হোসনা বানুর অ্যাডভেঞ্চার । পর্ব-৯

আহমাদ স্বাধীন

0
7
সমুদ্র অভিযান

হোসনা বানু যাবে পাতালপুরীতে। সেখানে ডাইনি জাদুকর বন্দি করে রেখেছে ১০০জন নিষ্পাপ ছেলেমেয়েকে। যাদের সবার বয়স বারো বছরের কাছাকাছি। আসছে চন্দ্র মাসের অমাবস্যায় সবার বয়স হবে বারো বছর। সেই রাতেই শয়তানের উদ্দেশ্যে বলি দেয়া হবে ওদের। তার আগেই হোসনা বানুকে পৌঁছাতে হবে পাতালপুরীর সেই গোপন ঘরে, যেখানে বন্দি আছে ওরা। ওদেরকে উদ্ধার করবে হোসনা বানু। পুণ্যবান ব্যক্তির কাছ থেকে ও পেয়েছে একটা বিশেষ বাটি। যেটাতে দেখা যাবে পাতালপুরীর রাস্তা। এ ছাড়াও ওকে দেয়া হয়েছে ছোট্ট এক বোতল ফলের রস। যেটা কখনো শেষ হবে না। হোসনা বানুর দীর্ঘ যাত্রাপথে ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মেটাবে এই ফলের রস। প্রয়োজনের সময় খেয়ে নিলে দেখা যাবে শেষ হয়ে গেছে রস। এরপর ব্যাগে রেখে দিলে আবার আপনাআপনি ফলের রসে ভরে যাবে বোতল। তখন আবার খাওয়া যাবে। শেষ হয়ে গেলে আবার ভরে যাবে। এমন করে চলতেই থাকবে। মোট কথা কখনোই শেষ হবে না এই বোতলের ফলের রস। পুণ্যবান পুরুষের কাছ থেকে এই জিনিসগুলো উপহার পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানালো হোসনা বানু। তারপর বিদায় নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলো পাতালপুরীর উদ্দেশ্যে।

হোসনা বানু পুণ্যবান পুরুষের দেয়া রাস্তা দেখার বাটির দিকে তাকালো। মনে মনে ভাবলো তার গন্তব্যের কথা। সাথে সাথে বাটির গায়ে দেখা গেলো পাতালপুরীতে যাওয়ার নির্দেশনা। অনেক দীর্ঘপথ সেটা। অর্ধেকটা পথ মরুভূমি আর অর্ধেকটা পথ সমুদ্র। মরুভূমির পথ পায়ে হেঁটে পেরোতে লাগবে আঠারো দিন। আর উটের পিঠে গেলে লাগবে বারো দিন। তারপর পাওয়া যাবে সমুদ্র। সমুদ্রের পথে নৌকায় বা কোনো ভেলায় গেলে সোজা যেতে হবে ছয় দিন। তারপর ডুবে যেতে হবে তলদেশ দিয়ে। সেখানেও লাগবে তিন দিন। এরপর পাওয়া যাবে অন্ধকার গুহা। সেই সমুদ্রের তলদেশের অন্ধকার গুহা দিয়ে চলতে হবে বারো ঘণ্টা। তবেই পাওয়া যাবে ডাইনি যাদুকরের গোপন ঘর। যেখানে বন্দি আছে ১০০জন নিষ্পাপ ছেলেমেয়ে। হোসনা বানুর সাথে আছে ওর প্রিয় সাদা গাধা। এই গাধাটাকে সাথে নিয়ে এই পুরোটা পথ পাড়ি দেয়া যাবে না। গাধাটাকে নিয়ে গেলো শুধু সেই পর্যন্ত, যেইখানে শেষ হয়েছে লোকালয়। লোকালয় শেষ হয়ে যেখান থেকে  শুরু হয়েছে মরুভূমি সেখানে থামলো হোসনা বানু। একটা উট কিনতে হবে এখন। মরুভূমিতে চলার জন্য উট খুবই উপযোগী। হোসনা বানু খুঁজে খুঁজে দেখা করলো একজন ব্যবসায়ী আদিবাসীর সাথে। একটা উট কিনে নিলো তার কাছ থেকে। বিনিময়ে দিতে হলো কিছু রৌপ্যমুদ্রা। আরও দিয়ে দিলো ওর সাদা গাধাটাকে। কারণ গাধাটাকে আর নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। সামনে সুবিশাল মরুভূমি। সাদা গাধাটা ছিলো হোসনা বানুর ভীষণ প্রিয়। গাধাটাও ওকে ভালোবাসতো খুব। তাই ব্যবসায়ীর সাথে একটা শর্ত রাখলো হোসনা বানু। তা হলো আবার যদি গাধাটাকে ফিরিয়ে নিতে চায় তবে সে যেন দিয়ে দেয়। ব্যবসায়ী শর্ত মেনেই রেখে দিলো ওর প্রিয় সাদা গাধাটাকে।

মরুভূমির বালুরাশির উপর দিয়ে চলতে থাকলো হোসনা বানু। এই পথে ওকে চলতে হবে বারো দিন। তাই উটের জন্য নিয়ে নিলো পর্যাপ্ত খাবার। আর নিজের জন্য কিছুই নিতে হলো না। কারণ ওর কাছে আছে শেষ না হওয়া ফলের রসের বোতল। চলতে চলতে চলতে হোসনা বানু কত মাইল পথ যে চললো সে হিসেব কেউ রাখলো না। সেই পর্যন্ত ওরা থামলো না যেই পর্যন্ত দিনের আলো থাকে। রাত নেমে এলে ওরা বিশ্রাম নেয়। উটকে খেতে দিয়ে নিজে খায় শেষ না হওয়া বোতলের ফলের রস। তারপর উটের গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমায় হোসনা বানু। সকালের আলো ফুটতেই আবার চলতে থাকে। এমন করে চলতে চলতে কেটে গেলো ছয় দিন। এই সময়টায় তেমন কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি হোসনা বানুকে। বেশ বিপদমুক্তভাবেই কাটতে লাগলো সময়। যেভাবে ও চলছে এভাবে চলতে পারলে হয়তো নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছে যেতে পারবে গন্তব্যে। কিন্তু কেন যেন সরল পথ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। তাই এবার বোধ হয় একটা বিপদ এসেই গেলো হোসনা বানুর সামনে। তখন দুপুর গড়িয়ে মাত্র বিকেল নেমেছে। সূর্যের তপ্ত রোদকে আড়াল করেছে মেঘ। ধীরে ধীরে আকাশ কালো করে ঘিরে ফেলেছে বড়ো বড়ো মেঘের খণ্ড। শুরু হলো হালকা বাতাস। কিন্তু হালকা বাতাস আর হালকা থাকলো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হলো মরুঝড়। মরুঝড়ের তাণ্ডব হয় ভীষণ ভয়ানক। হোসনা বানু সাহসী মেয়ে। তবুও ওর মুখে ফুটে উঠলো ভয়ের ছাপ। ভয়ানক দৈত্য, ডাইনোসর, অক্টোপাস অথবা জাদুকরদের সাথে লড়াই করার অভিজ্ঞতা ওর আছে। কিন্তু এই খোলা মরুঝড়ের সাথে তো লড়াই চলে না। এটা প্রাকৃতিক বিপদ। এই রকম বিপদে নিজেকে শান্ত রাখতে হয়। আর বুদ্ধি করে নিজেকে রক্ষা করতে হয়। এই বিশাল বিস্তৃত শূন্য মরুভূমিতে একা হোসনা বানু।  সাথে ওর বাহন একমাত্র উট। কী হবে এখন হোসনা বানুর। ভাবতে লাগলো ঠান্ডা মাথায়। ততক্ষণে ঝড়ের তাণ্ডব বেড়েই চললো। প্রচণ্ড বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছে মরুভূমির বালু। ঝড়ো বাতাসে চোখ মেলে থাকার কোনো উপায় নেই। হোসনা বানুর উট আর সামনে এগোতে পারলো না। হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো বালুর উপরে। উট হোসনা বানুকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, তুমি ভয় পাও কেন মেয়ে? আমি তো আছি তোমার সাথে। এই রকম মরুঝড় মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। আমার শরীরের আড়ালে বসে থাকবে তুমি। চোখে-মুখে একটা কাপড় বেঁধে নিও, যেন বালু ঢুকতে না পারে। যতক্ষণ ঝড় না থামবে ততক্ষণ দাঁড়াবে না। যত সময় লাগুক আমার আড়ালে মুখ নিচু করে বসে থাকবে। এই বিপদ কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ। এই বলে উট বালুর ভেতরে মুখ গুঁজে বসে পড়লো। হোসনা বানু একটা কাপড় দিয়ে খুব শক্ত করে মুখ ঢাকলো।

