হোসনা বানুর অ্যাডভেঞ্চার । পর্ব-৫

আহমাদ স্বাধীন

0
7
ডাইনোসর এর জঙ্গলে

হোসনা বানু যাবে ডাইনোসর এর জঙ্গলে। বরফের রাজ্য হিমালয় পর্বত ডিঙিয়ে এসেছে সে। তার মায়ের অন্ধ চোখের আলো ফিরিয়ে আনার জন্য যেতে হবে তাকে জাদুর পাহাড়ে। এখনো ওকে পেরোতে হবে ডাইনোসরের জঙ্গল। রক্ত নদী ও সাপের গুহা। তারপর পৌঁছতে হবে জাদুর পাহাড়ে। যারা হোসনা বানুর সাথে যেতে চাও সেই রোমাঞ্চকর অভিযানে তাদের স্বাগত জানাই। চলো আমরা এগিয়ে যাই সেই রোমাঞ্চকর অভিযানে।

হোসনা বানু হিমালয় পর্বত পেরিয়ে এসে অপেক্ষায় ছিলো বাতাসের। এখান থেকে তিনশো ক্রোশ দূরের ডাইনোসর এর জঙ্গলে সহজে যেতে হলে তাকে যেতে হবে বাতাসে ভর করে। কিন্তু তখন বিপদ হলো অন্য। বাতাস বইতে লাগলো জঙ্গলের পথের উল্টো দিকে। এই উল্টো বাতাসে নিজেকে ভাসিয়ে দিলে তো জঙ্গলে পৌঁছানো যাবেই না বরং পথ ভুলে যেতে হবে অন্য কোথাও। এই অবস্থায় জঙ্গলমুখো বাতাসের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করা যাবে না। পথের ধারে বসে থাকতে থাকতে নেমে গেলো রাত। হোসনা বানু একটা গাছের ডালে উঠে নিজেকে বেঁধে নিলো। রাতটা কাটানোর জন্য তাকে এখানেই থাকতে হবে। বাতাসের গতিপথ যদি ঠিক থাকে তবে ভোরবেলা উঠে বাতাসের সাথে রওয়ানা দেবে জঙ্গলের পথে। জোছনা রাতের চাঁদের আলোয় গাছের ডালে শুয়ে ছিলো হোসনা বানু। ঘুম ঘুম চোখে শুনতে পেলো খচখচ শব্দ। হোসনা বানু ধীরে ধীরে উঠে বসলো। শব্দটা লক্ষ করে দেখতে পেলো ওর নিচের ডালে একটা বাজপাখির বাসা। সেখানে আছে দুটো ডিম। আর সেই ডিম খাবার জন্য এগিয়ে আসছে বড়ো একটা সাপ। সাপটা খুব তাড়াতাড়িই খেয়ে ফেলবে ডিম দুটো। মা ও বাবা বাজপাখি সম্ভবত ঘুমিয়ে আছে। তাই দেখতে পায়নি সাপটাকে। অবশ্য দেখলেও লাভ নেই।  কারণ এতো বড়ো সাপের সাথে লড়াইয়ে পারবে না বাজপাখি। পাখিরা নিজে পালাতে পারলেও ডিম দুটো নিশ্চিত খেয়ে ফেলবে সাপটা। হোসনা বানু ওর পোঁটলা থেকে ছোরাটা বের করলো। তারপর লাফ দিয়ে নামলো নিচের ডালে। পড়লো একদম সাপের সামনে। এসময় ঘুম ভেঙে গেলো বাজপাখিদের। সাপটা ফোঁস ফোঁস করে এগিয়ে এলো হোসনা বানুর দিকে। হোসনা বানু ছোরাটা দিয়ে এক কোপে কেটে ফেললো সাপের মাথা। বাজ পাখিরা জেগে উঠে দেখলো সব। বললো, কে গো তুমি মেয়ে? এতো রাতে আমাদেরকে এবং আমাদের ডিম বাঁচালে সাপের কাছ থেকে? হোসনা বানু নিজের পরিচয় দিয়ে বললো, আমি যাবো জাদুর পাহাড়ে। আনবো সেখানকার মধু ঝরনার পানি। আমার মায়ের অন্ধ চোখ সারাতে সেই পানির বড়ো দরকার। আমার কাছে আছে বিশেষ একটা ফুলের পাপড়ি। এই পাপড়ি আমার চুলের ভাঁজে দিলে আমার শরীর হালকা হয়ে যায়। আমি এই পাপড়ি দিয়ে বাতাসে ভেসে যেতে পারবো। বাজপাখিরা সব কথা শুনে বললো, এটা যদিও সহজ কাজ নয় তবু তোমার মতো ভালো মেয়ে সেখানে যেতে পারবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। তবে জানো কি মেয়ে, আমাদের কাছে বাতাসের খবর আছে। আমরা আকাশে উড়ে বেড়াই বলে বাতাসের খবর জানতে পারি। সেই খবরের সূত্রে বলতে পারি যে খুব তাড়াতাড়ি বাতাসের গতি পাল্টাবে না। জঙ্গলমুখো বাতাসের জন্য তোমাকে অপেক্ষায় থাকতে হবে অনেক দিন। তারচে বরং তুমি বিকল্প উপায় দেখো। হোসনা বানু চিন্তিত হলো। ভাবতে লাগলো বিকল্প উপায়। এ সময় বাবা বাজপাখি বললো, তুমি আমাদের জীবন বাঁচিয়েছো। বাঁচিয়েছো আমাদের ভবিষ্যত সন্তানদেরকেও। তাই তোমার উপকার করা আমাদের কর্তব্য। আমার কাছে একটা বিকল্প উপায় আছে। বলছি শোনো, আমরা বাজপাখিরা খুব সহজেই বাতাসের বিপরীতে যেতে পারি। তাই আমি তোমায় বয়ে নিয়ে যাবো। হোসনা বানু বললো, সেটা কীভাবে সম্ভব?  আমার ওজন তো তোমার থেকে বেশি হবে।

