বাবুইপাখির সংসার

কবির কাঞ্চন

0
21

হিজলতলী গ্রামের দক্ষিণের বনে হাজারো স্মৃতির সাক্ষী হয়ে আছে একটা তালগাছ। এই তালগাছেই বছরের পর বছর সুখে দুঃখে কাটিয়েছে বাবুইপাখি দম্পতি। তাদের দুজনের শৈশবের মধুর সময়ও এই তালগাছটাকে ঘিরেই কেটেছে। জন্মের পর থেকে তারা পাশাপাশি বাসায় থেকে বড় হয়েছে। বাবুইপাখি দম্পতি পরষ্পর পরষ্পরকে ভালোবেসেই ঘর বেঁধেছে। তাদের ভালোবাসার ফসল হিসেবে ইতোমধ্যে তাদের ঘর আলো করে তিনটা ফুটফুটে বাচ্চার জন্ম হয়েছে। একটা বাচ্চা দেখতে ঠিক তার বাবার মতো। অপর দুই বাচ্চা তার মায়ের মতোই হয়েছে। বাচ্চাদের নিয়ে বেশ সুখেশান্তিতেই দিন যাচ্ছিল তাদের। কিন্তু কিছু দিন আগে বাবুই দম্পতি খাবারের সন্ধানে একসাথে বের হয়েছিল। তখনই ঘটল এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা।
দুজনে যখন মাঠের খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত, এমন সময় কিছু দুষ্ট ছেলের দল তাদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে। এর একটা ঢিল এসে পড়ে পুরুষ বাবুইপাখিটার গায়ে। জায়গায় ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। স্ত্রী বাবুইপাখিটা স্বামীকে হারিয়ে একাকী বাসায় ফিরে আসে। স্বামীকে হারিয়ে বাবুইপাখিটা চরম অসহায় হয়ে পড়ে। তবু তাকে জীবন সংগ্রামে নামতে হয়। সেই থেকে বাচ্চাদের মায়ের পাশাপাশি বাবার দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছে সে।

একদিন বাবুইপাখিটা তার বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় আনন্দ করে সময় কাটাচ্ছিল। এমন সময় তার এক ঘনিষ্ঠ
বন্ধু চড়–ই এসে বাইরে থেকে ডাক দিলো-
বাবুই, ও বাবুই!
বাবুই বাসা থেকে আলতোভাবে মাথাটা বাইরে বের করে বলল, ওহ্! চড়–ই, তুমি! কখন এলে?
এইতো, কিছুক্ষণ হলো। আজ তো অনেকবেলা হয়ে গেল, খাবারের খোঁজে যাবে না?
সই, একটু দাঁড়াও। আমার বাচ্চাদের আরেকটু ঘুম পাড়িয়ে দেই। ওদের চোখে ঘুম।
তুমি একা একা ওদের জন্য আর কত করবে! আমি বলি কি, ওরা একটু একটু উড়তে শিখছে। এবার ওদের খাবার নিজেদের জোগাড় করতে পাঠাও না।
– না, সই। ওরা এখনো শক্ত হয়নি। বাইরে বেরোলে যেকোনো বিপদ হয়ে যেতে পারে। এমনিতেই সারাক্ষণ ভয়ের মধ্যে থাকি। যে যুগ পড়েছে। কাউকে বিশ্বাস করা যায় না। মানুষ আগে তো আমাদেরকেই মারত। এখন নিজেরাই নিজেদের মারতে দ্বিধা করে না। তাছাড়া আমার বাচ্চাগুলো একটু অন্য রকম। মা হিসেবে ওদের আমি অনেক বুঝিয়েছি। আত্মরক্ষার জন্য হলেও উড়তে শেখা প্রয়োজন। কিন্তু ওরা খুব অলস
প্রকৃতির। আমি আছি বলে ওদের আর কোনো চিন্তা নেই।
– হ্যাঁ, তুমি একদম ঠিক কথাই বলেছো। তবু জীবনের গতিপথ ধরে রেখে এগোতে হবে। ভয় পেয়ে ঘরে বসে থাকলে কী হবে? আর তুমি না থাকলে ওদের কী হতে পারে তা কী ভেবে দেখেছো?
– ওদের নিয়েই তো আমার যত চিন্তা।
– আর চিন্তা না করে ওদের একটু চাপ দাও। ওরা স্বনির্ভর হোক। এবার চল তো। অনেক দেরি হয়ে গেছে।
– আচ্ছা চল। আমার বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে।