তারপর উটের শরীরের আড়ালে বসে পড়লো। ওদিকে ঝড়ের বাতাস বেড়ে গেলো আরো। সমস্ত মরুভূমিটা যেন ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। মরুঝড় যে এতো ভয়ানক তা জানা ছিলো না হোসনা বানুর। ভীষণ রকম অগোছালো হয়ে উঠলো মরুভূমি। হোসনা বানু উটের আড়ালে চোখ মুখ বন্ধ করে বসে রইলো শক্ত হয়ে। ঝড়ের উড়িয়ে দেওয়া বালুর স্তর জমা হতে লাগলো ওদের শরীরের উপর। ভয়াল এই মরুঝড়ের রাত যেন শেষ হতে চায় না। এই প্রলয়ঙ্কর ঝড়ের মধ্যেই কেটে গেলো এক রাত। অথচ হোসনা বানুর কাছে মনে হলো যেন কত বছর কেটে যাচ্ছে কিন্তু ঝড় থামছে না। রাতের কালো চাদর ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো সকাল। থেমে গেছে ঝড়। উট আর হোসনা বানুর শরীরের উপর স্তুপ হয়ে আছে বালু। অন্তত দুই হাত বালুর নিচে চাপা পড়েছে ওরা। প্রথমে উট উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। বেশ কষ্ট হলো এই বালুর স্তুপ ভেঙে বেরোতে। তবে উঠতে পারলো। উট উঠে দাঁড়ানোর পরে হোসনা বানুর জন্য সহজ হয়ে গেলো উঠে দাঁড়ানো। উঠে দাঁড়ালো হোসনা বানুও। এই মরুঝড়ের মধ্যে আটকে থেকে অনেক কষ্ট হয়েছে ওর। উটেরও কষ্ট কম হয়নি। হোসনা বানুকে আড়াল করে বাতাস ও বালুর ঝাপটা ওকেই নিতে হয়েছে বেশি। তাই বোঝাই যাচ্ছে যে ভীষণ ক্লান্ত আর তৃষ্ণায় কাতর হয়ে গেছে বেচারা। হোসনা বানু উটের পিঠে করে বয়ে আনা খাবার বের করে খেতে দিলো উটকে। আর নিজে খেলো শেষ না হওয়া বোতলের ফলের রস। গতকালকের মরুভূমি ছিলো বিছানো পাটির মতো সুন্দর। কিন্তু আজকের মরুভূমি একদম ভিন্ন রকম। লণ্ডভণ্ড এক ভূতুড়ে উদ্যান যেন। সম্পূর্ণ অপরিচিত একখণ্ড বিশাল বালুর সমুদ্র যেন। যত অপরিচিতই মনে হোক না কেন, থামা যাবে না। এগিয়ে যেতেই হবে ওকে। আবার রওয়ানা হলো ওরা। চলতে থাকলো মরুর পথ ধরে। দিক ঠিকানা ঠিক রাখার জন্য সেই পুণ্যবান পুরুষের দেয়া বাটি দেখতে হলো কয়েকবার। এটা না থাকলে এই বিস্তৃত মরুভূমির পথ চিনে চলা অসম্ভব ছিলো। হোসনা বানু চলছে উটের পিঠে। চলছে তো চলছেই। চলতে চলতে কেটে গেলো আরও ছয়দিন। এই সময়ে ওরা কত মাইল পথ যে অতিক্রম করলো সে হিসেব কেউ রাখলো না। তবে লক্ষ্য ঠিক রেখে একাগ্রতার সাথে এগিয়ে যেতে পারলে যে কোনো পথেরই শেষ পর্যন্ত যাওয়া যায়। তাই হোসনা বানুর মরুপথও একসময় শেষ হলো। হোসনা বানু পৌঁছল সমুদ্রের কাছে।

