হোসনা বানুর অ্যাডভেঞ্চার । পর্ব-৮

আহমাদ স্বাধীন

0
11
হারিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েরা

হোসনা বানুর বন্ধুরা হারিয়ে গেছে। কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় গেলো, কীভাবে গেলো, কেন গেলো তা কেউ জানে না। হোসনা বানু ফিরে এসেছে জাদুর পাহাড় বিজয় করে। এই আনন্দে গাঁয়ের সবাই উৎসবে মেতে ছিলো। এই সময়েই উধাও হয়ে গেছে গাঁয়ের অনেক ছেলেমেয়ে। তাদের মধ্যে আছে নূর বানু, সাজিদা, ইসমাইল ও আব্দুর রহিম। এরা হলো হোসনা বানুর বন্ধু। এরা সহ দশজন ছেলে মেয়ের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। লুলুশিয়া গ্রামের সবার আনন্দ পরিণত হয়েছে শোকে। এতোগুলো ছেলেমেয়ে হঠাৎ করে কোথায় গেলো? প্রায় সারা গ্রাম খোঁজ করেও পাওয়া গেলো না ওদের। কী হতে পারে, কোথায় যেতে পারে, ভাবতে বসলো সবাই। ভাবতে বসলো হোসনা বানু। হারিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েদের মা বাবারা আসলো হোসনা বানুর কাছে। হোসনা বানু এই গ্রামের সব থেকে সাহসী আর বুদ্ধিমতী মেয়ে। একমাত্র ও’ই পারবে হারিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েদের উদ্ধার করতে। এটাই বিশ্বাস করে এই গ্রামের সবাই। তাই ওকে ঘিরে শুরু হয়েছে কান্নাকাটির রোল। হোসনা বানু সবাইকে সান্ত্বনা দেয়। বলে, আমি হারিয়ে যাওয়া সবাইকে খুঁজে বের করবো। ওরা যেখানেই থাক্ ইনশাআল্লাহ উদ্ধার করবোই। তবে সেজন্য আমাকে সময় দিতে হবে। আমায় ভাবতে হবে কেন ওরা এভাবে হঠাৎ করে হারিয়ে গেলো। তোমরা কিচ্ছু চিন্তা করো না। দেখে নিও, ওদের আমি ফিরিয়ে আনবোই। এখন সবাই সবার বাড়িতে যাও, আমি ভেবে দেখি কী করা যায়। তোমরা শুধু ওদের নাম বয়স আর শেষবার কোথায় দেখেছিলে তা বলে দিয়ে যাও। হোসনা বানুর কথায় আশ্বস্ত হয়ে সবাই চলে গেলো নিজের বাড়িতে। যাবার আগে বলে দিয়ে গেলো নাম বয়স আর শেষ কোথায় দেখা হয়েছিলো।

ভাবতে বসলো হোসনা বানু। ভেবে বের করার চেষ্টা করতে লাগলো কোনো সূত্র পাওয়া যায় কি না। ওর হাতে হারিয়ে যাওয়া দশজন ছেলেমেয়ের নাম। হারিয়ে যাওয়া ওরা সবাই বেশ দুরন্ত ছেলেমেয়ে। সবার বয়স খুবই কাছাকাছি। শুধু কাছাকাছিই না, প্রায় এক বয়সী। হারিয়ে যাওয়া সব ছেলেমেয়ের বয়স বারো বছর ছুঁই ছুঁই। হোসনা বানুর বয়স বারো পেরিয়ে গেছে। তার মানে সবাই প্রায় ওর বয়সীই। ছেলেমেয়েগুলো দুরন্ত হলেও একা একা কোথাও যাবার মতো সাহসী না। ওদের পাওয়া যাচ্ছে না প্রায় একই সময় হতে। তার মানে হয়তো ওরা দল বেঁধে কোথাও গেছে অথবা ওদের কেউ নিয়ে গেছে। দল বেঁধে কোথাও যাবার সম্ভাবনা কম। কারণ ওরা সবাই এক জায়গা থেকে হারায়নি। হারিয়েছে আলাদা আলাদা জায়গা থেকে। তাহলে ওদের কেউ ধরে নিয়ে গেছে। সবাইকে কোনো একজন ধরে নিয়ে গেছে সেটাও তো সম্ভব না। যদি এমন হয় যে দশজনকে দশজন ধরে নিয়ে গেছে তবে ওরা একই চক্রের। কেন একই সময়ে একই বয়সের এতোজন ছেলেমেয়েকে ধরে নিয়ে গেলো, আর কারা কী উদ্দেশ্যে ধরে নিয়ে গেলো তা জানা যাবে ওদেরকে খুঁজে পাওয়ার পরে। কিন্তু একটু সূত্র তো থাকা চাই। তা না হলে কোথায় খুঁজবো ওদের? নিজেকেই প্রশ্ন করছে আর ভাবছে হোসনা বানু। দিন গেলো রাত নামলো, নির্ঘুম রাত কাটলো ওর।

