সূচির কুরবানি

মাহমুদুল হাসান খোকন

0
27

ছোট্ট ও দারুণ মিষ্টি মেয়ে সূচি। বয়স মাত্র এগারো চলছে। তবু বয়সের তুলনায় বেশ ভালো বুঝে। পঞ্চম শ্রেণির অত্যন্ত মেধাবী ও বুদ্ধিমতী ছাত্রী সে। নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবা জাহান আলী একজন কৃষক মানুষ। নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া জাহান আলীর। অল্প লেখাপড়ার কারণে অন্যের বাড়িতে ও জমিতে নিয়মিত কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। একটিমাত্র মেয়ে জাহান আলীর দম্পতির। বলা চলে অভাব অনটনের সংসার। মা শাহিদা বেগম বেশ ভদ্র ও পর্দানশীন নারী। হাজারো অভাবে নিমজ্জিত থাকলেও কখনো নিরাশ হন না। ভুলেও আল্লাহর কোনো ইবাদত ছেড়ে দেন না। সংসারের নানা টানাপোড়নের মাঝে থেকে বেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন সবসময়। স্বামীর প্রতি কোনো অভিযোগ এমন কী মান অভিমানও নেই। এতেই দারুণ খুশি শাহিদা বেগম। সেজন্য মহান আল্লাহর দরবারে লাখোলাখো শুকরিয়া জানান। স্বামীকে দারুণ ভালোবাসেন ও মনের গভীর থেকে শ্রদ্ধা করেন। তিনি বেশ ভালো করে জানেন একজন স্ত্রীর কাছে স্বামীর মর্যাদা কত বেশি ও সম্মানের। তিনি তা বুঝেন ও মানেন। গ্রামের মধ্যে বেশ গোছালো একটি ছোট সংসার সেটা হলো জাহান পরিবারের।

আর ক’দিন পরই কুরবানির ঈদ। সূচি লক্ষ্য করে এলাকার অনেক স্বচ্ছল ও ধনী ব্যক্তিরা সাধ্যমত পছন্দের কুরবানির পশু ক্রয় করছে। সূচির নতুন প্রতিবেশি আলহাজ লোকমান সাহেব। তিনি একজন সম্পদশালী, ধার্মিক ও মাটির মানুষ। এলাকার সকলের কাছে অতি প্রিয় মানুষ আলহাজ লোকমান সাহেব। অনেক ধন সম্পদের মালিকও বটে। যেন কোনো হিংসা ও অহংকার কী তা তিনি জানেন না বুঝেন না। দুধকুমর নদী ভাঙনের কারণে মাস ছয়েক ধরে লোকমান সাহেবের প্রতিবেশি হিসেবে বসবাস করছে জাহান আলী। অল্প সময়ের মধ্যে এ দুই পরিবারের বেশ ভালো ও গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যদিও রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই তবু যেন দুই পরিবারের একে অন্যের আত্মার আত্মীয়। সবসময় যোগাযোগ রাখেন। বিশেষ করে আলহাজ লোকমান সাহেব।
আজ শনিবার। আগামী পরশু তথা সোমবার কুরবানির ঈদ। বরাবরের মতো এবারও লোকমান সাহেবও পছন্দের একটি বড় গরু ক্রয় করেছেন ঈদ উপলক্ষ্যে। সূচি সেটা ভালো করে খেয়াল করেছে।
তাইতো রাতে সূচি তার বাবাকে বলছে, বাবা কুরবানি কী? জাহান আলীর বেশ ভালো মনে আছে গতকাল শুক্রবার জুমআ সালাত আদায় করতে গিয়ে ইমাম সাহেবের নিকট থেকে কুরবানির খুব সুন্দর আলোচনা শুনেছেন। তাই বলছে জাহান আলী- কুরবানি হলো ত্যাগ করা বা উৎসর্গ করা। তবে সেটা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় হতে হবে। তা মনের গভীর থেকে করতে হবে। সবচেয়ে সেরা ও পছন্দের পশু দিয়ে কুরবানি করতে হয়। যেমন- উট, মহিষ, গরু, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দিয়ে করবানি করতে হয়।
দুম্বা কী? বাবা আবার জিজ্ঞেস করল।
দুম্বা হলো ছাগল ভেড়ার মত একটি পশু। আমাদের দেশে দুম্বা নেই। আমিও কখনো দেখিনি। হজ্জের মৌসুমে এ কুরবানি করার নিয়ম। এটা মহান রবের অমোঘ বিধান তথা আল্লাহর হুকুম। প্রত্যেক সামর্থ্যবানদের উপর কুরবানি করা ওয়াজিব। সমাজ জামাতের ভয়ে কুরবানি দিলে হবে না। গোস্ত খাবার জন্য কুরবানি দিলেও হবে না। শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য কুরবানি করতে হবে। আর তাই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে মুসলিম বা মুমিন ব্যক্তি কুরবানি দিবে না এদের ক্ষেত্রে কঠোর হুশিয়ারীর সংকেত দিয়েছেন আমাদের প্রিয় ও শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সা:। আল্লাহর রাসুল সা: আরো বলেছেন, সামর্থ্য থাকার পরও যে কুরবানি দিবে না সে যেন আমার ঈদগাহে বা ঈদগাহের আশেপাশে না আসে।
তাহলে বাবা আমাদের কুরবানি দিতে হবে না? জবাবে জাহান আলী বলল- আমাদের তো সে সামর্থ্য নেই। কীভাবে দেবো?
বাবা একটি কথা বলি?
জি বলো মামণি।
আমাদের তো দুটি ছাগল আছে একটি দিলে আল্লাহ খুশি হবে না? বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, হুমম হবে।
তাহলে দাও না বাবা কুরবানি? আচ্ছা মামণি ঠিক আছে তাহলে আমরাও এবার বড় খাসি ছাগলটি কুরবানি দিব। কি মামণি খুশি তো? জি বাবা খুব খুশি।