হোসনা বানুর অ্যাডভেঞ্চার । পর্ব-১০

আহমাদ স্বাধীন

0
7
নরখাদকের দ্বীপ

পাতালপুরী যাওয়ার সমুদ্র পথে শুরু হয় ঝড়। ভেঙে যায় হোসনা বানুর নৌকা । নৌকার ভাঙা একটা টুকরো ধরে সে ভাসতে থাকে সাগরের পানিতে। ভাসতে ভাসতে চলে আসে একটা দ্বীপে। দ্বীপে এসে বেহুঁশ হয়ে থাকে অনেকটা সময়। থেমে যায় ঝড়। হুঁশ হয় হোসনা বানুর। ‘আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে এখনও বেঁচে আছি আমি’, হুঁশ ফিরে পাওয়ার পর বলে হোসনা বানু। খুব ক্লান্ত পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে হামাগুড়ি দিতে দিতে দ্বীপের দিকে এগোয়। দ্বীপে উঠে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে। ঝড় থেকে যদিও এ যাত্রায় সে বেঁচে যায়, তবে ঘটে যায় একটা বড়ো অঘটন। হোসনা বানু খেয়াল করে দেখে ওর পোঁটলাটা নেই। ক্লান্ত অবসন্ন শরীর নিয়েই বহু কষ্টে উঠে দাঁড়ায়। পাগলের মতো এদিক ওদিক ছুটোছুটি করে খুঁজতে থাকে ওর পোঁটলাটা। কোথাও নেই ওটা। হারিয়ে গেছে। ভেসে গেছে সমুদ্রে। তার মানে পথ নির্দেশক বাটি ও শেষ না হওয়া ফলের রসের বোতল, এসব কিছুই নেই। ঢেউয়ের আঘাতে হারিয়ে গেছে সমুদ্রের অতলে। এখন কী হবে ওর। কী করে চিনবে পাতালপুরীর বাকি পথ?  আর কী খেয়েই বা টিকে থাকবে বাকিটা সময়? হোসনা বানু ভাবনায় পড়লো। ওর মনে হলো ভেবে কোনো লাভ নেই, যা যাওয়ার তা গেছে। এখন নতুন করে নতুনভাবে চেষ্টা করতে হবে। হাল ছাড়া যাবে না। হোসনা বানু হাল ছেড়ে দেয়ার মেয়ে নয়। আছড়ে পাছড়ে আবার উঠে দাঁড়ালো। এগুতে লাগলো দ্বীপের উপরিভাগে। বেশ সবুজের সমারোহ দেখা যাচ্ছে সামনে। ওখান গেলে নিশ্চয়ই কোনো খাবার পাওয়া যাবে। এ মুহূর্তে সব থেকে বেশি দরকার হলো খাবার।

হোসনা বানু দ্বীপের উপরিভাগে জঙ্গলের ভিতরে গেলো। খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলো একটি কলা গাছ। পাকা কলা ঝুলছে গাছে। আরও পাওয়া গেলো পাকা পেঁপেসহ বেশ কিছু ফল। হোসনা বানু গাছ থেকে ফল পেড়ে পেট ভরে খেয়ে নিলো। সাথে করেও নিয়ে নিলো কিছু। যাক্, ক্ষুধার ঝামেলা তাহলে মিটলো। এখন খুঁজে পেতে হবে পাতালপুরীর পথ। আর সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থাটাও করতে হবে দ্রুত। পথনির্দেশক বাটি হারিয়েছে তো কী হয়েছে? বিকল্প কোনো উপায় নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। তার আগে একটু বিশ্রাম চাই। দ্বীপ থেকে বেশ কিছু লতা পাতা তুলে আনলো হোসনা বানু। তাই দিয়ে তৈরি করলো একটা ঘর। রোদের তাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে অনায়াসে।

