দ্য সাইলেন্ট কিলার

আজিম উদ্দিন

0
19

বন্ধুরা, তোমরা তো নিশ্চয়ই ক্রিকেট খেলা পছন্দ করো। আজকে তোমাদের শোনাবো একজন ক্রিকেটারের গল্প। তিনি অন্য কোনো দেশের নন, বরং আমাদের দেশেরই একজন বর্ষীয়ান ক্রিকেটার। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি। অনেক অনেক সুন্দর ইনিংস উপহার দিয়ে বাংলাদেশকে তিনি ম্যাচ জিতিয়েছেন। তাকে তোমরা সবাই দ্য সাইলেন্ট কিলার নামেও চেনো।
বন্ধুরা, বলতে পারো, তাঁর নাম কী? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছো। তিনি ক্রিকেট থেকে সদ্য অবসর নেয়া বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৯৮৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন।মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছিলেন অলরাউন্ডার। কার্যকরী মিডল অর্ডার ব্যাটার এবং অফ স্পিন বোলার হিসেবে দলে খেলছেন তিনি।
২০০৭ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ দলের শ্রীলংকা সফরের জন্য ডাক পান ২১ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওই সফরের তৃতীয় ওডিআই ম্যাচে তার অভিষেক হয়। এছাড়াও ২০০৭ সালে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত চার-জাতি সিরিজ এবং ২০০৭ আইসিসি বিশ্ব টি-টুয়েন্টি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ স্কোয়াডের জন্য তাঁকে দলে নেয়া হয়।
২০০৯ সালের ৯ জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাঁর টেস্টে অভিষেক হয়। অভিষেক টেস্ট ম্যাচেই তিনি পাঁচ উইকেট শিকার করেন। বলাবাহুল্য, সে ম্যাচে বাংলাদেশ জয় লাভ করে।
বন্ধুরা, চলো এবার জেনে নিই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কিছু উল্লেখযোগ্য ইনিংস।

২০১১ ওডিআই ওয়ার্ল্ডকাপ
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারতে যাওয়া ম্যাচে তিনি ফাস্ট বোলার শফিউল ইসলামকে সাথে নিয়ে দুর্দান্ত জয় এনে দেন।

২০১৫ ওডিআই ওয়ার্ল্ডকাপ
২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ৪ জানুয়ারি বিসিবি বাংলাদেশ দলের ১৫ সদস্যের চ‚ড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে তিনিও দলের অন্যতম সদস্য মনোনীত হন। ৫ মার্চ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রæপ পর্বের ৪র্থ খেলায় তামিম ইকবালের সাথে ১৩৯ রানের জুটি গড়েন। পরবর্তীতে বাকিদেরও নৈপুণ্যে ঐ খেলায় বাংলাদেশ দল বিশাল রান তাড়া করে ৬ উইকেটের কৃতিত্বপূর্ণ জয়লাভ করে। এর ফলে বাংলাদেশ সফলভাবে একদিনের আন্তর্জাতিকে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে বিজয়ী হয়।
৯ মার্চ, ২০১৫ তারিখে অ্যাডিলেড ওভালে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বের ৫ম খেলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক সেঞ্চুরি করেন। বলে রাখি, বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে সেঞ্চুরি করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৩৮ বলে ১০৩ রানের এ ইনিংসটি ৭ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ছিলো ঝলমলে। বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বকাপের যে-কোনো উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে সাথে নিয়ে ১৪১ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়েন তিনি। এছাড়াও একদিনের আন্তর্জাতিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের এ জুটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। একদিনের আন্তর্জাতিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলগতভাবে সর্বোচ্চ রান তোলে। পরবর্তীতে রুবেল হোসেনের প্রশংসনীয় বোলিংয়ে (৪/৫৩) বাংলাদেশ ১৫ রানের ব্যবধানে জয়ী হওয়াসহ কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্যা ম্যাচ লাভ করেন। ১৩ মার্চ সেডন পার্কে গ্রæপ পর্বে দলের সর্বশেষ খেলায় নিউজিল্যান্ডের সাথে ১২৮* রান করে অপরাজিত থাকেন ও ব্যক্তিগত দ্বিতীয় শতরান করেন। এ খেলায় তিনি বিশ্বকাপে ধারাবাহিকভাবে ‍দুইটি ম্যাচে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন, যা এর আগে কোনো বাংলাদেশি খেলোয়াড় করতে পারেননি। কিন্তু তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ ওই ম্যাচে বাংলাদেশ দল ৩ উইকেটে পরাজিত হয়।

২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অল্প রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ জাতীয় দল। সেই সময় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১০২ রানের অপরাজিত এক মহাকাব্যিক ইনিংস উপহার দেন। ফলে বাংলাদেশ পাঁচ উইকেটে জয় লাভ করে এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে পৌঁছে।

২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফি
২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে  ১৮ বলে ৪৩ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে বাংলাদেশকে ফাইনালে তোলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়াও বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলেছেন। তন্মধ্যে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, পাকিস্তান সুপার লিগ ও ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ অন্যতম।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর
২০২১ সালের জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের সময় মাহমুদউল্লাহ টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন।
৮ই অক্টোবর ২০২৪ এ তিনি টি-২০ থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
সর্বশেষ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষে গত ১২ই মার্চ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।

প্রিয় বন্ধুরা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে দেশের জন্য যা করেছেন তা চিরস্মরণীয়। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো ক্রিকেটার সবসময় তৈরি হয় না। তিনি দেশের জন্য ক্যারিয়ারের অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি চাইলেই টপ অর্ডারে ব্যাট করে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি, কারণ ফিনিশিং রোলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে তার মতো কেউ না থাকায় তিনি দলের প্রয়োজনে টপ অর্ডার ছেড়ে লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করতেন। দলের প্রয়োজনে বল হাতেও কার্যকরী ভ‚মিকা পালন করেন।
সর্বোপরি, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশের ক্রিকেটে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি থাকবেন ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে, থাকবেন ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে, থাকবেন নিদাহাস ট্রফির ছক্কায়। থাকবেন হাজারো ক্রিকেটপ্রেমীর অন্তরে। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা বলবে, আমাদের একজন সাইলেন্ট কিলার ছিল। ০