নানা ভাইয়ের বন্দুক

রোহান আহম্মেদ

0
20
নানা ভাইয়ের বন্দুক

আমার নানা ভাইয়ের বয়স ৮০ বছরেরও বেশি কিন্তু দেখতে লাগে ষাটেরও কম। আমার নানা সহজে অসুস্থ হন না, যখন মা ব্যস্ত থাকেন তখন নানা আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসেন। নানা নিজের সব কাজ নিজেই করেন। আমার পরিবারের সবার জন্য বাজার করেন। আমার নানা কখনো ক্লান্ত হন না। করোনাও নানাকে কাবু করতে পারেনি।

তবে হঠাৎ করে গত মাসে নানা ভাইয়ের শরীর খুব খারাপ হয়ে যায়। বিভিন্ন টেস্ট করার পর দেখা গেলো জন্ডিস হয়েছে। তার এখন শুরু হয় ফুল বেডরেস্ট। তাই নানার হাতে এখন অফুরন্ত সময়। তার সব কাজ বন্ধ। আমি তার সাথে অনেক সময় কাটাই আর তার জীবনের অনেক গল্প শুনি। এর মধ্যে সবচেয়ে মজার হচ্ছে ১৯৬৮ সালের ঘটনাটি।

আমার নানাবাড়ি ঢাকা মেডিকেলের দক্ষিণ পাশে। তখন নানাবাড়ি ও ঢাকা মেডিকেলের মাঝখানে রেললাইন ছিল। সেখানে রেলগাড়ি চলত। ১৯৬৮ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়ে। নানা বাড়ির সামনে ছিল এক পুকুর। সেই পুকুরের পাশে ছিল এক জঙ্গল। জঙ্গলে ছিল বিভিন্ন জাতের পাখি যেমন- দোয়েল, কোয়েল, ময়না, শালিক, টিয়া ইত্যাদি। রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পাখির সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। আমার বড় আব্বার একটি এয়ারগান ছিল। বড় আব্বা মানে আমার নানার বাবা। সেই এয়ারগান দিয়ে নানা ভাই একটি কবুতর শিকার করেছিল। কবুতর যখন হাতে নিল কবুতরের শরীরের গরম রক্তে হাত ভরে গেল আর কবুতর ছটফট করতে লাগল। এটা দেখে নানার মন কেঁদে উঠল। নিজের উপর আর বন্দুকের উপর খুব রাগ হলো। নানা বন্দুকটা ভাঙতে চাইলেন কিন্তু পারলেন না। তাই বন্দুকের সব পার্টস আলাদা করে ফেলেন। সব পার্টস পুকুরে ছড়িয়ে ফেলেন যাতে কেউ সংগ্রহ করে মেরামত করে ফেলতে না পারে। ঘটনাটা বলতে বলতে নানার চোখে পানি চলে আসে। আমারও খারাপ লাগে। কিন্তু একটু পর বন্দুকের জন্য আফসোস হয় আমার। ইশ! নানা বন্দুকটা না ভেঙে যদি রেখে দিত আমার জন্য বা এখন যদি বন্দুকের সব পার্টস জোগাড় করে বন্দুকটা আবার তৈরি করতে পারতাম তাই বন্দুকের সব পার্টস যেখানে ফেলা হয়েছিল সেই দিকে তাকিয়ে রইলাম। আর বললাম নানা ভাই এখন কি আর পার্টসগুলো সংগ্রহ করা যাবে? নানা বললেন যাবে। তবে দাম দাঁড়াবে কোটি টাকা। উত্তর শুনে আমি তো অবাক। মানে? নানা বললেন মানে বন্দুকের সব পার্টস যে পুকুরে ফেলা হয়েছিল সেই পুকুর ভরাট করে এখন তার উপর আট তলা ঐ বিশাল বিল্ডিং। আফসোসভরা চোখে বিল্ডিং এর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ০