
“আমি তোমাদের কাছে করুণা ভিক্ষা করবো না। আমি শুধু তোমাদের জানিয়ে দিচ্ছি, সম্ভবত তোমরা জানোইনা যে তোমরা প্রকৃতপক্ষে ইজরাইল নামক মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব জাতির অস্তিত্ব বিনাশের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাকারী এক সমরবাদী রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী মাত্র। তোমরা জানোইনা যে তোমরা শত্রুপক্ষের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে নিজ জাতির কতবড় সর্বনাশ করছো।” হ্যাঁ, বলছিলাম বখতিয়ারের ঘোড়াকে টগবগিয়ে ছুটিয়ে চলা কবি আল মাহমুদের একমাত্র রহস্যোপন্যাস, “মরু মূষিকের উপত্যকা”র কথা।
প্রিয় বন্ধুরা, মনে মনে কল্পনা করো তো, তুমি একটা উটের পিঠে বসে আছো। চারপাশে ধু ধু মরুভূমি, যেদিকে চোখ যায়, শুধু বালুর সমূদ্র। হঠাৎই চোখের সামনে ভেসে উঠলো পিরামিড; হ্যাঁ, মিশরের সেই ঐতিহাসিক পিরামিড। তোমার গন্তব্য সেই পিরামিডের নিচে, কয়েক হাজার বছরের পুরাতন এক রহস্যের খোঁজে। কী, ভাবতেই কেমন রোমাঞ্চকর লাগছে না? যদি লাগে, তাহলে হ্যাঁ, এ বইটি তোমার জন্যই।
উপন্যাসের মূল চরিত্র একজন লেবানিজ নারী, ড. লায়লা এলাহী, মিশরের এক জাদুঘরের কিউরেটর, একজন পুরাতাত্তি¡বক। তার স্বামী ড. আকরাম এলাহীও একজন বাংলাদেশী পুরাতাত্তি¡বক, কাজ করেন একই মিউজিয়ামে। ড. লায়লা একদিন হঠাৎ কিছু প্যাপিরাসের সন্ধান পেয়ে যান, যাতে ফেরাউন-কন্যা জুলফিয়ার স্বর্ণের পিরামিডের সন্ধান আছে। ঘটনাচক্রে তাঁর এ আবিস্কারের সন্ধান পেয়ে যায় ডেজার্ট রেটস নামে ইহুদি সংস্থা। এ সংস্থাটির কাজ হচ্ছে আরব বিশ্বে গোয়েন্দাগিরি করা এবং ইজরাইলের মিশন আরব বিশ্বে কার্যকর করা। লায়লা অপহৃত হন তাদের হাতে। লায়লার চাচা, লেবানিজ কূটনীতিক, আব্বাস কারামের পরামর্শে মিশর থেকে পালিয়ে ড. আকরাম ইলাহী আশ্রয় নেন আরব-আমিরাতের বানিয়াসে, একটি উটের বাথানে। সাহায্য চেয়ে তিনি চিঠি লিখলেন তার বাংলাদেশি বন্ধু, ঢাবির ভূগোল প্রভাষক ড. মুশতাক চিশতির কাছে। বন্ধুর সাহায্যে সস্ত্রীক ছুটে যান ড. চিশতি।
এদিকে অপহৃত লায়লাকে উদ্ধার করে মিশরের আধ্যাত্মিক নেতা মুসা শাহেদীর নেতৃত্বে একটি ধর্মীয় গ্রুপের কিছু জানবাজ যুবক। যাহোক, তারপরে মুসা শাহেদীর গ্রুপের সদস্যদের সাহায্য নিয়ে পিরামিড খননে উন্মুক্ত মরুপথে বেরিয়ে পড়েন ড. লায়লা; সাথে থাকেন তার স্বামী ড. আকরাম এলাহী, ড. মুশতাক চিশতি, তাঁর স্ত্রী ড. জাহরা ফিরদাউস। শুরু হয় মরুপথে রোমাঞ্চকর যাত্রা। পদে পদে বাধা দিতে থাকে ডেজার্ট রেটস লিডার শামস আবাদী। সব বাধা পেরিয়ে ড. লায়লা কি তার দল নিয়ে পৌঁছাতে পেরেছিলেন তার গন্তব্যে? সফল হয়েছিলো কি তার প্রকল্প?
বইটি তোমাকে ভ্রমণ করাবে মরুভূমির পথে পথে। মরুভূমির সৌন্দর্যে যেমন তুমি মুগ্ধ হবে, তেমনি তোমার গা কাঁটা দিয়ে শিহরিতও হবে। উটের সৌন্দর্য, সাহসিকতা, কষ্ট-সহিষ্ণুতার সাথেও পরিচিত হবে নতুনভাবে। একজন ধর্মপরায়ন মানুষের জীবনের সৌন্দর্যও অনুভব করতে পারবে নতুনভাবে, যখন দেখবে, মুসা শাহেদীর অনুসারীরা নিজেদের সীমিত খাবার থেকেও অনাহারী শত্রুকে নিজেদের সমপরিমাণ খাবারের ভাগ দিচ্ছে, নিজেদের মতোই তাঁবুতে থাকতে দিচ্ছে। এ যেন নবী (সা.) এর বদর যুদ্ধের পরবর্তী দৃশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সাইমন পেরেরা যখন ইসলামী আদর্শে মুগ্ধ হয়ে রেটস দল ত্যাগ করে, তখনই এ অনুভূতি পাবে, “ইসলাম তলোয়ারের জোরে জয়ী হয়নি, বরং বুকভরা ভালোবাসা দিয়ে জয় করেছিলো মানুষের হৃদয়গুলো।”
সর্বোপরি দেখতে পাবে, এক ফেরাউন কন্যা সত্য দ্বীন বুঝে, ইয়াকুব আ. এর দ্বীনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কী করে রাজ-সিংহাসন ত্যাগ করতে পারে, দ্বীনের দরিদ্র অনুসারীদের মধ্যে সকল সম্পদ বিলিয়ে দেয়, এবং শুধু দ্বীনের জন্য মৃত্যুদন্ডকেও বরণ করে নেয়। (ফারাও জুলফিয়া যদিও লেখকের কল্পনা, কিন্তু সত্যের পথে সব বিলিয়ে দেয়ার ইতিহাস অহরহ)। তাহলে বন্ধুরা, চাইলে পড়ে নিতে পারো বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী এ উপন্যাসটি। ০