বিস্তৃত জলরাশির সমুদ্র। এখন ওকে যেতে হবে এই সমুদ্রের উপর দিয়ে। ভেসে ভেসে যেতে হবে অনেক দীর্ঘ সময়। ছয়দিন লাগবে নৌকায় করে গেলে। কিন্তু নৌকা কোথায় পাবে এখন? সামনে অগাধ সমুদ্র। শুধু পানি আর পানি। হোসনা বানু চিন্তিত চোখে তাকালো আকাশের দিকে। সেসময় আকাশে দেখা গেলো একটা খয়েরি ডানার বাজ পাখিকে। হোসনা বানু হাতের ইশারায় ডাকলো বাজ পাখিটাকে। সাথে সাথেই বাজটি নেমে এলো নিচে। হোসনা বানু জানতে চাইলো, তুমি কি আমার সেই বাজ বন্ধু, যার সাথে দেখা হয়েছিলো আগুনমুখো ডাইনোসরের জঙ্গলে? বাজপাখি বলল, না, আমি সেই বাজ নই। তবে আমি জানি তোমাদের সেই গল্প। তুমি আমাদের স্বগোত্রের এক বাজপাখিকে বাঁচিয়েছিলে সাপের মুখ থেকে। তোমার সাহায্যের কথা সেই বাজ আমাদের সবার কাছেই বলেছে। তাই গল্পটি আমাদের অজানা নয়। এটাও বলেছে যে, যদি তোমার কখনো সাহায্য রকার হয় তবে আমরা যেন অবশ্যই সাহায্য করি। এখন বলো আমি তোমার কী সাহায্য করতে পারি? হোসনা বানু বলল, আল্লাহকে ধন্যবাদ যে তোমাকে পেয়ে গেছি। আমার জন্য একটা নৌকা ভীষণ দরকার। আমি যাবো পাতালপুরীতে। এখান থেকে সোজা পুব দিকে ছয়দিন ভেসে যেতে হবে আমাকে। এভাবে গেলেই আমি সমুদ্রের তলদেশের রাস্তা পেয়ে যাবো। তারপর সেখান থেকে যাবো পাতালপুরীতে। আমাকে নৌকা তৈরিতে সাহায্য করতে হবে। বাজপাখি বললো, বুঝে গেছি। আর বলতে হবে না। তুমি অপেক্ষা করো। আমি এ অঞ্চলের সমস্ত বাজপাখিকে সাথে নিয়ে শুকনো খড়কুটো, গাছের ডালপালা নিয়ে আসছি। তারপর বানিয়ে দেবো নৌকো। উড়ে গেলো বাজ। অপেক্ষা করতে থাকলো হোসনা বানু। খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হলো না। হোসনা বানু তাকিয়ে দেখলো আকাশ কালো করে ঝাঁকে ঝাঁকে বাজপাখিরা আসছে। সবাই ঠোঁটে করে শুকনো ডালপালা ও খড়কুটো এনে জড়ো করলো সমুদ্রের পাড়ে। অনেক অনেক ডালপালা আর খড়কুটো জমা হয়ে গেলো। এরপর ওরা তৈরি করতে লাগলো নৌকো। অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ শক্ত পোক্ত মাঝারি আকারের একটা নৌকো তৈরি করে ফেললো বাজ পাখিরা। হোসনা বানু ভীষণ খুশি হলো ওদের সহযোগিতা পেয়ে। অনেক অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে উঠে বসলো নৌকোয়। বাজপাখিরা ওকে শুভকামনা জানিয়ে চলে উড়ে চলে গেলো সবাই।

হোসনা বানু বাটিতে দেখলো পাতালপুরীতে যাবার সমুদ্র পথের দিক। তারপর সোজা পুব বরাবর নৌকো নিয়ে চলতে থাকলো। চলতে চলতে অথই সমুদ্রের কতটুকু নীল যে পেরোলো সেই হিসেব কেউ রাখলো না। চারপাশে দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। মাথার উপর গনগনে সূর্য। রোদের তাপে হোসনা বানুর ভীষণ গরম লাগছে। বৈঠা বাইতেও কষ্ট হচ্ছে খুব। তবু সে থামছে না। যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। এভাবে যেতে যেতে যেতে কেটে গেলো তিন দিন তিন রাত। নামলো এক মন খারাপের ভোর। আজকের আকাশটা অন্যরকম। সূর্যের দেখা নেই। আকাশ ভরা মেঘ। মেঘেদের রংটাও কেমন বিমর্ষ। চতুর্থ দিনের ভোরে হোসনা বানু বেশ খানিকটা ক্লান্ত হয়ে গেলো। বৈঠা চালানোর মতো শক্তি পাচ্ছে না সে। কিন্তু থামলে তো চলবে না। সময় চলে যাচ্ছে দ্রুত। আসছে চন্দ্রমাসের অমাবস্যার রাতের আগেই যেতে হবে পাতালপুরীতে। কারণ ওই রাতেই সব ছেলে-মেয়ের বারো বছর পূর্ণ হবে। আর তখনই বলি দেয়া হবে ওদের। যদিও বেশ কয়েকদিন সময় এখনও বাকি আছে। তবুও হোসনা বানু কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চায় না। বলা তো যায় না, সামনে আর কত বিপদ ওঁত পেতে আছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছতে হবে পাতালপুরীতে। ফলের রসের বোতল থেকে রস খেয়ে নিয়ে বৈঠা চালায় হোসনা বানু। তবে বেশিক্ষণ চালাতে পারে না। আকাশের মেঘের রং কালো থেকে আরো কালো হয়ে যায়। বাতাস বইতে থাকে। বাতাসের সাথে প্রবল ঢেউ ওঠে সমুদ্রে। কেমন হঠাৎ পাল্টে যায় আকাশ। ভয়ানক হয়ে যায় সমুদ্র। ভীষণ ঝড় ওঠে সমুদ্রে। অপ্রস্তুত আর ভীত হয়ে পড়ে হোসনা বানু। ডালপালা আর খড়কুটো দিয়ে বানানো নৌকোর কি এমন সাধ্য আছে এই ঝড়ের সাথে লড়াই করার! হোসনা বানু তবুও চেষ্টা করে। বিশাল বড়ো বড়ো ঢেউ আছড়ে পড়ে ওর নৌকায়। ঢেউয়ের গতির কাছে ওর নৌকা খুবই দুর্বল। তবুও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে হোসনা বানু। তবে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না। ঝড়ের তাণ্ডব চলতেই থাকে। বিশাল ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙে যায় হোসনা বানুর খড়কুটোর নৌকো। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে যায় সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে। হোসনা বানু অনেক চেষ্টা করে একটা ভাঙা অংশ ধরে রাখে বুকের সাথে।

সমুদ্রের মাতাল ঝড়ের সাথে টিকে থাকা সম্ভব হয় না ওর। ঝড় ওকে কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় তা জানে না হোসনা বানু। তবে প্রাণপণে আকড়ে ধরে রাখে নৌকার ভাঙা অংশটা। অতল সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেঙে গেছে হোসনা বানুর খড়কুটোর নৌকো। ঝড়ের সাথে লড়তে লড়তে পরিশ্রান্ত হোসনা বানু হুঁশ হারিয়ে ফেলে। হারিয়ে যায় ওর সাথের পোঁটলা। পোঁটলায় বাঁধা বাটি বোতল কৌটা সব ভেসে গেছে অথই সমুদ্রের বুকে। হোসনা বানু ভাসতে থাকে নৌকার ভাঙা একটা টুকরো ধরে। হোসনা বানু ভেসে ভেসে কোথায় যায়? এই অথই সমুদ্র ওকে কোথায় নিয়ে যায় ভাসিয়ে? সামনে আর কী বিপদ অপেক্ষা করছে ওর জন্য?

সে কি শেষ পর্যন্ত যেতে পারবে পাতালপুরীতে? তা জানতে হলে তোমাদের যেতে হবে পরের পর্বে। (চলবে)