ছোটদের দুখু মিয়া বিদ্রোহী নজরুল

সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান

0
105

শৈশব তাঁর অতি কষ্টের ছিল বলেই মানুষ তাকে নাম দিয়েছিল দুখু মিয়া। সেই দুখু মিয়া একদিন হয় ওঠে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি। তিনি আর কেউ নন, আমাদের দেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলার মানুষের কাছে তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত। নজরুল শুধুই একজন কবি ছিলেন না, একই সঙ্গে
তিনি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, গীতিকার, সুরকার, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সৈনিক ও দার্শনিক ছিলেন। বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী নজরুলের সঙ্গে ছোটদের অনেক বড় ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। তিনি ছোটদের খুব ভালোবাসতেন। নজরুলকেও শিশুরা নিখাঁদ অকৃত্রিম ভালোবাসায় আপ্লুত করতো। শিশুদের মাঝে নজরুল অপার সম্ভাবনা দেখতে পেতেন। ছোটদেরকে দেখলে নজরুল ছুটে যেতেন, অবিচ্ছেদ্য মমতার সম্পর্কে বেঁধে ফেলতেন। শিশুদের প্রতি তিনি ছিলেন সহমর্মী ও সংবেদনশীল।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে একটি দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কবি নজরুল। তার বাবার নাম ফকির আহমদ এবং মায়ের নাম জাহেদা খাতুন। মাত্র আট বছর বয়সে নজরুল পিতৃহারা হয়েছিলেন। তছনছ হয়েছিল তার শৈশব। তাঁকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল। তাঁর জীবনে নেমে এসেছিল দুঃসহ দুঃখ-দুর্দশা। তবু তিনি হেরে যাননি, দমে যাননি। বরং জয় করে নিয়েছেন তাঁর সমস্ত প্রতিকূলতাকে। জীবন যুদ্ধে অপরাহত থেকেছেন তিনি। তিনি শিশুদের সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে তুলে তাঁর হারানো শৈশবকে খুঁজে ফিরতেন। ছোটদেরকে নিয়ে হইচই করতেন, গান শোনাতেন। শিশুতোষ ছড়া, কবিতা আবৃত্তি করতেন। তিনি শিশুদের মাঝে মিশে গিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করতেন। কাজী নজরুল যেমন বিদ্রোহী কবির অভিধা নিয়ে দ্রোহের কবিতা লিখেছেন, শেকল ভাঙ্গার গান গেয়েছেন, তেমনি তাঁর লেখনিতে উঠে এসেছে শিশু মনের নানা ভাবনা। নজরুল তাঁর ছন্দের যাদু দিয়ে ছোটদের মনে নানা ভাব জাগিয়ে তুলতেন। তাদের সম্ভাবনা উস্কে দিতেন। ছোটদের সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখাতেন।

ছোটদের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত দরদ আর দায়বদ্ধতা থাকলেই সফল শিশুসাহিত্য রচনা করা যায়, যা আমরা নজরুলের মধ্যে লক্ষ্য করি। ‘শিশু যাদুকর’ কবিতায় শিশুর প্রতি নজরুলের মমত্ববোধের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ‘খুকি ও কাঠবিড়ালী’ শিশুর মনোজগতে অনুরোধ, প্রত্যাশা ও অভিমান মিশ্রিত এক ভালোলাগার পরিবেশ তৈরি করে। কবিতাটিই কাঠবিড়ালীকে উদ্দেশ্য করে খুকির সংলাপে রচিত। একটি পেয়ারার জন্য খুকির আগ্রহ, তার আবেগানুভূতির বিচিত্র ওঠানামা রচনাটিকে নাটকীয় করে তুলেছে। প্রথমে কাঠবিড়ালীর সঙ্গে বন্ধুতার আয়োজন, তারপর তাকে খুশি করে তার কাছ থেকে পেয়ারা পাবার চেষ্টা এবং শেষে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় রাগের প্রকাশ।