পর্ব: ৪০
প্রিয় বন্ধুরা, আজ আমরা জানবো আমাদের খুব পরিচিত অথচ অসাধারণ একটা জিনিস সম্পর্কে। তা হলো বৃষ্টি। প্রতিদিন না হলেও বর্ষাকালে তো হরহামেশাই বৃষ্টি হয়। টিনের চালে টুপটাপ শব্দ, রাস্তায় পানি জমে যাওয়া আর মাটির গন্ধ- সব মিলিয়ে বৃষ্টি মানেই যেন এক আলাদা আনন্দ। তুমি হয়তো ছুটির দিনে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আমার এই লেখা পড়ছো আর বৃষ্টি উপভোগ করছো। এই বৃষ্টি আবার সবসময় আনন্দদায়ক হয় না। অনেক সময় আমাদের দেশে অতিবৃষ্টিতে বন্যা হয়, ফসলের ক্ষতিসহ আরও অনেক দুর্যোগ দেখা দেয় আবার অনাবৃষ্টিতেও আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। তাইতো রাসুল (সা.) আল্লাহর কাছে দু’আ করেছেন -‘হে আল্লাহ! মুষলধারায় উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন।’
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- এই বৃষ্টি আসলে কীভাবে হয়? আজ আমরা এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজব।
আল্লাহ তায়া’লা মানুষসহ সব জীবের জীবন ধারণের জন্য পানি বণ্টনের অসাধারণ এক ব্যবস্থা দিয়ে দিয়েছেন। আমাদের পৃথিবীতে নদী-নালা, খাল-বিল, হ্রদ, পুকুর, সমুদ্র ইত্যাদি হলো জলাশয়। সূর্যের তাপে সমুদ্র, নদী, হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয়ের পানি বাষ্পে পরিণত হয়, যাকে বলা হয় বাষ্পীভবন। এই বাষ্প বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়। আবার গাছপালা প্রস্বেদনের মাধ্যমে জলীয়বাষ্প ত্যাগ করে। তাও বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়। জলীয়বাষ্প বাতাসের অন্যান্য উপাদানের চেয়ে হালকা হওয়াতে তা বায়ুমণ্ডলের ওপরের দিকে উঠে যায়।
এবার একটি উদাহরণ দিচ্ছি। তোমরা নিশ্চয়ই দেখেছো, ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল বের করলে এর উপর ছোট ছোট বিন্দু বিন্দু পানি কণা জমা হয়। এটা কেন হয়? বাতাসে যে জলীয়বাষ্প আছে তা ঠান্ডা হলে বাষ্প থেকে তরলে মানে পানিতে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াই হচ্ছে ঘনীভবন।
উপরের উদাহরণের মতো জলীয়বাষ্প উপরে উঠলে তাপমাত্রা কমে যায়, তাই এই বাষ্প ঠান্ডা হয়ে ঘনীভবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছোট ছোট পানির কণায় পরিণত হয় এবং একসাথে মিলিত হয়ে তৈরি করে মেঘ। এই ছোট কণাগুলো এক সময় বড় পানির কণায় পরিণত হয়। একসময় মেঘ অনেক ভারী হয়ে যায়, তখন সেই পানির কণা আর আকাশে ভেসে থাকতে পারে না। এই ভারী পানি কণাগুলো পৃথিবীর আকর্ষণের জন্য পৃথিবীতে নেমে আসে। অর্থাৎ নিচের দিকে পড়ে। আর এই ঘটনাকেই আমরা বলি বৃষ্টি। তবে সব বাষ্পই যে মেঘ হয়ে বৃষ্টি দেবে, তা নয়। অনেক সময় মেঘ তৈরি হলেও বাতাসের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বাতাসের উল্লম্ব গতিবেগের কারণে সেই ফোঁটাগুলো নিচে পড়ার আগেই বাষ্পাবস্থায় ফিরে যায়। তাই সব মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়ে না।
বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপ বেশি থাকে, ফলে বাষ্পীভবন বেশি হয়, আর্দ্রতা বেড়ে যায় এবং বাতাসে দ্রæত সম্পৃক্ত হয়ে যায়। এই কারণে বর্ষাকালে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়। জলাশয়গুলো পানিতে ভরে ওঠে।
এভাবেই জলাশয় থেকে পানি বাষ্প হয়ে বায়ুমণ্ডলে যায় আবার মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়ে পৃথিবীতে ঝরে পড়ে জলাশয়ে ফিরে আসে। এটিই হচ্ছে পানিচক্র।
এই ছিলো বৃষ্টি নিয়ে আজকের মতো। কথা হবে সামনের পর্বে নতুন কোনো বিষয় নিয়ে। আজ এ পর্যন্তই। আল্লাহ হাফেজ।