বাবুই আর চড়–ই খাবারের খোঁজে জঙ্গলের অনেক ভেতর চলে গেল। আজ এখনো কোনো খাবার পেল না। অন্য দিন খুব কাছে গেলেই খাবার পেয়ে যায়। কিন্তু আজ তার নামগন্ধ নেই।
বহু দূরের পথ উড়ে আসার কারণে দুজনেই খুব ক্লান্ত হয়ে গেল। তাই নিচে কোনো একটা গাছের ডালে নেমে দুজনেই বিশ্রাম নেওয়ার প্রস্তুতি নিলো। অতঃপর নিচে নেমে পড়ল। একটু দূরেই খাবার পেল তারা। তাই দুজনে মুখভর্তি খাবার নিয়ে খুশি মনে তাদের বাসার দিকে রওনা দিলো।

বাবুইপাখির বাচ্চাগুলোর ওড়ার মতো বয়স হয়েছে। কিন্তু এখনো তারা ভালোভাবে উড়তে শেখেনি। মায়ের ওড়াউড়ি দেখেও উড়তে চায় না। ওদের মা সারা দিন খাটাখাটনি করে খাবার জোগাড় করে আনে। ওদের মধ্যে বড়বাচ্চাটা ছাড়া কেউই মায়ের কষ্টকে বোঝে না। ওদের মা সারাদিন খাটুনি করে ওদের জন্য খাবার নিয়ে আসেন। নিজের মুখের খাবার ওদের ঠুকরে ঠুকরে খাইয়ে দেন। সবাই আনন্দের সাথে মায়ের মুখের খাবার গিলে নেয়। বড়বাচ্চাটা মায়ের মুখের খাবার একবার নেয় তো কিছু সময় মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে মনে মনে ভাবে- মা নিজে খেয়েছে তো! নাকি সব আমাদের খাইয়ে দিয়ে নিজে উপবাস রয়েছেন। একসময় মায়ের চোখে চোখ পড়তেই মা তাকে জিজ্ঞেস করেন,
– কিরে তুই খাচ্ছিস না যে? আর মনে মনে কী ভাবছিস?
বড়বাচ্চাটা মায়ের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে।
মা পাখিটা আবার বলল,
– কোনো কথা বলছিস না কেন?
– না, মা, তোমার কথাই ভাবছি।
– আমার আবার কী হলো?
– তুমি নিজের মুখের খাবার আমাদের মুখে তুলে দিচ্ছো। আর আমরা তোমার কথা চিন্তা না করে নিজেরাই খেয়ে নিচ্ছি।
মা পাখি খুশি হয়ে বলল,
– ও এই কথা! আগে তোমরা খেয়ে নাও। তারপর আমি খেয়ে নেবো।
– আমরা খেয়ে নিলে তো সব খাবার শেষ হয়ে যাবে। তুমি কী খাবে?
– আমার জন্য তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। আমি উড়ে গিয়ে আবার খাবার সংগ্রহ করব।
মায়ের এ কথার পর সবাই আবার খেলাধুলায় ব্যস্ত হয়ে গেল।

চড়–ইপাখির বাচ্চারা খুব কর্মঠ আর হিসেবি। একটু সুযোগ পেলেই তারা খাবারের সন্ধানে বের হয়। একটু একটু করে খাবার সংগ্রহ করে আনে। তার ওপর মায়ের খাবার যোগ হলে তাদের ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য মজুদ থাকে। দিনে দিনে তারা বিপদের হাত থেকে বাঁচার কৌশলও শিখতে শুরু করেছে।
অন্য দিকে সমবয়সী হলেও বাবুইপাখির বাচ্চাগুলো কর্মবিমুখ স্বভাবের। তারা নিজেরা কখনো বাসার বাইরে বেরোয় না। উড়তেও চায় না। তারা খাবারের জন্য মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বড় বাচ্চাটা কিছুটা মায়ের কষ্ট বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু সেও ঘর থেকে বেরোয় না।

