ময়না ও শালিকের শিক্ষা

আজাদী আবাবিল সায়মা

0
25

ময়না ও শালিক দুই বান্ধবী। দুইজন একই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। দুইজনের বাসা মেইন রাস্তার দুই পাশে। প্রতিদিন সকালে শালিক ময়নার আম্মুর কাছে প্রাইভেট পড়তে আসে। পড়া শেষে দুই বান্ধবী একসাথে স্কুলে যায়। স্কুল ছুটির পরে তারা একসাথেই বাসায় আসে। মেইন রাস্তা দিয়ে আসার পরে দুইদিকের দুইটি সরু গলি দিয়ে যার যার বাসায় ফিরে যায়। দুই বান্ধবী স্কুলে যাওয়া বা আসার সময় কিছু খাবার কিনলে দুইজনে সমান ভাগে টাকা দেয় এবং খাবারও সমানভাবে ভাগ করে খায়। মাঝেমধ্যে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে স্কুল থেকে ফেরার সময় ওরা রিকশায় ওঠে। ৫০ টাকা রিকশাভাড়া; দুইজন ২৫ টাকা করে দিয়ে দেয়।

একদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় দুইজনে একসাথে রিকশায় ওঠে। কথা ছিলো দুইজনেই ২৫ টাকা করে ভাড়া দেবে। গল্প করতে করতে আসার পরে ময়নার বাসা রাস্তার বামপাশে হওয়ায় আগে রিকশা থেকে নেমে বেখেয়ালি মনে ভাগের ২৫ টাকা না দিয়েই বাসার দিকে রওনা দেয়। কিছুদূর যাবার পরে হঠাৎ ওর মনে পড়ে রিকশাভাড়ার ২৫ টাকা তো দেয়া হয়নি। তবুও সে পেছনে না ফিরে বাসায় চলে আসে। এদিকে শালিক রাস্তার উল্টো দিকে রিকশা থেকে নেমে টাকা দেবার সময় খেয়াল করে ময়না টাকা না দিয়েই চলে গেছে। শালিকের কাছে মাত্র ২৫ টাকাই আছে। তাই সে রিকশা চালককে দাঁড়াতে বলে। শালিক দ্রুত রাস্তা পার হয়ে ময়নাকে ডাকতে ডাকতে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে যায়। ইটে আঘাত লেগে তার ডান পায়ের চামড়া ছিলে যায়। তবুও সে রিকশাচালককে টাকা দেবার জন্য আবারও উঠে দৌড়াতে থাকে এবং ময়নার বাসায় চলে আসে। শালিকের এভাবে দৌড়ে আসা এবং পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পাবার কথা জেনে ময়নার মা শালিককে ভালোভাবে সান্ত্বনা দেয় এবং রিকশা ভাড়ার ২৫ টাকা দিয়ে দেয়। এদিকে শালিক ফিরে এসে দেখে রিকশাচালক চলে গিয়েছে। তাই সে রিকশাভাড়ার ৫০ টাকা আর দিতে পারে না।

ময়নার বাবা বাসায় এসে ময়নার কাছে সব ঘটনা শোনে। এরপর ময়নাকে বলে,

“তুমি রিকশার ভাড়া না দেয়ায় তোমার বান্ধবী লজ্জা পেলো, রিকশাওয়ালা তোমাদের খারাপ ভাবলো। যখনি মনে এসেছে তুমি ২৫ টাকা না দিয়ে চলে এসেছো, তখনি পেছনে গিয়ে টাকাটা দিয়ে আসা উচিত ছিলো। মনে রেখো, তুমি যদি কাউকে ফাঁকি দিয়ে ৫০ টাকা নিয়ে আসো, তাহলে একদিন দেখবে তোমার ২০০ টাকা বা ৫০০ টাকা অথবা ১০০০ টাকা হারিয়ে গেছে। এভাবে তোমার অনেক টাকা লস হবে। তাছাড়া যাকে তুমি ফাঁকি দিচ্ছো উনি যদি তোমাকে ধরতে পারেন তাহলে তোমাকে চোর বলে পিটুনি দিতে পারেন। আর যদি উনি নাও ধরতে পারেন, আল্লাহ তো আমাদের সবকিছু দেখতে পারেন। তখন আল্লাহ অবশ্যই এইজন্য শাস্তি দেবেন।”

বাবার কথা শুনে ময়না তার ভুল বুঝতে পারলো এবং ওয়াদা করলো আর কখনো কাউকে ফাঁকি দেবে না। শালিক যেহেতু রিকশাচালককে টাকা দিতে পারেনি, এইজন্য দুই বান্ধবী প্রতিজ্ঞা করলো, যদি কখনো ওই রিকশাচালককে দেখতে পায় তাহলে তার পাওনা ৫০ টাকা ফেরত দিয়ে দেবে। সেদিন থেকে ময়না আর শালিক টাকা ফেরত দিতে সেই রিকশাচালককে খুঁজে ফিরছে।