হার না মানার গল্প

ফাহিম মাহমুদ রিহান

0
67
হার না মানার গল্প

সবার সকালে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙলেও আহমেদের ঘুম ভাঙে পাখির সাথে সাথেই। খুব ভোরে যখন পাখিরা খাবার খুঁজতে বের হয় তখন আহমেদও বের হয় প্রকৃতির মাঝে নিজকে খুঁজতে, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। প্রকৃতি দিয়ে নিজের গল্পকে সাজাতে, আর প্রকৃতি প্রেমী একজন লেখক হিসেবে নিজকে গড়তে। ছোটবেলা থেকে আহমদের স্বপ্ন নিজেকে লেখক হিসেবে পরিচয় দেয়ার। বন্ধুদের কাছে শুনে অনেক পত্রিকায় লেখাও পাঠিয়েছে। তার অনেক বন্ধুও পত্রিকায় লেখা পাঠিয়েছিল। তাদের অনেকের লেখা প্রকাশিত হলেও আহমেদের লেখা এখনো প্রকাশিত হয়নি।
অনেকবার লেখা পাঠানোর পরে যখন প্রকাশিত হয়নি তখন সে খুব হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু সে হার মেনে নেয়নি। সে তার লেখা গল্প-কবিতায় প্রকৃতির মাঝে নিজেকে খুঁজে। আর চেষ্টা করে বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলার। সে যখনই হতাশ হয়ে পড়ে তখন সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে, তাকিয়ে থাকে আকাশের মেঘ চিরে উড়ে যাওয়া পাখিদের দিকে। আর ভাবে তারাও শত বাধা-বিপত্তি, ঝড়-বৃষ্টিকে তোয়াক্কা না করে খাবার খুঁজতে বের হয়। তখন সে মনে একটু অনুপ্রেরণা পায়।
তার মা তাকে শিখিয়েছে আগে সফল হতে হলে তাকে ব্যর্থ হতে হবে। তাই সে এবার আরও পরিশ্রম করা শুরু করে তার লেখালিখির ক্ষেত্রে। গভীর রাত, চারিদিকে পিনপতন নীরবতা। মাঝে মাঝে হুতুম পেঁচার ডাক শোনা যায়, আর শোনা যায় নানানপ্রকার পোকার গান।
এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আহমেদ লেখালিখি করে এক বুক ভরা আশা নিয়ে। এই লেখালেখির জন্য তার মায়ের কাছে তাকে কম বকা শুনতে হয়নি। তাই সে এখন মায়ের চোখের আড়ালে রাত জেগে লেখালিখি করে। এভাবে লিখতে লিখতে এক সময় মুয়াজ্জিনের আজান শোনা যায় সাথে মায়ের ডাক, ‘আহমেদ, উঠ বাবা।’

কোনোরকম মুখ হাত ধুয়ে আহমেদ নাশতা করে স্কুলে চলে যায়। এভাবেই চলতে থাকে তার দিন। এবারে মাসিক ফুলকুঁড়িতে সে লেখা পাঠিয়েছে বুক ভরা আশা নিয়ে। কিন্তু ভাগ্য এমন যে, একবারও তার লেখা প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু নিচে ‘যাদের লেখা ভালো হয়েছে’ এই শিরোনামে তার নাম ছিলো। অবশ্য একবার তার বন্ধুর নামে একটি গল্প ছাপানো হয়েছিল। আহমেদ তার বন্ধুর সফলতায় খুশি হলেও তার মনে এক অজানা আক্ষেপ চেপে বসেছিল। কিন্তু আহমেদ তখনো হার মেনে নেয়নি। সে এভাবেই রাতের পর রাত জেগে লেখালেখি শুরু করে। অনেকবার মাসিক ফুলকুঁড়িতে লেখা পাঠানোর পর প্রতিবারের মতো এবারও তার লিখা প্রকাশিত হয়নি।
এক পড়ন্ত বিকেল আহমেদ বসেছিল বাড়ির উঠানে। তার এক বন্ধু দৌড়ে দৌড়ে মাসিক ফুলকুঁড়ি নিয়ে তার কাছে এলো। তার বন্ধু বলল, আহমেদ, তোর লেখা এবারে মাসিক ফুলকুঁড়িতে এসেছে। আহমেদের কী বাঁধভাঙা খুশি! খুশিতে সে আত্মহারা। তার মনে হচ্ছে আজ তার প্রতিটি রাতের পরিশ্রম যেন বৃথা যায়নি। এরপর আহমেদ সবুজ মাঠের মাঝ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো এক বুক ভরা স্বস্তি নিয়ে। ০