সকাল হতেই হোসনা বানু গেলো এ গ্রামের সব থেকে প্রবীন সম্মানী ব্যক্তি বদ্যি মশাইয়ের কাছে। বদ্যি মশাই হোসনা বানুকে আসতে দেখে বললেন, এতো সকালবেলা আমার কাছে? কী হলো তোমার ছোট্ট ভালো মেয়ে? হোসনা বানু বললো, বদ্যি দাদু, আমার বন্ধুরাসহ এই গ্রামের দশজন ছেলেমেয়ে হারিয়ে গেছে। আমি সহ ওদের মা বাবারা খুবই চিন্তিত। ওদের খুঁজে বের করতে হবে। আপনার সাহায্য লাগবে দাদু। বদ্যি মশাই বললেন, এটাতো খুবই চিন্তার কথা। অবশ্যই ওদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। তবে কী জানো? আমি হয়তো এ ব্যাপারে তোমাকে সাহায্য করতে পারবো না। কিন্তু আমি এমন একজনকে চিনি, যিনি তোমাকে সাহায্য করতে পারবেন। তুমি তার কাছে যাচ্ছো না কেনো? কে তিনি? কোথায় থাকেন? জানতে চাইলো হোসনা বানু। বদ্যি মশাই বললেন, তিনি থাকেন এখান থেকে তিনটা গ্রাম পরে যেই ছোট্ট জঙ্গলটা আছে। সেই জঙ্গলটা পেরিয়ে গেলে একটা খোলা মাঠ পাবে। বেশ বড় সেই মাঠ। মাঠ পেরিয়ে গেলে দেখবে একটা ভাঙা মাটির ঘর। সেই ভাঙা মাটির ঘরের মেঝেতে বসে স্রষ্টার ধ্যানে মগ্ন একজন পুণ্যবান মানুষ। তার চুল-দাড়ি সব বকের মতো সাদা। তার চেহারায় পবিত্র দ্যুতি ছড়িয়ে আছে। তিনি চোখ বুঁজে এমন অনেক কিছু দেখতে পান যা আমরা চোখ মেলেও দেখতে পাই না। তিনিই আমার গুরু। তিনি পাপাচারি কোনো মানুষের সাথে কথা বলেন না। তবে পুণ্যবান কেউ দেখা করতে গেলে কথা বলেন। তিনি চাইলে তোমাকে সাহায্য করতে পারেন। কারণ আমি জানি যে তুমি পাপচারি নও। হোসনা বানু বদ্যি দাদুকে ধন্যবাদ জানালো। ফিরে এসে গ্রামবাসীদের সাথে দেখা করলো। হারানো সবাইকে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেরিয়ে পড়লো বাসা থেকে। সাথে ওর বাহন হিসেবে নিয়ে গেলো একটা গাধা, আর কিছু শুকনো খাবার। এগিয়ে চললো হোসনা বানু ওর সাদা রঙের গাধার পিঠে চড়ে। যেতে যেতে যেতে প্রথম গ্রামটা পড়লো ওর সামনে। প্রথম সেই গ্রামটাতে থামলো হোসনা বানু। এখানে কিছু সময় জিরিয়ে নিতে হবে। গাধাটাকেও খেতে দিতে হবে কিছু। কোথায় বসবে আর গাধার খাবারের খোঁজ পেতে হবে এই ভেবে এগিয়ে গেলো।

