প্রতিদিন দুই বেণী করে বাবার মোটরসাইকেলে চড়ে স্কুলে আসা মেয়েটার আসল নাম সামিরা। পড়ে ক্লাস থ্রিতে। ক্লাস টু থেকে থ্রিতে উঠে বিশালসংখ্যক ছাত্রীর সাথে কম্পিটিশন করে সরকারি গার্লস স্কুলে অ্যাডমিশন নিয়েছে। এর আগে সে একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ত। নতুন স্কুলে গিয়েই ওর নাম পাল্টে ফেলেছে। ওর কাছে মনে হয় সামিরা নামটা গ্রাম্য নাম। তাই সামিরা উল্টে নাম রেখেছে রামিসা। এতেই নামটা বেশ আধুনিক হয়ে যায় বলে মনে হয়েছে তার।
রামিসার পড়াশোনার থেকে খেলাধুলাতেই বেশি আগ্রহ। ভর্তি পরীক্ষার পড়াশোনার চাপে খেলাধুলা প্রায় ভুলেই গেছে। ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকা অনুযায়ী ক্লাসে তার রোল নম্বর হয়েছে সাঁইত্রিশ। এখন জানুয়ারির প্রথম দিকেই শুরু হয়েছে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। খেলাধুলা ভুলতে বসায় এ নিয়ে রামিসার খুব টেনশন। মা বলেন, পরীক্ষার সময় টেনশন করো না, খেলার সময় এতো টেনশন কেন?
দেখতে দেখতে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলে এলো। দৌড় প্রতিযোগিতায় বাছাইয়ে টিকতে পারলেও চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় আর পুরস্কার জিততে পারল না। কারণ প্রথম দৌড় দিয়েই তার সে কী পায়ে ব্যথা! পরের দিন শুক্রবার বলে রক্ষা। তেল মালিশ করে, গরম পানির সেঁক দিয়ে তবে ব্যথা কমলো। শনিবারে হলো ব্যাঙলাফ। এতে এগারো জনের মধ্যে বাছাই পর্বে চারজন নেয়া হলো। কোনোরকম চতুর্থ হয়ে রামিসা চূড়ান্ত খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেল। ফাইনাল কম্পিটিশনে সে পুরস্কার জিততে খুব মনোযোগ দিয়ে খেলল। মনে মনে আল্ল­াহর কাছে দোয়াও করতে থাকল। আগের স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী কম থাকায়ই মনে হয় রামিসা সব সময় পুরস্কার জিতত। আজ যে কী হবে! শেষ পর্যন্ত সে অবাক হয়ে লক্ষ করল, সে প্রথম হয়ে গেছে! তারপর রামিসার খুশি আর দেখে কে? এই স্কুলে কম্পিটিশন বেশি বলে অনেক কষ্টে হলেও সে পুরস্কার জিতেছে। রামিসার মনে হল, একটু কষ্ট করলে পড়াশোনায়ও আগের স্কুলের মতো প্রথম হওয়া নিশ্চয়ই অসম্ভব হবে না।

পঞ্চম শ্রেণি, সরকারি অগ্রগামী বালিকা
উচ্চবিদ্যালয়, সিলেট