প্রিয় বন্ধুরা,
আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছো সেই প্রত্যাশা। আত্মত্যাগের সৌরভ নিয়ে আবারো এসেছে ঈদুল আজহা। মানসপটে ভেসে ওঠে চার হাজার বছর আগের সেই দৃশ্যাবলি। একজন বৃদ্ধ বাবা তার প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয় বালক পুত্রকে নিয়ে হেঁটে চলেছেন খোলা ময়দান ধরে। লক্ষ্য কোনো নির্জন স্থান।
দুজনেই জানে কী হতে চলেছে। মহান আল্লাহ খুব বড় রকমের পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছেন বৃদ্ধ মানুষটিকে। স্বীয় পুত্রকে কোরবানি করতে হবে আপন প্রভুর নির্দেশে। কষ্টে ভেঙে যাচ্ছে হৃদয়। ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুমালা সফেদ শ্মশ্রু বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু তিনি অবিচল। কেননা তিনি যে নবী। মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভালোবাসায় উত্তীর্ণ মানুষ।
আর ছোট্ট ইসমাঈল? তীর তীর করে কাঁপছে তার বুক। খানিক বাদেই শুতে হবে ধারালো খঞ্জরের নিচে। কিন্তু চোখে মুখে এ কেমন আলোর ঝলকানি তার, প্রশান্ত-প্রফুল্ল চাহনি! কেননা তিনিও যে নবী। বিশ্ব জাহানের অধিপতি দয়াময় আল্লাহর প্রতি পিতা পুত্রের এই নিদারুণ প্রেম, তাঁর মহব্বতের দরিয়ায় তুফান না তুলে পারে কী করে! ভালোবাসার কুদরতি হাতে দুজনকেই টেনে নিলেন তিনি তাঁর রহমতের চাদরের নিচে।
এই ত্যাগ এবং কোরবানির শিক্ষা উৎসবের হাওয়ায় চেপে প্রতি বছর আসে আমাদের জীবনে। পশু কোরবানি করে, দরিদ্র এবং স্বজনদের মাঝে ভালোবাসা বিলিয়ে এই ত্যাগের কিছুটা অনুভব করার চেষ্টা করি আমরা।
জিলহজ মাসের এই সময়টাতে বিশ্বের লাখ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটে আরাফাতের ময়দানে। লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক ধ্বনিতে মুখরিত হয় মক্কা মুয়াজ্জমা তথা পুরো আরব ভ‚মি। আরব ভূমিতে ইহুদিদের হাতে যে রক্ত ঝরছে মুসলমানদের, যে নিপীড়নে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে একটি জাতি, যে অবরোধে খাবার এবং পানির অভাবে কারবালায় পরিণত হয়েছে একটি জনপদ, সেই জনপদের মানুষের চিৎকার যেন এবারের আরাফাতকে প্রকম্পিত করে, অশ্রুসিক্ত করে প্রতিটি নয়ন, সেই আশা নিয়ে আজকের চিঠি এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।