জুলাইয়ে প্রযুক্তি

আল মাসুম

0
25

২৪ এর জুলাই এ যে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়, সেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার ছিলো চোখে পড়ার মতো। একদিকে যেমন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিচ্ছিলো অন্যদিকে সরকারযন্ত্র আন্দোলন দমন করার কাজে ব্যবহার করছিলো প্রযুক্তিকে।

সংগঠিত করণ : সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে মানুষের নিকট আন্দোলনের যাবতীয় খবর পৌঁছে যেত নিমিষেই। মানুষ সারাদিন অপেক্ষায় থাকত পরবর্তী নির্দেশনার। আন্দোলনের স্পিরিট সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সোশ্যাল মিডিয়া। বিশেষত ফেসবুক, ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ টেলিগ্রাম কিংবা সিগন্যাল এর মতো এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম। প্রসঙ্গত, এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন হলো যে প্রেরক এবং যে প্রাপক শুধুমাত্র তাদের মধ্যেই দৃশ্যমান হয় এমন ম্যাসেজিং পদ্ধতিকে বোঝানো হয়।
তথ্য উপস্থাপন : যেসকল স্থানে আন্দোলনকারীরা অবস্থান করত সেসব স্থানের রিয়েল টাইম আপডেট তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করত। ঢাকাসহ সারাদেশের আপামর জনগণ যখন রাস্তায় নেমে আসে তখন যেখানেই তারা বাধার সম্মুখীন হয়েছে সেখানেই তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি তা সোশ্যাল মিডিয়া ও ম্যাসেজিং এর মাধ্যমে জনমত গঠন এবং অন্যদের সহযোগিতায় নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি মূলধারার কিছু গণমাধ্যম আন্দোলনের সরাসরি সম্প্রচার, নিয়মিত আপডেট প্রদানের মাধ্যমে আন্দোলন বেগবান করতে ভূমিকা রাখে।
ইন্টারনেট শাট-ডাউন : একদিকে সরাসরি আন্দোলন, অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য আদান প্রদান ও নিয়মিত ক্যাম্পেইন চালানোর ফলে আন্দোলনের অবস্থান যখন তুঙ্গে, তখন সরকারযন্ত্র নড়ে চড়ে বসে। আন্দোলন দমাতে বন্ধ করে দেয়া হয় সারাদেশের ইন্টারনেট সংযোগ। উদ্দেশ্য একটাই, আন্দোলনকারীদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। ১৮-২৮ জুলাই দশদিন এবং ৩৬ জুলাই ১ঘণ্টার মতো বন্ধ ছিলো সারাদেশের ইন্টারনেট পরিসেবা। ব্রডব্যান্ড সংযোগ ২৪ জুলাই পুনঃস্থাপিত হলেও বন্ধ করে রাখা হয় ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামসহ সকল সোশ্যাল মিডিয়া।
বিকল্প যোগাযোগ : আন্দোলন চলমান রাখার প্রয়োজনে তখন দেখা দেয় বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা। ভিপিএন, প্রক্সি ব্যবহার করে যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা। সংবাদ সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হতে থাকে মোবাইলের অফলাইন কলিং এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পদ্ধতি। মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করে সেই ভিডিও পেনড্রাইভে করে যথাস্থানে পৌঁছে দেয়াও হয় সেই সময়ে।
বন্ধুরা, প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে যেমনিভাবে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে লাগামছাড়া হয়ে ওঠা সম্ভব, নিজের মত সবার উপর চাপিয়ে দেয়া সম্ভব, তেমনি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে ৩৬ জুলাই নিয়ে আসাও সম্ভব। এটা নির্ভর করে কে কোন মানসিকতা নিয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে তার উপর। আজ তাহলে এ পর্যন্তই, আল্লাহ হাফেজ।০