হোসনা বানুর অ্যাডভেঞ্চার । পর্ব-৩

আহমাদ স্বাধীন

0
7

আজব একটা ঘটনা ঘটেছে কোকাব শহরে। শহরে একটা মেয়ে ঢুকে পড়েছে হঠাৎ। কোকাব শহর হলো পরিদের রাজ্য। এখানে সব জ্বীন পরিদের বাস। এ রাজ্যে একটা মেয়ে এসেছে এটা খুব আজব ব্যাপার। মেয়েটি এসেছে মানুষের রাজ্য থেকে। অথচ এই কোকাব শহরে মানুষের প্রবেশ একেবারেই নিষেধ।

এই ঘটনা নিয়েই শুরু হয়েছে হইচই। এই শহরে কে আনলো এই মানুষের মেয়েটাকে। কার এতো বড় সাহস হলো? নাকি মেয়েটা একাই ঢুকে পড়েছে এখানে? কিন্তু সেটা তো সহজ কোনো বিষয় না। মানুষের রাজ্য এই কোকাব শহর থেকে হাজার লক্ষ যোজন দূরে। একটা ছোট্ট মেয়ের পক্ষে তো এখানে একা একা আসা অসম্ভব প্রায়। তাহলে কেমন করে আসলো মেয়েটা। পরিদের রাজ দরবারে হাজির হয়েছে রাজ্যের গণ্য মান্য জ্বীন ও পরিরা। মেয়েটাকেও হাজির করা হয়েছে সবার সামনে। পরিদের সম্রাট প্রথমে মেয়েটার কাছে জানতে চাইলো তার নাম পরিচয় ও এখানে আসার কাহিনি। মেয়েটা বলল, আমি হোসনা বানু। আমি একটা গ্রামের মেয়ে। গ্রামের নাম লুলুশিয়া। আমি আমার মায়ের সাথে থাকি। আমাদের গাঁয়ের সবাই খুব সুখি। কারোর সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমাদের একটা গোলাপ বাগান আছে। কালো গোলাপের বাগান বলি আমি সেই বাগানকে। যদিও অনেক রঙের গোলাপই হয় সেখানে। এক সকালে আমি আমাদের ফুল বাগানে গেলাম। আমার বাগানে অনেক ধরনের গোলাপের গাছ আছে। আমি ফুল ফোটাতে ভালোবাসি। আমার গোলাপ বাগানে লাল গোলাপ, নীল গোলাপ, সাদা গোলাপ, হলুদ গোলাপসহ আরো অনেক রঙের গোলাপ হয়। সেইসব গোলাপের সৌরভে ভরে যায় সারা গ্রাম। আর বছরের এই সময় আমার বাগানের একটা অংশের গোলাপ গাছে হয় কালো গোলাপ। সেই কালো গোলাপের সৌন্দর্যের কাছে আমার সমস্ত গোলাপের সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায়। আর সেই গোলাপের সুবাসে ছুটে আসে হাজার হাজার প্রজাপতি, মৌমাছি, নানা প্রজাতির পাখি। ওরা এসে আমার বাগানে ঘুরে বেড়ায়। গোলাপের ডালে বসে গান করে। আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি সেই কালো গোলাপ গাছে জল দিতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম গাছটা নড়ছে। অথচ তখন কোনো বাতাস ছিলো না। আমি আমার বাগানের সব থেকে বড়ো আর সুন্দর কালো গোলাপ গাছটায় পানি দিতে গেলাম। আমি গাছে পানি দেয়ার আগেই দেখলাম যে গাছটা শেকড় সুদ্ধ উপরে উঠে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ ছিলো না সেখানে। আমি অবাক হয়ে অনেক খুঁজেও কাউকে দেখতে পাইনি। অথচ গাছটা একা একাই উঠে যাচ্ছিলো উপরে। আমার এতো প্রিয় কালো গোলাপ গাছটাকে আমি হারাতে চাইনি। তাই আমি গাছটাকে আঁকড়ে ধরলাম। আশ্চর্যজনকভাবে গাছটা আমাকে নিয়েই শূন্যে ভাসতে লাগলো। ভাসতে ভাসতে মেঘের উপর দিয়ে যেতে লাগলো। যেতে যেতে কতটা পথ যে গেল তার কোনো হিসাব নেই। আমার গাছ ধরে ঝুলে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। তবু আমি ছাড়তে চাইনি এজন্য যে এই কালো গোলাপ গাছটা আমার অনেক প্রিয় গাছ। আমি ভাসতে ভাসতে মেঘের রাজ্য পেরিয়ে গেলাম। পৌঁছে গেলাম অচেনা এক রাজ্যে। যেখানে আমি কোনোদিন যাইনি। আমার কিছুটা ভয় করছিলো। তখন শুরু হলো ঝড়ো হাওয়া। প্রবল বাতাসের তোড়ে আমার গোলাপ গাছ ধরে ভেসে থাকাটা আর সম্ভব হয়নি। আমার হাত ফসকে গেল। এরপর কী হয়েছে তা আমার জানা নেই। সত্যি বলছি, এরপরে কী হয়েছে আমি জানি না। তোমাদের এই শহরে আমি আসতে চাইনি। আমি আমার মাকে নিয়ে আমার গ্রামেই ভালো ছিলাম এবং আমি সেখানেই থাকতে চাই। টানা এই পর্যন্ত বলে থামলো হোসনা বানু।

