ক্ষুধার্ত

মাহমুদ হাসান ফাহিম

0
53
ক্ষুধার্ত

ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠলো। সবাই বই খাতা গুছিয়ে ব্যাগে ভরে ফেললো।
স্যারের ঘোষণার অপেক্ষায় সবাই ইতি-উতি করছে। হেড স্যার ছুটির ঘোষণা করলেন। বাসার পথ ধরে হাঁটতে শুরু করলো সবাই।
ওয়াসিম মন খারাপ করে বসে আছে বারান্দার এক কোণে। বাসায় যাওয়ার কোনো তাড়া নেই তার। ছুটির ঘণ্টা বাজার পর প্রতিদিন সবার আগে গেইট থেকে বের হয় সে। বিষয়টা সালিমের নজরে পড়ে। সে এগিয়ে যায় ওর দিকে।
– ওয়াসিম, তোমার মন খারাপ কেন?
– অনেক ক্ষুধা পেয়েছে তাই।
– বিরতির সময় কি নাশতা করোনি?
– করেছি, তাতে ক্ষুধা মেটেনি।
মানে কী, খুলে বলো তো ব্যাপারটা, বলল সালিম।
– ‘প্রথম বিরতিতে একটা কেক কিনেছিলাম, এক কামড় খেতে না খেতেই দেখি রাতুলরা ফুটবল নিয়ে মাঠে নেমেছে। কেকটা ফেলে দিয়ে আমিও তাদের সাথে নেমে পড়ি। ভাবছিলাম দ্বিতীয় বিরতিতে কিছু খেয়ে নেবো।’

– ‘তারপর কী হলো?’ সালিমের জানতে চাওয়া।
– ‘দ্বিতীয় বিরতিতেও একই কাজ করি। রুটি কিনে তা ফেলে দিয়ে খেলায় মেতে উঠি। ফলে আর নাশতা খাওয়া হয়নি। এখন প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে। হাঁটার শক্তি পাচ্ছি না।’
– ‘তো এখন খেয়ে নাও।’
– ‘পকেটে তো এক পয়সাও নেই। আর দোকানি আংকেল বললেন, আমাকে বাকিতে দিবেন না। খাবার নষ্ট করেছি বলে।’
সালিম দোকানি আংকেলের কাছে সুপারিশ করে বললো, ‘আংকেল এবারের মতো ওকে ক্ষমা করে দিন।’
– ‘না, যারা খাবার নষ্ট করে, এভাবে তাদের মাফ করা ঠিক হবে না। কতো ছেলেরা অভাবের কারণে না খেয়ে থাকে। আর ওকে দেখলাম দুই দুইবার নাশতা কিনে না খেয়ে ফেলে দিতে। তাই ভাবছি আজ ওকে বাকিতে দেওয়াও ঠিক হবে না।’ দোকানির বক্তব্য।
ওয়াসিম কেঁদে কেঁদে বললো, ‘আংকেল, এমন ভুল আর হবে না। অনেক ক্ষুধা পেয়েছে। হাঁটার মতো শক্তি পাচ্ছি না। আজকের মতো কিছু খেতে দিন।’ দোকানি কিছুটা নরম হয়ে বললেন, আচ্ছা, দিতে পারি। তবে তোমার ফেলে দেওয়া কেক আর রুটি! তুমি ফেলে দেওয়ার পর আমি তা উঠিয়ে নিয়ে পরিষ্কার করে রেখে দিয়েছি।’
ক্ষুধার তাড়নায় ওয়াসিম বললো, দিন আংকেল, তাই খাবো।’
তারপর সে কেক রুটি খেয়ে এক গ্লাস পানি পান করে। এবার শরীরে কিছুটা বল পায় এবং বন্ধু সালিম আর দোকানিকে কৃতজ্ঞতা জানায়।
দোকানি আংকেল তাদের উপদেশ দিয়ে বললেন, ‘কখনও খাবার নষ্ট করবে না। এতে মানুষের রিজিক সংকোচিত হয়ে যায়। যতটুকু খেতে পারবে ততটুকু নিবে, এর বেশি নয়। আর খাওয়ার আগ্রহ না থাকলে কখনও খাবার কিনে নষ্ট করবে না। মনে রাখবে, এতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।’
এর পর থেকে ওয়াসিম আর কোনোদিন খাবার নষ্ট করেনি।