পরদিন আবার চড়–ইপাখিটা এসে বাবুইকে ডাক দিলো। বাবুইপাখি চড়–ইকে দেখে হাসতে হাসতে বাসা থেকে বের হলো। দুজনে উড়তে উড়তে একটা শস্যক্ষেতে এসে নামলো। খাবার সংগ্রহের এক ফাঁকে চড়–ই বাবুইপাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– জানো সই, আমার বাসায় অন্তত এক মাসের খাবার মজুদ আছে।
বাবুই অবাক হয়ে বলল,
তা কী করে সম্ভব! আমার বাসায় তো আগামীকালের খাবারও নেই।
– থাকবে কী করে? তুমি তো তোমার বাচ্চাদের লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছো। এতো বয়স হয়েছে। তবু ওরা উড়তে শেখেনি। একটু-আধটু করে খাবারের খোঁজে বের হয় না। আমি বলি কী- এবার একটু কৌশলী হও। ওদের স্বাবলম্বী হতে দেখলে মরেও শান্তি পাবে।
বাবুইপাখি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
আমি তো তা-ই চাই। কিন্তু কোনো উপায় তো দেখছি না।
– আমার একটা কথা শুনবে?
– কী কথা? বলো না।
– তুমি আমার সাথে কিছু দিন আমার বাসায় থেকে যাও। তোমার বাচ্চারা তোমার অপেক্ষায় থাকবে। পেটের খিদে সহ্য করতে না পারলে একসময় নিজেরাই খাবারের জন্য বের হতে বাধ্য হবে। সেই সাথে কৌশলীও হবে।
– ওরা কি তা পারবে?
– নিশ্চয়ই পারবে। তুমি আমার কথায় রাজি হয়ে যাও। দেখবে ওরা ঠিক তোমার মতো হয়ে গেছে। তাছাড়া তোমার অনুপস্থিতিতে ওদের আমি দূর থেকে লক্ষ করবো। বেশি সমস্যা দেখা দিলে আমি নিজে গিয়ে তাদের সাহায্য করবো। তুমি কোন চিন্তা করো না।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
– তাহলে এখন আমার বাসার দিকে চলো।
– হ্যাঁ, চলো।
বাবুই যখন চড়–ইপাখির বাসায় আসে তখন চড়–ইপাখির বাচ্চাদের কর্মকা- দেখে বাবুইপাখির দুচোখের জল গড়িয়ে পড়ে। কারণ তার বাচ্চাগুলো এত বড় হয়েছে তবু তাকে একটুও সাহায্য করে না। এ বয়সে আজও তাকে কেন ওদের জন্য খাবার খুঁজতে যেতে হয়।
অথচ চড়–ইপাখির বাচ্চাগুলো ওদের সমবয়সী। ওরা মায়ের সাথে খাবার আনতে যায়। বাসা বুননে মাকে সাহায্য করে।
বাবুইপাখিটা মনে মনে জিদ করে মিনমিনে বলে,
– ওদের জন্য আমি আর কত দিন করবো! যেদিন আমি থাকবো না সেদিন ওরা কী করবে? এভাবে বসে থাকলে কি অন্য কেউ এসে এমনি এমনি ওদের খাবার দিয়ে যাবে? আমি যখন মরে যাবো তখন ওরা বুঝবে মায়ের কাজে সাহায্য না করার ফল।

