কচ্ছপ ও দুষ্ট গুইসাপ

নেয়ামুল হক

0
91
কচ্ছপ ও দুষ্ট গুইসাপ

বেচারা কচ্ছপের ভীষণ মন খারাপ। দশটা ডিম পেড়েছিলো সে। পুকুর পাড়ে বালির নিচে লুকিয়ে রেখেছিলো। মাঝে মাঝে এসে যত্ন করে তা দিতো। দশটা ফুটফুটে বাচ্চা হবে- ভেবে ভেবে আনন্দে আত্মহারা হয় কচ্ছপ।
সকালেও ডিমগুলো ছিলো। এখন নেই। নিশ্চয়ই এটা পাজি গুইসাপটার কাজ। আগেরবারও ডিমগুলো পাজিটা সাবাড় করেছিলো।
কচ্ছপের চোখে অশ্রু চলে এলো। সে পাগলের মতো চার হাত-পায়ে মাটি সরালো। খুঁজলো একটা ডিমও পাওয়া যায় কি না।
নাহ, একটা ডিমও অবশিষ্ট নেই। কচ্ছপ দুঃখ ভরা মন নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এগিয়ে যায়। দেখা হয় প্রতিবেশী ডাহুকের সাথে।
– আমার সব শেষ। দুষ্ট গুইসাপ আমার সব ডিম খেয়ে ফেলেছে। কাঁদো কাঁদো গলায় বললো কচ্ছপ।
– কী বলছো! খুবই দুঃখের কথা। আফসোস করে ডাহুক।
– কী করা যায় বলো তো? এ জুলুম আর কতদিন সহ্য করতে হবে?
– আমি কী বলবো, বলো। সুযোগ পেলে আমার ডিমও খেয়ে ফেলে দানবটা। তোমাকেই সাবধান হতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে ডিম খেতে না পারে; বলে চলে যায় ডাহুক।
কচ্ছপের মন মানে না। সে এগিয়ে যায়। দেখা হয় একটা পাতিহাঁসের সাথে। তাকেও জানায় কষ্টের কথা।
– আহা, বেচারা! বড়ই দুঃখজনক। কী করবে বলো। ব্যাটা তো শক্তিশালী। সুযোগ পেলে আমার বাচ্চার উপরও আক্রমণ চালায়। তোমাকেই সাবধানে থাকতে হবে। বলেই সামনের দিকে হাঁটা দেয় হাঁসটা।
কচ্ছপটা পুকুরের দিকে এগিয়ে যায়। দেখা হয়ে যায় বোয়ালের সাথে। কচ্ছপের মন খারাপ দেখে সে জানতে চায় মন খারাপের কারণ।
– আর বোলো না, ভাই। আমার বেঁচে থাকাই বৃথা হয়ে যাচ্ছে।
– কেন বলো তো?
– কী আর বলবো! নচ্ছার গুইসাপটার জন্য অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। যতবার ডিম পাড়ছি ততবারই দানবটা খেয়ে ফেলছে। বাচ্চা ফোটানোর সুযোগই পাচ্ছি না। বংশই যদি বৃদ্ধি করা না যায়, তবে আর বেঁচে থেকে লাভ কী!
– সবই বুঝলাম। কী আর করবে বলো! পাজিটা মাঝে মাঝে আমাদের উপরও ঝাঁপিয়ে পড়ে। লড়াই করে বাঁচতে হয়। তোমাকেই বাপু সাবধান হতে হবে। বলেই পুকুরে ডুব দেয় বোয়ালও।
দিন কেটে যায়। আবারও কচ্ছপের ডিম পাড়ার সময় হয়। এবার কচ্ছপ অনেক ভেবেচিন্তে নিরাপদ জায়গা খুঁজে বের করে। জায়গাটা পুকুরের গা ঘেঁষে। বড় বড় কাঁটাযুক্ত ঘন বেতঝাড়। এতো বেশি ঘন ঝোপ আর কাঁটা যে সেখানে ঢুকতে গেলে একটা ছোট প্রাণীরও গা ছিঁড়ে যাবে। কচ্ছপের শরীর শক্ত খোলসে আবৃত বলে তার ঢুকতে অসুবিধা হয় না। তার উপর সেখানে ভয়ানক ভীমরুলের বাসা। তাই কোনো পাখি বা প্রাণী সেখানে ঢোকার সাহস করে না।
কচ্ছপ আবার ডিম পাড়ে। আর সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকে। সতর্কতার সাথে পাহারা দেয়। এদিকে পাজি গুইসাপ খোঁজ-খবর রাখে সবকিছুর। লোভে তার জিভে পানি চলে আসে। সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
এক সন্ধ্যায় কচ্ছপটা পুকুরে যায় আহারের উদ্দেশ্যে। সেই সুযোগে গুইসাপ চুপিচুপি কচ্ছপের ডিম খুঁজতে ঢুকতে যায় সেই বেতঝাড়ে। অন্ধকারে ভালো করে দেখা যাচ্ছিলো না। সে গায়ের জোরে ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়ে। আর ওমনি বেতের বড় বড় কাঁটা ফুটে যায় তার সারা শরীরে। সে উহ, আহ চিৎকার করে ওঠে। তার চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে কচ্ছপ। তারপর একটা কাঠি দাঁত দিয়ে ধরে খোঁচা মারে ভীমরুলের চাকে। আর ওমনি ধর ধর করে ভীমরুলের দল বেরিয়ে আসে। ততক্ষণে কচ্ছপ নিজের হাত পা আর মাথা তার শক্ত খোলসে ঢুকিয়ে নেয়। ভীমরুল দল গুইসাপকে সামনে পেয়ে কামড়ে তার সারা শরীর ফুলিয়ে দেয়। একে তো বেতের কাঁটার ঘায়ে জ্বলুনি, তার উপর ভীমরুলের হুল ফুটে ব্যথায় কোঁকাতে কোঁকাতে লেজ গুটিয়ে পালায় দুষ্ট গুইসাপ। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে প্রাণ থাকতে আর এমুখো হবে না। হইচই শুনে বেরিয়ে আসে ডাহুক আর পাতিহাঁস। গুইসাপের নাজেহাল অবস্থা দেখে খুশিতে হাততালি দেয়। বোয়ালও মাথা উঁচিয়ে হো হো করে হেসে ওঠে। সবাই কচ্ছপকে তার বুদ্ধির জন্য বাহবা দেয়। সমস্বরে বলে ওঠে,
বোঝো ঠ্যালা বাছাধন
জোর চলে না বেশিক্ষণ!