টুনটুনি ও বুলবুলি

সানজিদা জাহান শাম্মী

0
57

এক বটগাছের ডালে বাস করত একটি মিষ্টি টুনটুনির পরিবার। খুব গোছানো তাদের ছোট্ট ঘর সংসার। এই ছোট্ট ঘরে বাস করত মা ও বাবা টুনটুনি পাখি আর তাদের ছানা। তারা ছিল সুখি পরিবার। বেশ সুখেই দিন কাটত তাদের। বাবা টুনটুনি পাখিটি সারাদিন খাবার খুঁজে সংগ্রহ করে আনতো তারপর মা টুনটুনি পাখি আর ছানার সাথে মিলে খেত। মা ও বাবা টুনটুনি পাখিটি মিলে তাদের ছানাকে বেশ আদর করত। ছানার সাথে খেলত, উড়া শেখাতো। ছানাটি ভালো করে উড়তে পারত না তাই একা রেখে যাওয়ার ভরসা পেতো না তারা। কোনো শিকারি কিংবা অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী যদি আক্রমণ করে আর নিয়ে যায় সেই ভয়ে। একমাত্র ছানা হওয়ায় আদরের কমতি রাখতো না তাদের ছানাকে মা ও বাবা টুনটুনি পাখি। ছানাটির সামনে প্রথম জন্মদিন তাই পালন করার সাধ জাগে। এবং বেশ আয়োজন করবে আর অন্যান্য পাখিদেরও দাওয়াত করবে এমনটাই পরিকল্পনা করে মা ও বাবা টুনটুনি পাখি। অন্যান্য পাখিদের দাওয়াত করা শেষ এখন শুধু বিশাল ভোজের আয়োজন করা বাকি। তাই বাবা টুনটুনি পাখি বাজার করতে বের হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ ঝড় আর বৃষ্টিতে ওদিকে আটকা পড়ে গেছে। আর ফিরতে পারছে না কিছুতেই। এদিকে মা টুনটুনি পাখিটি ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল এখনও আসল না কেন। কোনো বিপদ হলো কি না। ছানাকে বলল, তুমি থাকো আমি তোমার বাবাকে খুঁজে আনি। ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে রাখবে। আমরা ফিরে না আসা অবধি দরজা খুলবে না। ছানাটি ভয়ে ভয়ে বলল, জলদি ফিরে এসো মা আমার খুব ভয় পাচ্ছে। মা টুনটুনি পাখিটি বলল ঠিক আছে সোনা। এই বলে বেড়িয়ে পড়ল তার স্বামীর খোঁজে। প্রচণ্ড ঝড়ের কারণে টুনটুনির ঘরটি উড়ে গেল। বাচ্চাটি একটি বড় পাতার নিচে আশ্রয় নিলো। আর বসে বসে কান্না করতে লাগল। অবশেষে ঝড় বৃষ্টি কমে গেল তখনি সবাই এসে হাজির হলো যেসব পাখিদের দাওয়াত করেছিল। সবাই এসে দেখে টুনটুনির ঘর নেই। ছানাটি বসে কান্না করছে। মা আর বাবা টুনটুনি পাখিও নেই। কোনো আয়োজনও নেই। বুলবুলি পাখিটি জিজ্ঞেস করে ছানাটিকে কোথায় তার মা-বাবা, কোথায় ঘর। কোনো আয়োজনও নেই কেন। ছানাটি কান্না করতে করতে বলে দেয় সব। এমন অবস্থা দেখে পাখিদের দল ফিরে যেতে লাগল। কিন্তু বুলবুলি পাখিটি সবাইকে ডাক দিলো। সবাইকে বুঝিয়ে বলল কারো বিপদে এভাবে ফেলে যাওয়া উচিত নয়। এই অবস্থায় তোমরা থাকলে কী করতে, সবাই যদি তোমাদের ছেড়ে যেত? আমাদের উচিত এই কঠিন বিপদে ছানাটির পাশে থাকা এবং তার মা বাবাকে খুঁজে আনা। আর নতুন করে একটা ঘর তৈরি করে দেওয়া। সবাই মিলেমিশে কাজ করলে জলদি হয়ে যাবে।

পাখিরা সম্মতি জানাল। সবাই মিলে কাজ করে ঘরটি বানানো সম্পূর্ণ করল। এমন সময় মা আর বাবা টুনটুনি পাখিটিও ফিরে এলো বাজার করে। প্রথমে তাদের ঘরটি চিনতে না পেরে অন্যদিকে উড়ে যেতে লাগল। তখনি ছানাটি উড়ে গিয়ে মা, মা! বাবা, বাবা! বলে ডাক দিলো। ছানাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরল তারা। ছানাকে আজকে উড়তে পারা দেখে খুব খুশি হলো মা আর বাবা টুনটুনি পাখি। ছানাটি সব খুলে বলল তার মা বাবাকে। ঘরে গিয়ে অন্য পাখিদের সাথে দেখা করল আর ধন্যবাদ জানালো তারা। তারপর সবাই মিলে আয়োজন করল বিশাল ভোজের। খাবার তৈরি হয়ে গেলে সবাই মিলে মজা করে খেল আর জন্মদিনের উৎসবে আনন্দে মেতে উঠল। ০