রুমি আজ স্কুলে গিয়ে শোনে বিজয় মাসের কথা। এটা নাকি বিজয় মাস। এই মাসে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। কিন্তু রুমি জানে না বিজয় মাসের তাৎপর্য। তার বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে চাইলেও সে উত্তর খুঁজে পেল না। তার অন্য কোনো কাজে আর মন বসে না। অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছে বিজয় মাসের কথা। বইয়ের প্রতি তার কোনো ভ্রæক্ষেপই নেই। শফিক স্যার ক্লাস রুমে ঢুকেই দেখে রুমি অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে। শফিক স্যার ভাবে- রুমি তো এমন মেয়ে নয়! ও খুব ভালো ছাত্রী। পড়াশোনায় খুব মনোযোগী। রুমি এবার ক্লাস
তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ক্লাস রোল এক। পড়াশোনায় খুবই ভালো। ক্লাসে যে সবসময় বই নিয়ে বসে থাকে সে আজ অন্যমনস্ক কারণ কী? এসব ভাবছে শফিক স্যার।
হঠাৎ শফিক স্যার ডাক দিলো, এই রুমি। রুমি চমকে উঠে বলল, ইয়েস স্যার, ইয়েস স্যার।
সবাই খিলখিল করে হেসে দিলো রুমির এমন উত্তরে। রুমি খুব লজ্জা পেল। বলল, জি স্যার।
শফিক স্যার রুমিকে কাছে ডাকল। রুমি কাছে এলো। রুমির মাথায় হাত রেখে বলল, তোমার কী হয়েছে আজ?
রুমি স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল, না স্যার, কিছু হয়নি।
এই উত্তর কিন্তু অন্য দিনের মতো নয়। ভীতু মুখ করে রুমি উত্তর দেয়। রুমি মনে মনে সাহসের সঙ্গে স্যারকে বলল, আচ্ছা স্যার এটা কি বিজয় মাস? শফিক স্যার মাথা নাড়িয়ে বলল, হ্যাঁ। কেন?
না স্যার আমি আসলেই জানি না বিজয় মাস মানে কী?
শফিক স্যার তার অবস্থাটা বুঝে বলল, আচ্ছা বুঝছি। যাও টেবিলে বসো আমি বলছি তোমরা সবাই শোনো।
এবার শফিক স্যার বেত দিয়ে টেবিলে চাপড়াই বলল-
শুনো স্টুডেন্টস- তোমরা কি জানো এটি কী মাস চলে?
সবাই উচ্চস্বরে বলে- জি স্যার।
এটি ডিসেম্বর মাস। স্যার বলল- না, এই মাসের নাম ডিসেম্বর হলেও ইতিহাসের পাতায় এটা বিজয় মাস নামে বিশ্ব চিনে। বিজয় মাস মানে কি জানো তোমরা?
সবাই বললেন- না স্যার। তাহলে শুনো সবাই- ১৯৭১ সালে মার্চ মাসে বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। শুরু হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে বীর বাঙালিরা।
এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর লাগাতার ৯ মাস যুদ্ধ হয়। এই ৯ মাসে পাকিস্তানি শাসক বাঙালিদের ওপর জুলুম নির্যাতন ও রক্তক্ষয়ী অভিযান চালায়। লাখ লাখ মায়ের ইজ্জত কেড়ে নেয়। লাখ লাখ বাঙালির রক্তে সে দিন নদীর পানি লাল হয়ে যায়। বর্বর হামলায় বাঙালিদের বাড়িঘর সব কিছু তারা গুড়িয়ে দেয় সে দিন। বাঙালিরাও সে দিন কম সাহসী ছিলেন না। সবাই সে দিন জীবনবাজি রেখে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অস্ত্র ছিল না বটে। কিন্তু সবার বুকে ছিল স্বাধীন হওয়ার আশা। চোখে ছিল মুক্তি পাওয়ার স্বপ্ন। হাতে ছিল লাল-সবুজের বিজয় পতাকা।
বীর বাঙালি- যুবক-যুবতী,
কৃষক-দিনমজুর যখন পাকিস্তানি শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করে তখন বাঙালি নারীরা ছিল বীর বাঙালিদের পক্ষে। পাকবাহিনী সে দিন শিশু-কিশোর কাউকে ছাড় দেননি; যাকে পেয়েছে তাকেই রক্তাক্ত করেছে। একাত্তরের যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে দেশ, মাটি, নদী, সাগর ও বাড়িঘর। ১৬ ডিসেম্বরে বাঙালিরা বিজয় লাভ করে। চার দিকে বিজয়ের পতাকা উড্ডীন হয়। মুক্তি পেল বাঙালি জনপদ। গঠন হলো নতুন স্বাধীন একটি ভ‚খন্ড। পূর্ব দিক হতে যে স্বাধীন দেশে সূর্য ওঠে। জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য রচিত হলো নতুন সংবিধান। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেন বাঙালি জাতি। আজকে আমরা স্বাধীন ও মুক্ত।
তোমরা কি জানো এই স্বাধীনতার জন্য কত মানুষ জীবন দিয়েছে?
সবাই উত্তর দিলেন না স্যার, বলুন। শফিক স্যার এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন- লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন এই ৯ মাসে। সে থেকে পালিত হচ্ছে ‘ষোলোই ডিসেম্বর’ ‘বাঙালির বিজয় দিবস’ হিসেবে। প্রতি বছর ষোলোই ডিসেম্বরে আমরা পালন করি এ দিনটাকে।
রুমি এতক্ষণ খুব মনোযোগ দিয়ে শফিক স্যারের সব কথা শুনলেন। কখন স্যারের গল্প শেষ হলো তা টেরও পেল না রুমি। হঠাৎ সবাই চেঁচিয়ে উঠতেই রুমি তাকিয়ে দেখে স্যারের গল্প শেষ। রুমি এবার বুঝতে পারে বিজয় দিবসের আসল গল্প। রুমি মনে মনে স্থির করে- যত দিন বাঁচবে তত দিন এই গল্প হৃদয়ে ধারণ করে দেশকে ভালোবাসবে। ৯ মাসের যুদ্ধকালে সব বীর শহীদের জন্য নামাজ পড়ে দুই হাত তুলে দোয়া করবে। আল্লাহ যেন সব শহীদের জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেন।
বিজয় দিবস
শফিকুল আলম সবুজ