– উঁহু, আজ আমি স্কুলে যাব না।
– তুই যাবি তোর বাপও যাবে।
– তাহলে আজকে আব্বুকেই স্কুলে পাঠিয়ে দাও।
বাঁদর ছেলে। ওঠ, নাহলে এক্ষুনি তোর বিছানায় পানি ঢালবো। রাগত স্বরে বলেন মা।
আম্মু দয়া করে ও কাজটি কোরো না। পাশ ফিরে শুতে শুতে বলে ও।
তোর ঘুম ভাঙাতে পানি ঢালার বিকল্প আর নেই। ক্ষেপেছেন মা।
তাতে তোমার কষ্টটাই বাড়বে। ভেজা বিছানাপত্র শুকাতে তোমারই কষ্ট করতে হবে। পাতলা কাঁথাটা ভালো করে মুড়ি দিতে দিতে বলে ছেলে।
মা আর ধৈর্য্য ধারণ করতে পারেন না। ডান হাতে কাঁথা সরিয়ে বাম হাতে আলভীর কান ধরে বলেন, ওঠ ওঠ, তোর স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে। ঘুম কাতুরে ছেলে কোথাকার। আলসের সম্রাট, কুড়ের রাজা, ঘুমের বস্তা। ওঠ ওঠ, জলদি ওঠ।
‘আউ’ মুখে উচ্চারণ করে তড়াক করে উঠে বসে মায়ের হাত থেকে কান ছাড়িয়ে ঘুম ঘুম চোখে পিট পিট করে চায় আলভী মায়ের মুখের দিকে।
প্রতিদিন সকালে তোকে এভাবে ডাকতে হয় কেন? দিন কে দিন তুই কি ছোট হচ্ছিস? সময়জ্ঞান কবে হবে তোর। জানতে চান মা।
হা..আ.আ..আ…আ…। করে বোয়ালমাছের মতো ইয়া বড় হাঁ করে হাই তুলে আড়ামোড়া ভাঙতে যায় আলভি। মা তাতে বাদ সাধেন। বাম হাতে ওর কাঁথা নিয়ে ওর মুখে ঠেসে ধরেন। মুখে বলেন, কতবার বলেছি, হাই তোলার সময় হয় ডান হাতের সোজা পাশ অথবা বাম হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে মুখ ঢাকতে। ছনড়বছাড়া বাপের ছনড়বছাড়া ছেলে কোথাকার। আদব- কায়দার বালাই নেই ওর মধ্যে।
বলি ছেলেটা কি শুধুই আমার? সাতসকালে বাপ-ছেলে তোমার কোন পাঁকা ধানে মই দিলো শুনি। জামার হাতার বোতাম লাগাতে লাগাতে আলভীর রুমে প্রবেশ করতে করতে বলেন আলভীর আব্বু।
ছেলেকে লাই দিয়ে দিয়ে তো দিন কে দিন কুড়ের বাদশা বানাচ্ছো। অভিমান মায়ের কণ্ঠে।
হুম, কুড়ের বাদশা। তার মানে আমি হলাম কুড়ের বাদশার আব্বা হুজুর আর তুমি হলে কুড়ের বাদশার আম্মা হুজুর। হুম দারুণ বিষয়। ভাববারও বটে। চমৎকার ভঙ্গিতে বলেন আলভীর আব্বু।
এই হয়েছে জ্বালা। কোনো কথা পড়ার জো নেই। সাথে সাথে উত্তর রেডি বাপ-ছেলের। বলছি কি আর উত্তর দিচ্ছে কি? অভিমানী সুরে বলে চলে যেতে চাইছিলেন আলভীর মা।
আলভী ঝপ করে ওর মায়ের ডান হাত পাঁজা করে ধরে বলে, আম্মু আজ স্কুলে না গেলে হয় না?
মা রেগেমেগে ওকে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। তার আগেই আব্বু বাদ সাধেন। বললেন, পিচ্চি খোকার মতো স্কুলে না যাবার আবদার করছো কেন? কোনো স্যারের পড়া তৈরি করতে বুঝি আজ বাকি আছে?
