দুর্বিষহ স্মৃতি

জসিম উদ্দিন

0
60

শীতের অমাবস্যার রাত।
জমাট বাঁধা কুয়াশার চাদরের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে পটলা। গন্তব্য এখান থেকে এক মাইল দূরের শ্মশান। বাড়ি থেকে পালিয়ে ভূত দেখার লোভ সামলাতে পারেনি ও। লোকে বলে অমাবস্যার রাতে শ্মশানে নাকি ভূত এসে দেখা দেয়। ভূত টূত অবশ্য বিশ্বাস করে না ও। ওর মতে ভূত আছে এমন কিছু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। মানুষ কেন ভূতে বিশ্বাস করে তাও বুঝতে পারে না ও? ভূতের ভয়ে সবাই যখন জড়সড় তখন পটলা যাচ্ছে ভূতের দেখা পেতে।
নির্জন রাস্তা। দুই ধারে মেহেগনি গাছ। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। পটলা ভাবে, জোরে হাঁটতে হবে।
পটলা জোর পায়ে হাঁটতে থাকে। খুব কাছাকাছি চলে এসেছে শ্মশানের। উত্তরদিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
মিনিট পাঁচেক হাঁটতেই প্রায় শ্মশানে পৌঁছে গেল সে। শ্মশানের পাশে আসতেই এক ঝটকা প্রবল হাওয়া গাছপালা এমনকি পটলাকে পর্যন্ত নাড়িয়ে দিয়ে গেল। এরপর পটলা আড়চোখে লক্ষ করল তার আশেপাশের গাছগুলো থেকে অদৃশ্য কিছু ওঠা-নামা করছে। নির্দিষ্ট কোনো আকৃতি নেই। তবুও মনে হয় গাছের মগডালে বসে আছে। আবার সরাসরি তাকালে কিছুই নেই। যেন এক মুহূর্ত মনে হয়েছিল ও দুঃস্বপ্ন দেখছিল। পটলা বুঝতে পারল ও ভয় পাচ্ছে। পরক্ষণেই ও সব ভয়-উদ্বেগ ঝেড়ে ফেলে দিলো। ভূত যদি থাকে তাহলে ওর কাছে আসছে না কেন?
নীরবে পেছনে এসে দাঁড়াল একটি ছায়ামূর্তি। পেছনে কিছুর অস্তিত্ব টের পেয়ে পটলা ঘুরে দাঁড়াল। দেখতে পেল একটা ছায়ামূর্তি। জিজ্ঞেস করলÑ কে তুমি?
কিন্তু কোনো উত্তর এলো না। হঠাৎ কে যেন ওর ঘাড় স্পর্শ করল। ধড়াস করে লাফ দিয়ে উঠল ওর হৃদপিণ্ড। জান্তব চিৎকার দিয়ে উঠল পটলা। বুকের মাঝে শুরু হয়েছে তার ছুটন্ত ঘোড়ার টগবগ-টগবগ।
হাতের ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিতে চায় স্পর্শ। কিন্তু পারে না। দৌড়ে পালাতে চায় ও। কিন্তু কপাল খারাপ। কিছুর সাথে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়।
পড়িমড়ি করে উঠে দাঁড়াল। পালাতে হবে এই শ্মশান থেকে!আবার পালাতে গিয়েও পারল না পটলা।
অদ্ভুত এক ভূতুড়ে হাসি শুনতে পেল ও। আবার দেখতে পেল ছায়ামূর্তি।
আবারও দৌড়াতে শুরু করার জন্য ঘুরে দাঁড়াল ও। দৌড়াতে গিয়ে আবার থামতে বাধ্য হলো। কোনো এক পৈশাচিক থাবা আঁকড়ে ধরেছে ওর ঘাড়। আর কেউ যেন দুই গালে মারল দুইখানা বিরাট চড়। চড় খেয়ে ঘুরতে ঘুরতে পটলা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। ছায়ামূর্তিটা হাসতে শুরু করল। জ্ঞান হারানোর কয়েক সেকেন্ডের মাঝে ওর আবার জ্ঞান ফিরে এলো। জ্ঞান ফিরতেই উঠে দাঁড়াল ও। তারপর নিজের দুই গালে দুটো হাত চেপে ধরল। বেশ বুঝতে পারল ভূতের খপ্পরে পড়েছে ও। কিছুক্ষণের মাঝে হয়তো ওটা ওর প্রাণ কেড়ে নেবে।
আহ! অসহ্য ব্যথায় চিৎকার করে উঠল পটলা। ভূতটা যেন ওর ঘাড়ে কামড় বসিয়েছে।
হাঁটু ভেঙে পড়ে গেল ও। ভূতের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য তড়পাড় করতে লাগল।
পকেট থেকে দেয়াশলাইয়ের কাঠি বের করে জ্বালানোর চেষ্টা করল।
কী আশ্চর্য! দেয়াশলাই যেন জ্বলে উঠল জাদুমন্ত্রের বলে।
হঠাৎ উধাও হয়ে গেল ঘাড় থেকে হাতের স্পর্শ। এই সুযোগে বাড়ির দিকে দৌড়াতে শুরু করল পটলা।
কিভাবে ছুটতে ছুটতে যে বাড়ি এসে পৌঁছে গেল, সেটা বুঝতে পারল না। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ও। কিন্তু পেছনে পড়ে রইল শ্মশানে ওর সাথে ঘটে যাওয়া দুর্বিষহ স্মৃতি।