সার্কাসে হাতি এলো কেমন করে

মোনোয়ার হোসেন

0
41

হাতিছানা হানি। থাকে জঙ্গলে। দাদুর সাথে। মা-বাবা নেই। শিকারীরা তাদের ধরে নিয়ে গেছে। দাদু তাকে মা-বাবার মতো আদর করেন। ঘুমানোর আগে জড়িয়ে ধরে গল্প বলেন। গল্প শুনে হানি ঘুমিয়ে যায়।
প্রতিদিনের মতো সেদিনও হানি শুয়েছিল দাদুর কোল ঘেঁষে। দাদু শুঁড় দিয়ে আদর করে তাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন । হানি বলল , দাদু, হচ্ছেটা কী?
দাদু বললেন, তোমার শরীরে শুঁড় বুলিয়ে দিচ্ছি। তুমি ঘুমাও।
হানি একটু রেগে গেল। ঘুম আসবে না আমার।
দাদু অবাক হয়ে বললেন, কেন?
তুমি জানো না?
নাতো!
সত্যিই কি তুমি জানো না?
নাহ্।
হানি অভিমান করে। শুঁড় ফুলায়। ফোঁস করে।
দাদু বলেন, বুঝেছি। আজ তোমার মা-বাবার কথা মনে পড়ছে।
মা-বাবার কথা মনে পড়বে কেন? তুমিই তো আমার মা। তুমিই তো আমার বাবা। তুমিই তো আমার দাদু। তুমিই তো আমার সব। তাহলে অন্য কারো কথা আমার মনে পড়বে কেন?
তাহলে আজ তোমার ঘুম আসছে না কেন ?
কেমন করে ঘুম আসবে? তোমার গল্প না শুনলে আমার কী ঘুম আসে?
দাদু ভাবলেন ঠিকই তো। গল্প না শুনলে হানি ঘুমায় না। এখানে অবশ্যই হানির দোষ নেই। তিনিই তো তাকে এই অভ্যাস শিখিয়েছেন। গল্প বলে ঘুম পাড়ানোর। কিন্তু তিনি এখন করবেন কী? তার পেটে যত গল্প ছিলো, একে একে সব গল্প বলা তো হয়ে গেছে। কাল যেতে হবে বাজারে। একটা গল্পের বই কিনে আনতে হবে। বই পড়ে নাতিকে গল্প শুনাতে হবে। ভাবে দাদু হাতি। আবার ভাবে, সেতো কাল। আজ ঘুম পাড়াব কী করে!
হানি তাড়া দেয়। দাদু।
হুমমম।
তুমি চুপ করে আছো কেন? গল্প বলো। আমি কি ঘুমাবো না?
দাদু ভাবনা থেকে সরে আসেন। নড়েচড়ে উঠেন। হানির শরীরে শুঁড়ের আদর বাড়িয়ে দেন। অবশ্যই! অবশ্যই! আমি গল্প বলবো। তুমি ঘুমাবে।
তাহলে বলো গল্প।
দাদু আবার আটকে যান। কী গল্প বলবে! এক যে রাজা …, না না এই গল্পটা বলেছি। অনেক দিন আগের কথা …..উঁহু এটাও বলেছি। এক যে ছিল রাজকুমার ……ধ্যাৎ, এটাও তো বলেছি। তাহলে, তাহলে?
হঠাৎ দাদুর মনে পড়ে। হাতির গল্পের কথা। মানে নিজেদেরই গল্পের কথা। হাতি কিভাবে মানুষের সার্কাসে গেল!
দাদু বলেন, শোনো। অনেক দিন আগের কথা। জঙ্গলে থাকত আমাদের পূর্বপুরুষরা। তখন তো তারা আরও বড় ছিল । পাহাড়ের মতো। একদিন এক পিঁপড়ে বললো তারা নাকি আমাদের চেয়েও শক্তিশালী! আমাদেরকে কুপোকাত করার ক্ষমতা রাখে তারা! শুনে তো আমাদের পুর্বপুরুষরা তেলে বেগুন জ্বলে উঠলো। বলে কী পুচকে পিঁপড়ে! যার শরীরে পা তোলার আগেই ভর্তা হয়ে মাটিতে মিশে যাবে, সে কিনা শক্তিতে আমাদেরকে কুপোকাত করবে! তাদের আঁতে ঘা লাগল। বলল, চলো তাহলে হয়ে যাক শক্তির লড়াই।