না মানে..। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে যায় আলভী।
মা দাঁতের ওপর দাঁত চেপে বলেন, তুমি যাবে সাথে তোমার বাপও যাবে। ঝাড়া মেরে হাত ছাড়িয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান তিনি।
ক্যাবলাকান্তের মতো মায়ের গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকে আলভী।
আব্বু এগিয়ে এসে আলভীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, চলো বাবা, আর দেরি কোরো না। সাত সকালে তোমার মা ক্ষেপেছেন। আর রক্ষে নেই। তুমিও হচ্চ কেমন। প্রতি সকালে তোমাকে ডাকতে হবে কেন? যাও যাও স্কুলের জন্য প্রস্তুত হও।
আলভী খাট থেকে নেমে বাথরুমের দিকে যায় আর আব্বু যান ডাইনিংয়ের দিকে।
একটু পরে আলভী প্রস্তুত হয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসে। আব্বু ওকে ইশারায় খেতে শুরু করতে বলেন।
আজ আম্মু আটার রুটি বানিয়েছেন আর ডিম ও আলু ভাজি করেছেন। ওর সামনে সবকিছু রেডি থাকায় ও রুটির প্লেট টেনে নিয়ে রুটি ছিঁড়ে পাশে রাখা আলু ভাজি মাখিয়ে যেই না এক লোকমা মুখে পুরবে অমনি শোনে মায়ের কণ্ঠ পাশের রুম থেকে ভেসে আসছে, ছেলে-মেয়ে আর বাপ মিলে আমার হাড় পর্যন্ত জ্বালিয়ে ছাড়বে।
বাপ-বেটা একে অপরের দিকে চায়। বাপ সিরিয়াস হয়ে ইশারায় ছেলেকে বোঝায় নীরবে খেয়ে যাও। নইলে রুটির সাথে আরো বকুনি আছে বরাতে।
কোলে করে এনে ছোট মেয়েকে চেয়ারে বসায় মা। মুখে বলেন, পড়ে যাসনে যেন। তিনি জানেন ওকে বলা আর না বলা সমান। তবে বলার উদ্দেশ্য হলো বাপ ও ছেলেকে সতর্ক করা। যেন ওর দিকে নজর রাখে। বলে চলে যান ড্রইংরুমের দিকে।
মেয়ে এ সময় একটা ঝিমুনি দিতে কাত হচ্ছিল বাবা দ্রুত খাওয়া রেখে ওকে গিয়ে ধরেন। ফিক্ করে হেসে ওঠে আলভী। বাবা ইশারায় চড় দেখান ছেলেকে।
বাবা মেয়েকে ঝাঁকি দিয়ে বলেন, আম্মু সোনা, চোখ খোলো, চোখ খোলো মামণি।
মা তখন হাজির হয়ে আজকের দৈনিক পত্রিকাটি বাবার হাতে দিয়ে বলেন, থাক থাক, ওকে আর ঘুম ভাঙাতে হবে না। ও ঘুমাক।
অবশ্য প্রতিদিনেই ও এভাবে ঘুমায়। ঘুমন্ত মেয়েকে মা চেয়ারে বসিয়ে খাওয়ান। তারপর ওকে নিয়ে যান স্কুলে। ওর ঘুম পুরোপুরি ভাঙে ক্লাস রুমে ঢুকে বন্ধুদের সাড়া-শব্দ পেয়ে।
এভাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খেলে কবে না ওর গলায় খাবার আটকে যায়? আশংকায় বললেন বাবা।
ও আমার মেয়ে ওর গলায় কিছুই আটকাবে না। নিরামিশ উত্তর মায়ের।
বাবা থমমত খেয়ে গেলেন। স্বাভাবিক হয়ে তারা মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, যাও ছেলেটাকেও তোমায় দিয়ে দিলাম।
আলভী তাড়াতাড়ি মুখের গ্রাস কোঁৎ করে গিলে বলল, না না না, আমি দুজনারই থাকতে চাই। দয়া করে আমাকে কারো একজনের ভাগে দিও না।
