শিশুর জন্য মর্যাদা

উম্মুল খায়ের

0
48

প্রায় সব পরিবারেই শিশু থাকে।

সেই শিশু যে এখনো প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠেনি। শিশুদের সঠিক বিকাশের জন্য তাদের মর্যাদা দিতে হবে। তাই আজকের বিষয়। শিশুর মর্যাদা, যেটা নিয়ে আমরা অনেকেই ভাবি না।
মর্যাদা কী?
ভাবছেন, শিশুদের আবার কিসের মর্যাদা? হ্যাঁ, শিশুদেরও মর্যাদা আছে। মর্যাদার নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে এটা খুঁজে বের করা সম্ভব।
ময়নেহান বলেন, ‘ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো আমাদের ভেতরে ধীরে ধীরে যে সহিষ্ণুতা তৈরি করে সেটা আমরা বুঝতেই পারি না। শেষে মনে হয় আমাদের বোধ করি কোনো মূল্যই নেই’।
মর্যাদা অর্থাৎ সম্মান। নিজের ও অপরের জন্য সম্মান। আমরা ও অন্যরা বা শিশুরা সবাই সমান সম্মান ও যোগ্যতার দাবিদার। তাই শিশুদের সাথে এমন আচরণ করতে হবে, যেন শিশুরা গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা সবাই আমাদের সম্মানের যোগ্য। আমরা বড়রা অনেক সময় শিশুদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করি না। এতে তাদের মধ্যে বর্জন ও নির্বাসন ভীতি তৈরি হয় যা তার সুষ্ঠু বিকাশকে ব্যাহত করে।
শিশুদের কেন মর্যাদা দেবো?
বহু বছর ধরে আমরা শিশুদের মর্যাদা লঙ্ঘন করছি। এই আমরা তাদের ধর্ষণ করছি, দাস বানিয়ে রাখছি, উটের জকি বানানোর জন্য পাচার করছি, নানাভাবে জুলুম-অত্যচার করছি। বিদেশে পাচার করছি। অবমাননা করছি। আমরা এসব কেন করছি? করছি কারণ আমরা তাদের মর্যাদা দিচ্ছি না, অমর্যাদা করছি বলে।
অমর্যাদা শিশুদেরকে নেতিবাচক করে গড়ে তোলে। ফলে এসব শিশুরা হয় ভীতু, মেধাহীন বা ক্রমমেধাসম্পন্ন, কর্মহীন, যা শিশুর ব্যক্তিত্ব ও আত্মবোধ গঠনে বাধা দেয়।
যে সকল কারণে আমরা শিশুদের সাথে মর্যাদাপূর্ণ ও আত্মবোধ গঠনে বাধা দেয়–
* মেধার সর্বোচ্চ বিকাশের জন্য অবশ্যই তাদের সাথে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করতে হবে। পড়ালেখা নিয়ে বকাঝকা না করে বরং; তাদেরকে নিয়মিত উৎসাহ দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত শাস্তি দিলে শিশুর শিক্ষার প্রতি অনিহা আসে এবং স্কুলে ঝরে পড়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে।
* বাড়িতে শিশুদের অমর্যাদা দেখালে তারা নানা রকম সমস্যা করে। যেমন: নিয়মিত খায় না, শরীরের প্রতি যত্নশীল হয় না, নানা রকম চিন্তা ও অপমান বোধ করে বড় হয় ফলে তারা উন্নত শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্য অর্জন করতে পারে না। তাই তাদের সবসময় মর্যাদা দিয়ে কথা বলতে হবে। কোনো রকম অসম্মানজনক আচরণ করা যাবে না।
* মর্যাদাশীল পরিবার ব্যবস্থায় এটি একটা অনুশীলন নীতি। আমরা নিজেদের জন্য যে মর্যাদার কথা ভাবি এবং যে মর্যাদা শিশুদের থেকে প্রাপ্য বলে মনে করি, সেই একই মর্যাদাপূর্ণ আচরণ যদি আমরা শিশুদের সাথেও করি তবেই আমরা একটি শান্তিপূর্ণ পরিবার তথা সমাজ গড়ে তুলতে পারব।
* দেখা যায়, শিশুদের মধ্যে যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল অথবা অসুস্থ তাদেরকে মর্যাদা দিতে আমরা প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হই। এসব শিশু আক্রমণাত্মক ও নেতিবাচক আচরণ প্রদর্শন করে, রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়ে অথবা নানা রকম উত্তেজনা দেখিয়ে সংকট সৃষ্টি করে। শিশুদের প্রতিবাদী আচরণ রোধ করার জন্য মর্যাদা দেওয়া অতিজরুরি।
* শিশুর স্কুলের পৃষ্ঠপোষকতায় নিপীড়ন-বিরোধী কর্মসূচির মাধ্যমে ভয়াবহ নিপীড়নের হাত থেকে তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাতে হবে এবং তাদের মর্যাদা দেখাতে হবে।
* শিশুর জীবনে মর্যাদার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এর অন্তর্নিহিত শক্তি এতই ক্ষীপ্র যে, এটাকে পাওয়ার চেষ্টা প্রতিহত করা হলে শিশুরা প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে।
* অনেক সময় শিশুরা মর্যাদাহানির কারণে (যেমন: ইভটিজিংয়ের শিকার হলে) আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। শিশুদের এ ধরনের মৃত্যু বা আত্মহত্যা রোধ করতে হলে অবশ্যই তাদের সাথে সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ দেখাতে হবে।
স্কুল এবং বাড়ির পরিবেশের সাথে শিশুদের সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে, শিশুর সামাজিক বিকাশকে সহজ করতে তাদের সাথে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ বজায় রাখতে হবে।