গলফের মাঠটি যেন দৃষ্টিনন্দন পার্ক। প্রায় প্রতিদিন ঘাস কেটেছেঁটে ছোট রাখা হয়। পশ্চিমে দেয়ালের ওপারে যশোর বিমানবন্দর রানওয়ে। ফাগুন মাস এলেই উত্তরের লেকটির পানি শুকিয়ে নিচে নেমে যায়। এখানেই চরে বেড়ায় একঝাঁক হাঁস। হাঁসগুলো বেশ দূর থেকে আসে এখানে। দল বেধে চরে বেড়ায়। পাড়ে উঠে পালক চুলকায়, আবার অনেক সময় পালকে ঠোঁটে গুঁজে বিশ্রামও করতে দেখা যায়।
কয়েকটি কাক লেকের চার পাশে ঘুরঘুর করে। ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকায়, দুপায়ে হাঁটে। কখনো কখনো ছোট আমগাছটির ডালে চুপচাপ বসে থাকে। হাঁসগুলো এখানে দিন পার করে আবার ফিরে যায় নির্দিষ্ট বাড়িতে। ওদের প্রায়ই এক সারিতে যেতে দেখা যায়।
লেকের পাড়ে মাঝেমধ্যে দু-একটা হাঁস ডিম পাড়ে। সবুজ ঘাসের বুকে সাদা ডিম যেন ঝকঝক করে। ঝুপড়ি আমগাছটির ডালে বসে থাকা কাকটি ঘাসের বুকে ডিম দেখলেই নিচে নেমে আসে। খুশিতে কাকের চোখ আনন্দে হেসে ওঠে। মাথার তুলনায় বড় ঠোঁটটি দিয়ে ঠোকর বসিয়ে দেয়। ঠোট ঢুকিয়ে দেয় ডিমের ভেতর। চুকচুক করে খেয়ে নেয় খোসার ভেতরের অংশ। দু-তিনটা কাক একত্র হলেই বাধে বিপত্তি। ডিম ফেলে নিজেদের মাঝে শুরু হয় বোঝাপড়া। কোনো কাক ডিম খেতে থাকলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখে ডিম পাড়া হাঁসটি। কিছুই করার থাকে না ওর।
কেডি বয় সজল। ক্যাম্পস্টুল বিছিয়ে বসে আছে ছাতার মতো দেবদারু গাছের নিচে। সজলের স্যার সবে ওয়াশরুমে ঢুকেছে, ফিরতে বেশ দেরি হবে। হঠাৎ সজলের চোখ গিয়ে পড়ে লেকের পাড়ে একটি কাকের দিকে। একটি ডিম ঠোকর দিচ্ছে কাকটি। ডিমটি আকারে একটু ছোট। ঠোঁট বড় করে ওপরে তুলছে আবার ফেলছে। আশ্চর্য! অবিরাম ঠোকর দেয়ার পরও ফাটছে না ডিমটি!
উঠে দাঁড়ায় সজল। লেকের দিকে এগিয়ে আসে। সজলকে এগোতে দেখেই সতর্ক হয় কাকটি। ঠোঁট বড় করে ধরে রাখে ডিমটি। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নেয় সজলকে।
থেমে যায় সজল। আর একটু কাছে গেলেই মুখের ডিমটি নিয়ে উড়াল দেবে। খুব হাসি পায় সজলের। মুখের ডিমটা নিচে রাখলে দুই হাতে তালি দেয় সে। ওটা রেখেই উড়াল দেয় কাকটা। আসলে ওটা ডিম নয়, গতকালের কেনা নতুন একটি বল। বোকা কাকটি ডিম ভেবে ঠুকিয়েই যাচ্ছিল।
কাছে গিয়ে বলটা তুলে নেয় সজল। বোকা কাককে তিরস্কার করতে থাকে, আসল নকল না বোঝার জন্য। আসল নকল না বুঝলে অনেক পরিশ্রমও ব্যর্থ হয়। কিছু ধাতুর রং সোনার মতো হলেও সোনা নয়। অনেক বন্ধুও তেমনি হয়। সুন্দর চেহারার হলেও সবাই ভালো মনের না-ও হতে পারে, চিনতে হবে নিজেকেই।