ওর পোঁটলার সাথে সব হারিয়ে গেলেও ওর ছোট্ট ছোরাটা হারায়নি। ওটা ছিলো ওর কোমরে গোঁজা। তাই রয়ে গেছে ছোরাটা। ওটা এসময় যে ওর কতটা উপকারে আসছে তা ভেবে নিজেকেই ধন্যবাদ দিলো হোসনা বানু। বললো, ‘অন্তত এটাকে রেখেছিলে কাছে। যে কারণে তুমি ধন্যবাদ পেতেই পারো হোসনা।’ তা না হলে তো এই দ্বীপে বেশ মুশকিলই হতো। এখন এটাই টিকে থাকার একমাত্র সহায়ক। হোসনা বানু ওর ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিলো দ্বীপের ডালপালা দিয়ে তৈরি বিছানায়। চার ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেয়ার পরে ক্লান্তি অনেকটা কেটে গেছে। বেশ ঝরঝরে লাগছে এখন। দীর্ঘ সময়ের সমুদ্রযাত্রায় এরকম আরামদায়ক ঘুম হয়নি ওর। ঘুমের চাহিদাটা মিটেছে তবে ক্ষুধাটা আবারও মাথাচাড়া দিলো বলে মনে হলো। ফলের রস খেয়েই কাটিয়েছে এ কদিন। আজকে দ্বীপে এসে পাওয়া গেলো ফল। এখন যদি পাওয়া যেতো কোনো মাছ বা মাংস। হঠাৎ ওর মনে হলো, আরে আমি সমুদ্রের মাছ ধরার চেষ্টা করছি না কেনো ? ভাবনাটা আসতেই একটা গাছের ডাল কেটে নিলো। ডালের একটা মাথা ছোরা দিয়ে চেঁছে চোখা করে নেমে গেলো সমুদ্রে মাছ ধরতে। আগে এভাবে মাছ ধরার কোনো চেষ্টা করেনি সে। তাই কিছুটা সময় লাগলো। যদিও সমুদ্রে ধরার মতো মাছ ছিলো প্রচুর। তবু সেখান থেকে অনেক চেষ্টার পর মাত্র একটি মাছ ধরতে পারলো। তাতেই খুশি হলো হোসনা বানু। এবার এটাকে আগুনে পুড়িয়ে খেতে হবে। পাথরে ঘষে আগুন জ্বালানোর পদ্ধতি জানা ছিলো ওর। তাই শুকনো পাতা আর ডাল খুঁজে আগুন জ্বেলে নিতে বেশি সময় লাগলো না। তারপর সেই সামুদ্রিক মাছ পুড়িয়ে খেয়ে নিলো। বেশ কয়েকদিন পর মাছ খেতে ওর দারুণ ভালো লাগলো। মাঝারি আকারের মাছটি পুরোটাই খেয়ে ফেললো সে। খাওয়ার পরে মনে হলো বেশ তো আনন্দ। এখানে ফল আছে, মাছ আছে, ডালপালা দিয়ে ওর নিজের হাতে বানানো ঘর আছে। আর কী চাই? অনেক সুন্দর সবুজে ঘেরা এই দ্বীপে বেঁচে থাকার মতো সব আছে। এখানে থেকে যেতে পারলে তো মন্দ হতো না। নাহ্, তা কী করে হয়। সে তো এসেছে একটা অভিযানে। পাতালপুরী অভিযান। যেখান থেকে ওকে উদ্ধার করে আনতে হবে একশ জন ছেলেমেয়েকে। এবং তা এই চন্দ্র মাসের অমাবস্যার আগেই। তা না হলে ওদের সবার মাথা কেটে ফেলবে জাদুকর ডাইনি। এবার কী করা যায় ভাবছে হোসনা বানু।  একটা নৌকা তৈরি করতে হবে। কিন্তু পথ চিনবো কী করে? যে করেই হোক একটা উপায় বের করতেই হবে। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে গেছে প্রায়। রাত নামার আর বেশিক্ষণ বাকি নাই। আজ ঘুমিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। যা করার তা কাল সকালে করতে হবে। হোসনা বানু ওর জ্বালানো আগুনটাকে নিভতে দিলো না। সেখানে বড় বড় কয়েক টুকরো কাঠ এনে দিলো যেন রাতভর জ্বলতে থাকে। এতে করে সে তাপও পাবে আবার দ্বীপে কোনো জন্তু জানোয়ার থাকলে তার আক্রমণ থেকেও রক্ষা পাবে। হোসনা বানু অচেনা দ্বীপের একটা ডালপাতার ঘরে শুয়ে পড়লো। ঘুম এসে গেলো ওর দ্রুতই।