সেটা এখন। কিন্তু তোমার মাথার চুলে ফুলের পাপড়ি দেয়ার পরে নিশ্চয়ই নয়, বললো বাবা বাজপাখি।

দারুণ বুদ্ধি তোমার, বললো হোসনা বানু। আমরা তাহলে কাল সকাল বেলা রওয়ানা হবো।

ঠিক তাই। এবার একটু ঘুমিয়ে নাও। ওরা ঘুমিয়ে পড়লো সে রাতে। জেগে উঠলো বেশ ভোরেই। উঠেই হোসনা বানু তৈরি হলো জঙ্গলে যাবার জন্য।

বাজপাখিদের ঘুম ভেঙেছে তারো আগে। মা বাজ পাখিটা যেন কোথা থেকে নিয়ে এসেছে বেশ কিছু বুনোফল। হোসনা বানু খুব তৃপ্তি নিয়ে সেই ফল খেলো। তারপর খেলো শিশির জমা পানি। আর অপেক্ষা না করে মাথার চুলে গুঁজে নিলো ওজন কমানোর ফুলের পাপড়ি। তারপর বাবা বাজপাখির পিঠে চড়ে উড়ে যেতে লাগলো জঙ্গলের দিকে। তিনশো ক্রোশ দূরের ডাইনোসর এর জঙ্গলে যাওয়াটা সহজ হলো না ওদের।  বাজপাখিটা বাতাসের বিপরীতে উড়ে যাওয়ায় ওর কষ্ট হচ্ছিলো বেশ। তাই কয়েকবার জিরিয়ে নিতে হয়েছিলো তাকে। আবার সে উড়লো। আবার জিরুলো। আবার উড়লো। এমন করে কতদিন যে লাগলো তার হিসেব কেউ রাখলো না। তবু ওরা এগিয়ে যেতেই লাগলো। যেতে যেতে যেতে পৌঁছে গেলো ডাইনোসর এর জঙ্গলের কাছে। গিয়ে তবেই থামলো বাজপাখিটা।

হোসনা বানু অনেক অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় দিলো বাজপাখিটাকে। তারপর মাথার থেকে খুলে নিলো বিশেষ ফুলের সেই পাপড়ি। তখন ওর ওজন বেড়ে আবার হয়ে গেলো স্বাভাবিক। যাবার সময় বাজপাখি বলে গেলো,

যদি দরকার মনে হয় আবার তবে ডাক দিও আমায় বাজ বন্ধু বলে। যেখানেই থাকি না কেন, তোমার ডাকে ঠিক হাজির হবে এই খয়েরি ডানার বাজ।

