অদৃশ্য বন্ধু

সারিয়া নুজহাত তাযকিয়া

0
83

আজ সকাল থেকেই ঘরে কেউ নেই। মা চাকরি করেন, বাবা চাকরি করেন। বড় ভাই-বোন স্কুল কলেজে থাকে। দাদুও কোথায় যেন গেছেন। নীতি একাকী ঘরে। একা একা কি ভালো লাগে? নীতি খালি ভাবে যদি একটি অদৃশ্য বন্ধু থাকত!
তারপর সে গল্পের বই পড়তে শুরু করে। তার মনে হয় কেউ যেন তাকে ডাকছে। বলছে, এই মেয়ে শুনছ তুমি? আমরা তোমাকে নিয়ে যাবো।
নীতি বলে : কই নিয়ে যাবে আমায়?
অদৃশ্য : আমাদের দুনিয়ায়।
নীতি মনে মনে ভাবে, মনে হয় ঘরে কেউ নেই বলে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম এবং এটা একটা স্বপ্ন। এই ভেবে নীতি এবার সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘুম থেকে উঠে দেখে তার হোমওয়ার্ক সব কে যেন করে দিয়ে গেছে। মা যাবার আগে যে কাজগুলো করতে বলে গেছে তাও করা শেষ। খাঁচায় পাখির খাবার, পানি দেয়া আছে। নীতির তো চোখ ছানাবড়া।
নীতি বসে বসে নিজের মনেই ভাবে, কে করল এসব? আবার কে জানি তাকে বলল,
বোকা মেয়ে তখন স্বপ্ন বলে ঘুমিয়ে গেছিস। এখন আবার বলছিস কে করল এসব?
বলে তার হাতে হঠাৎ করে একটা লোভনীয় চকলেট ধরিয়ে দিলো।
নীতি দেখল জানালায় একটা মেয়ে বসে আছে।
নীতি কাঁপতে কাঁপতে বলল : কে?
মেয়েটি বলল : আমি তোমার অদৃশ্য বন্ধু।
নীতি : সত্যি? তোমার নাম কী?
অদৃশ্য বন্ধু : আমার নাম ঝুমু।
নীতি খুব আগ্রহের সাথে বলল, তোমাকে কেউ দেখতে পায়?
ঝুমু : তুমি যদি চাও আমাকে কেউ দেখতে পাক, তবে দেখতে পাবে।
এর কিছুক্ষণ পরই ওর মা এলো ঘরে। নীতির ঘরে ঢুকে খুব অবাক হলো। ঝুমু নীতির পাশেই বসেছিল, কিন্তু ওর মা সেটা দেখতেই পেল না।
নীতি : মা তুমি এত দ্রুত এলে কেন? এখন তো মাত্র দুইটা বাজে।
মা : আজ স্কুলে কাজ কম ছিল।
নীতি : মা, তুমি শিক্ষক হলে কেন?
মা : কারণ আমার বাচ্চাদের ভালো লাগে। তুমি তো সারা জীবন আর বাচ্চা থাকবে না।
নীতি : তোমার স্কুলের ডিসেম্বরের ছুটি দিয়েছে?
মা : হুম্ম। এখন আমরা বেড়াতে যেতে পারব।
ঝুমু : তুমি কি চাও তোমার মা আমার কণ্ঠস্বর শুনতে পাক আর আমাকে দেখতে পাক?
নীতি : না।
মা : এই তুমি কার সাথে পুটপুট করে কথা বলছ?
নীতি : কেউ না। ভাবছিলাম কোথায় কোথায় ঘুরতে যাব?
বলে একটু থামে সে। তারপর তার মাকে বলে, আচ্ছা মা তুমি যাও তো। আমি এখন পড়ব।
মা : তুমি? তুমি এখন পড়বে? জীবনেও তো এ রকম কথা শুনিনি!
নীতি : আহ্্ মা, তুমি যাও না। বলে নীতি মাকে ঠেলে রুম থেকে বের করল।
ঝুমু : তুমি মাদরাসায় পড়?
নীতি : হ্যাঁ! এ রকম প্রতিষ্ঠানে তো সবাই পড়ে। কেন? তুমি পড় না?