এসময় দেখতে পেলো সেই গ্রামের কিছু লোক হায় হায় করছে। কেন ওরা হায় হায় করে কান্না করছে? হোসনা বানু এগিয়ে গিয়ে জানতে পারলো যে তাদেরও ছেলেমেয়ে হারিয়ে গেছে! হারানো ছেলেমেয়ের বাবা মায়ের সাথে দেখা করলো হোসনা বানু। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো এই গ্রাম থেকেও বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়ে উধাও। ওদেরও বয়স বারো বছরের কাছাকাছি। হোসনা বানু জানালো তার গ্রামেও একই ঘটনা ঘটেছে। তাই সে ওদের উদ্ধার করতে যাচ্ছে। সম্ভবত সবাইকে এক জায়গায় পাওয়া যাবে। ওদেরকেও খুঁজে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেরিয়ে পড়লো আবার। যেতে যেতে যেতে প্রথম গ্রাম পেরিয়ে দ্বিতীয় গ্রামে প্রবেশ করলো হোসনা বানু। দেখা হয়ে গেলো সেই গ্রামের কিছু কাঁদতে থাকা মানুষের সাথে। আজব ব্যাপার হলো তাদের সন্তানরাও হারিয়ে গেছে।

কথা বলে জানা গেলো ওরাও হারিয়েছে প্রায় একই সময়ে। বয়সও বারো বছরের কাছাকাছি। হারানো সন্তানের বাবা মায়ের কান্না দেখে এই গ্রামেও থামলো হোসনা বানু। গাধাকে খেতে দিলো ও বিশ্রাম দিলো। নিজেও কিছু শুকনো খাবার খেয়ে নিলো। আগেরবারের মতোই হারানো সন্তানদের মা বাবাকে সান্ত্বনা দিলো হোসনা বানু। আর ওদেরকে খুঁজে আনার কথাও বললো ওদের মা বাবাকে। ওই গ্রামে অল্প সময় বিশ্রাম নিলো হোসনা বানু। এরপর আর সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে পড়লো আবার। ওর উপর দায়িত্ব বেড়ে গেলো আরো। তাই খুব দ্রুত যেতে লাগলো। যেমন করেই হোক সেই পুণ্যবান লোকের সাথে দেখা করতে হবে। তার সাহায্য নিয়ে জানতে হবে হারিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েদের খোঁজ। এবং উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনতে হবে সবাইকে। হোসনা বানু যেতেই থাকলো, যেতেই থাকলো। যেতে যেতে যেতে তৃতীয় গ্রামেও পৌঁছে গেলো হোসনা বানু। তৃতীয় গ্রামে আসতে আসতে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়লো হোসনা বানুর গাধা। তাই এখানেও কিছুটা সময়ের জন্য থামতে হলো ওকে। থেমে এখানেও শুনতে পেলো সেই একই খবর। হারিয়ে গেছে এই গ্রামেরও বেশ কজন ছেলেমেয়ে। সবার বয়স বারোর কাছাকাছি। হচ্ছেটা কী এসব? ভাবছে হোসনা বানু। শুধু মাত্র ওর নিজের গ্রাম থেকেই নয়, অন্য গ্রাম থেকেও হারিয়ে গেছে ছেলেমেয়েরা। এতোগুলো এক বয়সের ছেলেমেয়েকে যে বা যারা ধরে নিয়ে গেছে, কী তাদের উদ্দেশ্য? এটা তাকে জানতেই হবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেতে হবে সেই পূণ্যবান ব্যক্তির কাছে। তবেই হয়তো জানা যাবে সত্যটা। হোসনা বানু এই গ্রামেও সবাইকে সান্ত্বনা দিলো। প্রতিশ্রুতিও দিলো হারানো ছেলেমেয়েদের খুঁজে আনার। তখন রাত নেমে গেলো। সামনে জঙ্গলের পথ। এই রাতে জঙ্গলের পথ ধরে যাওয়া যাবে না। তাই সেই গ্রামেই থাকতে হলো ওকে। সকাল হলে আর দেরি করতে চাইলো না হোসনা বানু। ওর জন্য আর গাধার জন্য নিয়ে