এবার পেরোতে হবে এই ঘন অন্ধকার জঙ্গল। এখানে সূর্যের আলো খুব কম। জঙ্গলের ভেতরে হয়তো তাও নেই। কুয়াশার চাদর জড়িয়ে আছে চারপাশ। কিন্তু থেমে গেলে হবে না। এর মাঝেই হাঁটা শুরু করলো হোসনা বানু। হাঁটতে হাঁটতে কতো সময় যে হাঁটলো সে হিসেব কেউ রাখলো না। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ এগিয়ে গেলো হোসনা বানু। তবে মজার ব্যাপার যে ও ততটা ক্লান্ত হলো না। ক্লান্ত হয়নি এজন্য যে ওর হাতে শ্বেত ভালুকের দেয়া বিশেষ লাঠিটা ছিলো। এই লাঠিটা হাতে থাকলে ক্লান্তিবোধ কোথায় যে উবে যায় তা কেউ বলতে পারে না। আর হাঁটাও যায় অনেক তাড়াতাড়ি।

হালকা আলোর পথ ফুরিয়ে আসছে প্রায়। ঘন অন্ধকার জঙ্গল খুব দূরে নয়। হেঁটেই চলছে হোসনা বানু। হঠাৎ বনের গাছপালা কাঁপিয়ে দৌড়ানোর শব্দ শুনতে পেলো হোসনা বানু। কোনো এক দল জন্তু দৌড়ে আসছে। ওর দিকেই আসছে। কারা ছুটে আসছে এরকম মাটি কাঁপিয়ে, গাছপালা ভেঙে ভূমিকম্পের মতো? হোসনা বানুর বুঝতে খুব বেশি সময় লাগলো না। খুব ক্ষিপ্র গতির একটা বাচ্চা হাতি ওর গায়ের উপর দিয়ে যাচ্ছিলো প্রায়। হোসনা বানু ত্বড়িৎগতিতে সটকে না পড়লে পিষেই ফেলতো ওকে হাতিটা। বাচ্চা হাতির পেছনে আসছে একদল হায়েনা। দাঁতাল হায়েনাগুলোর শিকার হচ্ছে বাচ্চা হাতি। এতো এতো হায়েনার খুব অল্প সময় লাগবে হাতিটাকে ছিঁড়েখুড়ে খেতে। হোসনা বানু কী করবে হাতিটাকে বাঁচাতে! খুব দ্রুত ও একটা সাহসী কাণ্ড করে বসলো। হায়েনার পালের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো গিয়ে। তারপর হাতের লাঠিটা দিয়ে দৌড়ে আসা হায়েনাদের পেটাতে লাগলো। লাঠিটা যেন জাদুর মতোই কাজ করছে ওর সাথে। লাঠির আঘাতে এক একটা হায়েনা ছিটকে পড়তে লাগলো অনেক দূরে। কোনো কোনোটা গিয়ে পড়লো বড়ো বড়ো গাছের গায়। সেগুলোর হাড়গোড় ভেঙে থেঁতলে গেলো শরীর। এতো এতো হায়েনা ঠেকাতে খুব বেশি সময় লাগলো না। হোসনা বানু সব কটা হায়েনাকে মেরে তবেই থামলো।

ভীষণ অবাক হলো হোসনা বানু। ও নিজেই জানতো না যে এতটা শক্তি আছে ওর! এক এক বাড়িতে এক একটা হায়েনা চিৎপটাং! এটা কি সহজ কথা! তবে এতটা শক্তি সম্ভবত হোসনা বানুর না, হোসনা বানুর হাতে যে শ্বেত ভালুকের দেয়া লাঠিটা আছে এটা তারই শক্তি। এই বিষয়টা বুঝতে পেরে মনে মনে আর একবার শ্বেত ভালুককে ধন্যবাদ দিলো হোসনা বানু। এই লাঠিটার জন্য বেঁচে গেলো বাচ্চা হাতিটা। হোসনা বানু আবার হাঁটতে থাকলো। এবার আরও দ্রুত হাঁটলো। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ডাইনোসর-এর জঙ্গল পেরোতে হবে।

