যাদের আকাশে দুটো সূর্য

আশরাফ পিন্টু

0
186

আজ থেকে পাঁচ কোটি বছর পর।
পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছে। বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়েছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ পৃথিবী নিজ কক্ষপথ থেকে অনেকখানি সূর্যের দিকে সরে গিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। এর ফলে পৃথিবীর আহ্নিক গতি বেড়ে ৩০ দিন হয়েছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে এন্টার্কটিকার বরফ গলে পৃথিবীতে ভয়াবহ জলোচ্ছ¡াসের সৃষ্টি হয়ে অনেক জীবজন্তু ও মানুষ মারা গিয়েছে। পরবর্তীতে বেশিরভাগ সাগর-মহাসাগর শুকিয়ে গেছে। বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে লাখখানেক মানুষ বেঁচে আছে।
পৃথিবীতে হাতে গোনা যে কয়েকজন বিজ্ঞানী বেঁচে আছেন তাদের মধ্যে জরুরি মিটিং চলছে। তারা সকলেই চিন্তিত। সবার মাথায় একই চিন্তা কীভাবে মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষা করা যায়। প্রধান বিজ্ঞানী মি. সন্ধান বলেন, আমরা এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছি। এরপর আর কোনো বিপর্যের মুখে পড়লে আমাদের অস্তিত্বই হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এদিকে পৃথিবীর প্রায় সব সম্পদই ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিবেশী গ্রহ থেকে প্রায় সবকিছু আমদানি করে আমাদের চলতে হচ্ছে। আচ্ছা, মানুষকে কোথায় স্থানান্তর করা যায়- এ ব্যাপারে আপনাদের মতামত দিন।
এতক্ষণ সবাই প্রধান বিজ্ঞানীর কথা মনোযোগসহকারে শুনছিলেন। কে কী উত্তর দেবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। অনেকক্ষণ নীরব থাকার পর তরুণ বিজ্ঞানী অদম্য বলেন, এতদিন চাঁদ থেকে পেট্রল-ডিজেলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করে আমাদের যাবতীয় প্রয়োজন মেটানো হতো। মঙ্গল থেকেও কিছু জিনিস আনা হয়েছে।…
– আমি জানতে চাচ্ছিলাম মানুষকে কোথায় স্থানান্তর করা যায়, কোন গ্রহটি মানুষের নিরাপদ বসবাসের উপযোগী। বিজ্ঞানী সন্ধান অদম্যকে থামিয়ে দিয়ে একটু কড়া মেজাজে বলেন।
– একমাত্র চাঁদই হলো মানুষের নিরাপদ বসবাসের উপযোগী মহামান্য।
– আর কোনো গ্রহ?
– মঙ্গলে কিছু ইতর জীবের বসতি আছে কিন্তু এখনো মানুষের বসবাসের উপযোগী হয়ে ওঠেনি।
– কেন?
– ওখানে তাপমাত্রা আমাদের চেয়ে কম হলেও বায়ুর পরিমাণ আরো কম। ফলে পৃথিবীতে আমাদের যেমন অক্সিজেন সিলিন্ডার পিঠে চাপিয়ে চলতে হয় তেমনি ওখানেও চলতে হবে। তবে তাপ-নিরোধক কোনো পোশাক পরতে হবে না।
– আর চাঁদে?
– চাঁদে প্রাচীন পৃথিবীর মতো স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করছে। ওখানে মানুষ পূর্বের পৃথিবীর মতোই সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারবে। এ ছাড়া চাঁদে পর্যাপ্ত খনিজ সম্পদও রয়েছে।
– দেখুন, আপনারা কেউ মন খারাপ করবেন না। পৃথিবীর পরিবেশ বিষাক্ত হওয়া সত্তে¡ও আমাদের অনেকেরই এখান থেকে চলে যেতে কষ্ট হবে। মাতৃভূমির টান বড় টান! কিন্তু যুগে যুগে অনেকবার এমন বিপর্যয় ঘটেছে। ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি, সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে পৃথিবীতে একবার মহাপ্লাবন হয়েছিল। তখন নোয়া নামে একজন মহান ব্যক্তি বিশাল এক নৌকা তৈরি করে পৃথিবীর মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীদের রক্ষা করেছিলেন। এ ছাড়া আমরা তো এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নই। কাজেই…
– কী বলছেন মহামান্য! হঠাৎ আরেক বিজ্ঞানী মি. স্মরণ চমকে ওঠেন।
– হ্যাঁ, সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগেরও বহুকাল আগে আমাদের পূর্বপুরুষেরা অন্য গ্রহ থেকে পৃথিবীতে এসেছিলেন।
– এ ইতিহাস তো আমরা জানতাম না। কেন এসেছিলেন মহামান্য?
– হয়তো আমাদের মতোই তারাও কোনো মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তা যাই হোক, তাহলে চাঁদেই পৃথিবীর মানুষদের স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা যাক।
প্রধান বিজ্ঞানী মি. সন্ধানের কথায় সকলে সম্মতি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞানী মিটিং সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

