি যে কোনো বিপজ্জনক কাজ করতে পারবো। এমনকি আগুনের মধ্যেও ঝাঁপ দিতে পারবো।
– আমার মনে হয় তুমি কথা একটু বেশিই বলো।
– তোমার এই কথাটা ঠিক। আমি অনেক আগে থেকেই কথা বেশি বলি। এই জন্য আমাকে অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়। একবার ক্রোনক গ্রহে গিয়েছিলাম। সেখানে বেশি কথা বলার জন্য আমার ভারি বিপদ হয়ে গিয়েছিলো। শোনো, আমাকে পাঠানো হয়েছিল একটি…।
রুডান রোবটটাকে থামিয়ে দিলো। বুঝলো এর সাথে কথা বললে আর কথা শেষ হবে না। সে দিনরাত বকর বকর করতেই থাকবে, করতেই থাকবে।
– আচ্ছা, তোমার সেই গল্প পরে শোনা যাবে। এত সময় হলো কিন্তু তোমার নামটাই জানা হলো না। তোমার নাম কী?
– ওহ হো, দেখো কথা বলতে বলতে নিজের পরিচয় দিতেই ভুলে গিয়েছি। আমার নাম রুটেক। আমি সর্বশেষ জেনারেশনের একটি গণিত বিশারদ রোবট। বর্তমান সময়ে আমার গুরুত্ব অপরিসীম। ট্রানস অ্যাটমিক ফিজিকসের গূঢ় তত্ত¡ আমার জানা আছে।
– শোনো, আপাতত আমাদের কোনো গণিতবিশারদ রোবটের দরকার নেই। তুমি সাধারণ রোবট হয়ে দয়া করে একটু চুপচাপ থাকো, তাহলেই চলবে।
– ঠিক আছে, এই আমি চুপ করলাম। তবে আমার আরেকটি গুণও কিন্তু আছে, আমি মহাকাশযান চালাতে পারি। শুধু পারি না, এ ব্যাপারে আমাকে বিশেষজ্ঞও বলতে পারো। একবার হয়েছে কি, মহাকাশে চলছি…।
কিন্তু এখানে তো তোমাকে আর মহাকাশযান চালাতে হবে না। কারণ এখানে কোনো মহাকাশযানই নেই। বলল রুডান।
– আছে, আছে।
আছে, কোথায়? চমকে গেল রুডান।
এই মহাকাশ বন্দরের গোপন এক স্থানে ছোট ছোট কিছু দ্রæতগামী মহাকাশযান আছে।
– কিন্তু সেগুলো নিশ্চয়ই এখন অকেজো হয়ে গেছে।
– কোনো সমস্যা নেই। আমি আছি না? সব অকেজো মহাকাশযান আমি ঠিক করতে পারবো। আমার কপোট্রনে যে কী পরিমাণ জ্ঞান আছে তা তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না। আগেই বলেছি এই বিশ্ব ভ্রহ্মাÐের সকল জ্ঞান আমার কপোট্রনে জমা আছে। আর কী যে সেই জ্ঞান, তা তোমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে তোমরা বুঝবে না। আমি হলাম বর্তমান সময়ের একটি শ্রেষ্ঠ রোবট। সম্রাট বা রাজাদের কাছে আমাদের অনেক কদর। আমাকে বানানো হয়েছেই তাদের জন্য। টাকা থাকলেও কেউ আমাকে কিনতে পারবে না। আমাকে কিনতে হলে সম্ভ্রান্তের খাতায় নাম লেখাতে হবে। আর তাছাড়া আমার দামও অনেক। আমি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আমার দাম জানো কত? আমার দাম হলো……।
– তোমার বকবক একটু থামাবে রুটেক? তোমার লেকচার শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা হয়ে গেল। আর তোমার দাম পরে শুনবো কারণ আমাদের এই গ্রহে তোমার কোনো দামই নেই। কে কিনবে তোমাকে? কে তোমার জ্ঞানগর্ভ গণিত সমাধান বা পদার্থ বিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্রের কথা শুনতে চাইবে? বলে রুটেককে থামিয়ে দিলো রুডান।
– তুমি তো ঠিক কথাই বলেছো। খুবই চিন্তার কথা, খুবই ভাবনার কথা। তাহলে এখন আমার কী অবস্থা হবে? ভীষণ চিন্তিত মনে হলো রুটেককে।
– তুমি আপাতত আমার কথা শোনো। আমি তোমাকে যা বলি তুমি সেই কথা শোনো। তাতে তোমার ভালোই হবে, খারাপ হবে না। আমি যা বলবো, তাই তোমাকে মানতে হবে।
– ঠিক আছে। আজ থেকে আমি তোমার আজ্ঞাবহ। বলে রুডানকে কুর্র্নিশ করল রুটেক। তাহলে আমার প্রথম কাজ কী?
– তোমার প্রথম কাজ হলো লুকিয়ে থাকা সেই মহাকাশযানগুলো খুঁজে বের করা। তারপর সেগুলো চলার উপযোগী করে তোলা এবং তারপর সেগুলো আমাকে চালানো শেখানো।
– ব্যস, ব্যস আর বলতে হবে না। আমি সব কিছু পরিষ্কার বুঝতে পারছি। তুমি ওই মহাকাশযানে চড়ে ঘুরতে চাও তাই না?
শুধু ঘুরতে না। আমি ওগুলোতে চড়ে মেঞ্চুরিয়ানে যেতে চাই। হেসে বলল রুডান।
– কেন, কেন, মেঞ্চুরিয়ানে কেন?
– সেটা পরে বলবো। এখন চলো মহাকাশযানের কাছে আমাকে নিয়ে চলো।
ঠিক আছে চলো। বলে হেলেদুলে হাঁটতে লাগল রুটেক। তাকে অনুসরণ করতে লাগল রুডান ও কাইপা।