পিঁপড়ে বলল, ঠিক আছে।
একদিন দিনক্ষণ ঠিক করা হলো। জঙ্গলের পাশে বড় মাঠ। মাঠে আয়োজন করা হলো শক্তির লড়াই। কে শক্তিশালী? হাতি না পিঁপড়ে? সব পশুপাখিদের মনে টানটান উত্তেজনা। হচ্ছেটা কী? পিঁপড়ে লড়বে হাতির সাথে! ভয়ঙ্কর কথা। সবাই মাঠে এলো। লড়াই শুরু হলো। হাতি পা ফেলল থপাস করে। পিঁপড়ের গায়ে। পিঁপড়ে ছিল চালাক। আগে গর্ত করে রেখেছিল মাটিতে। হাতি পা ফেলতেই সে ঢুকে গেল গর্ততে। হাতি তো ভাবল, পিঁপড়ে ভর্তা হয়ে গেছে। সে মহাসুখে নাচতে লাগল। শুঁড় দুলিয়ে গান গাইতে লাগল। ওদিকে হাতি পা তুলতেই পিঁপড়ে বেড়িয়ে এলো গর্ত থেকে। চুপিচুপি উঠে পড়ল হাতির গায়ে। ধীরে ধীরে গেল কানের কাছে। তারপর সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়ল কানের ভিতর। কামড় দিতে লাগল কুট্টুস কুট্টুস! পিঁপড়ের সুঁড়সুড়ি আর কাপড় খেয়ে হাতি তো বেসামাল। শুধু লাফায় আর চিৎকার করে। ও মাগো, ও বাবা গো! কে ঢুকলো কানের ভেতর? কে কামড়ায় কান?
পিঁপড়ে বলে, আমি পিঁপড়ে।
হাতি বলে, আয় বেড়িয়ে আয়।
পিঁপড়ে বের হয় না। শুধু কামড়ায়। আর কামড়ায়।
পিঁপড়ের কামড় খেয়ে হাতি লাফায় । হাতি আর পারে না। বলে, হার মানলাম পিঁপড়ে, তুমিই শক্তিশালী। আমার চেয়ে তুমিই বেশি শক্তিশালী।
পিঁপড়ে হাতির কান থেকে বেড়িয়ে এলো। সবাই করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানালো। ফুলের মালা পরিয়ে বিজয়ী ঘোষণা করল। তারপর সবাই মাঠ থেকে চলে গেল। শুধু পড়ে রইলো হাতি। লজ্জা আর অপমানে তার মরে যেতে ইচ্ছে করল। এক পুঁচকে পিঁপড়ের কাছে তাকে হার মানতে হলো!
দূরে দাঁড়িয়ে ছিল একদল শিকারী। তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাতির কা- দেখছিল। হাতির কা- দেখে তারা অভিভূত হলো। তারা ভাবল, এই হাতি ভালো নাচতে পারে। একে ধরে আমরা যদি লোকালয়ে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে মানুষকে হাতির নাচ দেখিয়ে অনেক টাকা রোজগার করা যাবে । একজন বলল, কেন পারব না? দেখলি না একটা পিঁপড়ের সাথে হাতি পেরে উঠল না। আমরা তো মানুষ । মাথায় অনেক বুদ্ধি। সবাই চিন্তা করো । নিশ্চয় ভালো একটা উপায় পেয়ে যাবো। তারা বুদ্ধি করে লোহাড় জাল তৈরী করল। জাল ফেলে হাতিকে ধরে ফেলল। নিয়ে গেল লোকালয়ে। হাতিকে দিয়ে মানুষকে সার্কাস দেখাতে লাগল। সেই থেকে যে শুরু হলো আমরা আজও সার্কাসে হাতি দেখতে পাই।