যখন ওর ঘুম ভাঙলো তখন শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়। ওকে ঘিরে আছে একদল জংলী। ওরা এই দ্বীপের আদিবাসী। নরখাদক ওরা। জ্যান্ত মানুষ ধরে পুড়িয়ে খেয়ে ফেলে। তাদের সবার হাতে কাঠের বর্শা। ওরা সংখ্যায় কত হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ ওরা গোল হয়ে হোসনা বানুকে ঘিরে নাচছে। ঘুরে ঘুরে নাচছে। নাচতে নাচতে কী যেন বলছে। মনে হচ্ছে যেন এক ঝাঁক শালিকের কিচিরমিচির। দুর্বোধ্য ভাষার সেই কথা কিছুই বোঝা যায় না। হতে পারে এভাবেই কথা বলে ওরা। ওরা যাই বলুক, হোসনা বানু যে বিপদে পড়েছে তা বুঝতে পারলো ভালোভাবেই। মেয়েটা নড়তে পারছে না। কেন নড়তে পারছে না? ও এতোক্ষণে খেয়াল করলো হাত, পা বাঁধা আছে ওর। জংলীগুলো ঘুমের ভেতরেই ওর হাত পা বেঁধে ফেলেছে। হোসনা বানু ওদেরকে কয়েক বার বললো, আমায় এভাবে বাঁধলে কেনো? কী দোষ আমার? আমি তো তোমাদের কোনো ক্ষতি করিনি। আমাকে ছেড়ে দাও। ওর কথা কেউ শুনলোই না। সবাই মেতে রইলো আমোদে। অথবা ওর কথা কেউ বুঝতে পারলো না। জংলীগুলো নিজেদের সাংকেতিক ভাষা ছাড়া সভ্য জগতের কোনো ভাষা বোঝে না। জংলীদের বিদঘুটে নাচানাচি শেষ হলো। হোসনা বানুকে বাঁশের সাথে উল্টো করে বাঁধলো। বেঁধে ঝুলাতে ঝুলাতে নিয়ে যেতে লাগলো। দ্বীপের মাঝামাঝি কোনো একটা জায়গায় এসে থামলো ওরা।

চারদিকটা বেষ্টিত হয়ে আছে চেনা অচেনা গাছে। গাছের ডালপালা দিয়ে বানানো ছোট ছোট খুপরির মতো ঘর। একটা বড় উঠোন। উঠোনের মাথায় একটা চেয়ার বসানো। চেয়ারটা বানানো হয়েছে হাড় দিয়ে। বড় কোনো পশুর হাড় হবে নিশ্চয়ই। চারপাশে দাঁড়ানো জংলী আদিবাসী। এই উঠোনের মধ্যে এনে রাখা হলো হোসনা বানুকে। পায়ের বাঁধন খুলে দাঁড় করানো হলো উঠোনের মাঝে। হাতের বাঁধন খোলা হলো না। চারপাশে দাঁড়ানো জংলীগুলো বিশ্রীভাবে চিৎকার করতে লাগলো। মনে হচ্ছে যেন অভুক্ত হিংস্র অসংখ্য নেকড়ের মাঝখানে একটা স্বাস্থ্যবান হরিণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হোসনা বানু। যেকোনো সময় নেকড়েগুলো ঝাঁপিয়ে পড়বে ওর উপর। কিছুক্ষণ পরেই এক বিশাল দানবের মতো শরীর নিয়ে হেঁটে এলো একজন অদ্ভুত মানুষ। উঠোনে রাখা সেই হাড়ের চেয়ারে এসে বসলো সে। দেখেই মনে হলো এই লোকটা এই জংলী আদিবাসীদের সর্দার। এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ সে আসার সাথে সাথেই জংলীগুলো হইচই বন্ধ করে দিয়েছে। আর মাথা নিচু করে তাকে সম্মান দেখিয়েছে। জংলী সর্দারের গায়ের রঙ মিশমিশে কালো। ইয়া মোটা শরীর। শরীর ভরা থলথলে মাংস। সারা শরীরে মাখানো তেল। দেখে মনে হয় গোলগাল একটা কালো মাংসের পিণ্ড। তেলতেলে গোলগাল মাংসের পিণ্ডটা হেঁটে হেঁটে গিয়ে বসলো সেই হাড়ের চেয়ারে। এই চেয়ারটা মজবুত হাড় দিয়ে তৈরি না হলে ওর ওজনে নিশ্চিত ভেঙে যেতো। জংলী সর্দারের বসার পর একজন জংলী তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। বসে হোসনা বানুর ব্যাপারে সর্দারকে  কিছু একটা বললো।

