সোজা আঙ্কেল-২

অগ্রপথিক মির্জা সিফাত আহমেদ -জামালপুর জিলা স্কুল, জামালপুর

0
40

পত্রিকার হেডলাইন, তিনজন ভয়ানক ছিনতাইকারীকে ধরলেন সাহসী গোয়েন্দা সোজা হাওলাদার। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন আর কারো কথা বলছি না বলছি আমাদের পরিচিত সেই সোজা আঙ্কেলের কথা ।প্রথমবার খবরটি পড়ে অন্যদের মতো আমিও অবাক হয়েছিলাম । তাই রহস্যের জাল খুলতে আমি আর সুমন মিলে গিয়েছিলাম সোজা আঙ্কেলের বাসায়। আঙ্কেলকে প্রশ্ন করতেই তিনি তার সেই কাহিনী বলা শুরু করলেন, দিনটা ছিল রবিবার আঙ্কেল তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যাওয়ার জন্য সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লেন, হঠাৎ তিনি লক্ষ করলেন যে তার বাড়ির ঠিক সামনেই একটা সিএনজি দাড়িয়ে আছে ।আঙ্কেলের বেশ সুবিধাই হলো তিনি ভাড়া মিটিয়ে উঠে পড়লেন সিএনজিতে । কিছুদূর সিএনজি যাওয়ার পর আঙ্কেল লক্ষ করলেন যে সিএনজিটা একটু অন্যরকম,
সাধারণ সিএনজির মতো এইটাতে ড্রাইভার আর যাত্রীর মাঝে থাকা লোহার সিকের পৃথককারী অংশটা নেই। কিছুদূর যাওয়ার পর আরও দুজন যাত্রী উঠল সিএনজিতে । আবারও নিজ গতিতে চলতে লাগল সিএনজি। সিএনজি তখন বিশ^রোডে আশে পাশে তখন খুব একটা বাড়ি ঘর দেখা যাচ্ছে না । আঙ্কেল পানি খাওয়ার জন্য তার ছোট্ট ব্যাগ থেকে সবেমাত্র পানির বোতল বের করেছন আর হঠাৎ করেই চালকের ইশারায় আঙ্কেলের পাশে বসা লোকটি একটা কাটা চামচ বের আঙ্কেলের দিকে তাক করে তারপর লোকটা একটা ব্যাগ বের করে বলল, এই তোর চোখ আর কিডনি দুটো বের করে এই ব্যাগে রাখ তাহলেই তোকে ছেড়ে দিব,নইলে…. । আঙ্কেল হাসবেন না কাদবেন সেটা বুঝতে পারছিলেন না । হঠাৎ করেই চালক বলে উঠল,কোন বলদরে দলে রাখছি আমি,এই বলদ চোখ কিডনি পরে নিবি এখন ওর মানিব্যাগ আর মোবাইলটা নে তো আর কাটা চামচ রাইখা তোর পেছনে থাকা কাচেঁর ভাঙ্গা বোতলটা নিয়ে ওর গলায় ধর । লোকটা ড্রাইভারের কথা শুনে পেছনে থাকা কাচেঁর ভাঙ্গা বোতল নিয়ে আঙ্কেলের গলায় ধরে । ভয়ে আতঙ্কে আঙ্কেলের হাত থেকে পড়ে যায় পানির বোতল, এই বোতল পরার বিষয়টি খেয়াল করেনি পাশে বসা লোকটি । পরে যাওয়া বোতল থেকে পানি বেরিয়ে ছড়িয়ে পরে সারা সিএনজি । আঙ্কেলের পাশে বসা লোকটি বলে ওঠে এই ওস্তাদ এই লুলু তো ভয় পায়ে যাতা অবস্থা কইরা দিছে তারাতারি গাড়ি থামা ও ।