শীতের পোশাক

মো: আশিক মোস্তফা

0
23

বিকেল পাঁচটা।
সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে পূর্ণভাবে। কিছুক্ষণ পরেই সূর্য অস্তমিত হবে। বেলা গড়ালেও বেলতলী শিশুপার্কে ছেলে মেয়েদের খেলাধুলা আর হইচই যেন শেষ হচ্ছে না আজ। রিহান আর অমিতও খেলছে সবার সাথে।
রিহান আর অমিত চাচাতো ভাই। বয়সে রিহান অমিতের চেয়ে বড়। রিহান তৃতীয় ও অমিত দ্বিতীয় শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে এবার। ওদের কোনো তাড়া নেই আজ। গতকালই বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। শীতের ছুটি চলছে এখন। আজ মন খুলে খেলা করছে ওরা । খেলা শেষ করতে করতে আঁধার ঘনিয়ে এলো। সবাই যে যার খেলা শেষ করে বাড়ি ফিরলেও রিহান আর অমিত পার্কের বেঞ্চে বসে আছে। ওরা বাসায় যেতে ভয় পাচ্ছে বকুনির জন্য। একদিকে তো এত আঁধার ঘনিয়ে এলো তবুও বাসায় ফেরা হয়নি, অন্য দিকে সাথে ওরা কেউই শীতের পোশাক নিয়ে আসেনি, যার ফলে ওরা দুজনেই শীতে বেশ কষ্ট পাচ্ছে। শীতের কষ্ট নিয়ে ওদের ভাবার সময় নেই এখন। ওরা বাবা মাকে কী বলবে সেটাই ওদের প্রধান চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর মধ্য অমিত এর বাবা এসে হাজির। অমিত তার বাবাকে দেখে থতমত খেলেও ওর বাবা ওদের কিছু না বলে ওদের সাথে নিয়ে বাড়ির দিকে হাটতে লাগল। তিনজনই নীরব। হালকা কুয়াশা সাথে মৃদু বাতাস যেন শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
নীরবতা ভেঙে রিহান বলে উঠল, আচ্ছা কাকু! রাস্তার ওই পাশের ছেলেগুলো খালি গায়ে বসে আছে কেন? ওরা আগুন জ্বালিয়ে কী করছে?
হামিদ সাহেব সেদিকে তাকালেন এবং বললেনÑ ওরা অসহায়, ওদের জামা কেনার সামর্থ্য নেই। তাই তারা আগুন জ্বালিয়েছে যাতে শীত কম লাগে।
অমিত সব কিছু শুনে বেশ আস্তে করেই বলল, আমার বেশ শীত লাগছে। আর কোনো দিন শীতের পোশাক না নিয়ে খেলতে আসবো না। আচ্ছা বাবা! ওরা তো প্রতিদিন এমন কষ্ট করে রাত কাটায় তাই না?
Ñ হ্যাঁ, শীতে আসলেই ওরা অনেক কষ্ট পায়।
রিহান একদম চুপচাপ হাঁটছে, মনে হচ্ছে গভীর কোনো ভাবনায় মগ্ন আছে ও। হঠাৎ করে বলে উঠল, আচ্ছা কাকু একটা কথা বলি? আমার গত বছরের অনেক শীতের পোশাক এই বছর আর আমার গায়ে হচ্ছে না, আমি যদি ওদেরকে ওসব পোশাক দেই, ওরা কি নেবে?
মুচকি হেঁসে হামিদ সাহেব বললেন, হ্যাঁ তুমি তো ভালো কথা বলেছ। তোমার পোশাক দিলে ওরা নিশ্চয়ই নেবে। আর শীতেও ওরা অনেক কম কষ্ট পাবে।
তাহলে আমার পুরনো পোশাকগুলোও দিয়ে দেবো ঠিক আছে আব্বু?
হামিদ সাহেব এবারও মুচকি হেসে অমিতের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললেন, অবশ্যই দেবে।
সেদিন সারারাত মাহিন ও অমিত শীতের পোশাক নিয়ে ভেবেছে। সেদিনের ঠিক পরদিন সকালের কথা।
ওরা দুজনেই দুজনের সব পুরনো পোশাক একসাথে বের করে। তারপর ওর আম্মুকে বলে পরিষ্কার করে দিতে। সেদিন সকালে ওরা বাসা থেকে বের হয় না। দুজনে মিলে কিছুক্ষণ পর পর কাপড় উল্টিয়ে দেয়, যাতে দুপুরের মধ্যে কাপড় শুকিয়ে যায়। কাপড় দুপুরের মধ্যেই শুকিয়ে যায়।
কাপড়গুলো দুইটা ব্যাগে ভরে দুইজন দুইটা ব্যাগ হাতে নিয়ে বিকেলে রাস্তায় বের হয়। রাস্তার পাশে থাকা ছোট ছোট শিশুদের খুঁজে তাদের সাথে গল্প করে। গল্প শেষ হলে তাদেরকে পোশাক দেয়, ঠিক তখনি অমিত পকেট থেকে একটা করে চকলেটও দেয় ওদের।
রিহান অবাক হয়ে বলে তুই চকলেট কোথায় পেলি?
ভাইয়া আব্বুকে বলায় আব্বু চকলেট কিনে দিছে যাতে ওরা চকলেট দিলে খুশি হয়ে আমার সাথে তাড়াতাড়ি বন্ধুত্ব করে।
অমিতের যুক্তি শুনে রিহান হেসে দিয়ে বললÑ ভালো বুদ্ধি তোর।
অনেক পথ হেঁটে পোশাক দিতে গিয়ে আজও আঁধার ঘনিয়েছে। দুজনেই দ্রæত হেঁটে বাড়ির দিকে চলে। তবে গতকালের মতো আজ ওদের কারো চোখে নেই কোনো চিন্তার ছাপ। যা আছে তা কেবল আনন্দের হাসি, আছে তৃপ্তির পূর্ণ ছোঁয়া যা তাদের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে।