সুমন ও ইয়ো ইয়ো বাক্সম্যানের গল্প

শেখ হুমায়রা ইয়াসমিন মুনিরা

0
43

সুমন। ভালো নাম সুজন আহমেদ সুমন। দুষ্টুমির কারণে পুরো ইশকুলে সে খ্যাত। সারাদিন নতুন নতুন দুষ্টুমি নিয়ে ব্যস্ত থাকাই যেন তার প্রধান কাজ!! আজ সে টিফিনে কলা খেয়ে কলার খোসা ইশকুলের বারান্দায় ফেলেছে। টিফিন ছুটির বেল পড়লে সবাই যখন হুড়োহুড়ি করে ক্লাসে ঢুকতে যাবে, তখন একটি ছেলে সুমনের ফেলা কলার খোসায় পা পিছলে পড়ে গেল। পড়েছে এমনভাবে যে, তার পা মচকে গেছে। সবাই ছেলেটিকে ধরাধরি করে হাসপাতাল নিয়ে গেল। সুমনের তেমন খারাপ লাগল না। কিন্তু ছেলেটা পড়ে যাওয়ার সময় সুমন তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। স্যাররা সব ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, কে কলার খোসাটি বারান্দায় ফেলেছে? সুমনদের ক্লাসে আসলে সুমন মাথা নিচু করে বসে থাকলো। বাসায় যাওয়ার সময় ওই মুহূর্তটি বারবার চোখের সামনে ভাসতে লাগল সুমনের। রাতের বেলা পড়ার টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখতে লাগল। সুমন দেখল, ইশকুলের বারান্দায় হাজার হাজার কলার খোসা। পিছন থেকে সবাই (ইশকুলের) তাকে কলার খোসায় ফেলে দিচ্ছে। সে অনেক ব্যথা পাচ্ছে। সবাই হাসছে আর বলছে, এবার বুঝ মজা!! রাসেল যখন পড়ে গিয়েছিল.. সেও ঠিক এইভাবে ব্যথা পেয়েছিল। এই বলে সবাই চলে যায়। হঠাৎ,ওর ঘুম ভেঙে যায়। মা তাকে বলেন, যাও..অনেক রাত হয়েছে.. বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ো। সে বিছানায় শুতে যায়। তার ভয় কমে এই ভেবে যে, এটা একটা স্বপ্ন ছিল। তারপর তার ঘুম পেলে সে ঘুমিয়ে যায়। কিন্তু ফিরে যায় তার আগের স্বপ্নে। সবাই চলে যাওয়ার পর, সুমন বসে
বসে ব্যথা-যন্ত্রণা ও দুঃখে কাঁদতে থাকে। তখন, এক প্রকার এলিয়েনের মতো দেখতে যে কি না ড্রেস হিসেবে একটা লাল বাক্স পড়ে আছে (শুধু তার হাত ও জুতো পড়া পা বের হয়ে আছে)। সুমনের দিকে এগিয়ে আসলে সুমন বলে ওঠে, এলিয়েন!! অদ্ভুত জিনিসটা রেগে বলে, এই ছেলে! এলিয়েন কী? হ্যাঁ? এলিয়েন কী? আমি ইয়ো ইয়ো বাক্সম্যান। সংক্ষেপে ই ই বি। সুমন মুখ খোলে। বলে, তো তুমি এখানে কেন এসেছো? ই ই বি বলে, এই আজকালকার যুগের ছেলেমেয়েরা যে কি পেয়েছে, সৃষ্টিকর্তাই জানে। বড়দেরও সম্মান করতে পারে না। তুমি না, আপনি করে বলো। বুঝলে? সুমন মাথা নাড়ল। আর বলল, স্যরি ভাইয়া, আপনাকে আমি আর তুমি করে বলবো না। এই যে! আবার..আবার শুরু হয়ে গেল, তাদের যুগের ভাইয়া আপু.. এই ধরনের শব্দ। যত্তসব..! সুমন হাঁ করে তাকিয়ে আছে। আর বলে ওঠে, তাহলে আপনাকে কী বলে ডাকব? তিনি বলেন, মি: ইয়ো ইয়ো বাক্সম্যান। সুমন বলল, ঠিক আছে, মি: ইয়ো ইয়ো বাক্সম্যান।
Ñ গুড। এইবার হয়েছে। তা শোনো, আমি তোমাকে একটা কথা বলতে এসেছি। তা হলো, তুমি যেখানে সেখানে ময়লা ফেলো কেন? যেখানে সেখানে তুমি ময়লা ফেলো দেখেই তো, ওই ছেলেটার আজ এই অবস্থা! তুমি যদি আর কখনো ময়লা অথবা কলার খোসা ফেলেছ, তাহলে তোমাকে আমি আমার শরীরে লাগানো এই বাক্সে ফেলে দেবো। আর জীবনেও তুমি এই বাক্স থেকে বের হতে পারবেনা। সুমন কাঁপা কাঁপা গলায় বলল না, না এমন করবেন না, প্লিজ.. ই ই বি বলল, একশর্তে তোমাকে মাফ করব আমি। আর সেটা হলো, এখানে তাকিয়ে দেখো, হাজার হাজার কলার খোসা। তুমি সবগুলো কলার খোসা আমার এই বাক্সে ফেলবে। আর রাস্তায় হাঁটার সময় যদি কোনো ধরনের ময়লা আবর্জনা দেখো, তাহলে তুমি সেগুলো ময়লার ঝুড়িতে ফেলবে। চলো, চলো.. এখন ঝটপট কলার খোসাগুলো আমার বাক্সে রাখো। জলদি! সুমন প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে কলার খোসাগুলো বাক্সে ফেলল। তার হাত-পা ব্যথায় টনটন করছে। ইয়ো ইয়ো বাক্সম্যান বলল, গুড বয়! এখন আমি যাই। সাথে সাথে সুমনের ঘুম ভেঙে গেল। তার শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। সে বুঝতে পারল, এটি স্বপ্ন হলে কি হবে..তার কথামতো কাজ না করলে সত্যি সত্যিই সে আবার আসবে। সকাল হলে, সুমন ইশকুলের জন্য তৈরি হয়ে নিলো। ইশকুলে ঢোকার সময় একটি চিপসের প্যাকেট পড়া দেখতে পেল। সে ইয়ো ইয়ো বাক্সম্যানের কথা মনে করে চিপসের প্যাকেটটি ময়লার ঝুড়িতে ফেলল। ভাবল,আজ থেকে ইয়ো ইয়ো বাক্সম্যানের কথা মেনে চলবে। কোনো ধরনের দুষ্টুমি করবে না।