এ কথা শুনে ড্রাইভার তারাতারি গাড়ি রাস্তার পাশে দাড়ঁ করাল । সিএনজিটা থামল একটা ছোট ব্রীজের উপর। সিএনজিটা থামতেই আঙ্কেলের পাশে বসা লোকটা নেমে পড়ে তাড়াতাড়ি তারপর ছোট্ট ব্রিজটার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। আঙ্কেলও তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে ধাক্কা মারে লোকটাকে আর তার ধাক্কায় লোকটা পড়ে পাশের ছোট ডোবা। লোকটার চিৎকারে ছুটে আসে ড্রাইভার আর অন্য লোকটা। দূরের একটা মাঠ থেকে কয়েকজন কৃষককেও ছুটে আসতে দেখা যায় । আঙ্কেল কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভারি কিছুর আঘাতে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। কিছুক্ষণ পর যখন আঙ্কেলের জ্ঞান ফিরে আসে তখন তিনি রাস্তায় । লোকগুলো নিজেদের মাঝে বলাবলি করছিল । আরে ওস্তাদ আমরা ভুল বান্দারে ধরছি এর কাছ থেকে তো ৫০০ টেহা আর একটা ভাঙ্গা মোবাইল ছাড়া আর কিছুই নাই উল্টা ওর জন্য মুখলেসরে রাইখা আসতে হইল। ড্রাইভার,সমস্যা নাই চাষাগুলা ওরে তুইলা বাচাঁয়া নিবনি আর ওর সাথে পরে যোগাযোগ করমুনি,এমনিতেও কোনো কামের না বলদ একটা। এতক্ষণে আঙ্কেল বুঝতে পারলেন যে একদল ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েছেন তিনি। কি আর করার,কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে তিনি ভাবতে লাগলেন কি করা যায় । আঙ্কেলের মাথার পেছনটা তখন ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে হঠাৎ ড্রাইভারের সিটের পাশে পড়ে থাকা একটা ছুরির দিকে চোখ গেল আঙ্কেলের । তিনি খপ করে ছুরিটা হাতে তুলে নিয়ে ধরলেন ড্রাইভারের গলায় । ছুরি হাতে থাকায় আঙ্কেলের মাঝে তখন অনেক সাহস এসে গেছে তিনি বাজখাই গলায় ড্রাইভারকে বললেন,এই ব্যাটা চুপচাপ আমার কথা মতো গাড়ি চালা নইলে …
সিএনজির ড্রাইভারটা ও তখন ভয় পেয়ে গেছে সে চুপচাপ চলতে লাগল । সামনের মোড়ে হাইওয়ে পুলিশের একটা গাড়ি দেখা গেল আর আঙ্কেলের চোখ দুটোও চকচক করে উঠল।তার কথা মতো ড্রাইভার গাড়ি থামাল পুলিশের গাড়ির সামনে। আঙ্কেল সিএনজি থেকে নেমে দৌঁড়ে গেলেন পুলিশের গাড়ির কাছে আর সব খুলে বললেন পুলিশকে । পুলিশ যেই না ওদের ধরতে যাবে ড্রাইভারের পাশে থাকা লোকটা দিল এক দৌঁড়।আঙ্কেলও দৌঁড়াতে লাগলেন লোকটার পেছনে আর খানিক দৌড়েঁ ধরে ফেললেন লোকটাকে । আঙ্কেলের হাতে তখনও ছুরিটা ছিল, রাগের মাথায় তিনি ছুরি দিয়ে লোকটার পেটে আঘাত করেন । খানিকের জন্য ভয় পেলেও পরক্ষণে তিনি হেসে ফেলেন,তিনি দেখেন যে লোকটার পেটের কাটা অংশ দিয়ে রক্ত বের না হয়ে প্রথমে দুটো সোনার হার তারপর কিছু টাকা আর মোবাইল পড়তে লাগল । র্অথাৎ এই ছিনতাইকারীরা তাদের পেটের উপর একটা বিশেষ ব্যাগ লাগিয়ে ঘুরত আর ছিনতাই করা জিনিসগুলো ওটার ফেতরে রাখত যাতে কেউ টের না পায় । পুলিশ তো এসব ঘটনা দেখে হতবাক,তারা ধারনা করে নেয় যে আমাদের এই সোজা আঙ্কেল একজন গোয়েন্দা আর তিনি পরিকল্পিতভাবে এদের ধরেছেন । আর বাকিটা তো আপনরাই জানেন ।