পরিদের রাজ দরবারে হাজির গণ্যমান্য সভাসদগণ চুপচাপ হোসনা বানুর সব কথা শুনলো। ওর কথা শেষ হতেই একজন পরি বলল, তাই বলে আমাদের এই পরিস্থানেই এসে পড়তে হবে? আমাদের রাজ্যের তো একটা নিয়ম আছে। এই নিয়ম ভেঙে আজ পর্যন্ত কোনো মানুষের আসা সম্ভব হয়নি এখানে। আর তুমি কীভাবে চলে আসলে? এখন আমাদের এই কোকাব শহরের ঐতিহ্য, রীতি নীতি যদি পৃথিবীর মানুষ জেনে যায় তবে তো আমাদের শহরের নিয়ম ভাঙা হবে। একজন বয়স্ক জ্বীন পরিটাকে থামিয়ে দিলো। আর খুব দুঃখ করে বলল, আহারে, ছোট্ট মেয়েটির কী কষ্ট। সে তার প্রিয়ফুল গাছটার জন্য নিজের দেশ ছেড়ে এতো দূর চলে এলো। ওর কতটা কষ্ট হয়েছে, কতটা ক্লান্ত হয়েছে, তা না ভেবে শুধু নিজেদের কথা ভাবছো? এই আচরণ তো আমাদের রাজ্যের কাউকে শোভা পায় না। তাছাড়া মেয়েটা তো বলছে, যে ও ইচ্ছে করে এখানে আসে নাই। অদৃশ্য কেউ একজন ওর গাছসহ ওকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। তারপর ঝড়ের কবলে পড়ে এখানে পড়ে গেছে। অন্য একজন পরি বলল, কিন্তু কে করলো এমন কাজটা? তার অপরাধটাই এখানে প্রধান। সে শুধু এই ছোট্ট মেয়েটির গাছসহ মেয়েটাকেই তুলে আনেনি আমাদের পরিস্থানের নিয়ম ভঙ্গ করেছে। তাকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়া উচিত। এসময় কোকাব শহরের রাজা বলল, যেই করে থাক্ সেটা খুঁজে বের করতে হবে। এখন এই মেয়েটিকে সাহায্য করা আমাদের দরকার বলে মনে হচ্ছে। ডাকো রাজ জ্যোতিষীকে। তার গণনার আয়নায় দেখে নেয়া যাবে এতো বড়ো ধৃষ্টতা কার। সাথে সাথে হাজির করা হলো পরি রাজ্যের রাজ জ্যোতিষীকে।