এই কথা বলে বাবুইপাখি দু’চোখের জল ছেড়ে কেঁদে ওঠে। চড়–ইপাখি পাশে বসে তাকে সান্ত¡না দেয়। আর চড়–ইপাখির বাচ্চারা হাঁ করে বাবুইপাখির দিকে তাকিয়ে থাকে।
ওদিকে বাবুইপাখির বাচ্চাগুলো অধীর অপেক্ষায় মায়ের পথের দিকে চেয়ে আছে। তাদের মা খাবার নিয়ে আসবে আর তারা তা মজা করে খাবে।
কিন্তু তাদের আজকের এই অপেক্ষার ক্ষণ শেষ হয় না। বেলা শেষে সন্ধ্যার আঁধার নামলেও তাদের মায়ের আসার কোনো লক্ষণ নেই। পেটের ক্ষুধায় সবাই ছটফট করতে থাকে। বড়বাচ্চাটা ছোটদের অভিভাবকের মতো করে বোঝাতে থাকে। মিথ্যা সান্ত¡না দেয়। সেই সান্ত¡নায় সবাই অভুক্ত অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ে।

পরদিন ভোরেই চড়–ইপাখিটা উড়তে উড়তে বাবুইপাখির বাসার অদূরে এক গাছের পাতার আড়ালে লুকিয়ে থেকে বাবুইপাখির বাচ্চাদের লক্ষ করতে লাগলো। বড়বাচ্চাটা বাসা থেকে মাথাটা বের করে উড়তে বারবার ডানা জোড়া ঝাপটাচ্ছে। হঠাৎ উড়ে পাশের গাছে গিয়ে বসলো। চড়–ইপাখি একটু নড়েচড়ে বসল। বাবুইপাখির বড়বাচ্চাটা গাছের ডালে বসে কী যেন খাচ্ছে। চড়–ইপাখিটা এডাল ওইডালে গিয়ে আবার লক্ষ করলো। কিন্তু কই? বাবুইপাখির বড়বাচ্চাটা আর সেখানে নেই। এদিকওদিকে তাকিয়ে যখন কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না তখন আবার বাবুইপাখির বাসার দিকে তাকিয়ে চড়–ই তো অবাক। সে একি দেখছে! বড়বাচ্চাটা বাবুইপাখির মতো করে ওদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। ওরাও তা মজা করে খাচ্ছে।
এসব দেখে খুশিমনে নিজের বাসার দিকে ফিরে আসে চড়–ইপাখি। চড়–ইকে হাস্যোজ্জ্বল দেখে বাবুইপাখি বলল,
– কী ব্যাপার? তোমাকে আজ খুব খুশি খুশি লাগছে।
– আজ ভোরে তোমার বাচ্চাদের দেখতে গিয়েছিলাম।
চড়–ইয়ের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বাবুইপাখি বলল,
তো সই, আমার বাচ্চারা কেমন আছে? এতক্ষণে নিশ্চয় খাবারের অভাবে ওরা মুমূর্ষু হয়ে গেছে।

এই কথা বলে বাবুইপাখি বিলাপ করে কাঁদতে লাগলো।
চড়–ইপাখি তার কান্না থামিয়ে বলল,
আরে! তুমি আবার কাঁদছো কেন? তোমাকে না সেদিন বলেছিলাম, তোমার অনুপস্থিতিতে ওদের পরিবর্তন আসবে। ঠেকায় পড়ে ওরা শিখবে।
তাই হয়েছে। সে কারণে আমি আজ খুশি।
বাবুইপাখি আনন্দিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
আমি তোমার কথার মানে ঠিক বুঝিনি। দয়া করে খুলে বলো।
– তোমার বড়বাচ্চা খাবার সংগ্রহ করে ওদের খাওয়াচ্ছিল। ওরাও তা মজা করে খাচ্ছিল। আর ওদের দেখে আমার মনে হয়েছে কয়েক দিনের মধ্যে ওরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।
– তাই যেন হয়, সই।
এই কথা বলে বাবুইপাখি চড়–ইয়ের ঠোঁটে ঠোঁট ঠেকিয়ে আদর করে।