ঝুমু : না, আমি কোনো প্রতিষ্ঠানে পড়ি না। আমাকে আমার মা-বাবা ঘরেই পড়ায়।
নীতি : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক সমবয়সী ছাত্র-ছাত্রী, বন্ধু-বান্ধব থাকে। খুব মজা! কিন্তু…
ঝুমু : কিন্তু কী?
নীতি : কিন্তু ম্যাডামরা শুধু বকে আর শাসন করে।
ঝুমু : যোহরের আযান সেই কখন দিল, নামায পড়েছ?
নীতি : অ অ অ! আমি তো পুরোপুরি ভুলেই গিয়েছিলাম।
তারপর ঝুমু আর নীতি নামায পড়ে। নামায শেষ হলে নীতি বলে, আম্মুকে গিয়ে হেল্প করি।
ঝুমু : আমিও কি সাথে যেতে পারি?
নীতি কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, এবারের মতো না। এটা প্রথম বার।
অনেকক্ষণ পর নীতি এসে জামা-কাপড় নিয়ে গোসলে ঢুকল। গোসল থেকে বেরিয়ে দেখল ওর বোন এসে গেছে। ওরা একসাথে দুপুরের খাবার খেল। খাবার খেয়ে এসে দেখে ঝুমু বিছানার এক কোণে শুয়ে ঘুমুচ্ছে।
পরদিন নীতির বন্ধু আসফি এলো। ওকে সব খুলে বলল নীতি। ওর কাছ থেকে কিছু পরামর্শ নিল। ও বলল, ওকে এভাবে লুকিয়ে রাখা যাবে না।
আসফি : তুমি এক কাজ কর, ওকে লুকিয়ে না রেখে তোমার মা-বাবা ও আপনজনদের এ বিষয়ে জানিয়ে ওকে বল যে, তোমার আপনজনেরা যেন দেখতে পায় ওকে।
নীতি : থ্যাঙ্ক ইউ, বাই।
ইতিমধ্যে ও কথামতো সবাইকে বুঝিয়ে বলে দিলো। নীতির ছুটি চলছে আর কী করবে!
ঝুমু : আচ্ছা, আমরা তো একজন আরেক জনের পরিচয়ও নেইনি।
নীতি : ঠিক ঠিক।
ঝুমু : আমার নাম ঝুমু, তোমার নাম?
নীতি : আমার নাম নীতি।
ঝুমু : আমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। তুমি?
নীতি : আমিও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি।
ঝুমু : আমার জন্ম ২০০৮ এর ৩ এপ্রিল, আর তোমার?
নীতি : আমার জন্ম ২০০৮ এর ১৩ এপ্রিল।
ঝুমু : আমার মা একজন গৃহিনী আর বাবা একজন সমাজসেবক। আমরা এক ভাই আর দুই বোন। বড় ভাইয়ের নাম নয়ন, বোনের নাম ঝুমা আর আমি তো ঝুমু জানোই।
কথা বলতে বলতে নীতি ঘুমিয়ে পড়ে। ঝুমু যখন খেয়াল করে তখন ও পুরো ঘুমিয়ে পড়েছে।
ঘুম থেকে উঠে নীতি দেখে খালামণিরা এসেছে, ও তো খুব খুশি।
ঝুমুর ব্যাপারটি ওর খালাতো ভাইবোনদের জানালো নীতি। ঝুমু তখন সবার সাথে দেখা দিয়ে ওর খালাতো ভাই-বোনদের মতো হয়ে গেল।
ঝুমু : আমি খুব বোর হচ্ছি।
নীতি : এই তুমি যে আমাকে প্রথম দেখায় বলেছিলে তোমার দুনিয়ায় নিয়ে যাবে?
ঝুমু : আমি তো পুরোপুরি ভুলেই গেছিলাম। চল এখন যাই।
নীতি : কিন্তু কিভাবে? আমিতো তোমার তো উড়তে পারি না।
ঝুমু : সমস্যা নেই। আমি তোমায় শেখাবো।
বলে ঝুমু নীতির হাত ধরে টেনে জানালার কাছে নিয়ে বলল, একটা লাফ দাও।
নীতি : কেন? আমি ব্যথা পাব!
