এরিয়া ফরটি ওয়ান

আবু নেসার শাহীন

0
262

পাহাড়চূড়ায় মেঘবাড়ি। জানালার পাশ দিয়ে ভেসে যায় মেঘ। হাত বাড়ালে ছোয়াঁও যায়। দিগন্তবিস্তৃত শুধু পাহাড় আর গাছ। দুর্ভেদ্য বেষ্টনীতে এর প্রবেশপথে লেখা আছে, অনাধিকার প্রবেশকারীকে গুলি করা হতে পারে।

রাঙামাটি বেড়াতে এসে মুসা এ লেখা দেখে মনে মনে আকাশ কুসুম ভাবে। সে গেইটের ওপর বসানো সিসি টিভি ক্যামেরা দেখে ফিরে যায় বার বার। শেষে মনস্থির করে সে এখানে ঢুকবেই। একদিন খুব ভোরে দক্ষিণের মস্ত ড্রেনের ফুটো দিয়ে ভেতরে ঢোকে। আলো ঝলমল পরিবেশ । দুইজন নিগ্র এলিয়েন নিচুগলায় কথা বলছে। কাঁধে দুই নলা বন্দুক। কথা বলতে বলতে দূরে চলে যায়। এলিয়েনদের উচ্চতা সাড়ে তিন ফুট, শরীর লোমহীন, কালো রঙের বড় বড় চোখ।

একটা সবজিক্ষেতে কাজ করছে কিছু লোক। ওদের পেছনে গোঁফওয়ালা দুইজন এলিয়েন ছরি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরপর লোকগুলোর পিঠে চাবুক মারে। চাবুক খেয়ে কেউ একটু শব্দ করছে না। গেইট দিয়ে একটা গাড়ি ঢোকে। গাড়িটা সবজিক্ষেতের কাছাকাছি এসে কিছু খাবার ছুড়ে মারে।
লোকগুলো কাজ ফেলে খাবার খায়। হঠাৎ কে যেন তার পিঠে হাত রাখে। সে চমকে উঠে পেছনে ঘুড়ে দেখে তার বয়সী একটা ছেলে। ছেলেটা দু’চোখ কপালে তুলে বলল, তুমি? এখানে কী করে এলে? কী হলো কথা বলছো না কেন?

সে একটা ইটের টুকরো তুলে ছেলেটার মাথায় আঘাত করতেই ছেলেটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। দ্রুত ছেলেটার পোশাক সে পরে নেয় এবং কাঁধে বন্দুক ঝুলিয়ে হাঁটতে থাকে। একটা খোঁড়া লোক পা টেনে টেনে হাঁটছে আর বলছে, একদিন সব ফাঁস হয়ে যাবে। সেদিন পালানোর সুযোগ পাবে না। আল্লাহ জানে আমার বউ ছেলে মেয়ে কেমন আছে?

সামনে মস্ত বড় হলঘর। হলঘরের বিশাল দরজা খুলতেই ভারী অস্ত্র কাঁধে নিয়ে এক দল এলিয়েন বাইরে বেরিয়ে আসে। সে এই ফাঁকে ভেতরে ঢোকে। একনাগাড়ে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটে। হঠাৎ একটা এলিয়েনের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। এলিয়েনটা চলে যেতেই সে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। একটা কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওঠে। ছোটো ছোটো খাঁচায় অনেক লোক বন্দি। একজন বুড়ো লোক বলল, তুমি এখানে? তোমাকে তো আগে দেখিনি?
আপনারা এখানে কিভাবে এলেন? সে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
– এলিয়েনদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়েছি। তবে তুমি অতিরিক্ত রিস্ক নিয়ে ফেলেছ। একবার ভাবো ধরা পড়লে তোমার কী হবে? ভেবেছো?
– উহুঁ। আচ্ছা স্যাটেলাইট ক্যামেরায় এটা দেখা যায় না?
– না এরিয়া ফরটি ওয়ান পৃথিবীর সবচেয়ে সুরিক্ষিত জায়গা। এখান থেকে পৃথিবীর কোথায় কী হচ্ছে সব দেখা যায়। কিন্তু এখানে কী হচ্ছে তার কিছ্্্্্্্ইু পৃথিবীর কেউ জানে না।

