মঙ্গলের আগন্তুক

আশরাফ পিন্টু

0
60

– মা, আমি কোথা থেকে এসেছি?
– তুমি এক মহান সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে এসেছো।
– না মা, আমি মঙ্গলগ্রহ থেকে এসেছি।
– হ্যাঁ, তুমি মঙ্গলগ্রহ থেকেই এসেছো। যাও এখন বিরক্ত করো না।
স্কুলের পড়া তৈরি করো গে। একটু পরেই তোমাকে নাস্তা দিচ্ছি। মা নাস্তা তৈরি করছিলেন। ৪ বছরের ছেলে অয়ন স্কুলের পড়া পড়ছিল আর বিভিনড়ব গ্রহের ছবি দেখছিল। মঙ্গল গ্রহের ছবি দেখে দৌড়ে মায়ের কাছে চলে আসে। অয়ন আট-দশটা শিশুর মতো নয়। তার মধ্যে ব্যতিμমধর্মী কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিশেষ করে মেধা বা বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে তার ভেতরে কিছু অবাক করা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে। সে চার মাস বয়স থেকেই শব্দ উচ্চারণ করতে শেখে। এক বছর বয়সেই সে বইয়ের সব অক্ষর চিনে ফেলে এবং বাক্য পড়তে পারে। তাই মা দু’বছর বয়সেই তাকে কিন্ডার গার্টেনে ভর্তি করে দেন। মা একটি হাসপাতালে নার্সের চাকুরি করেন। অয়নের বয়স যখন দু’মাস তখন একটি সড়ক দূর্ঘটনায় তার বাবা মারা যান। মাকেই সংসারের সবকিছু সামলাতে হয়। অয়নকে তেমন সময় দিতে পারেন না। কিন্তু অয়ন প্রকৃতিগত ভাবেই মেধাবী হওয়ায় পড়াশোনার ব্যাপারে তাকে তেমন বেগ পেতে হয় না।

কয়েক বছর পর।
অয়ন এখন কৈশোরে পদার্পণ করেছে। অয়ন একদিন মাকে বলে, তোমাকে একদিন বলেছিলাম না, আমি মঙ্গল গ্রহের বাসিন্দা। তুমি কিন্তু তা বিশ^াস করো নি মা। আমি কিন্তু একসময় সত্যি সত্যি মঙ্গল গ্রহের বাসিন্দা ছিলাম। সেই সময় মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসতি ছিল। তখন ওরা খুব উনড়বত প্রযুক্তির অধিকারী ছিল। উনড়বত প্রযুক্তির কারণে ওদের অহংকার বেড়ে গিয়েছিল। ওরা বৃহস্পতি গ্রহকে দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার আগেই ওরা নিজেদের মধ্যে বিধ্বংসী যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এতে মঙ্গল থেকে মানুষ জাতি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে ওরা পুরোপুরি মৃত্যু বরণ করে না। ওরা…
– কি বলছিস এসব! মা অবাক হয়ে তার ১২ বছরের ছেলে অয়নের কথা শুনছিলেন। একটু থেমে অবিশ^াস্য দৃষ্টিতে অয়নকে প্রশড়ব করেন, মঙ্গলে যদি সবার মৃত্যুই হলো তাহলে তুই আমার পেটে আসলি কীভাবে?
– মা, আমি আমার মঙ্গলের কথা বলছি। এটা তো জানো আত্মার মৃত্যু নেই। যুদ্ধে মঙ্গলের সবার দেহ মরে পঁচে যায় কিন্তু প্রাণ বা আত্মাগুলো তাদের হাড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। এভাবে বহু বছর কেটে যায়। মঙ্গলে একসময় প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প বা মহাজাগতিক বিপর্যয় ঘটে তখন মঙ্গলের মাটি বা পাথরের সঙ্গে মিশে থাকা মানুষের হাড় বা জীবাশ্মগুলো বিভিনড়ব গ্রহ-উপগ্রহে উল্কার মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। একটি পাথরখণ্ডের সঙ্গে আমার জীবাশ্মও ছিল যেখানে আমার প্রাণ বা আত্মা লুকিয়ে ছিল। ওই পাথরখণ্ডটি পৃথিবীতে পতিত হয়। বহুকাল পরে আমি দৈবμমে তোমার পেটের ভেতরে ঢুকে পড়ি। মা আর ছেলের সঙ্গে কথা বাড়ান না। ছেলে
অত্যন্ত মেধাবী তাতে সন্দেহ ছিল না কিন্তু অতি মেধা তার মস্তিষ্কে বিরূপ প্রতিμিয়ার সৃষ্টি করেছে। সিদ্ধান্ত নেন তিনি ছেলেকে কালই একজন মনোচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন।
পরের দিন মনোচিকিৎসক অয়নকে ভালো করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন এবং তার সাথে বিভিনড়ব কথাও বলেন। পরিশেষে মাকে বলেন, ওর যা বয়স তাতে এত কিছু জানার কথা নয়। একটি বিষয় একেবারে ফেলে দিতে পারছি না; তাহলোÑ মঙ্গলে একসময় মানুষ বা উনড়বত বুদ্ধিমান প্রাণীর বসবাস ছিল। এ কথা ইতোপূর্বে ইউ এসের বিজ্ঞানী ড. জন বাউন্ট গবেষণা করে বলেছেন। তিনি বলেছিলেনÑ বহুকাল পূর্বে মঙ্গলে বুদ্ধিমান প্রাণীর বসবাস ছিল। তারা অত্যন্ত উনড়বত প্রযুক্তির অধিকারী ছিল কিন্তু কোনো কারণে নিউক্লিয়ার বোমার
বিস্ফোরণে সে জাতি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। এ ছাড়া নাসার বিজ্ঞানীরাও বলেছেনÑ মঙ্গলে একসময় নদ-নদী বা খাল-বিল ছিল। বর্তমানে এর ছবিও তুলে পাঠিয়েছে কৃত্রিম উপগ্রহগুলো। মা কি উত্তর দেবে ভেবে পান না। চিকিৎসক ও অয়ন উভয়ের দিকেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।
(রাশিয়ার একটি সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে।)