ঝুমু : পাবে না।
বলেই একটা ধাক্কা দিল। নীতি চোখ বন্ধ করে রেখেছিল ভয়ে। চোখ খুলে দেখে না ও পড়েনি। সে আকাশ ও জমিনের মাঝখানে।
ঝুমু : কী ভাবো তুমি, আমি তোমাকে মাটিতে ফেলে মেরে ফেলবো! আমি থাকতে তোমার কোনো ক্ষতি হবে না।
নীতি : তুমি এমন যাদু করতে পারো তা তো জানতাম না।
ঝুমু : ওপরে তাকাও। অনেক সুন্দর না ওপরের দৃশ্য!
নীতি : কিন্তু… সবাই যে দেখতে পাবে, তাহলে ওরাও উঠতে চাইবে আকাশে।
ঝুমু : সমস্যা নেই, আমি এমন এমন যাদু করেছি যে, কেউ দেখতেও পাবে না, শুনতেও পারবে না।
নীতি : থ্যাঙ্ক ইউ।
ঝুমুর দেশে পৌঁছে দেখে কী সুন্দর সাজানো গোছানো সবকিছু। চারিদিকে ফুটে আছে নানা রঙের বাহারী ফুল। ফুলের গন্ধে মউ মউ করছে চারদিক। মৌমাছিরা মধু আহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। কী সুন্দর! কী সুন্দর! কোথাও এতটুকু ধুলো-বালি বা ময়লা নেই।
ঝুমু : সবে তো শুরু। আরো অনেক কিছু আছে দেখার।
ওরা যেতে থাকে এগিয়ে। দেখে সারি সারি ছোট ছোট কুঁড়ে ঘর। নীতি জিজ্ঞেস করে, তোমরা কত বড়, মানুষদের মতো। কিন্তু তোমাদের ঘরগুলো এত ছোট কেন?
ঝুমু : বোকা মেয়ে এগুলো তো পিঁপড়ের ঘর।
নীতি : এর চেয়ে একটু বড় ঘরগুলো? মাটির ঘর না?
ঝুমু : হ্যাঁ, এটা মাটির শক্ত ঘর বিড়ালের।
নীতি : তোমরা দেখি প্রাণিদের প্রতি মানুষদের চেয়েও বেশি খেয়াল রাখ!
ঝুমু : এখান থেকে চল সামনে যাই। এই এলাকা বন্যাপ্রবণ এলাকা, এখানে একটা জীবও থাকে না।
নীতি : তো কী হয়েছে। আমি থাকব।
ঝুমু : সাগরের ঢেউ আসলে তুমি মরে ভূত হয়ে যাবা।
ঝুমু সামনের দিকে তাকিয়ে তাড়া দেয়, ওইতো এলো!! পালাও!!
নীতি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তবুও তাকিয়ে থাকে।
ঝুমু : আরে তুমি কী এখানে সুইমিং করবে?
বলেই নীতিকে ঝুমু টেনে অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে গেল।
নীতি বলল, ও ও! ওটা তাহলে তোমাদের দেশের প্রান্ত ছিল?
ঝুমু : এটা কিন্তু পৃথিবীর বাইরে।
নীতি : কী! কিন্তু আমি তো দেখলাম আমরা বাংলাদেশের ভেতরেই।
ঝুমু : এরকম সব মানুষই দেখবে। কারণ, আমাদের গ্রহটা পারসোনাল।..
নীতি : ওয়াও!!!
ঝুমু : কী?
নীতি : দেখ ওখানে কতগুলো প্রজাপতি!
ঝুমু : আরে এখানেই দেখব নাকি? সামনেও আছে আরো অনেক। এসো।
নীতি হঠাৎ থমকে যায়। গম্ভীর হয়ে বলে, মাকে কিছুই বলিনি। মা চিন্তা করবে না?
ঝুমু : না, চিন্তা করবে না। মা জানে তুমি আমার সাথে আছ।
নীতি : কিন্তু তোমার সাথে থাকা মানে আমার লাইফ এর সবচেয়ে বড় রিস্ক।
ঝুমু : বাজে বকো না তো। এখন চল আমার সাথে। বাসায় এলাম বলে।
নীতি : বাসা? তোমার বাসা আছে?
ঝুমু : থাকবে না কেন? আমার মা-বাবা, ভাই-বোন সবাই আছে। আমরা মানুষের মতোই, ঘর থাকবে না কেন তাহলে?