মা এবার ফিক করে হেসে দিলেন। স্কুলড্রেস পরা অর্ধঘুমন্ত মেয়ের পাশে বসতে বসতে বললেন, অনেক হয়েছে। সবাই দ্রুত খাও। সময় চলে যাচ্ছে। বলে মেয়েকে খাওয়ানো শুরু করেন তিনি।
বাবা ডান হাতে খাবার খান আর বাম হাতে পত্রিকার পাতা উল্টান। হঠাৎ মুখের গ্রাস গিলে হাঁ করে মনোযোগসহকারে একটা নিউজ পড়া শুরু করলেন।
মা বলেন, কী ব্যাপার। খাওয়া বন্ধ করে মনোযোগসহকারে কী পড়ছো। গালে তো মাছি ঢুকে যাবে।
পুরো তিন মিনিট পড়ে তারপর চোখ তুললেন। বললেন, নাহ! সরকার আর পারল না। ইসরাইলসহ কয়েকটি দেশ স্বীকৃতি দিয়েই দিল। পুরো দ্বীপটাই হাতছাড়া হয়ে গেল।
কী হলো? মায়ের জিজ্ঞাসা।
বঙ্গোপসাগরের ওই ছোট্ট দ্বীপটাকে সরকার রোবটদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলো না। রোবটরা ওই দ্বীপটাকে ‘রোবোল্যান্ড’ নাম দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশের জন্য এমন আরো অনেক কিছুই সম্ভব। অত ভাবাভাবি বাদ দাও। দ্রুত বের হও ওদের স্কুলের দেরি হয়ে যাবে। মায়ের উত্তর।
দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার খাবারে মনোযোগ দেন বাবা। আর ভাবেন আকাশ-পাতাল, দেশমাতৃকার কথা।
আলভীরা দুই ভাই-বোন। আলভী ক্লাস সেভেনে পড়ে আর ওর ছোট বোন পড়ে ক্লাস ওয়ানে। ওর আব্বু একটি প্রাইভেট ফার্মে বড় কর্মকর্তা। আব্বু ওকে অফিসে যাবার সময় স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যান। আর মা ছোট বোনকে নিয়ে স্কুলে যান। দু’জনের ছুটি প্রায় একই সময়ে হওয়ায় আব্বু গাড়ি পাঠিয়ে দিলে গাড়ি আলভীকে নিয়ে ওর ছোট বোনের স্কুল ঘুরে মা ও বোনকে নিয়ে বাড়ি আসে। এটা ওদের নিত্যদিনের রুটিন।
দুই
আজ বৃহস্পতিবার। হাফ স্কুল। অন্য বৃহস্পতিবারের তুলনায় আজ আগেভাগে স্কুল ছুটি হয়েছে। স্কুলের স্যারদের কি এক জরুরি মিটিং আছে তাই তাড়াতাড়ি ছুটি দেয়া হয়েছে আজ।
আলভী, তুষার আর মামুন ওরা তিনজন প্রাণের বন্ধু। ছুটির পর হাতে সময় থাকায় প্রাণখুলে আজ সারা স্কুল দৌড়াদৌড়ি করেছে। একটা খালি এক লিটারের পানির বোতলকে ফুটবল বানিয়ে সারা মাঠ ওটা নিয়ে ফুটবল খেলেছে তিন বন্ধু। ঘামে ভিজে হয়েছে জবজবা। ধুলায় হয়েছে ওদের শরীর মাখামাখি। যতক্ষণ বোতলে লাথি মারা যায় ততক্ষণ ওটা ছিল ওদের ফুটবল।
একসময় ক্লান্ত হয়ে তিন বন্ধু মাঠের দক্ষিণ পাশের কামিনী ফুলগাছের নিচে বসে।
চলো, আজ আমরা আমাদের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করি। নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল তুষার।
কোন পরিকল্পনা? জানতে চায় মামুন।
আলভীও নিজের হাতঘড়ি দেখে বলল, কেন রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফেরা!
