সিংহ ও দুষ্টু শিয়াল

ইমরান খান রাজ

0
66

এক বনে বাস করতো দুষ্টু এক শিয়াল। সে ছিল মিথ্যাবাদী আর অনেকটা চালাক। সে সবসময় বনের অন্য পশুপাখিকে বোকা বানাতো এবং তাদের মাংস খেয়ে পেট পুরো করতো। এভাবে চলতে চলতে বনের বেশিরভাগ পশুপাখি বিলীন হয়ে যেতে লাগলো! দুষ্টু শেয়ালের এমন কর্মকা-ে অন্যান্য পশুপাখি তাকে অবিশ্বাস করতো ও এড়িয়ে চলতো। আর এতে সেই শেয়ালের দুশ্চিন্তা বেড়ে গেল। কারণ খাবার খেতে না পারলে, সে না খেয়েই মরে যাবে! সেজন্য দুষ্টু শিয়াল তার মাথায় আনলো এক নতুন বুদ্ধি!

বনের রাজা সিংহের সাথে দেখা করে এক নতুন চুক্তি করলো সে। বিভিন্ন পশুপাখির বাড়ির সন্ধান সে সিংহকে দেবে। বিনিময়ে সিংহের শিকার করা খাবার তাকে অর্ধেক দিতে হবে। সিংহ অতটা চালাক না হলেও মাংস পাওয়ার লোভে শেয়ালের চুক্তিতে রাজি হয়ে গেল।
একদিন হাঁপাতে হাঁপাতে শিয়াল প-িত চলে এলো সিংহের গুহায়। ঘুমিয়ে থাকা ক্ষুধার্ত সিংহকে ডেকে তুলে জানায়, বনের গভীরে এক পাহাড়ের পেছনে বেশকিছু সুন্দর হরিণ বাস করে। সে যদি এখনই রওনা হয় তবে সব কটা হরিণ শিকার করতে পারবে। শেয়ালের এমন খবর শুনে সিংহ মশাই ঘুমন্ত শরীরে শক্তি ফিরে পেলো। সাথে সাথেই শেয়ালের সঙ্গে রওনা হলো হরিণ শিকারের উদ্দেশ্যে। সিংহ সামনে আর তার পেছনেই শিয়াল প-িত মনের খুশিতে হেঁটে চলেছে। শিয়াল মনে মনে ভাবছে আজ অনেকদিন পর সুস্বাদু হরিণের মাংস খাবে! সিংহকে দিয়ে সবগুলো হরিণ শিকারের পর অর্ধেক মাংস ভাগ পাবে সে। মাংসগুলো অনেক দিন পর্যন্ত চলে যাবে তার।
অনেক দূর হাঁটার পর দূরে একটা পাহাড় দেখা গেল। এদিকে হাঁটতে হাঁটতে সিংহের প্রচুর ক্ষুধা লেগে গেল। পেছন থেকে শিয়াল প-িত বলে উঠল, সিংহ মশাই আপনার আর কষ্ট করে হাঁটতে হবে না। আমরা চলে এসেছি। আপনার সামনে যে পাহাড়টা দেখতে পাচ্ছেন, তার পেছনেই বাস করে হরিণগুলো। আপনি চুপচাপ এগিয়ে গিয়ে ওদের ওপর আক্রমণ করুন। শিকার করা হয়ে গেলে আমাকে ডাকবেন। আমি আমার ভাগের অংশ বুঝে নেবো।
এর পর সিংহ নিশ্চুপ হয়ে আস্তে আস্তে পাহাড়ের পেছনে যায়। গিয়ে তো সিংহ অবাক! নেই কোনো হরিণ আর নেই কোনো মাংস! পুরো জায়গা ফাঁকা। সিংহ বুঝতে পারে যে, হয়তো হরিণগুলো খবর পেয়ে আগেই ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। ক্ষুধার্ত সিংহ এই ঘটনা দেখে খুব রেগে গেল শিয়ালের ওপর। এবার সিংহ নতুন এক ফন্দি করল। সে ওখান থেকে বেরিয়ে শিয়ালের কাছে এসে বলে, ধন্যবাদ শিয়াল প-িত। আজ তোর জন্য অনেকগুলো হরিণ শিকার করতে পেরেছি। আমি পেটভরে খেয়েছি মাংস। তুই এসে তোর ভাগেরটা নিয়ে যা। এই খবরে দুষ্টু শিয়াল খুব খুশি হয়ে সিংহের সাথে পাহাড়ের পেছনে হরিণের বাসার দিকে যায়। গিয়ে দেখে সেখানটা পুরো খালি পড়ে আছে। না আছে কোনো হরিণ আর না আছে কোনো মাংস! এটা দেখার পর সিংহকে তার ভাগের অংশের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার জন্য যেই পেছনে তাকায়, অমনি ক্ষুধার্ত সিংহটা এক থাবায় শিকার করে ফেলে দুষ্টু শিয়ালটাকে। তার পর শিয়ালটাকে পুরোপুরি খেয়ে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে বনের রাজা সিংহ।
(এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়, অতি লোভ এবং মিথ্যা বলা মোটেও উচিত নয়। লোভের ফলে মৃত্যু হয়। আর অন্যের জন্য গর্ত করলে সেই গর্তে নিজেকেই পড়ে মরতে হয়।)