হামদানের পাখি

আহমদ জুয়েল

0
24

হামদানদের পারিবারিক বৈঠক চলছে। বাবা, মা, খালা আর ছোট মামার সাথে হামদানও বসে বসে গল্প শুনছিলো। হামদানের বাবা আজ জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এলাকার বড় রাজনীতিবিদ তিনি। কয়েকদিন আগেই কী একটা কারণে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। প্রায় সতেরো দিন কারাভোগ করার পর আজ তিনি মুক্তি পরিবারের সবাই একসাথে জড়ো হয়েছে। একই সাথে হামদানের রাতের পড়াটাও আজকের জন্য ছুটি পেয়েছে। হামদানের বাবা তাঁর জেলে কাটানো দিনগুলো স্মৃতিচারণ করছেন। অনেক কষ্টের জায়গা কারাগার। নিঃসঙ্গের মতো জীবন কাটে। বন্দি অবস্থায় থাকাকালে অনেক মানুষের সাথে থাকতে হয়। নিজের স্বাধীনতা নেই। শুধু চার শিকলের ভিতরেই সীমাবদ্ধ। নিজের ইচ্ছে মতো কিছু খেতে চাইলেও সবসময় খাওয়া হয়ে উঠে না। কথাগুলো হামদান মন দিয়ে শুনছিলো । একই সাথে মনের মধ্য কথাগুলোর প্রতিচ্ছবি আঁকছিলো। কী ভয়ঙ্কর! সারা দিন বন্দী। আচ্ছা কারাগারে কী মোবাইল ব্যবহার করা যায় না? চিন্তাটা হামদানের মাথায় আসলো। যার প্রেক্ষিতে বাবাকে কথা বলার মাঝখানেই প্রশ্ন করে বসলো। বাবা প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসলেন। হেসে বললেন,
– নারে বাবা, কারাগারে মোবাইল ব্যবহার করা যায় না। এক কথায় এখানে কারো ইচ্ছে মতো কিছু করা যায় না।
অনেকটা অবাক হলো হামদান। মানুষ কী করে একা একা থাকতে পারে? অবশ্য আমাকে যদি মোবাইল দিয়ে দেওয়া হতো তাহলে আমি কারাগারে ইচ্ছে মতো মোবাইলে গেম খেলতাম। পড়ালেখার কোনো চিন্তাই থাকতো না। কিন্তু এখানে তো এসব ব্যবহার করতে দেয় না। হামদানের মনের মধ্য বিষয়টি দাগ কাটতে লাগলো। তাই আবারও প্রশ্ন করলো,
– আচ্ছা বাবা, তুমি এতোদিন কেমন করে থেকেছো? তোমার কষ্ট হয়নি?
– এইতো বাবা অনেক কষ্টে থেকেছি। আমি তো মাত্র সতেরো দিন থেকেছি, অনেকে আছে মাসের মাসের মাস থাকতে হয়। অনেক সময় অনেকের মা এসে ছেলের বন্দী জীবন দেখে কান্না করে, আবার কেউ মুক্ত জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য কান্না করে। তারা চায় তারাও অন্য মানুষদের মতো স্বাভাবিক হয়ে চলা ফেরা করতে। আগের মতো অন্য মানুষদের সাথে মিশে থাকতে। কিন্তু তাদের পূর্বের অপরাধের কারণে চাওয়াগুলো সত্যি হয়ে উঠে না। কথাটা শুনে হামদানের চিন্তাটা একটু অন্যদিকে গেলো। তার একটা পোষা পাখি আছে। কয়েকদিন আগে টিফিনের টাকা জমিয়ে সে তার বন্ধু ফাইয়াজের কাছ থেকে কিনছিলো। তারপর থেকে সে পাখিটিকে সারাদিন খাঁচার ভিতরে বন্দী করে রাখে। কখনো পাখিটা উড়তে পাওে না। হামদান মনে মনে ভাবলো, তাহলে পাখিটাও কী কারাগারের মতো খাঁচার ভিতর বন্দী হয়ে আছে? কিন্তু সে তো কোনো অপরাধ করেনি। তাহলে সে কেনো বন্দী হয়ে থাকছে? তার মানে আমার জন্য পাখিটার মা পাখিটাকে দেখতে না পেয়ে কান্না করছে। পাখিটা মুক্ত আকাশ উড়া কিংবা অন্য পাখিদের সাথে একসাথে থাকার স্বপ্নগুলো আমার জন্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভাবনাগুলো হামদানের মনের মধ্য ঘুরছিলো। আর সেই ভাবনা থেকে হামদানের মনের মধ্য একটা অপরাধবোধ কাজ করলো। যার কারণে সে চুপ করে সবার মাঝ থেকে উঠে বারান্দায় গেলো। গিয়ে দেখতে পেলো পাখিটি ঘুমিয়ে আছে। পাখিটার দিকে তাকিয়ে তার অনেক মায়া হলো। আর মনে মনে ভাবলো আমাকেও যদি কেও এভাবে বন্দী করে রাখতো তাহলে আমার কতই না কষ্ট হতো। তাড়াছা আমার আম্মু আব্বু ওতো অনেক কষ্ট পেতেন। তাহলে পাখিটাকে কেনো আমি বন্দী করে রাখবো? সে সিদ্ধান্ত নিলো পাখিটাকে আর খাঁচার ভিতর রাখবে না। কালকেই পাখিটাকে মুক্ত করে দেবে।

হামদান স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হলো। পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে হাতের মধ্য পাখিটার খাঁচা নিয়ে মায়ের সাথে বিদ্যলয়ের উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো। একটু দূরে গিয়েই একটি মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে খাঁচাটার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে পাখিটাকে দুই হাত দিয়ে ধরলো। পাখিটার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে মুক্ত আকাশ ছেড়ে দিলো তাকে। পাখিটাও সাথে সাথে মুক্ত বাতাসে উড়াল দিলো। হামদান পিছন দিকে পাখিটার দিকে তাকিয়ে রইল। আর মনে মনে ভাবতে লাগলো, আজ মনে হয়ে পাখিটার পরিবারেও আমাদের মতো সবাই আনন্দের বৈঠক বসাবে। যেমনটা গতকাল বসেছিলো আমাদের ঘরে।

দ্বাদশ শ্রেণী, মদন মোহন কলেজ, সিলেট