মামুন বলল, তা আজ করা যায়। কিন্তু! স্কুল ভ্যানড্রাইভার আঙ্কেলকে কী বলবো?
বলে আয় আজ তিন বন্ধু মিলে একসাথে বাসায় ফিরব। তাই ভ্যানে যাচ্ছিস, না। বলল তুষার। আর আলভী, তুই তোর আব্বুকে মোবাইল কর। বল আমরা তিন বন্ধু আজ একসাথে বাসায় ফিরবো। গাড়ি পাঠানোর দরকার নেই।
মহাপ-িত আমার। মামুন না হয় ভ্যানড্রাইভার আঙ্কেলকে বলল, কিন্তু আমি আব্বুকে মোবাইল করতে মোবাইল পাবো কোথায়? বলে ভাবতে থাকে আলভী।
হুম, পুরোটাই রং বলা হয়েছেরে। তাহলে এখন কী হবে? বলল তুষার। মুখে হাত দিয়ে ভাবতে বসল যেন ও।
ঠিক তখন স্কুলের বারান্দা থেকে পিয়ন ওদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে বলল, এই ছেলেরা তোমাদের মধ্যে আলভী কে?
আলভী উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আঙ্কেল আমি। কী হয়েছে? বিস্ময় ওর কণ্ঠে।
তোমার আব্বু তোমাকে ফোন করেছেন, বলল পিয়ন। আলভী বন্ধুদের দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে যায় স্কুলের অফিসের দিকে। দুই বন্ধু ওর গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকে।
উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করে তুষার আর মামুন। দুই মিনিট পরে ফিরে আসে আলভী।
কিরে,কী হলো জানতে চায় মামুন।
ওয়াও, হুউ। বলে পাগলের মতো শূন্যে একটা লাফ মারে আলভী। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এখনই শুরু।
মানে? বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জানতে চায় তুষার।
মানে হলো আব্বু বললেন, ড্রাইভার আঙ্কেলের আজ আসতে একটু দেরি হবে। ততক্ষণ স্কুলে অপেক্ষা করতে। আমি সাথে সাথে জানিয়ে দিয়েছি আমি গাড়িতে ফিরছি না। আমরা তিন বন্ধু একসাথে আজ বাসায় ফিরছি। আম্মুকেও জানিয়ে দিতে যে, আমরা তিন বন্ধু মিলে আজ ফিরবো। সুতরাং গাড়ি যেন না পাঠায়, বলল আলভী।
তোর আব্বু রাজি হয়ে গেল? মামুন অবাক! কারণ কখনো ওকে একা ছাড়েনি ওর আব্বু- আম্মু।
রাজি হতে কি চায়? আমি জোর করেছি। বলেছি গাড়ি পাঠানো লাগবে না, বলে ফোন রেখে দিয়েছি। বলে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে আবার বলা শুরু বলে আলভী, চল চল, তাড়াতাড়ি চল। মামুন, তুই ড্রাইভার আঙ্কেলকে বলে আয়। বলে ও হাঁটা ধরে ক্লাসরুমের দিকে ব্যাগ নিতে। ওর পিছে তুষার আর মামুনও যায়।
তিন
তোমাদের দিয়ে কোনো কাজ হবে না। যাদেরকে আনতে বললাম তাদের না এনে আনলে অন্য ছেলেরে ধরে। অকর্মার ঢেঁকি এক একটা।
মাই লর্ড, মাফ করবেন। আসলে আমরা ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না। আমাদের যেটা নির্দেশ দিয়েছেন সেটাই তো আমরা পালন করেছি। মানে যেমন ছেলেদের ধরে আনতে বলেছেন তেমনই তো এনেছি। বিনয়ের সাথে বলে এক রোবট।
বুঝতে পারছি না। নির্দেশ পালন করেছি। যেন বাচ্চা ছেলের মতো ভেংচি কাটে লর্ড নামের চার ফুট সাত ইঞ্চি লম্বা রোবট। অন্য রোবটদের থেকে তার দেহের গঠন কিছুটা ভিনড়ব। রাগে ফুঁসতে থাকে সে। লম্বা একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে। তোদের মতো অপদার্থদের দিয়ে আমার কোনো কাজ হবে না।
মাথা উঁচু করে লর্ডের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে ওরা তিন রোবট। লর্ডের কী হলো? এই প্রম লর্ড এমন আবোল তাবোল বকছেন। কিন্তু কেন? সাহস সঞ্চয় করে এক রোবট বলল, মাই লর্ড, এনি প্রবলেম?