কী বললো তা কিছু বোঝা গেলো না। শুধু এটুকু বোঝা গেলো যে ভালো কিছু বলেনি। ইশারায় বা বাচনভঙ্গিতে মনে হলো যে জংলীগুলো ওকে শিকার করে নিয়ে এসেছে। এখন সর্দার বললেই ওরা সবাই মজা করে ওকে খেয়ে ফেলবে।

সর্দার হোসনা বানুকে দেখে ওর কাছে আসলো। এসে তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করলো। কিছুক্ষণ দেখে আবার ফিরে গেলো নিজের চেয়ারের কাছে। গিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে তিনটা লাফ দিলো। তার এই অদ্ভুত লাফ দেখে পুরো জংলীপাড়া নেচে উঠলো। সব জংলী তার মতো করে লাফাতে লাগলো। এভাবে কাটলো আরও কিছু সময়। তারপর সর্দার সবার উদ্দেশ্যে কিছু একটা নির্দেশ দিলো। নির্দেশ পেয়ে সবাই আরও একবার উল্লাসে চিৎকার করলো। জংলী সর্দার উঠে চলে গেলো। দুজন জংলী হোসনা বানুকে ধরে নিয়ে গেলো একটা খোলা মাঠের প্রান্তে। সেখানে ওকে বাঁধা হলো একটা খুঁটির সাথে। বাকি জংলীগুলো সাথে এসে কিছুক্ষণ হইহই করলো। তারপর চলে গেলো অনেকেই। একজন ওর জন্য খাবার নিয়ে এলো। সম্ভবত কোনো পাখির পোড়া মাংস আর অপরিচিত কোনো ফল। যদিও হোসনা বানুর ক্ষুধা পেয়েছে খুব, তবে সে খেলো না ওই খাবার। নোংরা জংলীদের খাবার দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিলো। একটা জংলী জোর করে সামান্য পোড়া মাংস ওর মুখে দিতে গেলে বিশ্রী গন্ধে ওই জংলীর গায়ে বমি করে দিলো হোসনা বানু। জংলীটা রেগে চেঁচিয়ে কী যেন বললো। এবং ঠাস ঠাস করে দুটো থাপ্পড় বসালো ওর গালে। হোসনা বানু বুঝতে পারলো, ভয়ংকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ভীষণ শক্ত করে বাঁধা আছে হোসনা বানু। নড়াচড়া করার সুযোগ নাই। ওকে মেরে বাঁধনটা আরও শক্ত করে রেখে জংলীটা চলে গেলো। এভাবে কেটে গেলো প্রায় সারাদিন। সন্ধ্যা নামলো আকাশের সিঁড়ি বেয়ে। ছয়জন জংলী থাকলো পাহারায়। ওর থেকে কিছুটা সামনে আগুন জ্বেলে ওরা নিজেদের মতো আনন্দ করছিলো। হোসনা বানু অসহায় হলেও সাহসহারা হলো না। হতাশ হলো না। ওর তখন মনে পড়লো হারিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েদের কথা, তাদের মায়েদের কথা। ও নিজে এখান থেকে মুক্তি না পেলে তো ওদেরকে মুক্ত করতে পারবে না। তাই আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলো হোসনা বানু। ওর দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। এসময় একটা শকুন কোথা থেকে উড়ে এসে বসলো হোসনা বানুর ঘাড়ে। বললো- এই মেয়ে, কাঁদিস কেনো? পালাতে হবে তোকে। নইলে ওরা জীবন্ত পুড়িয়ে খাবে। এই জংলীগুলো সব নরখাদক। বাঁচতে চাইলে পালা। আমি তোর বাঁধন আলগা করে দেই। আর কিছুক্ষণ পরে যখন রাত নামবে তখন ওরা কয়েকজন ঘুমিয়ে গেলে পালাবি। এখন পালাতে গেলে ধরা পড়ে যাবি। আর শোন, আমি জানি যে তুই সমুদ্রের অতলান্তে পাতালপুরীতে যেতে চাস। আমি বলে দিচ্ছি তোর পথ। এখান থেকে পালিয়ে গিয়ে ভোরে সোজা পূর্ব দিকের সমুদ্রে যাবি। সেখানে একজন বয়স্ক কাছিম আছে। তার কাছে আছে পাতালপুরীর ঠিকানা। সে তোকে সাহায্য করতে পারবে। এই রাতের শেষভাগে তুই পালাবি এখান থেকে।