আসা খাবার শেষ হয়ে গেছে। তাই গ্রামের থেকে ওকে দেয়া হলো কিছু খাবার, যাতে পথে যেতে কষ্ট না হয়। তারপর সবাই শুভকামনা জানিয়ে বিদায় দিলো হোসনা বানুকে। ওর উপর গ্রামের লোকের ভরসা অনেক বেশি। হোসনা বানু গাধায় চড়ে চলতে লাগলো জঙ্গলের পথ দিয়ে। চলতে চলতে পেরিয়ে গেল জঙ্গল। থামলো এসে এক মাঠের ধারে। সামনে কোনো জনবসতি নেই। বিশাল বিস্তৃত মাঠ। একটু পানি দরকার গাধার। বললো গাধা- আর পারছি না গো। একটু পানি দাও। দুদণ্ড বসতে হবে। তারপর আবার চলতে পারবো। হোসনা বানু পানি খেতে দিলো গাধাকে। নিজেও খেলো কিছুটা। মাঠ ভরা সবুজ ঘাস। গাধা মাঠে চড়ে ঘাসও খেলো কিছুক্ষণ। তারপর আবার চলতে থাকলো হোসনা বানুকে পিঠে নিয়ে। চলতে চলতে ওরা বিশাল মাঠটাকেও পেরিয়ে গেল। সামনেই দেখা গেলো সেই ভাঙাচোরা এক মাটির ঘর। যে ঘরে বসে স্রষ্টার ধ্যানে মগ্ন আছেন একজন পুণ্যবান পুরুষ। যে সাহায্য করতে পারে হোসনা বানুকে। হোসনা বানুর সাদা গাধা দাঁড়ালো সেই ভাঙা ঘরের কাছে। হোসনা বানু গাধাকে বাইরে দাঁড় করালো। এগিয়ে গেলো মাটির ঘরের খোলা দরজার কাছে। দেখতে পেলো শুভ্র সাদা রঙের চুল দাড়িতে ঢাকা এক পুণ্যবান পুরুষকে। চোখ বুঁজে স্রষ্টার ধ্যানে মগ্ন হয়ে আছেন তিনি। তার চেহারায় পবিত্র আলোর ঝলকানি। ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলো হোসনা বানু। চোখ না মেলেই তিনি বললেন, তোমার জন্য বারণ নেই। আসতে পারো মেয়ে। হোসনা বানু ঘরে প্রবেশ করে হাঁটু গেড়ে বসলো তার সামনে। বললো, সম্মানিত পুণ্যবান। আমি হোসনা বানু। এসেছি লুলুশিয়া গ্রাম থেকে। আপনার সাহায্য প্রার্থনা করতে এসেছি আমি। তিনি আগের মতোই চোখ বুঁজে বললেন, বলো ছোট্ট ভালো মেয়ে, কী সাহায্য দরকার তোমার। আমাদের গ্রাম থেকে দশজন ছেলেমেয়ে হারিয়ে গেছে। আমি ওদের খুঁজতে বের হয়েছি। তিনটা গ্রাম পেরিয়ে এসেছি আমি। সেই গ্রামগুলোতেও দেখি একই অবস্থা। সেই গ্রামগুলো থেকেও হারিয়ে গেছে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে। অবাক ব্যাপার হলো সবার বয়স বারোর কাছাকাছি। আর সবাই হারিয়েও গেছে প্রায় কাছাকাছি সময়ে। আমি চাই হারিয়ে যাওয়া সবাইকে খুঁজে বের করতে। তারপর পৌঁছে দেবো তাদের বাবা মায়ের কাছে। কিন্তু আমি জানি না যে কোথায় আছে ওরা। আপনি যদি একটু চেষ্টা করে দেখতেন তবে হয়তো আমি জেনে যেতাম। হোসনা বানু হয়তো আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলো। কিন্তু পুণ্যবান পুরুষ তখন ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, তোমায় আর কিছু বলতে হবে না মেয়ে। আমাকে একটু সময় দাও। এই বলে প্রায় দেড় মিনিট নিরব হয়ে রইলেন তিনি। চারপাশ সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ। কোথাও কোন সাড়াশব্দ নেই। হোসনা বানু তাকিয়ে আছে তার দিকে। তিনি এবার বলা শুরু করলেন। তবে সেই আগের মতোই চোখ বন্ধ রেখে। একবারের জন্যও সে চোখ খুলছেন না। অথচ মনে হচ্ছে যেন সব কিছুই তিনি দেখতে পাচ্ছেন।