প্রবলেম তোর মু-ুতে। দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে। তোদের আর আমার প্রয়োজন নেই। রাগ যেন সপ্তম মাত্রায় পৌঁছেছে লর্ডের।
‘দূর হয়ে যা’-এর অর্থ আমাদের জানা নেই। আর বার বার তোমাদের-তোদের বলছেন কেন? আপনিও তো আমাদের একজন অর্থাৎ আমাদের মতো রোবট। আপনার প্রোগ্রাম আমাদের থেকে উনড়বত এজন্য যে আপনি আমাদের লর্ড। সুতরাং, আমাদের ওপর দোষ চাপালে তা আপনার ওপরও বর্তাবে, বলল দ্বিতীয় রোবট।
এই রোবটের বাচ্চাদের নিয়ে এই হয়েছে জ্বালা। একটু বুদ্ধি-সুদ্ধি আর জ্ঞান দেওয়া হয়েছে অমনি প-িতগিরি শুরু করেছে। যত্তসব রোবটের বাচ্চা রোবট বেরিয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে। নিপাত যা কুলক্ষণের দল।
মাই লর্ড, মনে হচ্ছে আপনার প্রোগ্রামে কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে। আপনি আমাদের বলেছেন রোবটের বাচ্চা। আপনার জানা কথা বাস্তবে রোবটের কোনো বাচ্চা হয় না। আপনার ব্যবহৃত অনেক শব্দ রোবট মেমোরিতে নেই। বলল তৃতীয় রোবট। আর দূর হয়ে যা মানে কি সামনে থেকে চলে যাওয়া?
এই কথাগুলো বুঝতে এত সময় লাগল? যা যা বেরিয়ে যা অকর্মার ঢেঁকি, অপদার্থেল দল।
আমাদের শব্দভা-ারে দূর হয়ে যা শব্দটাও নেই। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। বলল প্রম রোবট।
তোদের আর দুঃখ-টুঃখ পেতে হবে না। দূর হ…দূর হ।
দুঃখ বুঝলাম। কিন্তু টুঃখ অর্থটা….? বাকি কথা আর বলা হলো না দ্বিতীয় রোবটের। লর্ডের ধমকে থেমে গেল ও।
লর্ড বলল, যা যা বেরিয়ে যা।
কোনো ভাবান্তর হয় না রোবটদের মাঝে। সামরিক কায়দায় স্যালুট দিয়ে বেরিয়ে যায় ওরা।
চার
বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে বঙ্গপসাগরে জেগে ওঠা একটি ছোট্ট দ্বীপের নাম এখন রোবোল্যান্ড। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দ্বীপটি। কিন্তু এই দ্বীপটি এখন আর বাংলাদেশের নেই। এই ছোট্ট দ্বীপটির নামকরণের আগেই একদল রোবট বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে এটি দখল করে নিয়েছে। ওরাই এর নাম দিয়েছে ‘রোবোল্যান্ড’। যা বিশ্বের মানচিত্রে এখন রোবোল্যান্ড হিসেবে পরিচিত। এখানে রোবটরা শুরু করেছে তাদের রাজত্ব। এখানে চলছে তাদের শাসন। অবশ্য এদেশের সমস্ত প্রজাও রোবট। রোবোল্যান্ড হলো পৃথিবীর একমাত্র রোবটভূমি। এখানকার রাষ্ট্রপ্রধানও এক রোবট। যাকে বলা হয় লর্ড। সমস্ত দ-মু-ের মালিক সে। তার কথা-ই আইন। তার হুকুমে চলে রোবোল্যান্ডের আইন, শাসন, বিচার, সমাজনীতি, অর্থনীতি। মোট কথা লর্ড হলো একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী।