– কিভাবে ধরা পড়লেন?
– সে অনেক কথা। কাল আমাদের নিয়ে তাদের গ্রহে চলে যাবে।
প্লিজ কিছু একটা করো।
কিন্তু কিভাবে? সে উদ্বিগ্ন হয়ে উদাস গলায় বলল।

কর্ণফুলী থেকে জল এনে মাটির গভীরে জলবিদ্যুৎ তৈরি করে এরা। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এক সেকেন্ডের জন্যও বিদ্যুৎ যায় না। তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা করে যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করা যায়। তাহলে স্যাটেলাইটে এরিয়া ফরটি ওয়ান রহস্য ফাঁস হয়ে যাবে।
– সত্যি। শুনেছি একটা পিংপং বলের মতো বোমা তৈরি করছে এরা। এটা ফাটলে অর্ধেক পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।
– হু ঠিক শুনেছ। এরিয়া ফরটি ওয়ানের বিদ্যুৎ কেন্দ্র খোঁজ করতে বারো ঘণ্টা কেটে যায় তার।
দক্ষিণে মাটির নিচে কিছু একটা আঁচ করে মুসা। বড় একটা ঢিবি। ঢিবির ওপর বিশাল বটগাছ। বটগাছের গুঁড়ির নিচ দিয়ে একটা সুড়ঙ্গ পথ। খুব ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যায় বট গাছটা আসল না, নকল। সে চারদিকে ভালো করে দেখে। না, কেউ নেই। ধীরে ধীরে সুড়ঙ্গ ধরে নিচে নামে। ভট্-ভট্ শব্দ হচ্ছে। বেশ কয়েকজন এলিয়েন ঘুমাচ্ছে। আবার কেউ কেউ ব্যস্তসমস্ত হয়ে পায়চারি করছে। একটা বিশাল আকৃতির চাকা ঘুরছে পানিতে। একপাশে দেয়ালে অসংখ্য বাটন।

সে একটা একটা করে বাটন টিপে। হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে। চাকা ঘোরা বন্ধ হয়ে যায়। সে সুড়ঙ্গ দিয়ে দ্রুত উপরে উঠতে থাকে। স্যাটেলাইট ক্যামেরার মাধ্যমে এরিয়া ফরটি ওয়ান রহস্য প্রকাশ পায়।

খবর পেয়ে ছুটে আসে হাজার হাজার মানুষ। এলিয়েনরা অবশ্য তার আগেই পালিয়ে যায়। একজন সাংবাদিক এগিয়ে এসে বলল, ‘কেউ বুঝতে পারেনি আর আপনি কি না…?’
ও না বুঝে এখানে এসেছে। বুড়ো লোকটা বলল।
আমি আমার পরিবারকে ফিরে পেয়েছি। খোঁড়া লোকটা বলল।
পরদিন ঢাকায় ফেরে মুসা। তাকে খুব ক্লান্ত দেখায়। গোসল করে দুপুরের খাবার খায়। লম্বা একটা ঘুম দিয়ে উঠে দেখে মা বসে আছেন। মুখ ফ্যাকাশে। আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলতে তুলতে বলল, কী ব্যাপার মা?

– বলছিলাম কী এলিয়েনরা আবার আমাদের ক্ষতি করবে না তো?
মাকে খুব উদ্বিগ্ন দেখায়।
– দূর! কী বলছো এসব? সে বিছানা ছেড়ে বাথরুমে যায়। মা বিকেলের নাশতা বানাতে রান্নাঘরে ঢোকে।