এক ভাষাশহীদের গল্প

মুস্তফা মানিক

0
29

বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? তোমাদের একটি গল্প শোনাই আজ। এক ভাষাশহীদের গল্প। তোমরা অনেকেই অহিউল্লাহ নামটি শুনে থাকবে। তিনি তোমাদের মতো ছোট ছিলেন। তোমরা তো জানো ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার জন্য রফিক, সালাম, বরকত ও শফিউরসহ নাম না জানা আরো অনেকে জীবন দিয়েছেন। ভাষার দাবিতে যখন পুরো বাংলাদেশ সোচ্চার হয়ে উঠেছিল তখন তোমাদের মতো ছোট্ট কিশোর অহিউল্লাহর মনেও বিদ্রোহের দাবানল জ¦লে উঠেছিল। তই তিনিও সিংহের মতো গর্জন দিয়ে স্লোগান দিয়েছিলেন- ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। তার স্লোগান মসনদধারী পাকিস্তানি শাসকদের কলিজায় কাঁপন ধরিয়েছিল। ফলে তারা ছোট্ট শিশু অহিউল্লাহর বুকে গুলি চালিয়ে ইতিহাসের নিকৃষ্ট হত্যাকা- ঘটিয়ে চরম কাপুরুষতার পরিচয় দিয়েছিল। মায়ের ভাষার জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হলেন ছোট্ট কিশোর অহিউল্লাহ। তবে শহীদ অহিউল্লাহর আজ অবধি জানা যায়নি কোনো পরিচয়। পাওয়া যায়নি তার গ্রামের ঠিকানা। হদিস মেলেনি কোন পল্লী মায়ের কলিজার টুকরা ভাষাশহীদ অহিউল্লাহ। যা হোক তার কোনো পরিচয় পাওয়া না গেলেও সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি সালাম, বরকত ও শফিউরদের সহযোদ্ধা। ১৯৫২ সালের এক সূর্যসন্তান।
বন্ধুরা, ভাষাশহীদ অহিউল্লাহর শহীদ হওয়ার সংবাদ সর্বপ্রথম দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয়। আরো জানা যায়, শহীদ হবার সময় তিনি তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিলেন এবং বয়স হয়েছিল মাত্র ৯ বছর।
২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করলে তারা ভাষাশহীদদের জীবনী সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। কিন্তু অহিউল্লাহর কোনো তথ্য না থাকায় তার জীবনী ও ছবি সংরক্ষণ সংগ্রহ দূরূহ হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে জাদুঘর
কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে, শিল্পী শ্যামল দত্ত অঙ্কন করেন ভাষাশহীদ অহিউল্লাহর প্রতিকৃতি।
অহিউল্লাহ আমাদের গর্ব। আমাদের অহঙ্কার। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে ততদিন হৃদয়ের গহিনে অমলিন থাকবেন অহিউল্লাহ। পৃথিবীর সবচেয়ে কম বয়সী ভাষাশহীদ হিসেবেও বিশ্ব ইতিহাসে লেখা
থাকবে তার নাম।