এই বলে শকুন ওর বাঁধন আলগা করে দিয়ে উড়ে গেলো। ওকে ধন্যবাদ জানানোর সুযোগটুকুও দিলো না। হোসনা বানু এমনভাবে দাঁড়িয়ে রইলো, যেন মনে হয় ও বাঁধাই আছে। পাহারায় থাকা জংলীগুলো নিশ্চিন্তে হইচই করে সময় কাটাতে লাগলো। বাতাসের মৃদু ঝংকারে রাত বেড়ে চললো। তখন রাতের শেষ ভাগ। দুজন জংলী ছাড়া বাকিরা ঘুমিয়ে গেছে। হোসনা বানু আলগা করা রশি খুলে নিজেকে মুক্ত করলো। তারপর ঝেড়ে দিলো দৌড়। দৌড়াতে লাগলো সোজা পূর্ব দিকে। অল্প সময়ের মধ্যেই জংলীগুলো চিৎকার করে ধাওয়া করতে লাগলো। ভাগ্য ভালো যে পথটা ছোটখাটো গাছ গাছালিতে ঘেরা ছিলো। তাই ওদেরকে ফাঁকি দিয়ে ছুটতে পারছে হোসনা বানু। তবু জংলীর দল ওর খুব কাছে চলে এসেছে। জংলীরা বর্শা ছুঁড়ে মারছে ওর দিকে। একটা বর্শা একটুর জন্য বিঁধলো না ওর পিঠে। পেটে ক্ষুধা থাকায় ছুটতে কষ্ট হচ্ছিলো ওর খুব। হোসনা বানু একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো। হাতে নিয়ে নিলো ওর ছোরাটা। একটা জংলী ওকে দেখে যেই কাছে আসলো, তখন ঝাঁপিয়ে পড়ে ছোরাটা গেঁথে দিলো একটা চোখের ভিতর। জংলীটার ভয়ানক আর্তচিৎকার শুনে ছুটে এলো আরও একজন। হোসনা বানু দ্রুত সরে গিয়ে ওইটার কানের ভিতর গেঁথে দিলো ছোরার ফলা। বাকি জংলীগুলো কিছুক্ষণের জন্য ভয় পেয়ে গেলো। এ সুযোগে হোসনা বানু ঘন ঝোপের আড়ালে চলে যেতে লাগলো সমুদ্রের পাড়ে সেই বয়স্ক কাছিমের কাছে। হোসনা বানু কি পারবে সেই কাছিমের কাছে যেতে?

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)