আমাদের প্রতিবেশী বৃহৎ রাষ্ট্র ও ইসরাইলসহ কয়েকটি সাম্রাজ্যবাদী দেশ রোবোল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এবং তাদের অধিনস্থ রাষ্ট্রগুলোকে স্বীকৃত দিতে চাপ দিচ্ছে। জাতিসংঘ এক্ষেত্রে সাক্ষীগোপালের ভূমিকা পালন করছে। মুখে যেন মেরেছে ইয়া বড় এক চাইনিজ তালা। অবশ্য বাংলাদেশ তার দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে হয়তো একসময় এই রোবোল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হবে এমনটাই ভাবছে সবাই।
রোবোল্যান্ডের এই রোবটগুলো বেশিরভাগ সময় বাংলাদেশেই ছিল। অর্থাৎ তারা ছিল বাসাবাড়ির কেয়ারটেকার, অফিস-আদালতের পিয়ন বা চর্তুশ্রেণির কর্মচারী, ভারী কলকারখানার শ্রমিক। মোট কথা মানুষের সাহায্যকারী হিসেবে তারা কাজ করত অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে।
রোবোল্যান্ড প্রতিষ্ঠার পর কিছু দেশপ্রেমিক সাংবাদিকের গোপন অনুসন্ধানে পাওয়া গেল এক অদ্ভুত তথ্য। আমাদের খুব কাছের প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে যেসব রোবট আমদানি করা হয়েছিল বা তারা তাদের টাকায় লালিত আমাদের দেশের একশ্রেণির বুদ্ধিজীবীদের তারা যেসব রোবট উপহার হিসেবে দিয়েছিল তারাই সংগ্রামের মাধ্যমে এই দ্বীপে তাদের রাজত্ব কায়েম করেছে। অবশ্য ওদেরকে নেতৃত্ব দিয়েছিল যে রোবট সে কোথা থেকে এসেছে তা কেউ বলতে পারে না। সেই নেতাই হলো ওদের লর্ড। দেবতার মতো ভক্তি-শ্রদ্ধা করে তাকে অন্য রোবটরা।
আজ সকালে লর্ড গোপনে কয়েকজন রোবট পাঠিয়েছিল বাংলাদেশে। উদ্দেশ্য কয়েকজন পথশিশুদের ধরে আনা রোবল্যান্ডে এবং তাদের ওপর পরীক্ষা চালানো।
লর্ড নির্দেশনা দিয়েছিল রেললাইনের ধারের বস্তিগুলোয় অথবা রেলস্টেশনে পথশিশুদের বেশি পাওয়া যাবে। এদের বৈশিষ্ট্য এরা জটলা পাকিয়ে খেলা করে, কেউ কেউ মারামারি করে আর অন্যরা উৎসাহ দেয়, কেউ চুপচাপ বসে থাকে, কেউবা কুড়ায় কাগজ, কেউ ভিক্ষা করে, পাগলের মতো বসে আকাশ পাতাল ভাবে কেউ কেউ, দস্যিপনায় মেতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত রেলে কেউ ওঠে, কেউ নামে, চলন্ত ট্রেনের ছাদে দৌড়ায় ওরা। ওদের চেহারা হয় মলিন। চুল থাকে উসকোখুসকো। কত দিন ওদের পোশাকে সাবান পড়ে না তা অনুমান করা বড়ই কষ্টকর ব্যাপার। ওরা কথা বলে বিভিনড়ব আঞ্চলিক ভাষায়। গালাগাল ওদের মুখের বুলি।
ওই তিন রোবট মানুষের ছদ্মবেশে গিয়েছিল ওই নির্দেশনা মোতাবেক ঢাকার বড় মগবাজারের ওয়্যারলেস রেলগেটের রেল লাইনে…
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)