চার বছরের ছোট্ট মিতু কিছুদিন থেকেই লক্ষ করছে- দুপুর হলেই তার বাবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচের রাস্তায় থাকা কিছু মানুষকে খাবার আর পানি দেন। মিতু চুপচাপ বাবার পাশে দাঁড়িয়ে দেখে, নিচে রাস্তায় অনেক মানুষ ভিড় করছে, কেউ চিৎকার করছে, কেউ হেঁটে যাচ্ছে ব্যানার হাতে। ছোট্ট মনটা অবাক হয়ে ভাবতে থাকে- বাবা কি ওদের সবাইকে চেনে? কেনই বা তারা প্রতিদিন এভাবে দল বেঁধে হেঁটে বেড়ায়?
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পেয়ে একদিন সে বাবাকে জিজ্ঞেস করেই ফেলে, ‘আচ্ছা বাবা, তুমি প্রতিদিন ওদের এসব দাও কেন? তুমি কি ওদের সবাইকে চেনো?’
বাবা মুচকি হেসে বলেন, ‘না মা, সবাইকে চিনি না। কিন্তু ওরা তো দেশের জন্য আন্দোলন করছে। তাই যতটুকু পারি, ওদের সহযোগিতা করি।’ বলেই তিনি আবারও খাবারের প্যাকেট গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মিতুর মনে এবার জন্ম নিলো আরেক নতুন প্রশ্ন-‘আন্দোলন মানে কী?’
জুলাইয়ের এক ঝাঁঝালো দুপুর। আজও বাবা খাবার আর পানি নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়েছেন। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট মিতু। আজ মিতুও চেষ্টা করছে বাবাকে সাহায্য করতে। কিন্তু চারপাশে টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়া, হইচই আর কোলাহলে দাঁড়িয়ে থাকাই যেন মুশকিল। তবুও নড়ছেন না বাবা। হঠাৎ এক বিকট শব্দ।
পর মুহূর্তেই মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন বাবা। মিতু কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। চারপাশটা যেন হঠাৎ থমকে গেছে। বাবার চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসছে। শেষবারের মতো মিতুর ছোট হাতটা শক্ত করে ধরে আছেন তিনি।
মিতু কাঁপা গলায় ফিসফিস করে বলছে, ‘বাবা, ঘুমিয়ো না… নিচে তো এখনও অনেক মানুষ, ওদের খাবার দেবে কে? বাবা…’
আজ মিতুর বয়স পাঁচ। এতটুকু বয়সেই সে বুঝে গেছে আন্দোলন মানে কী।
বাবা যখন শেষবারের মতো তার হাতটা শক্ত করে ধরেছিলেন কিংবা ঘুমিয়ে যাওয়া আগ মুহূর্তে বাবার চোখটা যখন শেষবারের মতো চকচক করে উঠেছিল- মিতুর কাছে সেটাই ছিলো আন্দোলন।
বাবার ঘুম যে আজও ভাঙেনি।
হয়তো সেটাই আন্দোলন। ০