নীতি : কোথায়? এখান থেকে কি বেশি দূর?
ঝুমু : বেশি একটা দূর না। ধর, ২ দিন তো লাগবেই যেতে।
কথাটা শুনেই নীতি অজ্ঞান হয়ে শূন্যে ভাসতে থাকে। ঝুমু ওর মুখে পানি ছিটিয়ে দিলে ওর জ্ঞান ফিরে আসে।
নীতি : পুরো দুইদিন লাগবে তোমাদের বাসায় যেতে! আমরা কি পুরো রাস্তা হেঁটে যাব?
ঝুমু : না, আমার ভাইয়া আর বাবা নিতে আসবে।
নীতি : তো আমাদের কাজ হলো ওয়েট করা!
অপেক্ষা করতে করতে নীতি কখন যে ঘুমিয়ে গেল টেরই পেল না। ঘুম ভাঙলে চোখ খুলে দেখে ওরা শহরের ভেতর। ও একটা অদ্ভুত গাড়িতে শুয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। গাড়ি চালাচ্ছে নীতি। গাড়িতে কোনো শব্দ নেই, ঝাঁকি নেই, ধোঁয়া নেই, কেমন যেন হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে গাড়িটি। অথচ রাস্তা দিয়েই চলছে গাড়িটি।
নীতি শোয়া থেকে উঠে বসে। ঝুমুদের শহর দেখতে থাকে প্রাণ ভরে। এটা একটা শহর হলেও পৃথিবীর মতো ঘিঞ্জি নয়। অনেক খোলামেলা জায়গা। বড়সড় রাস্তা, রাস্তার পাশে মন মাতানো নানা রকম বাগান। অনেক দূরে দূরে এক একটা বাড়ি। সবই সাজানো গোছানো। খেলার মাঠে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খেলা করছে।
মাঝে মাঝেই তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে অন্যান্য গাড়ী। ও খেয়াল করে দেখল অধিকাংশ গাড়ি চালাচ্ছে মহিলারা। মাঝে মাঝেই সুন্দর সুন্দর দোকান দেখা যাচ্ছে। সামনে বেশ খোলামেলা জায়গা। কোথাও কোন হইচই নেই। কোলাহল নেই। কোথাও কোনো বাড়ির দেয়ালে কিংবা রাস্তায় কোনো পোস্টার বা স্টিকার লাগানো দেখতে পেলো না। সবকিছু ছবির মতো সুন্দর, ঝকঝকে।
নীতি ঝুমুকে বলল, এটাই তো তোমাদের শহর। অনেক অনেক সুন্দর। কোথাও কোনো কোলাহল নেই। সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এখানে সবাই বুঝি খুব শান্তশিষ্ট?
ঝুমু : ঠিক ধরেছ নীতি। এখানে সবাই খুব শান্ত-শিষ্ট। ছোটবড় সবাই আইন মান্য করে চলে এখানে। কেউ কোনো বেআইনী কাজ করে না। এখানে কেউ ঝগড়া বিবাদ করে না। কেউ জোরে শব্দ করে কারো ঘুম নষ্ট করে না। তোমাদের পৃথিবীতে তো অনেকে সারারাত বিকট শব্দে মাইক বাজিয়ে নাচগান করে। এতে যে অন্য কারো ক্ষতি হতে পারে সেটা ভাবেই না তারা। আমাদের এখানে এগুলো কল্পনাই করা যায় না।
কথা বলতে বলতেই ঝুমুদের বাড়ির গেটে চলে এলো ওরা।
গাড়ী থেকে নেমেই তো নীতির চোখ ছানাবড়া। কি সুন্দর তিন তলা বাড়ি ঝুমুদের। এক পাশে মাঠের মতো বিশাল খালি জমি। মিরপুর স্টেডিয়ামের মতো বিশাল মাঠ একটা। আরেক দিকে বিশাল ক্ষেত। আরেক দিকে বিশাল জায়গা জুড়ে গরু আর মুরগির খামার।
বাড়ির ভেতরে গিয়ে তো সে আরো অবাক। এই বাড়িতে তার জন্যও একটা আলাদা রুম আছে। নীতি একেবারেই মুগ্ধ সবকিছু দেখে। নীতি জিজ্ঞেস করে, তোমাদের গ্রহে সবকিছু আছে। কিন্তু স্কুল নেই কেন?