হোসনা বানু চলতে চলতে তখনই থামলো, যখন দেখলো আলোটা মিশে গেছে একদম অন্ধকারে। ভীষণ ক্ষুধা আর তেষ্টা পেলো হোসনা বানুর। ভালুকের দেয়া সবুজ রঙের পাথরটা বের করতেই আলোকিত হলো ওর চারদিক। যতটুকু আলো আসছে ততটুকু দিয়ে দিব্যি হাঁটা যায় পথ। হোসনা বানু পোঁটলা থেকে খাবার বের করে দেখলো সেখানে আছে কেবল একটা শুকনো রুটি আর খুব সামান্য একটু পানি। এতটুকুই শেষ ভরসা এখন। অর্ধেকটা রুটি আর খুব সামান্য পানি দিয়ে খাওয়া শেষ করলো ও। তারপর এগুতে এগুতে দেখলো জঙ্গলের সামনের অংশ আরও অন্ধকার। এটাই ডাইনোসর এর জঙ্গলের মূল অংশ। এখানকার জন্তু-জানোয়ারগুলো এই অন্ধকারেই দেখতে পায়। অন্ধকার জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে হোসনা বানুর মনে হলো কেউ আছে আশেপাশে। খুব সতর্কতা নিয়ে চলতে থাকলো জঙ্গলের পথ দিয়ে। হোসনা বানু বেশিদূর এগোতে পারলো না। চারপাশ দিয়ে ওকে ঘিরে দাঁড়ালো একদল কালো চিতা। অন্ধকারের সাথে ওদের শরীর মিশে গেছে। চিতাগুলোর সবুজাভ হলে চোখগুলো জ্বলজ্বল করছিলো। হোসনা বানু এসময় একটা ভুল করে বসলো। প্রচণ্ড ভয়ে ওর হাতের লাঠিটা ছুঁড়ে মারলো সামনের একটা চিতাকে লক্ষ করে। ওর হাতে এখন লাঠি নেই। অন্য হাতের থেকে সবুজ আলোর পাথরটাও পড়ে গেছে নিচে। চিতাটা ধরাশায়ী হলো ঠিকই কিন্তু অন্য চিতাগুলো তখন আরও গোল হয়ে হাড় হিম করা হুঙ্কার দিয়ে একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো ওর উপর।

না আ আ আ.. চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিলো হোসনা বানু। কিছুক্ষণ কোনো শব্দ হলো না। সব কিছু নিরব। এতো নিরব হয়ে গেলো কেন হঠাৎ! ভয়ে ভয়ে চোখ মেললো হোসনা বানু। পাথরের অল্প সবুজ আলোয় দেখতে পেলো চিতাগুলো নেই। দারুণ ব্যাপার তো, চিতাগুলো ওর কোনো ক্ষতি না করেই পালিয়েছে। কিন্তু কেন তা জানে না হোসনা বানু। পাথরটা হাতে নিলো। এখন হাতের লাঠিটা নিতে হবে। লাঠিটা কুড়িয়ে নিতে এগিয়ে গেলো হোসনা বানু। আর তখনই দেখতে পেলো বিভীষিকাময় একজোড়া লাল চোখ। লাঠিটা আর নেয়া হলো না হাতে। জ্বলজ্বলে লাল চোখজোড়া কার তা বুঝতে বেশি সময় লাগলো না ওর। এই জঙ্গলের আতঙ্ক আগুনমুখো ডাইনোসর দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। যেখানে ডাইনোসর থাকে সেখানে থাকার সাহস হয় না কারো। চিতাগুলো একারণেই পালিয়েছে। সবুজ পাথরের হালকা আলোয় ডাইনোসর-এর পুরো শরীরটা দেখা যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে শুধু ওর বিশাল ভয়ানক হিংস্র মুখ। মুখের ভেতর লম্বা দাঁত আর সাপের মতো জোড়া জিভ। ডাইনোসর এর বিরাট লম্বা গলা। ঘাড়ের উপর পাখনা দুটো বিশাল। ডাইনোসর এর হাত-পা কতগুলো তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে তা যে অনেক সেটা বোঝাই যায়। হাত-পায়ের নখগুলো বেশ বড়ো আর ধারালো। আগুনমুখো ডাইনোসরের নিঃশ্বাস থেকে বের হচ্ছে গরম বাতাস। গরম বাতাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হোসনা বানুর কষ্ট হচ্ছে।

ও কী করবে এখন, ভাবতে লাগলো। কিন্তু ভাবার সময়টা দিতে চায় না আগুনমুখো ডাইনোসর। ডাইনোসরটা আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে বললো, কে রে তুই পুঁচকে মেয়ে, আমার জঙ্গলে এসেছিস কোন সাহসে?