আরো পাঁচ কোটি বছর পর।
পৃথিবী থেকে আগত মানুষদের বংশধরেরা এখন চাঁদে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। চাঁদ সেই আদিম পৃথিবীর মতোই সুজলা-সুফলা। খনিজ সম্পদেরও কোনো কমতি নেই। চাঁদের জনসংখ্যা মাত্র তিন কোটি। জনসংখ্যার তুলনায় সম্পদের পরিমাণ অফুরন্ত। চাঁদের মানুষেরাও জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে গেছে। তারা সৌরজগতে বাইরে নিত্যনতুন গ্রহের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। বেশ চলছিল চাঁদ।
হঠাৎ একদিন চাঁদের ওপরেও নেমে আসে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এতে অনেক মানুষ ও জীবজন্তু মারা যায়। সম্পদেরও ক্ষয়ক্ষতি হয় অনেক। স্বাভাবিক হতে কেটে যায় কয়েক বছর। একদিন এক লোক লক্ষ করল, তার দু’টি ছায়া। এমনকি প্রতিটি বস্তুর ছায়াও দুটো করে। আগে তো এমনটি ছিল না। আগে তো একজন মানুষের একটি ছায়াই পড়ত।
পরের দিন সকালে লক্ষ করল- তাদের আকাশে সূর্য একটা নয়, দুটো। কী অবাক কাÐ! কেন এমন হচ্ছে? চারিদিকে হইচই পড়ে গেল। সাধারণ মানুষেরা ছুটে এলো বিজ্ঞানীদের কাছে। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা আকাশের দিকে টেলিস্কোপ স্থাপন করে দেখতে পেলেন- তাদের চাঁদ দুটি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এতদিন চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরত কিন্তু সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরেনি কখনো। হয়তো ইতোপূর্বে ঘটে যাওয়া মহাজাগতিক বিপর্যয়ের কারণে এমনটি হয়েছে কিন্তু আরেকটি সূর্য কোত্থেকে এলো? আর পৃথিবীই বা কোথায় গেল? বিজ্ঞানীরা হাতেনাতে প্রমাণের জন্য বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিসহ মহাশূন্যে পাড়ি জমালেন।
মহাকাশ যান থেকে তারা টেলিস্কোপ লাগিয়ে দেখতে পেলেন- চাঁদ পূর্বের মতোই নিজ অক্ষে ঘুরছে এরপর বৃহত্তর কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু পৃথিবী কোথায় গেল? দুটোই তো সূর্য!
অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা জানতে পারলেন- চাঁদ আগের মতো পৃথিবীকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে কিন্তু পৃথিবী আর আগের মতো নেই সূর্যের মতো জ্বলন্ত অগ্নিপিÐে পরিণত হয়েছে।