প্রজাপতি ও ফুলবাগান

0
61
প্রজাপতি ও ফুলবাগান

ছোট্ট একটি প্রজাপতি। কিছু দিন আগে তার জন্ম। তার মনে আজ ভীষণ আনন্দ। সে উড়তে শিখেছে। হঠাৎ ডানা ঝাপটাতে গিয়ে যখন সে বুঝতে পারলো- বাসা ছেড়ে খানিকটা উপরে উঠতে পেরেছে, তখন তার আনন্দ দেখে কে!
সেই থেকে সে মায়ের কাছে বায়না ধরে বসে আছে। তাকে নিয়ে উড়তে বেরোতে হবে। মা প্রজাপতি হাসতে হাসতে বলল, ‘আরও ভালোভাবে উড়তে শেখো। তবেই তোমাকে নিয়ে বের হবো। বাইরে কত শত্রু রয়েছে আমাদের। তোমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা যদি হামলা করে!’
মায়ের কথা শুনে কান্না এলো ছোট্ট রঙিন প্রজাপতিটির। তার কি আজ মায়ের সঙ্গে উড়তে যাওয়া হবে না!
মা প্রজাপতি অভয় দিয়ে বলল, ‘তুমি চেষ্টা করতে থাকো। যখন সাবলীলভাবে উড়তে পারবে, তখনই তোমাকে নিয়ে পাশের ফুলবাগানে যাবো।’
সেই থেকে ছোট্ট প্রজাপতিটি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথমদিকে উপরে উঠতে তার বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তবে একটানা বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর সে বেশ ভালোমতো উড়তে পারছে। এরমধ্যে একবার সাহস করে পাশের বরই গাছ থেকেও একবার ঘুরে এসেছে। সেখানে শত রকমের রঙবেরঙের প্রজাপতি ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোট্ট প্রজাপতিরও খুব শখ জাগলো তাদের মতো হওয়ার।
এক নতুন পৃথিবী দেখার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে সময় কেটে যায় তার।
‘আমরা কখন বের হবো, মা?’
তার যেন আর তর সইছে না!
মা প্রজাপতি বুঝতে পারলো তার চঞ্চল বাচ্চার মনের কথা। বলল, ‘আরেকটু সবুর করো। বিকেল হোক। এখন রোদের অনেক তাপ। তোমার কোমল শরীর এত তাপ সহ্য করতে পারবে না। বিকেলের স্নিগ্ধ আলোয় আমরা দু’জন গাছের পাতায় পাতায় ঘুরে বেড়াবো।’
ছোট্ট প্রজাপতি কথা মেনে নিলো। ‘তবে বিকেলেই বের হবো।’

সূর্যের তাপ কমে এলে মা প্রজাপতি ঘুম ভাঙালো ছোট্ট প্রজাপতিটার। সে অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছে। ঘুম থেকে উঠে সে চোখ ডলতে ডলতে বললো, ‘আমরা কি এখন বের হবো?’
মা বললো, ‘হ্যাঁ। চলো বের হই।’
মায়ের সঙ্গে বের হয়ে একেবারে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল সে। এত সুন্দর পৃথিবী!
সূর্যের আলো সবুজ গাছ আর রঙিন ফুলের ওপর পড়ে ঝিকমিক করছে। সে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থেকে আবার চেয়ে দেখলো। সে কি স্বপ্নে দেখছে এসব! না, এটা তো একদম বাস্তব। তার চোখের সামনেই সবকিছু।

সে একটি গোলাপি রঙের ফুলের ওপর গিয়ে বসলো। কী ঘ্রাণ ফুলটিতে! সে তার মা-কে ডাক দিয়ে বললো, ‘মা, দেখে যাও- এই ফুলটিতে কী সুন্দর ঘ্রাণ! আমি এখানে বসে থাকবো।’
মা বললো, ‘এরচেয়েও সুন্দর রঙের ও ঘ্রাণের ফুল আছে।’
ছোট্ট প্রজাপতি বিস্মিত হলো। সে বললো, ‘সত্যি বলছো!’
মা প্রজাপতি তাকে আরও খানিকটা সামনে নিয়ে গেল। এখানে এসে তার চোখদুটো বিস্ময়ে একদম গোল হয়ে গেল। সারি সারি রঙবেরঙের ফুল উজ্জ্বল মুখ করে যেন হাসছে! সে মনের আনন্দে এক ফুল থেকে আরেক ফুলে নেচে বেড়াতে লাগল। মা প্রজাপতি খুব খুশি হলো।