হোসনা বানু নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো, আমি হোসনা বানু, আমি যাবো জাদুর পাহাড়ে। মধু ঝরনার সোনালি পানি এনে ভালো করবো আমার মায়ের অন্ধ চোখ। আমাকে যেতে দাও ডাইনোসর। তোমার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই। ডাইনোসরটা রেগে গিয়ে বললো, আমার জঙ্গল ডিঙিয়ে কেউ যেতে পারেনি। তুইও পারবি না ছোট্ট মেয়ে। আমি এখন তোকে কাবাব বানাবো। তারপর গিলে খাবো। এ কথা বলেই মুখ দিয়ে আগুনের হল্কা ছাড়লো ডাইনোসর। আচমকা আক্রমণে হোসনা বানু চোখ-মুখ দুই হাতে ঢেকে ফেললো। এভাবে কিছুক্ষণ কাটলো। কিন্তু শরীরে আগুনের কোনো আঁচ টের পেলো না। শুনতে পেলো কলকল পানির শব্দ। চোখ মেলে দেখলো একটা অবাক কাণ্ড। হোসনা বানুর দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছে অনেক হাতি। হাতিগুলো শুঁড় দিয়ে পানি ছিটাচ্ছে ডাইনোসরটার ছোঁড়া আগুনের দিকে। যে কারণে আগুনমুখো ডাইনোসরের আগুন লাগছে না হোসনা বানুর গায়ে। ডাইনোসরটা যতই আগুন ছোড়ে হাতির পাল ওর দিকে ততই পানি ছিটায়। এভাবে ডাইনোসরের মুখের আগুন নিভে যায় এক সময়। হোসনা বানু এই ফাঁকে ওর হাতের লাঠিটা দৌড়ে গিয়ে তুলে নেয় হাতে। ডাইনোসরের ভেতরের আগুন কমে যাওয়ায় অনেকটা দুর্বল হয়ে যায় সে। এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে হোসনা বানু লাঠিটা দিয়ে একটা বাড়ি মারে ডাইনোসরের মাথায়। সাধারণ লাঠির বাড়িতে এতো বড় ডাইনোসরের কিছু না হলেও এই বিশেষ লাঠির বাড়িতে নুয়ে পড়ে আগুনমুখো ডাইনোসর। তখন হাতির পাল একটা একটা করে হেঁটে যায় ডাইনোসরের কাছে। উঠে পড়ে ওটার  লেজে, শরীরে ও মাথায়। উঠে পায়ের চাপায় পিষ্ট করে ফেলে ডাইনোসরটাকে। এই জঙ্গলের আতঙ্ক আগুনমুখো ডাইনোসর মরে ভর্তা হয়ে যায়। হোসনা বানু ভীষণ খুশি হয়ে কৃতজ্ঞতা জানায় হাতির পালকে। হাতির পালের নেতা হাতি বলে, আমরা তোমার কাছে আরো বেশি কৃতজ্ঞ ছোট্ট মেয়ে। তুমি এই জঙ্গলে প্রবেশের পথে অনেক বড়ো একটা ভালো কাজ করেছো। তাই তোমাকে সাহায্য করতে পেরে আমরাও খুশি। তুমি হায়েনাদের মুখ থেকে বাঁচিয়েছো রাজা হাতির ছানাকে। তাই তোমার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ গ্রহণ করো। আর বলো তুমি কোথায় যেতে চাও? হোসনা বানু বললো, আমি যাবো জাদুর পাহাড়ে। সেখানকার মধু ঝরনার পানি এনে ভালো করবো আমার মায়ের অন্ধ চোখ। হাতির পাল বললো, আমরা তোমাকে  জঙ্গলের  বাকি পথটুকু পার করে দেবো। এই বলে নেতা হাতি শুঁড় দিয়ে পিঠে তুলে নিলো হোসনা বানুকে। তারপর জঙ্গলের বাকি পথটা পেরিয়ে পৌঁছে দিলো রক্ত নদীর পাড়ে। বললো, এই নদী পার হওয়া আমাদের সম্ভব নয়। তাই আমাদের এখান থেকেই ফিরে যেতে হবে।  তোমার জন্য শুভকামনা। তুমি ভালো মেয়ে। তাই তুমি জয়ী হয়ে ফিরে আসবে। এই বলে বিদায় নিলো হাতির পাল। হাতির পালের সহযোগিতায় আগুনমুখো ডাইনোসরকে মেরে সহজেই জঙ্গল পেরিয়ে এলো। এগিয়ে গেলো গন্তব্যের আরো একটি ধাপের কাছে। এবার ওর সামনে ভয়ানক দানবের মতো কুমিরে ভরা রক্ত নদী। হোসনা বানু কেমন করে পার হবে সেই রক্ত নদী। তার ওপারে বিষধর সাপের গুহা। ও কী পারবে এই জঙ্গলের মতো নদী ও গুহা পেরিয়ে যেতে? সেই গল্প আমরা জানবো পরের পর্বে। চলবে..