অতিথি পাখি

ঝুমা আক্তার

0
136

তমাল, হিমেল আর অপু তিন বন্ধু। তিন জনেই ক্লাস ফাইভে পড়ে। তমাল প্রকৃতিপ্রেমী ছেলে। প্রকৃতির সকল জিনিসের প্রতি তার ভালোবাসা অনেক। তমাল বেশ কিছু দিন ধরে একটা বিষয় নিয়ে খুব ভাবছে। মনে মনে বলছে আজ বিকেলেই হিমেল ও অপুকে আমার ভাবনার কথা জানাতে হবে। তমাল তার বন্ধুদের নিয়ে বিকেলে নদীর পাড়ে গেল। তখন নদীর পাড়ে ও গাছগাছালিতে ছিল অনেক রকম পাখি। তমাল হাত ইশারা করে পাখিগুলো হিমেল ও অপুকে দেখিয়ে বলল, দেখ দেখ কী চমৎকার পাখি। আজ তোদের পাখির গল্প বলতেই নদীর পাড়ে নিয়ে এলাম। হিমেল আর অপু অবাক হয়ে পাখিদের দেখছে আর তমালের কথা শুনছে।

অপু বলল, হ্যাঁ সত্যিই তো! অনেক সুন্দর পাখি! কিন্তু এই পাখিগুলো তো আগে দেখিনি। হঠাৎ কোথা থেকে এলো এতগুলো পাখি? তমাল বলল, সেই কথা বলতেই তো এলাম তোদের কাছে। মন দিয়ে শোন, ওরা হলো অতিথি পাখি। শীতকালে পাখিরা দল বেঁধে আমাদের দেশে আসে আশ্রয়ের জন্য। খাদ্যের সন্ধানে বহু পথ অতিক্রম করে পাখিরা আসে। পাখি হলো প্রকৃতির সৌন্দর্য। কিন্তু দুঃখের কথা হলো আমরা লোভী মানুষ অতিথি পাখিদের শিকার করে পেটের ক্ষুধা মেটাই। যে পাখিগুলো এত এত পথ অতিক্রম করে সামান্য খাবারের জন্য আমাদের দেশে আশ্রয় নেয়, সেই পাখিদেরকে মানুষ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে। আমরা তিন বন্ধু আজ থেকে অতিথি পাখির পাশে দাঁড়াবো। কেউ পাখি শিকার করতে এলে তাদের আমরা পাখি সম্পর্কে বলবো। অতিথি পাখির খাদ্যের ব্যবস্থা করব। তমালের কথা শুনে হিমেল ও অপু বলল, তাহলে তাই হবে। আমরা অতিথির পাখির যথেষ্ট খেয়াল রাখবো এবং যারা পাখি শিকার করে তাদেরকে এই জঘন্য কাজ থেকে ফিরিয়ে আনব। তমাল, হিমেল ও অপু পরদিন সকালে নদীর পাড়ের গাছগুলোতে খড়কুটা ও বন দিয়ে অনেকগুলো বাসা বেঁধে দিলো। পাখিরা যেন আরাম করে থাকতে পারে। তিনজন মিলে পাখিদের খাবার সংগ্রহ করতে শুরু করলো। প্রতিদিন বিকেলে নদীর পাড়ে ধান ছিটিয়ে দেয় আর পাখিগুলো খাবার দেখে মনের খুশিতে খেতে আসে। তমাল হিমেল ও অপু পাখিদের আনন্দ দেখে তারাও খুব আনন্দিত হয়। একদিন সকালে হঠাৎ অপুর চোখে একদল লোক পড়ল তারা পাখি ধরার পরিকল্পনা করছে। তাদের পেশাই হলো পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করা। পাখি বিক্রি করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়। অপু হিমেল ও তমালকে ব্যাপারটি জানিয়ে দিলো। তিনজন দৌড়ে ছুটে গেল শিকারিদের কাছে। তমাল অচেনা লোকদের জিজ্ঞেস করলো, চাচা আপনারা কি পাখি শিকার করতে এসেছেন? এক লোক জবাবে বলল, হ্যাঁ, আমরা পাখি শিকার করে বাজারে অনেক দামে বিক্রি করি। তারপর তমাল বলল, চাচা কোন সময়ে পাখি বেশি শিকার করেন। উত্তরে শিকারি বলে, শীতকালে অনেক পাখি পাওয়া যায়। তমাল এই উত্তরটা শোনার জন্যই প্রশ্নগুলো করছিল। আচ্ছা আপনারা কি জানেন শীতকালে পাখি বেশি হওয়ার কারণ কী? মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দিলো শিকারির দল। তমাল বলল, শীতকালে বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে পাখিরা আসে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। এদের বলা হয় অতিথি পাখি। পাখিরা জীবন বাঁচাতে আমাদের দেশে আশ্রয় নেয়। একটু সুন্দর চোখে চেয়ে দেখেন তো, প্রকৃতিকে কত সুন্দর করেছে পাখিরা। এত কষ্ট করে পাখিরা খাবারের সন্ধানে আমাদের দেশে আসে আর আমরা পাখিদের হত্যা করে খাবারের টেবিলে আনি। তা কি আমাদের ঠিক? শিকারিরা বলে, না না এটা আমরা ঠিক করি না। আমরা কোনো দিন পাখিদের নিয়ে এইভাবে ভাবিনি যেভাবে তুমি আমাদের ভাবিয়েছ। আজ থেকে আমরা আর পাখি শিকার করবো না। পেশা হিসেবে অন্য কাজ বেছে নেবো। শুধু তাই নয় আমরা অন্য শিকারিদের ও শিকার করা থেকে ফিরিয়ে আনবো। তমাল হিমেল ও অপুর প্রতি শিকারি লোকেরা অনেক খুশি হলো, আর বলল, সত্যই তোমরা খুব সুন্দর মনের মানুষ আমাদের জঘন্য কাজ থেকে ফিরিয়ে আনলে। তোমাদের পুরস্কৃত করা উচিত। এত ছোট তোমরা কিন্তু তোমাদের ভাবনা কত সুন্দর। সেই দিনের পর থেকে ওরা পাখি শিকার ছেড়ে দিলো। এমনকি কাউকে শিকার করতে দেখলে বাঁধা দেয়া শুরু করলো। তমাল হিমেল ও অপু এভাবেই অতিথি পাখিদের প্রতি তাদের ভারোবাসা পূর্ণ করলো।
শিক্ষার্থী, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