ফড়িং ছানাগুলো

নাবিউল হাসান

0
46

হাউমাউ করে কানড়বা করছে ফড়িং ছানাগুলো। বড্ড খিদে পেয়েছে তাদের। দুই ঘণ্টা পাড় হয়ে গেল। মা ফড়িংটা আসছেনা এখনো। মায়ের পরশ ছাড়া শান্তি নেই পৃথিবীতে। সব শিশুদের মা থাকবে, তাদের বাচ্চাদের আদর করবে, মজার মজার গল্প বলবে, মাঝে মাঝে গান শোনাবে আর বাচ্চারা তা কান পেতে শুনবে এটাই তো স্বাভাবিক। সবুজ মাঠের শেষ দিগন্তে একটি সরষে ফুলের জমি। পাশেই লিয়নদের বাসা। উঠানে খেলা করছিল হৃদয়, সিরাজ, মৌ এবং মুনিড়ব। সরষে ক্ষেতে কয়েকটা
ফড়িংকে ওড়াউড়ি করতে দেখে দৌড়ে ছুটে এল তারা। লিয়ন ছোট মানুষ। মা তাকে কোলে নিয়ে আদর করে নুডুল্স খাওয়াচ্ছিল। মুনিড়বদের বাইরে আসতে দেখে সেও আসার জন্য ছটফট করে। এক সময় তাকে ছেড়ে দেয় তার মা। ফুলের উপর বসে ছিল লাল রঙের একটা ফড়িং। সবাইকে চুপ থাকতে বললো হৃদয়। আস্তে আস্তে করে এগুতে থাকলো ফড়িংটার দিকে। খপ করে ধরে ফেলল একসময়। সবাই হুররে…. বলে চিৎকার দিয়ে উঠল। তাদের হৈ হুল্লো আওয়াজ শুনে ছুটে এল শিমুল, রিয়াদ, মনির, শিউলি এবং আসমা। ফড়িংটি দেখতে খুব সুন্দর, চল এটাকে নিয়ে খেলা করি, সবাই বলল হৃদয়। এই এটাকে একটা সুতা দিয়ে বাঁধলে কেমন
হয়, বলল মৌ। লেজের সাথে বাঁধতে হবে ওকে। তারপর দেখবে কেমন বিমানের মত উড়াউড়ি করে বলল শিমুল। রিয়াদ প্রস্তাব দিল, তার চেয়ে আমরা একে পলিথিন ব্যাগে আটকে রেখে আরো কয়েকটা ধরলে কেমন হয়। ঠিক বলেছ তুমি, সবাই একযোগে সায় দিল।
পলিথিন ব্যাগে ফড়িংটিকে ভরে পেয়ারা গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখল তারা। তারপর সবাই মিলে নামলো সরষে ক্ষেতে। একযোগে খোঁজাখুঁজি করছিল ফড়িংগুলোকে। দুয়েকটা এখানে সেখানে বসছিল কিন্তু ধরতে পারছিলনা কেউ। উড়ে চলে যাচ্ছিল সঙ্গে সঙ্গে। সরষে গাছগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছিল। তাই সবাইকে সরষে ক্ষেত থেকে উঠে আসতে বলল লিয়নের আব্বু। লিয়ন একটি ফড়িংয়ের জন্য কানড়বাকাটি করছিল। এগিয়ে আসল তার আব্বু। কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর ধরে ফেলল একটি ফড়িং। আমাকেও একটা ধরে দাও আবদার করল মৌ। আমাকেও একটা দাও মনির বলল। একে একে শিমুল, শিউলি, মুনিড়ব, সিরাজ, রিয়াদসহ সবাই বায়না ধরে বসল। ‘আচ্ছা সবাইকে একটি করে ধরে দিচ্ছি বলল লিয়নের আব্বু।
সাদা বলদটা দড়ি ছিড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, কণ্ঠ ভেসে এল লিয়নের আম্মুর। থাম, একটু পরেই ফিরে আসছি বলে চলে গেল লিয়নের আব্বু। এদিকে লিয়ন তার ফড়িংটার ডানা ভেঙ্গে ফেলেছে। প্রচুর ছটফট করছিল সেটি। লাফিয়ে পায়ের নিচে পড়ে গেল মনিরের। একসময় মারা গেল সেটি। শিমুল বলল, অ্যাই লাল ফড়িংটার খবর কি?চল পলিথিন থেকে বের করে সেটি নিয়ে খেলা করি সবাই।
রিয়াদ প্রমে হাতে নিল পলিথিনটি। খোলার চেষ্টা করলো সাবধানে। কিন্তু দমকা এক বাতাস ভেসে এল কোথা থেকে যেন। মনের অজান্তেই আলগা হয়ে গেল সেটি। ফুড়ুত করে উড়ে চলে গেল ফড়িংটি। এ্যাই র্ধ র্ধ বলে পিছু পিছু ছুটলো সবাই। কয়েকটা ক্ষেত পেরিয়ে উঁচু একটি টিলার উপর বসল সেটি। চারদিকে ঘাস এবং ভাটিপাতা দিয়ে ভরে ছিল টিলাটি। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল শিমুলরা। ঠোঁটে আঙ্গুল লাগিয়ে ইশারা করলো হৃদয়। শান্ত হয়ে গেল সবাই। ওই যে দেখ ফড়িং ছানাগুলো কিভাবে কানড়বা করছে, বলল মৌ। ছানাগুলোর আহাজারি দেখে প্রমে ছলছলিয়ে উঠলো তার চোখ। তার দিকে তাকিয়ে সবাই বুঝতে পারে বড় অন্যায় হয়ে গেছে তাদের। ফড়িংটাকে কষ্ট দেয়ার জন্য অনুতপ্ত হয়ে বাড়ি ফিরলো সবাই। এদিকে লিয়নের আব্বু সবার নিরবতা লক্ষ্য করে আশ্চর্য হয়ে যায়। ছোটদের কাছে যখন অসহায় ফড়িং ছানাগুলোর কথা শুনলেন তখন নিজেকে সবচেয়ে বড় অপরাধী মনে হলো তাঁর। তিনি সবার উদ্দেশ্যে বললেন, আমি সচেতনভাবে খেয়াল করিনি বলে ফড়িং নিয়ে খেলা করায় তোমাদের উৎসাহ দিয়েছি। কিন্তু এই ফড়িং যে পরিবেশবান্ধব তা আমার মনে ছিল না। ফড়িং ও এর বাচ্চা জলাশয়ের পোকা মাকড় ও মশার লার্ভা খেয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করে ফলে আমাদের পরিবেশ ভালো থাকে। বড় ফড়িং উড়ন্ত অবস্থায় মশা জাতীয় পোকা শিকার করে। এরা বিভিনড়ব প্রজাতির ক্ষতিকর মশা দমন করে ফসলের ও মানুষের উপকার করে। তাই যে এলাকায় যত বেশি ফড়িং থাকে সে এলাকার পরিবেশও তত ভালো। আমাদের সবার উচিত উপকারী পোকাগুলোকে সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ করে দেয়া। লিয়নের আব্বুর কথাগুলো অনেক দামী মনে হলো সবার কাছে। তারা সবাই প্রতিজ্ঞা করলো কোনো প্রাণীকে কষ্ট দিয়ে খেলা করবে না কখনো।