পরি রাজ্যের রাজ জ্যোতিষী হোসনা বানুর চোখে চোখ রাখলেন। এরপর বললেন, একচোখা এক দৈত্যর কবলে পড়েছিলো মেয়েটি। যার বাগানে এখন কালো গোলাপের গাছটা আছে। সেই দৈত্য অদৃশ্য হবার মন্ত্র জানে। সে এই ছোট্ট মেয়ে হোসনা বানুর বাগান থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে কালো গোলাপের গাছ। আর ওকে ফেলে দিয়েছে এই কোকাব শহরে। তবে আনন্দের বিষয় হলো হোসনা বানু আমাদের শহরে আসায় এই শহরের পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যায়নি। কারণ নিয়ম এটাই যে, যদি কোনো পাপী বা অপরাধী মানুষ আমাদের পরি রাজ্যে প্রবেশ করে, তবেই এ রাজ্যের পবিত্রতা নষ্ট হবে। কিন্তু নিষ্পাপ কোনো শিশু এলে আমাদের পবিত্রতা অক্ষুণ্নই থাকবে। এই মেয়েটা যেহেতু অপরাধী বা পাপী নয়। তাই আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে আমাদের কোকাব শহর পবিত্র ও পরিষ্কার আছে। বরং এই মেয়েটার সাথে অন্যায় হয়েছে। পরিদের সম্রাট জ্যোতিষীর সব কথা শুনলেন। তারপর হোসনা বানুকে বললেন, তুমি চিন্তা করো না মেয়ে। আমি কথা দিচ্ছি যে তোমার হারানো কালো গোলাপ গাছ উদ্ধার করতে সব রকম সাহায্য করবো। তুমি ভয় পেও না। তুমি এখন আমাদের কোকাব শহরের অতিথি। তুমি চাইলে আমাদের শহরে বেড়াতে পারো। যখন ইচ্ছে হবে তখন চলে যাবে। আমার জ্বীনেরা পৌঁছে দেবে তোমায়। তার আগে তোমার গোলাপ গাছ উদ্ধারেও সাহায্য করবে। তবে একটা কথা দিতে হবে তোমায়, আমাদের কোকাব শহরের ঐতিহ্য সৌন্দর্য সব কিছু তুমি উপভোগ করবে কিন্তু বাইরের পৃথিবীর কারো কাছে বর্ণনা করতে পারবে না। কারণ আমাদের শহরের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো আমরা গোপন রাখতেই ভালোবাসি। সম্রাটের কথায় হোসনা বানু ভীষণ খুশি হলো। তার শর্ত মেনে নিয়ে দুজন পরির সাথে বেরিয়ে পরলো। পরি দুটো এতটাই সুন্দর যে হোসনা বানু তাদেরকে একটু ছুঁয়ে দেখতে চাইলো। পরির শরীর ছুঁয়ে ওর মনে হলো এতো নরম তুলতুলে শরীর সে কখনো দেখেনি। পরি দুটোর ডানায় কত যে রং তার শেষ নেই। তাকেও দুটো ডানা দেয়া হলো। হোসনা বানু নিজের ডানার ভর করে উড়ে বেড়াতে লাগলো দুজন টকটকে সুন্দর পরির সাথে। একটা দিন ও একটা রাত একটানা ঘুরে বেড়ালো স্বপ্নের মতো সুন্দর পরিদের রাজ্য কোকাব শহরে। কোনো ক্লান্তি আসলো না ওর কাছে। পরিস্থানের সবাই ওকে সম্মান করলো। আপ্যায়ন করলো। আরো কত আজব সুন্দর জিনিস যে সে দেখলো তা বলা যাচ্ছে না। কারণ হোসনা বানু পরিদের সম্রাটকে কথা দিয়েছে যে এই শহরের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের বর্ণনা কাউকে দেবে না।

তাই কোকাব শহরের গল্প এটুকুই থাক্। এখন বরং তোমাদেরকে একচোখা দৈত্যর কাছে নিয়ে যাই। হোসনা বানুর কোকাব শহর ভ্রমণ শেষ হলো। তারপর তার সাথে দুজন জ্বীনকে দিয়ে পাঠানো হলো দৈত্যপুরিতে। একজন জ্বীনের নাম ছালছাতুন। আর একজন জ্বীনের নাম দীলরাদুন। ছালছাতুন জ্বীনের পাখায় এতো শক্তি যে ছয় মাসের পথ সে ছয় ঘণ্টায় যেতে পারে। আর তার পাখা দিয়ে আড়াল করতে পারে সব ধরনের আঘাত। বিপদ যেটাই ঘটুক ছালছাতুন জ্বীন তার পাখা দিয়ে তা প্রতিহত করতে পারে। আর দীলরাদুন জ্বীন তার নিঃশ্বাসে আগুন তৈরি করতে পারে। সে চাইলে তার মুখ দিয়ে বের করতে পারে ড্রাগনের মতো আগুনের হলকা। যে আগুনে পুড়ে সব কয়লা হয়ে যায়। দীলরাদুন জ্বীন ও হোসনা বানু ছালছাতুন জ্বীনের পিঠে চড়ে খুব অল্প সময়েই পৌঁছে যায় দৈত্যপুরিতে। দৈত্যপুরিতে ভয়ানক সব দৈত্যর বাস। এখানেই থাকে একচোখা দৈত্য। দৈত্যপুরির উঁচু প্রাচীর ঘেরা একটা বাগানে প্রবেশ করলো ওরা। যদি ভুল না হয় তবে এটাই একচোখা দৈত্যের বাগান। বলল ছালছাতুন জ্বীন। বিশাল বাগানে ঢুকেই কালো গোলাপ গাছের খোঁজ করতে লাগলো হোসনা বানু। বাগানের একটা কর্নারে দেখতে পেলো অনেক প্রজাপতির ঝাঁক। আর নানা রকম পাখিদের কলরব। ওইদিকটাতেই ছুটে গেলো হোসনা বানু। আর পেয়ে গেলো ওর প্রিয় কালো গোলাপ গাছটা। গোলাপের সৌরভ ছড়িয়ে গেছে সারা বাগানে। হোসনা বানুর সাথে আসা জ্বীন দুজন বললো, জীবনে প্রথম আমরা এতো সুন্দর গোলাপ দেখলাম। এ গোলাপের গন্ধ ও সৌন্দর্যের কোনো তুলনা নেই। হোসনা বানু ওর কালো গোলাপ গাছটা তুলে নিতে গেলে তাকে বাঁধা দিলো বিশাল দুটো পাইথন সাপ। এ সাপ দুটোকে বাগানের পাহারায় রেখে নিজের ঘরে আরাম করছিলো একচোখা দৈত্য। পাইথন সাপ দুটো দুই দিক দিয়ে বিরাট ফণা তুলে এগিয়ে এলো হোসনা বানুর দিকে। হোসনা বানু গোলাপ গাছ তুলে নিতে ব্যস্ত। অন্যদিকে ওর কোনো নজর নেই। পাইথন দুটো প্রায় ওর ঘাড়ের কাছে চলে আসলো। এসময় দৌড়ে এসে ওকে আড়াল করে দাঁড়ালো জ্বীন ছালছাতুন। ছালছাতুন জ্বীনের পাখায় কামড় বসালো পাইথন। কিন্তু ওর শক্ত পাখার তেমন কিছুই ক্ষতি করতে পারলো না। আবার চেষ্টা করলো। লাভ হলো না। তখন সামনে এলো দীলরাদুন জ্বীন। এসেই গরম নিঃশ্বাস ছাড়তে লাগলো পাইথন সাপ দুটোর মুখে। প্রচণ্ড রকমের গরম বাতাসে পিছিয়ে গেলো ওরা। দীলরাদুন জ্বীন আবার ছাড়লো গরম বাতাস। আরো পিছিয়ে গেলো সাপ দুটো। আগুনের তাপে হিস হিসিয়ে উঠলো ওরা। ততক্ষণে হোসনা বানুর কাজ শেষ। মাটি থেকে উপড়ানো হয়ে গেছে ওর প্রিয় কালো গোলাপ গাছ। ঠিক সেই মুহূর্তে জেগে উঠলো দৈত্য। উঠেই ঘরের থেকে বাইরে আসতে আসতে বললো, কীসের এতো হট্টগোল দৈত্যপুরিতে? নিরিবিলিতে একটু ঘুমোতে পারছি না কেন? এসেই দেখলো দুজন জ্বীন আর একটা ছোট্ট মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর বাগানে। মেয়েটার হাতে কালো গোলাপ গাছ। হুংকার দিয়ে বললো, এতো বড়ো সাহস তোদের? আমার বাগানের গোলাপ গাছ চুরি করতে এসেছিস? দাঁড়া। দেখাচ্ছি মজা। হোসনা বানু বললো, কার গাছ নিয়ে বাহাদুরী দেখাচ্ছো শুনি? চোর তো তুমি। তুমি আমার গাছ চুরি করে এনেছো। আমরা সেটা ফিরিয়ে নিতে এলাম। এখন আমাদেরকেই চোর বলছো? তুমি একটা চোর। একচোখা চোর। আমার কালো গোলাপ গাছ চোর। হোসনা বানুর কথা শুনে হুংকার দিয়ে এগিয়ে গেলো দৈত্য। বললো, আমার বাগানে এসে আমাকেই চোর বলা? দাঁড়া, এখোনি তোদের দেখাচ্ছি মজা। এই তোরা করছিস কী? খেয়ে ফেল্ এই পুঁচকে মেয়েটাকে। পাইথন দুটোকে বললো দৈত্য।

পাইথন দুটো দৈত্যর আগমনে সাহস নিয়ে যেই সামনে আগালো, তখনই দীলরাদুন জ্বীন তীব্র আগুন ছুঁড়ে দিলো ওদের শরীরে। আগুনের হল্কায় খুব অল্প সময়েই পুড়ে মরে গেলো এক জোড়া পাইথন সাপ। দৈত্য শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো। কিন্তু সামনে এগোনোর সাহস পেলো না। দীলরাদুন জ্বীন তখন ঘুরে দাঁড়ালো দৈত্যর দিকে। দৈত্য হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেলো। কোথায় গেলো, জানতে চাইলো ছালছাতুন জ্বীন। কোথায় আবার যাবে, আগুনে পুড়ে মরার ভয়ে অদৃশ্য হয়ে পালিয়ে গেলো। বললো হোসনা বানু। দীলরাদুন জ্বীন করলো কী তখন জানো? একচোখা দৈত্যকে না পেয়ে ওর বাড়িতে দিলো আগুন জ্বেলে। একচোখা দৈত্যর বাড়ি দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগলো আগুনে। দীলরাদুন দৈত্য বললো, এটাই ওর শাস্তি। পাজি চোর একচোখা দৈত্যর শাস্তি নিশ্চিত হলো দৈত্যপুরিতে আগুন জ্বেলে। এরপর হোসনা বানুকে নিয়ে এলো পৃথিবীতে। পৌঁছে দিলো ওর গোলাপ বাগানে। হোসনা বানু পৌঁছে গেলো ওর প্রিয় বাগানে। পৌঁছে গিয়ে উপকারি জ্বীন দুজনকে ও উপহার দিলো ডাল সহ একটা কালো গোলাপ। বললো, এই গোলাপটা শুকিয়ে গেলেও ডালটা পুঁতে দিলে এটার থেকে গাছ হবে। সেই গাছের পরিচর্যা করলে সারা বছরই হতে থাকবে কালো গোলাপ।

গোলাপ ডাল উপহার পেয়ে জ্বীন দুজন ভীষণ খুশি হলো। তারা দুজন হোসনা বানুকে দিয়ে গেলো তাদের পাখার দু’টো ছোট্ট অংশ। আর বলে গেলো, যদি কখনো আকাশের উপরে কোনো বিপদে পড়ে তবে পাখা দুটো একটার সাথে অন্যটা ঘষা দেবে। আমরা চলে আসবো তোমায় সাহায্য করতে। তবে জমিনের উপরে আমাদের ডাকবে না। কারণ এখানে আমরা আমাদের সম্রাটের হুকুম ছাড়া আসতে পারি না। জ্বীন দুজন চলে গেলো। বাগানের পাশেই ওদের ঘরে অপেক্ষায় ছিলো ওর মা। হোসনা বানু কালো গোলাপ গাছটা বাগানে আগের মতো লাগিয়ে দিলো। তারপর ছুটে গেলো মায়ের কাছে।

এর মধ্যে কেটে গেছে অনেক দিন। লুলুশিয়া গ্রামের সবাই জড়ো হলো ওর আসার খবর শুনে। গ্রামবাসীরা ভীষণ খুশি হলো ওকে ফিরে পেয়ে। ওদের গ্রাম আবার ভরে গেলো হাসি আনন্দে। শুধু হোসনা বানু খুশি হতে পারলো না। কারণ এই সময়ে এই লুলুশিয়া গ্রামে ঘটে গেছে একটা ভয়ানক দুর্ঘটনা। আকাশ থেকে উজ্জল একটা নক্ষত্রের টুকরো খসে পড়েছে পৃথিবীতে। নক্ষত্রের টুকরোটা এই গ্রাম ঘেঁষে। তাই সেই নক্ষত্রের টুকরোর উজ্জ্বল আলোয় অন্ধ হয়ে গেছে এই গ্রামের অনেক মানুষ। সেই অন্ধ হয়ে যাওয়া মানুষের মধ্যে আছে হোসনা বানুর মা। ওর মা যে ওকে আর দেখতে পারছে না। পৃথিবীর কোনো আলোই আর সে দেখতে পারছে না। মেয়ের জন্য অপেক্ষায় আছে সে অনেক দিন। মেয়ে ফিরে আসায় সে ভীষণ খুশি। মায়েরা এমনই হয়। নিজের অনেক যন্ত্রণা ভুলে যান তারা সন্তানকে কাছে পেলে। কিন্তু মা এখন অন্ধ। হোসনা বানু তো এটা মানতেই পারছে না। সে তার মাকে সুস্থ করবেই। সেই সাথে সুস্থ করতে হবে এই গ্রামে অন্ধ হয়ে যাওয়া সবাইকে। যদিও সেটা খুব একটা সহজ কাজ না। তবে যত কঠিনই হোক হোসনা বানু তার মাকে সুস্থ করার প্রতিজ্ঞা করলো। হোসনা বানু কি পেরেছিলো তার মা সহ গ্রামের অন্ধ মানুষের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে? এখনি সেটা বলা যাবে না। সে জন্য তাকে যেতে হবে নতুন কোনো অভিযানে। মায়ের অন্ধ চোখ সারিয়ে তোলার সেই দুঃসাধ্য অভিযানের গল্প জানতে আমরা যাবো পরের পর্বে। (চলবে..)