রাহার লাল মোরগ

হুসাইন দিলাওয়ার

0
32

আয়ান এইবার প্রথম তার গ্রামের বাড়িতে দাদা দাদির সাথে ঈদ করবে। কালেকে তারা ঢাকা থেকে ট্রেন যোগে গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে এসেছে। আয়ানের বয়স এবার জানুয়ারির সাত তারিখে ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে।
সে একটা কিন্ডারগার্ডেনে কেজি ওয়ানে পড়ে। লেখা পড়ায় সে খুব ভলো। বুদ্ধিমানো বটে। কথায় কথায় শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন। তার প্রশ্ন শুনে দাদা মোতাহের রহমান মাজে মাজে হেসে হেসে ব্যাকুল হয়ে যায়!

মোতাহের রহমান ও তার ছেলে আজাদ দুজনে কুরবানীর গরু কিনার জন্য হাটে যাওয়ার পস্তুতি নিচ্ছে। আয়ান পাশের রুম থেকে দৌড়ে এসে তার দাদা কাছে গিয়ে দারায় প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে। তার হাতে একটা খেলনা ছিলো। আয়ান বলল
– দাদু কই যাও?
– হাটে যাবো। আয়ান তার হাতের খেলনা টা ছুরে ফেলে দিয়ে বলে
– আমিও যাবো
– না দাদু তুমি যেতে পারবে না
– কেনো দাদু
– তুমি ছোট তাই
– ছোটদের যাওয়া নিষেধ?
– হ্যাঁ! মুচকি হেসে দিলো মোতাহের রহমান।
– কেনো নিষেধ কেনো?
– এমনি, শুনো আমরা আজকে তোমার জন্য বড় একটা গরু কিনে আনবো?
– কেনো দাদু?
আজাদ হোসেন একটা ধমন দিয়ে বলল
– যা তোর মার কাছে যা সারাদিন শুধু প্রশ্ন প্রশ্ন, এটা হলো কেনো এটা নিষেধ কেনো শুধু কেনো কেনো যা বলছি এখান থেকে।
– আহরে ধমকাচ্ছিস কেনো ওকে? ছোট মানুষ তো ও, ও তো কিছু বুজেনা, যখন বুজবে তখন কি আর বলবে?

শেষ পর্যন্ত আয়ান কে নিয়েই হাটে আসতে হলো। কুরবানীর হাট জমজমা লেগেছে। অনেক মানুষ হাটের ভিতরে। সবাই বস্ত গরু বেচা কেনা নিয়ে। কেও কিনতে এসেছে কেও বিক্রি করতে।
মোতাহের রহমান একটা লাল ষাঁড় এর কাছে গিয়ে দাঁড়াল। আজাদ সাহেব ষাঁড় গরুটা ঘুরে ঘুরে দেখতেছে। পাশেই এক হাতে রশি অন্য হাতে একটা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ষাঁড় গরুটির মালিক। মুখ ভর্তি করে পান চিবাচ্ছে।তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে আরেকটি ছেলে। আয়ান বলল
– দাদু এতো মানুষ কেনো?
– গরু কিনতে এসেছে আমাদের মত
– গরু কিনবে কেনো সবাই?
– কুরবানী দেওয়ার জন্য
– কুরবানী দেয় কেমনে?
– ছুরি দিয়ে জবাই করে
– জবাই করে কেনো?
– আল্লাহ্ হুকম তাই।
গরু মালিক লোকটা ভ্রু কুজকে তাকাচ্ছে বার বার আয়ানের দিকে। মুখে থেকে একটু পানের পিক ফেলে দিয়ে আজাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে
– কি হয় এটা আন্নের? পোলা? আজাত সাহেব মুখে কিছু বলল না শুধু মাথা নাড়ালো, লোকটা আবার বলল
– বহুত প্রশ্ন করে দেখি, মেলা চালু পোলা। লোকটা তার হাতের রশি পাশের ছেলেটি কাছে দিয়ে আয়ান কে কাছে টেনে নিয়ে বলল
– নাম কি তোমার?
– আয়ান, আপনার নাম কি? আজাদ সাহেব ধমক দিয়ে বলে উঠলেন
– এই বড় দের নাম জিজ্ঞাসা করতে হয়না যানো না? আয়ান তুমি কিন্তু অনেক দুষ্ট হয়ে যাচ্ছো।
লোকটি আজাদ সাহেবের কথা গাহ্য না করে বল
– আমার নাম আক্তার আর এই যে এটা আমা পোলা ওর নাম মতি
– আঙ্কেল সে কোন ক্লাসে পড়ে?
– ও পড়ে না, গরিব মানেষের লেখা পড়া নাই কিন বেলা পেট পুরে খাইতে পারলেই হলো।
– কে বলছে?
মোতাহের রহমান আয়ান কে কাছে টেনে এনে বলে
– শুনো মিঞা লেখা পড়া সাবারই করোন লাগে এখানে ধনী গরিবের বলে কথা নাই, এই যুগে কি লেখা পড়া ছাড়া দাম আছে?

রাত্রি বেলা সবাই মিলে খাইতে বসেছে। আয়ান তার দাদা কাছে বসেছে। তার ডান পাশে তার মা তার পরে তার বাবা। সামনে তার দাদি দাঁড়িয়ে সবাই কে খাবার পরিবেশন করতেছে।
– দাদু
– বলো
– কুরবানী দেয় কি জন্য? আয়ানের মা বলে উঠলো
– আয়ান খাওয়ার সময় কথা বলতে হয়না যানো না? কথা বলো না খাও তার পর কথা বলো।
– খাওয়ার সময় কথা বলতে হয় না কেনো?
– আল্লাহ্ নিষেধ করেছে।

খাওয়া শেষে আয়ান তার দাদাকে আবার প্রশ্ন করলো – দাদা কুরবানি কি জন্য দিতে হয়?
তার দাদা বলল
– শুন দাদু ভাই ইব্রাহিম (আঃ) নামে আমাদের একজন নবী আছে। তিনি আমাদের জাতির পিতা। তার একটি ছেলে ছিলো তোমার মত তার নাম ছিলো ইসমাইল (আঃ) তিনিও নবী। তাকে ইব্রাহিম (আঃ) অনেক ভালোবাসতেন। তোমর বাবা যেমন তোমাকে ভালোবাসে তেমনই। একদিন আল্লাহ্ তাকে স্বপ্ন দেখালেন তোমার প্রিয় জিনিস কুরবানী করো। তখন ইব্রাহিম (আঃ) তার ছেলে কে কুরবানীর জন্য নিয়ে গেলো। আরো অনেক ঘটনা আছে বড় হলে যানতে পারবে। বুজেছো? আচ্ছা এখন শুন কি জন্য কুরবানি দিতে হয় সেটা বলি। কুরবানি করতে হয় আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য বুজেছো? আল্লাহ্ কে খুশি করার জন্য কুরবানি করতে হয়। বুজতে পারছো? বড় হলে আরো জানতে পারবে।
আমাদের সকলেরই দায়িত্বহ শুশিদের কে বাংলা ইংরেজি শিক্ষার পাশা পাশি ইসলামি শিক্ষা দেওয়া।