এক বাড়িতে একটা দুষ্টু ছেলে ছিল। কারো কথা শুনত না। সে নিজে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করে। কাউকে তোয়াক্কা করে না। গ্রামের আরো দুষ্টু ছেলেদের সাথে মিশে বিভিনড়ব রকম μাইমে জড়িয়ে থাকে। বদস্বভাবের। মাঝে মাঝে মাদক নেয়। হাসান মিয়া বারণ করবে করেও পারে না। একটি ছেলে তার। ছেলেকে জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। মারতেও পারে না। কী করবে? নিরুপায়।

পড়াশুনা ভালো করে না। ওর জ্বালা যন্ত্রণায় আশেপাশে কারো গাছের আম, বরই, পেয়ারা কিছুই থাকে না। গ্রামের মানুষ রাগন্বিত হয়ে থাকে।

একদিন পেয়ারা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে। খুব বাকাবকি করে ছেড়ে দেয়। হাসান মিয়ার কাছে বিচার দেয়। তিনিও বকাঝকা করেন।

কিন্তু বকাঝকা এক কান দিয়ে ঢোকে আরেক কান দিয়ে বের হয়। রাত হলে সুমার বাড়িতে এসে দরজায় ঠক ঠক শব্দ করে। টিনে ঢিল ছোড়ে। সুমাও ক্ষিপ্ত তার প্রতি। সুমাদের পাশের বাড়িতে ঢিল ছুড়ছে সে। বাড়ির বড় মেয়েটার পরীক্ষা। পড়ালেখা করছে। বারবার ডিস্টার্ব করে। মেয়েটার বাবা উঠে দরজা খুলতে দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায়। জিজ্ঞেস করলে বাবা বলে ওই যে দুষ্টু ছেলেটা। সুমাদের পেয়ারা চুরি করছিল।

ও খুব বদটাইপের বাবা। একদম ভালো না। নেশাও করে…।

সকাল হলে সুমা ওদের বাসায় এলো। এসে শুনতে পেলো তাদের বাসায় নাকি রাত্রে ঢিল ছুড়ছিল কেউ। আমাদের বাসায় ও তো কে জানি ঢিল ছুড়ছিল। মনে মনে প্রচ- রাগ হচ্ছিলো। পড়াশুনার সময় ডিস্টার্ব করা কার ভালো লাগে বলো?

দুষ্টু ছেলেটা হাসতে হাসতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। রুমা সুমা ওই রাস্তা দিয়ে আসছিল। দুষ্টুটা মাঝে মাঝে ইভটিজিং করে। আজো করেছে। বিরক্ত লাগে এসব! বখাটে ছেলেদের জন্য ওরা বাইরে যেতে ভয় পায়। কী করার তবু আমাদের যেতে হয় বাস্তবতার খাতিরে। নিয়মিত স্কুল প্রাইভেটে যাওয়া লাগে। বড় ভাইয়াকে বিষয়টি জানায়। আমাদের একটা ছেলে জ্বালায় রোজ রোজ। ডিস্টার্ব করে। তখন ভাইয়া ছেলেটাকে শাস্তি দেয়। তবুও তার শিক্ষা হয় না। পাগলা কুকুরের মতো ওদের পিছু লেগে থাকে। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে দেখে একটি বড় আমের গাছে আম পেকে আছে। লোভ করে গাছে উঠে পড়ে। পাকা পাকা কয়েকটা আম খেয়ে নামার মুহূর্তে লক্ষ করে পাখির বাসা। চারটা ডিম আছে। পাখির ডিম চুরি করা নিয়মিত অভ্যাস।

ডিমগুলো সব নিচে নিয়ে আসে।

পাখিটি এসে ডিম খুঁজে না পেয়ে কানড়বা শুরু করে দেয়।

কিছু দিন পর পাখিটা আবার ডিম পাড়ে।

এবার সে ডিম চুরি করতে এসেছে। গাছে উঠবে এই মুহূর্তে এক বৃদ্ধলোক দেখে ফেলে। এই সময়ে গাছে উঠবে কেন? খাড়া দুপুরে মতলব কী? আম তো ফুরিয়ে গেছে। বৃদ্ধ গাছের দিকে তাকিয়ে দেখে পাখির বাসা। বুঝে ফেলল। মতলব আম না ডিম চুরি। বৃদ্ধ বলে শোনো বাবা তুমি ফিরে যাও ডিম চুরি কোরো না।

তুমি একবার ভাবো তো, তোমার পিতামাতার সন্তান তুমি, কখনো কোনোদিন তোমাকে কেউ যদি অপহরণ করে তবে তোমার পিতামাতা কী করবে? দুষ্টু ছেলেটি বলল আমার পিতামাতা আমার খোঁজখবর করবে। না পেলে কাঁদবে। তাহলে যে ডিম চুরি করছো। পাখিটি কি কাঁদবে না। কষ্ট পাবে না? বৃদ্ধলোক এই বলে চলে গেল। তবু কিছুতেই কিছু মানলো না সে। সোজা গাছে উঠে পড়ে। পাখির বাসার কাছে পৌঁছার আগেই সে একটা ডাল ভেঙে পড়ে গেল মাটিতে। একটি হাত ভেঙে যায়। মনে মনে চিন্তা করে আমি যদি বৃদ্ধর কথা শুনতাম তাহলে আজ এই দুর্ঘটনার শিকার হতাম না। খুব কষ্ট হচ্ছে। বুঝতে পারল বড়দের কথা শুনতে হয়। না শুনলে বিপদ হয়। আমি আজ থেকে আর দুষ্টুমি করবো না। খারাপ ছেলেদের সাথে ঘুরবো না। মাদক নেবো না। আজ থেকে আমি শপথ নিলাম।