নিয়ত

মো: বোরহান উদ্দিন সুমন

0
38

আদিল ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখলো বাবা পাশে নেই, সেও উঠে পড়লো, আদিলের বাবা কালাম সাহেব বাইরে ওজু করছে, সেও বাবার সাথে ওজু করে নিলো, বাবার সাথে নামাজ পড়তে নিয়মিত মসজিদে যায় সে, মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে কিন্তু তার মসজিদে যেতে নাকি খুবই ভালো লাগে তার। ফজরের নামাজ শেষ করে বাবার হাত ধরে বাসার পথে রওনা দিলো আদিল। বাবাকে বলল, বাবা আমাদের গরু কখন কিনবা, ঈদ তো এসে গেলো, রোহান মুনতাহা ইকরা এবং আহম্মদদের গরুও কেনা শেষ।
– ইনশাল্লাহ বাবা আমি আজকে হাটে যাবো, আমার তো এত দিন অফিস ছিলো।
– বাবা আমিও যাবো তোমার সাথে হাটে।
– না বাবা তোমাকে যেতে হবে না, ওখানে অনেক ভিড় হয়, অনেক মানুষের মাঝে তুমি হারিয়ে যাবে।
– না-না বাবা আমি যাবোই, আমি তোমার হাত ধরে থাকবো।
কালাম সাহেব ছেলের এমন আবদারে আর না করলেন না, বিকেলে ছেলেকে নিয়ে চললেন গরুর হাটে, সন্ধ্যায় গরু কিনে বাসায় ফিরলেন, আদিলের মন খারাপ, গরুটা পছন্দ হয়নি তার, সে বাবাকে বলেছে রোহান মেহা ইকরাদের গরুগুলো অনেক বড় আর তাদের টা ছোট, বাবা ওকে বুঝিয়েছেন, কুরআন এবং হাদিসের আলোকে বুঝিয়েছেন বলেই সে মেনে নিয়েছে, তাই এখন আর তার খারাপ লাগছে না। সে তার বন্ধুদেরকে জবাব দিতে পারবে, পরের দিন বিকেলে বন্ধুদের সাথে খেলতে গেল সে, এরপর একে অন্যের গরু নিয়ে কথা বলা শুরু করলো, কার গরু কেমন দেখতে।
রোহান বলল, আমাদের গরুর শিং দেখেছিস? একদম ‘তলোয়ার’এর মতো। তোদের গরুকে একটা গুঁতা দিলেই মাথায় ফুটা হয়ে যাবে।
মুনতাহা বলল, আরে, তোদের গরুতো সাদা। আর সাদা মানে গাধা! আমাদের গরু কালো, কালো মানে ভাল।
ইকরা বলল, তোদের গরু রোগা! মাংস নাই! খালি হাড্ডি!
আর আহম্মদ বলে, আর তোদের গরু বাট্টু! আমাদের গরু তোদেরটার ওপর দিয়ে হেঁটে চলে যাবে!
আদিল ওদের কথা গুলো শুনে মন খারাপ করলো না, সে তার বাবার কথা গুলো ওদের কে শুনিয়ে দিলো,সে বললো শুনো বন্ধুরা কুরবানির গরু নিয়ে এই ধরনের কথা বলা ঠিক না, এই কুরবানি তো একমাত্র আল্লাহর জন্যে, কার গরু মোটা কার গরু বড় কিংবা ছোট তিনি সেটা দেখবেন না, তিনি দেখবেন সকলের নিয়ত, মন থেকে যার যা সাধ্য অনুযায়ী কুরবানি দিবে সেটাই আল্লাহর রাস্তায় কবুল হবে, আর সেটা হতে হবে হালাল রুজির মধ্যেমে,সকলেই ওর কথা শুনে তাদের ভুল বুঝতে পারলো, খেলার সাথিদের মধ্যে আজকে শিহাব এবং মামুন আসেনি, রোহান বলল ওদের কুরবানির গরু কিনেনি তাই হয়তো ওদের মন খারাপের কারণে খেলতে আসেনি, কাল ঈদ তাই আজকে খেলাধুলা তাড়াতাড়ি শেষ করে সবাই সবার বাসায় চলে গেলো।
ঈদের নামাজ পড়ে আদিল তার বাবার সাথে গরু জবাই দেখতে গেল, গরু কে জবাই করতে দেখে সে খুব কষ্ট পেল, কিন্তু বাবা বলেছেন তা তো আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ জন্যে কুরবানি, তাই সে আর মন খারাপ করেনি, বাবা গোশত ভাগ করে যখন গরিবদের ভাগেরগুলো দিয়ে বাকি গোশতগুলো বাসায় নিয়ে এলো তখন আদিলের মনে পড়ে গেল শিহাব এবং মামুনদের কথা, ওরা তো কুরবানি দেয়নি, ওরা তো গোশতও খেতে পারবে না। সে বাবাকে বলে তার বন্ধুদের ও গোশত দেয়ার কথা, তা না হলে সে গোশত খাবে না, কালাম সাহেব ছেলের এই আবদারে না তো করেননি বরং খুশি হলেন, আদিল কে সাথে নিয়ে শিহাব আর মামুনদের বাসায় গোশত দিতে গেলেন, ওরা আদি কে দেখে যতটা না খুশি হলো গোশত দেখে আরও বেশি খুশি হলো, আদিলের মন এখন অনেক বেশি খুশি, সে বন্ধুদের কে গোশত দিতে পেরেছে, সে এবার বাসায় গিয়ে গোশত রুটি খাবে।