মা চড়ুইয়ের চারটে ছানা

শাকিব হুসাইন

0
55
মা চড়ুইয়ের চারটি ছানা

ছানাদের সবেমাত্র চোখ ফুটেছে। এই তো দু’দিন কি তিনদিন হবে! ছানারা আবার চেঁচামেচি করতেও শিখে গেছে রে বাবা! সারাদিন শুধু মা-আ-আ! মা-আ-আ বলে চেঁচায়। ছানাদের চেঁচামেচিতে উপরের ছাদে থাকা একজোড়া চড়ুই খুব বিরক্ত হয়। চড়ুই জোড়ার আবার তিন তিনটে ছানা আছে। চড়ুইজোড়ার ছানারা বেশ বড়সড় হয়ে গিয়েছে। তারা এখন আকাশে উড়ে বেড়ায়। আকাশের নীল কুড়োতে যায়। মাঝে মাঝে অনেক দেরি করে বাড়িতে ফেরে। চড়ুইজোড়া খুব দুশ্চিন্তায় থাকে ছানাদের জন্য। তবুও তারা বাবা-মায়ের কষ্ট বুঝতে চেষ্টা করে না। পরেরদিন আবারো বাবা-মাকে না বলে ওই যে এত্তো দূরের আকাশটাতে হারিয়ে যায়। এই ছানারা খুব দুষ্টু, তাই না? হ্যাঁ, চড়ুইজোড়ার ছানারা খুবই দুষ্টু। এই ছানাদের কথা অন্য একদিন বলবো। তোমাদের তো চোখ ফোটা ছানাদের কথা বলতে ভুলেই গেছি। হে হে, দেখেছো আমি কতটা ভুলোমনা। চোখ ফোটা ছানারাও চড়ুই ছানা। চারজন ভাইবোন। চারজনের একসাথেই চোখ ফুটেছে। চারজনেই চেঁচামেচিতে খুবই পটু হয়েছে।

আজকে আকাশটা খুব পরিষ্কার। কী সুন্দর নরম নরম রোদ! আর মিষ্টি সুন্দর বাতাস বইছে বাইরে। মা চড়ুইটা ভাবলো, বাইরে গিয়ে চটজলদি করে ছানাদের জন্য খাবারটা নিয়ে আসি। যেমনি ভাবনা অমনি কাজ। ছানাদের মিষ্টি করে চুমু এঁকে ফুড়ুৎ করে উড়াল দিলো কোথায় যেন। তারপর কিছুক্ষণ পর আবার ফুড়ুৎ করে উড়ে এলো ছানাদের কাছে। খুবই আদর করে সকল স্নেহ ঢেলে দিয়ে ছানাদের খাইয়ে দিলো। ছানারা চাকুমচুকুম করে খেয়ে নিল। ছানারা আবারও চেঁচাতে লাগলো মা-আ-আ মা-আ-আ। মা চড়ুইটা বুঝতে পারলো ছানাদের আরো বেশি ক্ষুধা লেগেছে। কী আর করা! আবার তাকে খাবারের খোঁজে যেতেই হবে। ছানাদের মিষ্টি করে চুমু এঁকে দিয়ে যেই বাইরে এলো অমনি আকাশবুড়ো দুড়ুম করে কেশে উঠলো। বাবা রে বাবা! সে কী ভয়ানক কাশি রে বাবা! ছানারা খুবই ভয় পেয়েছে। মা-আ-আ মা-আ-আ বলে খুব জোরে চেঁচাতে লাগলো। মা চড়ুইটা দুই ডানা দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে নিল ছানাদের। মায়ের ওম পেয়ে ছানারা শান্ত হয়ে গেছে।

কিছুক্ষণ পর ছানারা আবার মা-আ-আ মা-আ-আ বলে চেঁচাতে লাগলো। মা চড়ুইয়ের বুঝতে বাকি রইল না। তাকে এবার খাবারের খোঁজে যেতেই হবে। বরাবরের মতো আবারও ছানাদের চুমু এঁকে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। এবার আর আকাশবুড়ো দুড়ুম করে কাশলো না। মা চড়ুইটা চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখল কিছুক্ষণ। মনে মনে ভাবল, বৃষ্টি আসার জো নেই। এখন বেরিয়ে পড়াই ভালো হবে। যেমনি ভাবনা অমনি কাজ। ফুড়ুৎ করে উড়াল দিলো কোথায় যেন।

মা চড়ুইটা যাওয়ার অল্পসময়ের মধ্যেই ঝপাং ঝপাং করে আকাশ ফুটো করে বৃষ্টিছানারা নিচে নামতে থাকলো। সে কী বৃষ্টিছানাদের নাচানাচি রে বাবা! যে যত পারে তত জোরেই নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে। বৃষ্টিছানাদের খুশি দেখে কে! কিন্তু শহরের পাঁচতলা দালানটার জানালায় যে চারটা সদ্য চোখ ফোটা চড়ুইছানা ভীষণ ভয়ে মা মা করে চেঁচাচ্ছে ওগুলো তো বৃষ্টিছানারা শুনতে পাচ্ছে না। বৃষ্টিছানারা ওদের মতোই নেচে যাচ্ছে। চড়ুইছানারা অনেক ভয় পেয়ে গুটিশুটি হয়ে আছে আর জোরে জোরে চেঁচাতে লাগলো মা-আ-আ মা-আ-আ বলে। টানা দশ মিনিট ধরে বৃষ্টিছানারা মনের সুখে নেচে যেই আকাশবুড়োর কাছে চলে গেলো, অমনি মা চড়ুইটা তড়িৎগতিতে ছানাদের কাছে এলো। মুখে তার কোনো খাবার নেই। ছানারা মাকে দেখে জোরে জোরে মা-আ-আ মা-আ-আ বলে চেঁচাতে লাগলো। মা চড়ুইটা তার দুইটা ডানা দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে নিল ছানাদের। মায়ের ওম পেয়ে তারা আর চেঁচালো না। এতক্ষণ খুব ভয়ে ছিল। এখন মাকে দেখে তাদের ভয় কেটে গেছে। মায়ের গরম ওম পাওয়ায় ছানারা খাবারের কথা ভুলেই গেল। কিছুক্ষণ পর ছানারা আবার চেঁচাতে লাগলো মা-আ-আ মা-আ-আ..