এরপর আরো তিন দিন কেটে গেল। বাচ্চাদের একা রেখে এসে বাবুইপাখির এক একটা দিন যেন এক বছরের মতো কাটছে। তার আর তর সইছে না। সে মনে মনে স্থির করে আজ যেভাবেই হোক চড়–ইকে রাজি করিয়ে বাচ্চাদের কাছে ফিরে যাবে।
মধ্য দুপুর। বাইরে সূর্য তার উত্তাপ ছড়াচ্ছে। প্রচ- গরমের মধ্যে চড়–ইপাখি ঠোঁটে করে খাবার নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। বাবুইকে বাসার এক কোণে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে চড়–ই তার কাছে এসে বলল, তোমার আবার কী হলো? এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো কেন?
– না গো সই, আমার বাচ্চাদের কথা খুব মনে পড়ছে। আমি ওদের কাছে ফিরে যাবো।
– ফিরে তো যাবেই। আরো দুই-চার দিন বেড়িয়ে যাও।
– না, সই। আমি আজই চলে যাবো। ওদের ছাড়া আমি আর একমুহূর্ত থাকতে পারবো না।
এ কথা বলে বাবুইপাখি দুচোখের জল ছেড়ে কেঁদে ওঠে।
চড়–ই বাবুইপাখির আরো কাছাকাছি বসে কোমল গলায় বলল,
ঠিক আছে। আর কোনো চিন্তা করতে হবে না। এখন খেয়ে নাও। আজ বিকেলেই আমরা ওদের কাছে ফিরে যাবো।
বাবুইপাখি আনন্দে ডানা ঝাপটে চড়–ইপাখির সাথে আলিঙ্গন করে। চড়–ই মনে মনে বিড়বিড় করে বলে, এরই নাম মা-বাবা। সন্তানকে একটু না দেখে থাকতে পারে না। নিজের মুখের খাবার সন্তানের মুখে তুলে দিয়ে সুখ খোঁজার মতো এ জগতে আর কে আছে? অথচ মানুষের খোলসে কিছু অমানুষ তা বুঝতে চায় না। যে বাবা-মা তাদের হাতে ধরে ধরে ছোট থেকে বড় করেছেন। চলার পথের কণ্টকাকীর্ণ পথে নিজেরা থেকে তাদের পথকে মসৃণ করেছেন। ওরা কেমন করে পারে সেই বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসতে !

চড়–ইকে আনমনে হয়ে থাকতে দেখে বাবুই জিজ্ঞেস করল, আবার কী নিয়ে চিন্তা করছো, সই?
– আমি মানুষের ব্যবহার নিয়ে ভাবছি। দেখো না, দিনেদুপুরে একজন মানুষ আরেকজনকে কী নৃশংসভাবে হত্যা করছে! ওরাই আবার প্রিয় বাবা-মাকে শেষ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসছে! ওরা কি একবারও ভাবে না? একসময় তারাও তো বৃদ্ধ-বৃদ্ধা হবে। তখন তাদের সন্তানেরা তাদের সাথে কী আচরণ করতে পারে?
– যে যেমন কর্ম করবে সে তেমন ফল ভোগ করবে। নিয়তির নির্মম বাস্তবতায় তাদেরও শেষ বয়সের ঠিকানা হতে পারে বৃদ্ধাশ্রম।

চড়–ই বাবুইপাখির কথায় সায় দিয়ে বলল, তুমি একদম ঠিক বলেছো। যাই হোক এখন চলো আমরা খেয়ে নিই।
– আচ্ছা।

বিকেলবেলা। সূর্যটা আস্তে আস্তে পশ্চিমাকাশে হারিয়ে যাচ্ছে। চড়–ই আর বাবুই বাসা থেকে বের হয়ে বাবুইপাখির বাসায় চলে আসে। বাসায় কেউ নেই। বাসার এককোণে বেশ খাবার পড়ে আছে।
বাচ্চাদের বাসায় না দেখে বাবুইপাখি খুব ভয় পেয়ে যায়। না জানি ওদের কোনো বিপদ হয়েছে। হঠাৎ দূর থেকে চিরপরিচিত সুর কানে বাজতেই বাইরে ঠোঁট উঁচিয়ে দেখল। তার আদরের সন্তানেরা অক্ষত অবস্থায় ঠোঁটে করে আহার নিয়ে বাসায় ফিরেছে।
সন্তানদের এমন স্বনির্ভর হতে দেখে মায়ের মন ভরে যায়। মা পাখিটা পরম কৃতজ্ঞতায় বারবার ¯্রষ্টাকে স্মরণ করে।