-একটা ভয়ানক বিপদের মুখে পড়েছে ওরা। ওরা হচ্ছে একশো জন ছেলেমেয়ে। ঊনপঞ্চাশ জন মেয়ে ও একান্ন জন ছেলে আছে ওখানে। শুধু এই চারটা গ্রাম নয়। মোট বারোটা গ্রাম থেকে তুলে নেয়া হয়েছে ওদের। একজন জাদুকর ডাইনির হাতে পড়েছে বাচ্চাগুলো। ওদের সবার মাথা কেটে বলি দেয়া হবে। একজন কালো আত্মার শয়তানের সন্তুষ্টির জন্য। জাদুকর ডাইনির উদ্দেশ্য হলো অমর হওয়া। তাই বারোটা গ্রাম থেকে বিশেষ বয়সের একশো জন ছেলেমেয়ে তুলে নিয়েছে ওর পোষা বদ জ্বিন দিয়ে। আসছে চান্দ্রমাসের পরের মাসেই বিশেষ অমাবস্যার রাত। সেই মাসেই বাচ্চাগুলোর বারো বছর পূর্ণ হবে। তখনই শয়তানের উদ্দেশ্যে বলি দেয়া হবে ওদের। এটা করতে পারলে শয়তান পূজারী সেই ডাইনি জাদুকর হয়ে উঠবে আরো ক্ষমতাশীল ও অমর। এ কারণেই ধরে নেয়া হয়েছে ওদের। ওদের রাখা হয়েছে পাতালপুরীর একটা গোপন ঘরে। যেখানে সাধারণ কোনো মানুষের পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়।

কিন্তু আমাকে তো যেতেই হবে। বললো, হোসনা বানু। উদ্ধার করতে হবে সব ছেলেমেয়েদের। আমি ওদের বাবা মায়ের কাছে কথা দিয়ে আসছি। আপনি দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন। ওই পাতালপুরীতে যাবার রাস্তা বলে দিন। আমি যাবোই সেখানে। পুণ্যবান পুরুষ মৃদু হাসলেন। বললেন, আমি জানি তো পাগলী। তুমি যাবেই সেখানে। কোনো মানুষের বিপদ দেখলে তুমি চুপ করে বসে থাকতে পারো না। তুমি সমুদ্রের তলদেশ ও জাদুর পাহাড়ও বিজয় করে ফিরেছো। তোমার উপর দোয়া আছে সবার। তুমি নিশ্চয়ই যাবে। সবাইকে উদ্ধার করেও নিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ। এই নাও বিশেষ পবিত্র বাটি। এই বাটির দিকে তাকিয়ে তোমায় মনে মনে বলতে হবে সেই স্থানের নাম, যেখানে তুমি যেতে চাও। তাহলেই তুমি দেখতে পাবে সেখানকার রাস্তা। আর দিচ্ছি একটা বিশেষ ফলের রসের বোতল। এটা তোমার তৃষ্ণা ও ক্ষুধা মেটাবে। এই বোতলের রস কখনো শেষ হবে না। জাদুকর ডাইনির সেই পাতালপুরীতে যেতে হলে তোমাকে পেরোতে হবে বিপদসঙ্কুল পথ। লড়তে হবে তোমাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য। প্রকৃতির সাথে লড়াই, বেঁচে থাকার জন্য লড়াই। তুমি পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে। তুমি বুদ্ধিমতী। তাই সময়ের চাহিদায় সঠিক সিদ্ধান্তই নিতে পারবে আশা করি। তোমার উপর রইলো আমার দোয়া। যাও মেয়ে। বুকে সাহস রেখে স্রষ্টার নামে নেমে যাও। পুণ্যবান পুরুষ বিদায় দিলো হোসনা বানুকে। হোসনা বানু বেরিয়ে পড়লো সেই বিপদসঙ্কুল পথে। সে কী পারবে হারিয়ে যাওয়া এতোগুলো ছেলেমেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে? আমি এখনও জানি না সেটা। নিশ্চই জানো না তোমরাও। তবে চলো, পরের ঘটনা জানার জন্য আমরা এগিয়ে যাই।  (চলবে)