এমন সময় একটি প্রশ্ন জাগলো তার মনে। সে তার মা-কে প্রশ্নটি না করে পারল না।
‘আচ্ছা মা, এসব ফুল এখানে কীভাবে এলো?’
প্রশ্ন শুনে মায়ের হাসি পেলো। ছোটবেলায় তার মনেও এরকম প্রশ্ন জেগে উঠতো। সে বাবাকে প্রশ্ন করলে বাবা উত্তর দিতো।
মা প্রজাপতি বললো, ‘মানুষ এসব গাছ এখানে লাগিয়েছে।’
ছোট্ট প্রজাপতির বিস্ময়ের কোনো সীমা রইলো না। সে জানতে চাইলো, ‘মানুষ আবার কী?’
মা বললো, ‘তারাই হলো এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। দেখতে আমাদের চেয়ে অনেক বড়। তুমি মানুষ দেখবে?’
ছোট্ট ছানাটি ভয়ে ভয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, দেখবো।’
‘তাহলে চলো, সামনে এগোই।’

দাদুর সঙ্গে ফুলবাগানে এসেছে লাবিব। কিছু গাছের গোড়া শুকনো হয়ে আছে। সেগুলোতে পানি দিতে হবে। তারা দু’জন মিলে গাছে পানি দিচ্ছে।
লাবির তার দাদুকে প্রশ্ন করলো, ‘আচ্ছা দাদু, তোমার কাছে সবচেয়ে পছন্দের প্রাণী কী?’
দাদু কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। তারপর বললেন, ‘ময়ূর। তোমার কী?’
লাবিব বললো, ‘প্রজাপতি।’
‘বাহ। প্রজাপতি আমারও খুব পছন্দের।’
লাবিব কিছুটা রাগ দেখিয়ে বললো, ‘তাহলে তুমি প্রজাপতির নাম না বলে ময়ূরের নাম বললে কেন?’
দাদু হাসতে হাসতে বললেন, ‘তুমি একটা প্রাণীর নাম জানতে চেয়েছো, সেজন্য বললাম। সৃষ্টিজগতের সকল প্রাণীই আমার পছন্দের।’
দাদুর সঙ্গে লাবিবও হাসতে লাগলো।
দাদু বললেন, ‘পানি শেষ হয়ে এসেছে। তুমি পুকুর থেকে এক বালতি পানি আনতে পারবে?’
লাবিব খুশিমনে বালতি নিয়ে পুকুরের দিকে চলে গেলো।

কিছুক্ষণ পরই লাবিব লাফাতে লাফাতে ফিরে এলো। দাদু দেখলেন তার হাতে বালতি নেই। ভীষণ খুশি সে।
লাবিব তার দুই আঙুল দিয়ে ধরে রাখা একটা প্রজাপতি দেখিয়ে বলল, ‘দেখো দাদু, কত সুন্দর একটা প্রজাপতি!’
দাদু দেখতে পেলেন লাবিবের হাতে ছটফট করছে ভীষণ সুন্দর একটা প্রজাপতি। গায়ের রঙ দারুণ। এমন সুন্দর প্রজাপতি সচরাচর দেখা যায় না। তবে এটি একটি বাচ্চা প্রজাপতি।
দাদু বললেন, ‘কোথায় পেলে এটা?’
লাবিব বললো, ‘পানি আনতে যাওয়ার সময় ফুলের ওপর বসা পেলাম। আরেকটাও ছিল সঙ্গে। সেটা পালিয়ে গেছে।’
দাদু বললেন, ‘এটাকে ছেড়ে দাও।’
লাবিব কষ্টমুখে বলল, ‘কেন দাদু! আমি একে বাড়িতে নিয়ে যাবো।’

দাদু বলতে লাগলেন, ‘একবার নবীজির একজন সাহাবি একটা পাখির ছানা ধরে নিয়ে এলেন। ছানাটির মা চারপাশে উড়ে বেড়াচ্ছিল আর চিৎকার করছিল। নবীজি বললেন, এই ছানার মা-কে কষ্ট দিও না। তাকে ছেড়ে দাও। সাহাবি ছানাটিকে ছেড়ে দিলে মা পাখি তাকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেল। নবীজি খুব খুশি হলেন। এই ঘটনা থেকে কী শিক্ষা পাওয়া যায়, বলো তো?’
‘কোনো পাখির বা প্রাণীর ছানাকে আটকে রাখা ঠিক নয়।’

লাবিব দেখতে পেলো একটা প্রজাপতি তাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লাবিব নবীজির সময়ের সেই পাখিটির কথা চিন্তা করলো। তারপর আলতো করে ছেড়ে দিলো ছানাটিকে। দুটি প্রজাপতি একত্র হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল দাদু-নাতির দিকে। তারপর উড়াল দিলো।

মা প্রজাপতি বললো, ‘তোমার মানুষ দেখা হলো তবে?’
ছানাটি আস্তে করে জবাব দিলো, ‘হ্যাঁ, হয়েছে।’
‘কী বুঝলে?’
ছানাটি বললো, ‘সবাই শত্রু নয়। মানুষের মধ্যে আমাদের বন্ধুও রয়েছে।’