ঝুমু : জানি না। মনে হয় শিশুদের শান্তির জন্য।
ঝুমুর ইচ্ছেমতো নীতির রুমটা ঝুমুর রুমের সাথেই।
নীতি : ঝুমু, আমরা কয়টায় ঘর থেকে বের হয়েছি?
ঝুমু : কারেক্ট নয়টা বাজে।
নীতি : কয় তারিখ?
ঝুমু : উম্ম্্ ৮ ডিসেম্বর ২০১৮
নীতি: কী বার?
ঝুমু : উফফ! কী? করবেটা কী আগে বলো?
নীতি : কিছু না, তুমি বলো।
ঝুমু : রবিবার।
নীতি : আচ্ছা, এবার আজকেরটা বলো।
ঝুমু : ৮ ডিসেম্বর ২০১৮ আর বুধবার।
নীতি : মানে কী?
ঝুমু : আরে! আমার গ্রহের অনুযায়ী।
নীতি : আর কী কী আছে বলে দাও।
ঝুমু : আরে সবকিছুরই তো হিসেব আছে!
নীতি : বাদ দাও। আম্মু চিন্তা করবে না?
ঝুমু : উপায় আছে যাতে এক মুহূর্তও নড়বে না।
নীতি : কী উপায়?
ঝুমু : কিছু না।
নীতি হাই তুলতে তুলতে ‘খুব ঘুম পাচ্ছে’ বলেই শুয়ে পড়লো। তখনই ঝুমুর মা এসে বলল, খেতে এসো! মামণিরা।
ঝুমু : এই, ওঠো!
নীতি : ঘুমাবো…!
ঝুমু : আগে খেয়ে নাও।
নীতি আর ঝুমু খেতে গেল।
ডাইনিং রুমে ঢুকে তো নীতির চোখ ছানাবড়া। তার মনে হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়ীতে এসেছে সে। এত্ত বড় টেবিল। এপাশে সুন্দর করে সাজানো নানা রকম ফল-ফলাদি, ওপাশে গরু, মুরগি, খাসির নানা রকম পদ, কত্ত পদের মাছ, ভাজি, সবজি, ভাত, ডাল, পোলাও, কোরমা আরো কত্ত কি! সবকিছুর নামও সে জানে না।
নীতি বসলো ঝুমা আপুর পাশে। আপুতো মনে হয় প্রশ্ন ভরা ঝুড়ি নিয়ে বসেছে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন। প্রশ্নের পর প্রশ্ন।
ঝুমা : আচ্ছা, তোমার পৃথিবীতে অনেক শব্দ না?
নীতি : হুমম, শব্দে তো আমার ঘুমানো হারাম!
খাওয়া শেষে ঝুমু এসে নীতিকে ডেকে নিয়ে গেল ছাদে। ছাদে যাবার পর দেখে আকাশের তারাগুলো রঙিন। হলুদ, নীল, সবুজ, লাল, গোলাপি, বেগুনি, সাদা আরো কত শত বাহারী রং ঝলমল করছে! দেখে নীতির ইচ্ছা করছিল সারাক্ষণ আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। পুরো আকাশটা অন্ধকার, শুধু তারাগুলো ঝলমল করছে।
ঝুমা আপু : এরকম তারাগুলোকে আমরা হিপনোটাইজিং স্টার বলি। এগুলো প্রতি মাসে একবার দেখা যায়।
নীতি : একবারই কেন?
ঝুমা আপু : তোমরা পৃথিবীতে যেমন পূর্ণিমার চাঁদ দেখো, তেমনই!
ঘুমে নীতির চোখ বারবার বন্ধ হয়ে আসছে।
এক সময় নীতি চোখ বন্ধ করল, গভীর ঘুমে ঢলে পড়ল।
ঘুম ভাঙতেই চোখ খুলে দেখল, ওর হাতে গল্পের বই। ও ওর নিজের রুমেই।
তার মনে পড়ল কেউ যেন তাকে ডাকছিলÑ
এই মেয়ে শুনছ তুমি? আমরা তোমাকে নিয়ে যাবো।