সংগ্রামী রাজার তিন পুত্র

আব্দুর রাজ্জাক

0
76

বহুকাল আগের কথা। উজানতলী গ্রামে এক সংগ্রামী মানিক রাজা ছিলেন। তিনি তার আদর্শ বিচার আর শাসন দিয়ে অনেক রাজ্যে শাসন গড়ে তুলেছিলেন। রাজার একটি মাত্র রানীর ছিল তিন পুত্র। বড় পুত্রের নাম শাহজাদা স¤্রাট, দ্বিতীয় পুত্র শাহজাদা আকবর আর ছোট পুত্রের নাম শাহজাদা আশিক। রাজার যখন বৃদ্ধ জীবন, তখন তার তিন ছেলে রাজ্যের কাজে সাহায্য করতে শুরু করল। তিন ছেলের চেহারা অনেকটা একই রকম।
হঠাৎ একদিন এক বৃদ্ধ কেঁদে কেঁদে রাজার কাছে এলো। এসে রাজার কাছে বসে আরো জোরে কাঁদতে শুরু করল। তার কান্না দেখে রাজ্যের সবাই ছুটে এলো। রাজাকে সেই বৃদ্ধ মানুষটা বলল-
রাজা মশাই আমাকে রক্ষা করুন, আমাকে রক্ষা করুন!
তার এমন কান্নার মাঝে কথা বলা শুনে ঘর থেকে রাজার তিন পুত্র ছুটে এলো।
রাজা মশাই তখন বৃদ্ধ মানুষটার ঘাড়ে হাত রেখে বললেন,
তোমার কী হয়েছে আমাকে সব খুলে বলো?
রাজার কথা শুনে বৃদ্ধ বলল, রাজা মশাই দেশে কি নির্যাতনের আইন নেই? কেন আমার মেয়েটি বারবার স্বামীর হাতে মার খেয়ে ঘরে ফিরে! জানেন একটা মাত্র মেয়ে আমার কিন্তু জামাই পেলাম নেশাখোর! প্রতিদিন কোনো-না-কোনো দিকে একটু ভুল করলে মেয়েটাকে মেরে ফেলে মাটিতে রাখে। বলুন রাজা মশাই, আমাদের ঘরের যে বউ সে-ও ভুল করে কিন্তু আমরা তো মারামারি করি না।
এই কথা বলে সেই বৃদ্ধ কেঁদে কেঁদে দুচোখ ভাসিয়ে ফেলছে। বৃদ্ধের কান্না দেখে রাজার তিন পুত্র সাথে সাথে বৃদ্ধকে নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গেল! সেখানে কোনো কথা ছাড়াই তিনজন মিলে মারতে শুরু করল বৃদ্ধের মেয়ের জামাইকে।
জামাইকে মেরে রক্তাক্ত করে বাড়ির সামনের এক গর্তে ফেলে দিলো তারা। সারা গ্রামের মানুষ ছুটে এলো। গর্তে কোনো পানি ছিল না। তিনজন গর্তের পাড়ে বসে তাকে প্রশ্ন করলÑ তুমি কি আজ তোমার বউকে মেরেছ?
সে জবাব দিলো, হ্যাঁ মেরেছি, কিন্তু তোমরা কে বলার?
তিনজন গর্জে উঠে বলল, আমরা তিন রাজপুত্র।
এ কথা শুনে গ্রামের সবাই অবাক হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর রাজার বড় ছেলে স¤্রাট বলে উঠল, একটা মেয়ে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে তোমার বাড়িতে এসেছে। আর তুমি নিজ বাড়িতে থেকে স্বাধীনভাবে মেয়েটাকে মেরে ফেলে রাখো। আজ তোমাকেও এই গর্তের ভেতরে পাঠালাম। দেখি কেমন লাগে তোমার। এই বলে তারা বসে পড়ল। একটু পর গর্ত থেকে চিৎকার এলো সাপ সাপ বলে। সবাই গর্তের মুখ দিয়ে দেখছে সাপ এসে তার সামনে বসে আছে। একবার ছুটে আসে তার কাছে আবার ছোটে অন্য দিকে। তখন শাহজাদা স¤্রাট আবারো তার দিকে মুখ করে বলেÑ তুমি যেমন এই গর্তের ঘরে সাপের অত্যাচার দেখছ একটা মেয়েও ঠিক তেমনি তোমার অত্যাচার দেখে, তোমার আঘাত সহ্য করে, কিন্তু তবুও তুমি বোঝো না তাকে!
গর্ত থেকে সে বলে উঠল, বাঁচাও কেউ আমাকে, সাপটা আমাকে মেরে ফেলবে!
তখন শাহজাদা আকবর বলে উঠল, এই গর্তের মাঝে তুমি যেভাবে চিৎকার করছ ঠিক তেমনি তোমার আঘাতে তোমার ভয়ে তোমার স্ত্রীও চিৎকার করত কিন্তু তুমি তাকে মেরেই যেতে।
গর্ত থেকে সে কেঁদে কেঁদে বলে-
আর কখনো আমি আমার বউকে আঘাত করব না। এমনকি কোনো মানুষকেও আঘাত করব না, নেশা করাও ছেড়ে দেবো আর সবার সাথে ভালো হয়ে চলব। তার এমন কথা শুনে গ্রামের সবাই মিলে গর্ত থেকে তাকে টেনে উপরে ওঠাল। ওপরে উঠে সাথে সাথে সে রাজার তিন পুত্রের কাছে এসে হাতে পায়ে ধরে মাফ চেয়ে বলল, আর কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করব না। স্ত্রীকেও কখনো মারধর করব না। আজ থেকে খুব ভালো হয়ে চলব। গ্রামের সবাই তার কথা শুনে খুব খুশি হলো। আর সবাই দেখলো সংগ্রামী রাজার তিন পুত্রের সমাধান। এভাবে শুধু ওই জামাই-ই নয়! এর পর থেকে এলাকার সবাই খুব ভালো হয়ে গেল। এভাবেই তিন পুত্র-বাবার মতো আদর্শবান হয়ে বেড়ে উঠল।

শিক্ষার্থী, নওগাঁ সরকারি কলেজ